লেখা পাঠান আমাদের chayarodpatrika@gmail.com

Thursday, October 29, 2020

অন্তর চক্রবর্তী, একাদশ সংখ্যা

অন্তর চক্রবর্তীর কবিতা

 ব্রেকিং নিউজ

 

মানুষেরা ভাঙার পর সেখানে পড়ে আছে কিছু আলাদা মানুষ। একটা অদ্ভুত শহর বিছিয়ে।

মায়ের বিবাহবার্ষিকীতে তাঁর কবরের পাশে প্যাস্টেলে ঝর্ণা ও পায়রা ফুটিয়ে তোলা কোনো বালিকা। কিশোরীস্বপ্নের মতো ঝকঝকে, ছিপছিপে, বোহেমিয়ান ছোকরা, বাবার ক্যানসারের পর কলম আর বেহালা যার রুজি। গোলাপ ও টিউলিপ ফেরি করা কোনো প্রৌঢ়া, বছরচল্লিশেক আগে যাঁর কাছে প্রেমপত্রেরও খানিক আগে এসে পৌঁছেছিল প্রেমিকের মৃত্যুসংবাদ।

এঁরা ভাঙেন না। অশ্রুময় দানবের মতো এঁদের কপালে হাত বুলিয়ে দিই। চন্দ্রাহত শ্রাবণে এলিয়ে দিই অসীম দেহনির্ঝর। বিছোনো শহরটি এক বালক জলকেলিতে ভরে ওঠে। সুলগ্না সসাগরা সাঁতার উঠে আসে হাঁটুতে।

আমার বিক্ষত চোখেরা এ নগরীটির অলক্ষ্য স্মারকসন্ততি, এমনই প্রবাদযাত্রায় জলধারা পৌঁছে যাচ্ছে এক শ্রীজাত মহাশূন্যের নাভিমূলে...

( ২০১৬ )

 

কিছুদূর হাঁটার পর থেকে কবিতারা এক এক করে ভাঙতে শুরু করে। তারপর ইচ্ছেমতো ছড়িয়ে পড়ে তামাম শহরতলিতে। বাসস্টপ, স্টেশন, ট্রামডিপো, বন্দর। ঘাট, উদ্যান, লেক। মল, মেলা, ফুটপথ। মাল্টিপ্লেক্স, সিঙ্গল স্ক্রিন। কর্পোরেট, কাছারি, কাউন্টার। কফিশপ, ফুডকোর্ট, ক্যান্টিন, গুমটি। সমাবেশ, ওয়াকআউট, সেমিনার, অবরোধ। বইপাড়া, ক্লাসরুম, লাইব্রেরী, ফ্রেশার্স। মেস, টুবিএইচকে, থ্রিবিএইচকে। বেশ্যাবাড়ি, লাউঞ্জ, রিসর্ট।

 

শেষরাতে গায়ে এন্তার পশম জড়িয়ে এরা ফের জড়ো হয়ে এক সবুজ পিরিচশোভায় দাঁড়ানো পল্লীপ্রবণ কনকনে পাঠাগারে।

 

দীর্ঘ রোদস্নান সেরে সেখানে এলেন তথাগত কবিবর। বসলেন। দেখলেন, আঙুল থেকে অঝোরে গড়িয়ে পড়ছে অবাধ্য লালচে নুনঢেউ। উপন্যাসোপম...

( ২০১৫ )

 

ভাঙছি। ভেঙে যাচ্ছি। কীভাবে জানি না, তবে এমনই অভিপ্রেত। বিন্যস্ত ফলাহারে প্রখর অরুচির তুফান লেলিয়ে দিলাম সপাটে। ছুরির উল্টোমুখে দাঁড়িয়ে অভদ্র কামড়ে ফালাফালা করলাম সাজানো আলোবাতাসের চতুর দৃশ্যায়ন। ধূর্ত কাচের কপাটসজ্জাকে হিড়হিড় করে টেনে ছুঁড়ে ফেললাম দক্ষিণের জঙ্গলে।

 

কিন্তু আর কত? রেহাই কোনো জলীয় কসরত নয়। তা জেনেও দাঁতে ভর করে রইলাম আর কি। শনশন শুনে কপাল উঁচিয়ে বুঝলাম, ধারাল ঈগলপ্রজ্ঞায় শিয়রে নেমে এল সাদাকালো চৌখুপিদল। আছড়ে পড়ল সশব্দে। দড়াম...

