লেখা পাঠান আমাদের chayarodpatrika@gmail.com

Thursday, October 29, 2020

অন্তর চক্রবর্তী, একাদশ সংখ্যা

অন্তর চক্রবর্তীর কবিতা

 ব্রেকিং নিউজ

 

মানুষেরা ভাঙার পর সেখানে পড়ে আছে কিছু আলাদা মানুষ। একটা অদ্ভুত শহর বিছিয়ে।

মায়ের বিবাহবার্ষিকীতে তাঁর কবরের পাশে প্যাস্টেলে ঝর্ণা ও পায়রা ফুটিয়ে তোলা কোনো বালিকা। কিশোরীস্বপ্নের মতো ঝকঝকে, ছিপছিপে, বোহেমিয়ান ছোকরা, বাবার ক্যানসারের পর কলম আর বেহালা যার রুজি। গোলাপ ও টিউলিপ ফেরি করা কোনো প্রৌঢ়া, বছরচল্লিশেক আগে যাঁর কাছে প্রেমপত্রেরও খানিক আগে এসে পৌঁছেছিল প্রেমিকের মৃত্যুসংবাদ।

এঁরা ভাঙেন না। অশ্রুময় দানবের মতো এঁদের কপালে হাত বুলিয়ে দিই। চন্দ্রাহত শ্রাবণে এলিয়ে দিই অসীম দেহনির্ঝর। বিছোনো শহরটি এক বালক জলকেলিতে ভরে ওঠে। সুলগ্না সসাগরা সাঁতার উঠে আসে হাঁটুতে।

আমার বিক্ষত চোখেরা এ নগরীটির অলক্ষ্য স্মারকসন্ততি, এমনই প্রবাদযাত্রায় জলধারা পৌঁছে যাচ্ছে এক শ্রীজাত মহাশূন্যের নাভিমূলে...

( ২০১৬ )

 

কিছুদূর হাঁটার পর থেকে কবিতারা এক এক করে ভাঙতে শুরু করে। তারপর ইচ্ছেমতো ছড়িয়ে পড়ে তামাম শহরতলিতে। বাসস্টপ, স্টেশন, ট্রামডিপো, বন্দর। ঘাট, উদ্যান, লেক। মল, মেলা, ফুটপথ। মাল্টিপ্লেক্স, সিঙ্গল স্ক্রিন। কর্পোরেট, কাছারি, কাউন্টার। কফিশপ, ফুডকোর্ট, ক্যান্টিন, গুমটি। সমাবেশ, ওয়াকআউট, সেমিনার, অবরোধ। বইপাড়া, ক্লাসরুম, লাইব্রেরী, ফ্রেশার্স। মেস, টুবিএইচকে, থ্রিবিএইচকে। বেশ্যাবাড়ি, লাউঞ্জ, রিসর্ট।

 

শেষরাতে গায়ে এন্তার পশম জড়িয়ে এরা ফের জড়ো হয়ে এক সবুজ পিরিচশোভায় দাঁড়ানো পল্লীপ্রবণ কনকনে পাঠাগারে।

 

দীর্ঘ রোদস্নান সেরে সেখানে এলেন তথাগত কবিবর। বসলেন। দেখলেন, আঙুল থেকে অঝোরে গড়িয়ে পড়ছে অবাধ্য লালচে নুনঢেউ। উপন্যাসোপম...

( ২০১৫ )

 

ভাঙছি। ভেঙে যাচ্ছি। কীভাবে জানি না, তবে এমনই অভিপ্রেত। বিন্যস্ত ফলাহারে প্রখর অরুচির তুফান লেলিয়ে দিলাম সপাটে। ছুরির উল্টোমুখে দাঁড়িয়ে অভদ্র কামড়ে ফালাফালা করলাম সাজানো আলোবাতাসের চতুর দৃশ্যায়ন। ধূর্ত কাচের কপাটসজ্জাকে হিড়হিড় করে টেনে ছুঁড়ে ফেললাম দক্ষিণের জঙ্গলে।

 

কিন্তু আর কত? রেহাই কোনো জলীয় কসরত নয়। তা জেনেও দাঁতে ভর করে রইলাম আর কি। শনশন শুনে কপাল উঁচিয়ে বুঝলাম, ধারাল ঈগলপ্রজ্ঞায় শিয়রে নেমে এল সাদাকালো চৌখুপিদল। আছড়ে পড়ল সশব্দে। দড়াম...

 

ভাঙছি। ভেঙে যাচ্ছি। ভাঙলাম। কীভাবে, এতক্ষণে মোটামুটি স্পষ্ট। ঘোর কাটতেই খানিকটা ভেসে এলাম। এক রগরগে মগডালে চড়ে দেখলাম, নীচেই এক প্রকাণ্ড লালাভ স্তূপ থেকে টাটকা মাংসঘুঁটি নিয়ে আনকোরা দাবার শরীরে সাজাচ্ছে দুটি শিশুনেকড়ে...

( ২০১৭ )

No comments:

Post a Comment