রিয়া চন্দ্র-র গুচ্ছকবিতা
অনভিপ্রেত
যাপনের সব রন্ধ্রপথে এখন আর চাঁদ থাকে না
বিপন্ন কালো দাগের আততায়ী জ্যোৎস্না
পৃথিবীময় লেগে থাকে, রাত বদল হতে
পারে
তাই যেকোনো অছিলায় প্রায়শই অপ্রতিহত ঘুমে
কতিপয় রূপকথারা তার সাম্রাজ্য সাজায়
আর অন্ধকারে আহত শরের তীর্যক দৃশ্যে
নীড় প্রত্যাশী তাঁবুর নীরবতা থেকে ঘূর্ণায়মান
হাওয়ার মতো বিষাদ অক্ষরেরা উঠে আসে
মাঠ বন নদী পেরিয়ে বহুদূরে হঠাৎ যেন
দুলে ওঠে রাজকুমারীর স্বপ্নের পালঙ্ক
ঘোরতর স্বপ্নভঙ্গে তখন ঢেউয়ের প্রমাদ
গুনতে গুনতে দেখি, দারুণ বৃষ্টিপাতে সর্বাঙ্গ
ঢাকতে চালকবিহীন পদাতিক কেমন করে
বেখেয়ালে নেমে যায় গুহার স্থবিরতার দিকে
আদিস্রোত
জলের ভেতরে আগুন, কতটা গভীর ছিল
প্রান্তিক ডুবুরি তার খোঁজ রাখেনি
স্রোতের কাছাকাছি তন্ময় চন্দ্রালোকে
ঢেউয়ের গান শুনিয়ে যায় আদিমানবেরা
আজ শুধু পাতাদের কান্না লেগে রঙিন ডানায়
অথচ তার কোনো দাগ নেই, অপার ডাক নিয়ে
আমি যে ঘরে নেই, রক্ত ও মাংস সাজিয়ে
এ কাকে আহ্বান করছ নিজের ভ্রমর-শরীরে?
ডুবছি, ভাসছিও, এভাবেই শূন্যতা লুকিয়ে
একদিন চলে যাব আমি, কেবল বাহুমূলে
নিবিড়তা শেকড় ছড়িয়েছে যতটুকু, ততটুকুই
পাতার রূপোলী শরীর গোপন দৃশ্যে রেখে যাবে
মধ্যরাতের শহর থেকে
১
রাস্তার একপাশে অর্ধমৃত রাতের ভয়াল থাবায়
ধুঁকছে নিঃসঙ্গ ল্যাম্পপোস্ট, আভার
নিষেধাজ্ঞা
পেরোতে দু'হাতে ছাড়িয়েছে পতনোন্মুখ
পিপাসার জল, প্রকৃত লিপ্সার দিকচক্রবাল
ঠোঁট নড়ে উঠছে ভাঙা জিপের, নৈশ
কোতোয়াল
তুমি নির্জনতায় ভরে দাও ঘোরলাগা আলো
মধ্যরাতে গলিখুঁজি হয়ে পোড়ো বরফ-সংকেত
বারবার ফিরে যায় সৃষ্টি স্থিতি লয়ের ভেতর
এই স্মৃতিময় রাত জানে সমূহ সম্ভাবনা থেকে
দূরে মানুষের কাছে হরিণীর মতো চোখ তুলে
সে থেকে যাবে তর্জনীর প্রণয়ে, একা
স্পর্ধাহীন
২
তৃষ্ণার ভেতর সহজ অঙ্কও জটিল হয়ে যায়
এমন অনতিক্রম্য দীর্ঘ বৃষ্টিপাত, সর্বাঙ্গ
স্খলনে
নিয়মের কাটাছেঁড়া শরীর তীরের ফলার মতো
এক গোলার্ধ থেকে অন্য গোলার্ধে ছুটে যায়
কোনো দৃশ্য নেই, প্লাবনের খেয়ালে জলের চঞ্চল
শব্দ রেখে যাচ্ছে আত্মসমাহিত মায়াপাশ
ফুটপাতের নির্জনতা ও ভ্রমররঙিন প্রতিটি
অক্ষরের কৃশ-শরীর দেখে ব্রিজের ওপর রাস্তা
কেমন ভিজে যায়! রাতের নিবিষ্টতা পেরোলে
অর্ধেক ঘুমের আড়ালে পল্লবিত হয়ে ওঠে
কামজলময় অন্তর্দহন, নৈঃশব্দ্যের
অঙ্গুলি হেলনে
অনুরাগ
জন্মান্ধ মেয়েটির চোখের গভীর থেকে
সাঁতারের চিহ্ন মুছে দিচ্ছে বিষাদী
কিশোর নদের নষ্ট পাড়
নির্বিকার উপত্যকায় এমনই সঙ্গীহীন
জলজ হাওয়াদের নিত্য আসা-যাওয়া
এখন বৃষ্টির উঠোন তো তার কেউ নয়
মরমী নদীর কোমল ঠোঁটের মুখোমুখি এসে
দাঁড়িয়েছে শুকনো পাতার প্রণয় প্রস্তাব
এখানে পদ্মপাতায় সঙ্গোপনে
সেতারের কথা লিখে রাখেন মাটির ঈশ্বর
চাঁদেলা নর্তকী
স্থবিরতা চেয়ে পাথুরে জমির ওপর স্খলিত
নৈঃশব্দ্যে শিস দিয়ে ওঠে বিচ্ছিন্নতা, যেন
মন্ত্রমুগ্ধ
প্রহেলিকা জলের দৃশ্যপটে প্রবাস সেরে তাপাঙ্কে
রেখে গেল অসংখ্য সুতোর মতো জড়ানো জাল
বাগান ভরে উঠেছে শয়তানি জ্যোৎস্নায়
বহুদিন এরকম চন্দ্রাহত রাতে স্নান করেনি
কোনো প্রেতাত্মা, তার কিছুটা আভাস ছড়িয়েছে
আলো ও অদম্যতার মৃত্যুভয়াতুর হলুদ পোশাক
আজ অন্তর্ধান প্রয়োজন, জল-পতনের
শব্দে
খুলে যাচ্ছে জোনাকিদের উচ্ছিষ্ট বসন
মগ্নতার আদিম আলোয় পাহারায় বসে শীতের
ওম, অসময়ে হঠাৎ সন্ধ্যে নেমে এলে
পাহাড়তলীর
চোরা খাত হয়ে ভাষাহীন ক্ষতের হাঁ মুখে সম্মোহিত
লুটিয়ে পড়ে চাঁদের একজোড়া অবারিত ঘুঙুর
Khub Sundor😍
ReplyDelete