 

ভাঙছি। ভেঙে যাচ্ছি। ভাঙলাম। কীভাবে, এতক্ষণে মোটামুটি স্পষ্ট। ঘোর কাটতেই খানিকটা ভেসে এলাম। এক রগরগে মগডালে চড়ে দেখলাম, নীচেই এক প্রকাণ্ড লালাভ স্তূপ থেকে টাটকা মাংসঘুঁটি নিয়ে আনকোরা দাবার শরীরে সাজাচ্ছে দুটি শিশুনেকড়ে...

( ২০১৭ )

Monday, October 26, 2020

সাত্যকি, একাদশ সংখ্যা

সাত্যকি-র কবিতা

 

অক্ষর জন্মের পূর্বে

 

অক্ষর জন্মের বহু পূর্বে দেখেছি এই জানলায় দাঁড়িয়ে

শরীরে ডুবেছে শব্দহীন কথায়

                যাদের ভাষা পথ করে দিয়েছে  

মরু পথের দিকে

          যেখানে শব্দগুলোর ছায়া সন্ধ্যার মতো...

 

আজও হাতের ইশারায় বুঝিয়ে দেওয়া কথা থেকে বেরিয়ে আসে

সেই আলোড়ন যার প্রত্যেক স্বর আমার অপরিচিত এক পৃথিবী

এঁকে দেয় ছাই নেমে আসে শরীর জুড়ে মুহূর্তে শরীর ঢেকে যায় 

বিষাক্ত নেশায়...

                                                       

 

 

স্নান

 

বহুবার এই স্নান ঘর দেখেছে আমার শরীর

আমিও দেখেছি এঁকে

খুব নিবিড়

খুব আপনার করে 

এর সাথে খেলেছি অনেক

একাকী দুপুরের সেই প্রহর

যেখানে দাঁড়িয়ে থাকত আমার বিষণ্ণ শরীরের 

জমানো স্মৃতি আর ধোঁয়াশা ইচ্ছেরা

 

এই বিশাল ঘরের দেওয়াল

ওই স্নান ঘর আর আমার বিষণ্ণ শরীর খুঁজে যায় সময়

এই অন্ধকার ঘরের দেওয়াল চাতাল কল ঘরের শ্যাওলা

গুমোট গন্ধের শোয়ার ঘর তোষক বালিশের ঘাম আর

পুরানো তুলোর শরীরের রোঁয়া

আমাকে গিলে নিতে আসে

তবুও সহবাসে কোনোদিন ছেদ পড়েনি বলে

এখানেই বন্ধ দেরাজের ভিতর ড্রয়ারের ভিতর

ভাঙা কাঁচের আয়নায় মুখ দেখে চিনে নিই 

যে শরীর হারিয়ে ফেলেছে পরিচিত গন্ধ বিলাস...

রূপক ব্যানার্জী, একাদশ সংখ্যা

রূপক ব্যানার্জী-র কবিতা

 

১. অভিষিক্তা

 

অভিষিক্তার পিঠে শাশ্বত জরায়ুর শ্লোক

ভগ্নাংশের কাছে পূর্ণতা দাবি করা লোক

 

জীবদ্দশায় শুধু মরীচিকা তাড়া করে করে

আটকে পড়েছে অতিসর্পিল নিস্পৃহডোরে

 

জলপ্রপাত খসা লোভাতুর পায়রার ডাকে

রাজত্ব সঁপে দিয়ে চলে যায় অভিষিক্তাকে

 

ভগ্নাংশের কাছে পূর্ণতা দাবি করা লোক

অমাবস্যার রাতে স্বেচ্ছামৃত্যুবাহী হোক...

 

 

২. মেটাফর

 

বৃতির মাথা নরম হয়ে খসতে থাকা ফুলে

অতর্কিতে ছুটতে থাকে লজ্জা-রাঙা দুল

শ্রান্তিহীনা শরীর এসে ছায়ার পাশে শুলে

কানের লতির ব্যালকনি'ও অরণ্যসংকুল

 

কর্নেটোরোদ ছিটকে আসা বায়বমাস্তুলে

সালতামামি করতে বসে স্বেচ্ছাসেবীমেঘ

অন্ধ'জোনাক ভর্তি হলে প্রাইমারি ইস্কুলে

ধর্মাবতার কমিয়ে দেন নিক্ষেপণের বেগ

 

দগ্ধ মহীরুহের ডালে, ইচ্ছে-শিশির মূলে,

মফস্বলি সায়াহ্নঘুম ঢলছে ঘরে ঘরে...

কিংবা কিছু এলিপ্টিকাল রক্তজবা তুলে

স্বর্গে দেবী সেপিয়াটিক, মর্ত্য-মেটাফরে

সুপ্তোত্থিতা_সাথী, একাদশ সংখ্যা

সুপ্তোত্থিতা সাথী-র কবিতা

 

টাচ উড

 

বুকের উপর ঝিম ধরানো তিলধুকধুকিতে নজরকাঠি-চোখ

ভীড়ের মাঝে অসাবধানী দিলআসতে-যেতে একটু দেখা হোক!

চোখের উপর ঝাউপাতাদের ভীড়ঠোঁটের কোণে বিপজ্জনক হাসি

ভ্রুকুটিতে ধরাও বুকে চিড়কারণ ছাড়াই তোমায় ভালোবাসি।

নাস্তানাবুদ স্লিপিং পিলের রাতহা-হুতাশেই জীবন চাতক হয়

পিঞ্জরাতে মনপাখী চিৎপাতসোনার-কাঠি-হাত ছোঁয়ালেই জয়।

ঝালর ওড়া মেঘের মতন চুলজাফরানি ঠোঁট ভাঙছে যুক্তি-বোধ

দূরত্বতে হার্ট-রিডিং-এও ভুলমনপুরীতে কার্ফুঅবরোধ।

 

 

সন্ধে বাড়ায় ডিপ্রেশনের রোগভীড়ের ভেতর একলা একা পথ

বুক পকেটে নোনতাজলের ভোগপায়ের পাতায় টলমলানো শ্লথ।

ঝিল পাড়াতে ঝিঁঝিঁদের ফিসফাসহাঁটুর ভাঁজে নিশ্চুপ ক্রন্দন

এমন সময় কাঁধ জুড়ে নিশ্বাসবুকের মধ্যে ঢিপঢিপ স্পন্দন।

পেছন ফিরেই ফের হতাশার ছোপদেখতে যেন চাইছিল মন কাকে!

জীবন এখন দাবার নিথর খোপভালোবাসাও নিখোঁজ কোনো বাঁকে।

 

 

কিই বা করারযা গেছে তা গেছেহোঁচট খাওয়া এক্কা-দোক্কা চাল

ভাঙা মাস্তুল আটকে ছিল প্যাঁচেবাঁধতে হবে যত্নে ছেঁড়া পাল।

আগের মতোই সেই চেনা বাসস্টপঅধির চোখে খুঁজছে ফেরার বাস

পাশের সিটে গা ঘেষা লালটপবুকের মধ্যে ড্রাম পেটানো ত্রাস।

নামার স্টপেজ আর কয়েকটা পর... জানলা'পারে তারাদের ঝিকমিক

কাঁধের'পরে ঝুঁকলো মাথা, ক্লান্তিতে জর্জরপ্যাসেঞ্জারি ঠোঁট করে ফিকফিক।

বাসের ভাড়া মিটিয়ে দিলো দু'টোরনামার আগে ম্যাডাম! সাইড প্লিজ!

পরের দিনই বাসস্টপ শুনশানছাতার উপর জমছে তখন বর্ষার মজলিস।

 

 

বাসস্টপেজে নামল তেড়ে বৃষ্টি তখনছাঁট ভিজে যায়বাসের আশায়

মন-কাড়ানী সেই মেয়েটা আসলো কখন! "অমন করে চুপ থাকে কেউ ভালোবাসায়!"

বৃষ্টি ছাঁটে একটা ছাতায় ভিজছে দু'জনঝিম ধরানো নজর এখন চার চোখেতে

জলের ফোঁটায় জুড়ছে তখন মাইলযোজনঠোঁটের উপর অল্প কাঁপন উঠল মেতে।

ভরল শহর দোলনচাঁপার সুগন্ধেতেআবেগ মেখে বুকও কাঁপে থরোথরো

অস্থিরতাও স্থির হয়ে যায় এ'সন্ধেতেদু'জন এখন একটা ছাতায় জড়োসড়ো।

 

গৌতম মণ্ডল, একাদশ সংখ্যা

গৌতম মণ্ডল-এর কবিতা

 

অনুবাত ঢাল

 

এখানে এসো না প্রিয়

এখানে এসো না, এই বৃষ্টিচ্ছায়ে

অনুবাত ঢাল বেয়ে নেমে আসে ধুম্র গুমোট

শুষ্ক ইথাকা জুড়ে তীব্র দহন

এখানে এসো না প্রিয় আত্মহত্যার উপত্যকায়।

 

এখানে অপেক্ষা নেই সঙ্গমের

বিপরীত ঢাল জুড়ে মেলা বসে অবাধ যৌনতার

সঙ্গম শেষে রজনীজল নেমে যায় উৎসবের মতো

এখানে এসো না তুমি প্রিয়,

তোমার শারীরিক কোনারক স্পৃষ্ট হবে না প্রাক্‌-সঙ্গম খেলায়,

এদেশের সমস্ত সুন্দরীরা চলে গেছে লোমশ উর্বর বন্যার টানে,

তুমি এসো না প্রিয় এই বৃষ্টিচ্ছায়ে,

আমার নিজেরই বুক আমাকে ছেড়ে গেছে অবৈধ আত্মার সাথে,

তুমি এসো না প্রিয় এই বৃষ্টিচ্ছায়ে।

নীপবীথি ‌ভৌমিক, একাদশ সংখ্যা

নীপবীথি ‌ভৌমিক-এর কবিতা

 

প্রিয় বিষাদ

 

প্রতিবার ভালবাসা খুঁড়ে জন্ম নেয়

   আমাদের স্থায়ী সম্পর্ক

 

   এই যে, নেই হয়ে যাওয়া মুহূর্তটা,

     যাকে ছুঁয়ে নেমে এসেছিল আমার শব্দ-যাপন-কাল

 ভালবাসায় বাঁধা পড়েছিলাম তার সাথে

 

     প্রতিটি প্রাচীন সময় ছুঁয়ে নামে

       অক্ষরের ঘর-সংসার,

 আর সেই সংসারের সাংসারিক দরজার 

চৌকাঠের ওপারে লুকিয়ে থাকে ‌হারিয়ে যাওয়া 

শ্রী-রাগ...

 

 

 

একটি খুনের আগে

 

খুব ঘুম পায়। শরীর ছুঁয়ে নেমে আসে অবসন্নতার আসর

 

   সেখানে সকাল হয়। অপরাহ্ন বয়ে যায়

   ছায়া আর রোদের সেতারে বেজে চলা ভীমপলশ্রীর তানে...

 

    প্রতিটি সন্ধ্যা এভাবেই যাপনে আসে,

       হাড় মজ্জা জুড়ে নামে গোধূলি মাখা পূরবী

 

  খুন হতে থাকি এভাবে আমি

  প্রতিটি দৃশ্যের হাতে। অপলক চাউনি নিভে

  যায় আবার জীবন আর জন্মের মাঝখানে।

 

 

কবিজন্ম

 

      লেখারা থেমে গেলেই জন্ম হয়

   আবার কবিজন্ম।

 এই যে, এই মুহূর্তে প্রতিটি শব্দ প্রত্যেকটি অক্ষর

  হেঁটে যাচ্ছে ক্রমশ ঘুমের দেশে

    আর আমি হাত ধরে জোর করে তাদের নামিয়ে

  আনতে চাইছি আমার কাব্য ঘরের অন্ধ রঙের ভিতরে

 

   বৃহঙ্গকেও ঠিক এভাবেই বাঁধতে চাই আমরা।

   উড়ে যেতে চায় সে, দূরে আরও দূরে।

  হয়তো যেখানে সন্ধ্যা নামে না এমন এক ঠিকানায় !

 

    আমরা শিকল দিয়ে ওর পায়ে বেড়ি পরিয়ে পুরে

   দিই লোহার খাঁচায় নিঃশব্দে।

  আমার কবিতারাও ঠিক তেমনই। উড়ে যেতে চায়

   স্তব্ধতাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে নিস্তব্ধ গ্যালাক্সিতে।

 

     ‌আর আমি, কবি জন্মের আশায় আশায়

   গর্ভে বিলীন হই কবিতার।

অদিতি চক্রবর্তী, একাদশ সংখ্যা

অদিতি চক্রবর্তী-র কবিতা

 

নারী নেই এই শহরে

 

আমরা মৃত্যু লিখতে পারি! অজস্র ঘাসের অভ্যন্তরে সাজানো গোজানো কয়েকটা পুরুষ বসে আছে, তাদের কোনো নারী নেই! না আছে কোনো অভ্যাস, ওরা চেয়ে দেখে, আর ওরা বসে থাকে ঘাসের মাঝখানে, সেজে ওঠে বিষণ্ণতার প্রথম পাতায়, ওদের পায়ের গোড়ালির লাগোয়ায় গোটা একটা বছর কেটে গেছে টের পায়নি! আকাশে উনত্রিশে গোধূলি নামতে নামতে, বাস্তবের মাটিতে আমি চারা গাছ লাগাতে শুরু করেছি, কারচুপি মেঘ তখন গিলে নিচ্ছে ঘূর্ণিঝড় 

     প্রতিটা পায়ের নখে যেন পরিযায়ী পাখি গম ভাঙাচ্ছে, শহরের শরীরটা ছিন্ন বিচ্ছিন্ন, নারী নেই এই শহরে, আছে শুধু পুরুষের পোষ্য গিলে খাওয়া আগুন পাখি।

 

অন্য গ্রহ

 

উলকার মতোন ভেসে আসা যে কোনও ডাক ভয় দেখাতে পারে অথবা এক নিমেষে নরককে স্বর্গ করেও তুলতে পারে একটা পাখি গাছে এসে বসে দেখতে পারে দুর্যোগ, চার আনা'র মতোন ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে সব থমকে যেতে পারে আবার, এক নিমেষে শেষ করে দিতে পারে ভূমি।

সব সম্ভব সব...

 

পুরুষত্বের শিকার ফেমিনিসম

 

অনেক সাবকনসাস, নার্ভ ধরে এগিয়ে চলেছি

পুরুষত্ব নামক পবিত্র অগ্রাধিকারকে লিখিয়ে

চলেছি, মেল ডমিনেটেড এর পেপারে...

রাস্তার নোংরা, ড্রেনে এ পড়া কুকুরদেরও

শ্লীলতাহানির শিকার হতে দেখেছি...

পুরুষত্বকে ভিজে বেড়ালের মতোন

ফেমিনিস্টদের সামনে উদ্ভ্রান্তের মতোন

ভিক্ষা করতে দেখেছি, এখনো ঠিক সমানে

সমানে, রেজাল্ট বেরোয়নি, পুরুষত্ব এখন

নিজেকে সর্বের সর্বাভাবে, ফেমিনিসম আজ

ও পরিচারিকার কাজ করে দুমুঠো খায়

আর শিকার হয় পুরুষত্বের!

 

গরল

 

একটা বিষাক্ত বর্ণহীন উপক্ষার ভেতরে আজকাল সুখীই থাকা যায়, বদমেজাজি আকাশে নিদারুণ হাত পা ছড়িয়ে নেশা করার ভেতরে কোনো পিছুটান নেই, ঘন ঘন প্রবাহে ঘরময় নিকোটিনের সাথে অবাধ্য অপেক্ষা নেই আর শুধুই উপেক্ষা আছে শুধুই উপেক্ষা।

 

অলৌকিক

 

রহস্য তখনও গাড়ো, সন্ধ্যার পর রাত অবশিষ্ট পড়ে আছে, শিমুল গাছের তলায় বিভিন্ন সূক্ষ্মদেহ ভেদাভেদ করছে, আলোচনা করছে হাজারটা প্রশ্ন, আগের জন্মের ইতিকথা, পঁচিশ লক্ষটা স্থান কাল সময় তখনও বয়ে যাচ্ছে আগন্তুকের মতোন, হাজারটা অর্ব শেপ নিচ্ছে গাছের পাতায়, তখন মাঝরাত, নার্ভ সেলগুলো জড়ো হয়ে আছে গাছের শিকড়ের কাছে, আমার সামনে কামনা বাসনার অভিব্যক্তি ঘটাচ্ছে, অশরীরী তখনও পবিত্র চুল্লি গরম হচ্ছে শশ্মানের রাস্তা দেখাবে বলে!

ছাব্বির আহমেদ, একাদশ সংখ্যা

ছাব্বির আহমেদ-এর কবিতা

 

চলো একটা সেলফি তুলি

 

                         ...চলো একটা সেলফি তুলি

পেয়ারা গাছে কাঠবেড়ালির লেজে একটা DSLR ঝুলছিল

                 আর তুমি চুলের ফিতেই রং মাখছিলে

একটা কবিতা লিখবো বলে যখন ভাবতে বসেছি, 

তখনই উত্তরের জানালা দিয়ে বক নেমে এলো

কাশফুল তুলতে গিয়ে দেখি বিয়াল্লিশ মাইলের মাঠে

যে চিত্রটা ফুটে উঠেছিল, সেখানে হোমিওপ্যাথির শিশি ভর্তি

যেন ঘরের কার্নিশে চড়ুই পাখি বেসুরে গান ধরেছে


                 চাঁদের আসে পাশে সংযত রাখতে হয়

তবেই অভিসারে যেতে গেলে পায়ের কাটা তুচ্ছ মনে হবে

তরকারি কাটতে গিয়ে কাটারিটাও হারিয়ে ফেলেছি

               তাই মুদিখানায় আজ যেতে হয়নি

            তুমি লন্ডনের রাস্তাটা চেনো?

      পূর্বরাগে আজও আমি যেতে রাজি যদি, 

সেমিকোলন পার করে ফুলস্টপটা তুমি তুলে দিতে পারো।

 

 

সাইবেরিয়ার উঁচু ঘড়িটা

 

বুক উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছি

অনুতাপে পোড়ে না আগ্নেয়গিরির লাভা

              মুখের নীচে চোরা গন্ধ

বাতাসে ভাসে মৃতদেহের ধুপকাঠি

গাঢ় অন্ধকারের মতো বিপদ ধেয়ে আসে

 

তোমার ঠোঁট থেকে 

একে 

একে 

খসে পড়ে নির্লিপ্ত মেঘের ছায়া

পশ্চিমী ঝঞ্ঝা

বজ্রঘাতের চোয়াল ভিজিয়ে দেয়

 

তোমার সিক্তবসন

আমার যৌবনের জানালায় উঁকি মারে

চাঁদের নিচ দিয়ে যে কুয়াশা আসার কথা ছিল

তার আজ নাকি বিবাহবার্ষিকী

 

                 মত্যুকে আমি ভয় পাই না

         নীরবতা আমার সাথে ঘর বেঁধেছে

আর তুমি নদীর স্রোতে ভাসিয়ে দিয়েছ নৈঃশব্দের পাহাড়

 

সাইবেরিয়ার সেই উঁচু ঘড়িটায় কান্নার সুর বাজে

আকাশের মাথায় একটি শব্দ

ভাঙা কলসিতে মাটির তৃষ্ণা মেটায়

পৃথিবী থেকে বেরিয়ে আসছে রক্তের নদী

 

চোখ ভিজে যায়

বুকের তলায় শুয়ে থাকে কালশিটে ছায়া

 

 

বেকার জীবন

 

বেকারত্ব আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ দিয়ে বেরিয়ে

উঁচু পর্বত তৈরি করেছে

 

ভবিষ্যতের স্বপ্নগুলো পাললিক শিলার ভাঁজ বরাবর

আড়াআড়ি ভাবে দাঁড়িয়ে

 

মার্বেলের ভরে ৯০ ডিগ্রি ঘুরে দাঁড়িয়েছে সংসারের চাপ

অনুভূমিক তলে চোখের লাভা গলতে শুরু করেছে

 

জলপ্রপাতের গা বেয়ে নামছে উচ্চাকাঙ্ক্ষা

দিনে দিনে বেড়ে উঠছে ডিপ্রেশন

ভঙ্গিল পর্বতের ভাঁজের মতো

 

কপালের খাঁজের মেরুজ্যোতি আজ

আমৃত্যু নিভৃতবাসে গেছে

যেন মার্কার পেন দিয়ে কেউ

বেকার লিখে দিয়েছে তার মাথায়

 

 

চ্যালেঞ্জ

 

প্রতিপক্ষকে সরল অঙ্ক ভেবে

(a+b) হোলস্কয়ার সূত্রের ফিতেয়

গভীরতা মাপতে যাইনি

 

শক্ত প্রতিযোগিতার সরলরেখায়

              মৃত্যুবান মেরেছি

কৌণিক বিন্দুর বিপরীতে দাঁড়িয়েছিলাম

         নাক বরাবর তীর ছুঁয়ে গেছে

 

দক্ষতার রশ্মিগুচ্ছ দিয়ে সমতলের উপর

                 চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছি

 

 

ছোবল

 

আগুনের ছোবলে ঘুমিয়ে আছে শীতকাল

                   গায়ের রঙ ফ্যাকাশে

বিবর্ণ মুখে ভাষণ দিতে গিয়ে

       দুলাইন পূবদিকে ঘুরিয়ে দিয়েছি

      সূর্যের তাপ যত হালকা হয়েছে

গাছের ছায়ার বর্ধিতাংশ জেগে উঠেছে

কম্পাসে কেটে নিয়ে

বক্রতলে দুটি বিন্দু এঁকেছি