লেখা পাঠান আমাদের chayarodpatrika@gmail.com

Monday, August 31, 2020

অর্ঘ্যকমল পাত্র

 অর্ঘ্যকমল পাত্র’র কবিতা


নীলাম্বরী বান্ধবী সে

 

“কীভাবে যেন ঝড়ের আঘাতে

খসে পড়ে ধ্রুবতারা

আমার মতোই নদী দেখে

ভয় পেয়ে যায় যারা..."

 

 

১.

সিঁ

    ড়ি

দিয়ে ওঠার মুখে

ঘাড় বেঁকিয়ে থমকে থাকা দু'পশলা;

সিঁড়ির নীচে বাগান

 

অপরাজিতা ফুটে আছে...

 

২.

বহু আগে দেখতাম

উদ্যত ভ্রু-যুগলের নীল চুড়িদার

বহু আগে...

 

‘আত্রেয়ী' তোর নামটা একটা নদীর...

 

৩.

অযোগবাহ কবিতাপ্রেমী

ডুব দিতে পারে না

নদীতে...

 

ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে

স্রোত...

 

৪.

নদীর পাশে বসে থাকব ভেবেছিলাম

কেউ বারণ করবে না।

 

এবং

 

ক্রমশ মিশে যাচ্ছি গর্ভে।

চোরাবালি...

 

৫.

স্নান করে ভিজে আসি।

গামছায় মুছে নিই

পাপ;

 

কোনোদিন কী আর হবে না

স্নানের সময়ে বালি মাখা?

 

৬.

ভেবেছিলাম একটা অন্য জিনিস

কিন্তু ঘেঁটে ঘ হল

সমস্ত সমস্ত  

 

লেখাগুলো ‘আত্রেয়ীর’ জন্য?

না লেখাগুলোর জন্য ‘আত্রেয়ী’?

 

৭.

কিছু কথা আছে জড়ো করা।

বলব...নিশ্চয়ই বলবো...

এত উতলা!

ঠিক নয় বোধহয়...

সব তো বলবোই...

 

আগে মোহনায় পৌঁছাতে দাও...

 

৮.

সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময়ে

নীচের দিকে তাকাতে নেই;

ভীষণ বিপজ্জনক!

 

পিছলেও যেতে পারো...

 

৯.

বৈতরণী পার হতে পারে না;

মনে হয়

থামবে না ভেসে যাওয়া...

 

অভিভূত লাগে

নৌকাবিহার...

 

১০.

কিছু বলার থাকলে

বলতে হবে না...

নিস্তব্ধতা মেপে নিতে হয়।

টের পেলে বোঝা যায়

 

উভয় পক্ষেরই, কিছু কথা ছিল...

 

১১.

এতদিন ঝাপসা হয়ে ছিল যে মুখ

তাকে ফোকাস করলাম;

 

এখন ঝাপসা হয়ে গেছে

বাকি সব...

 

১২.

দিগন্তের দিকে আর যায় না

চোখ;

ওপারের সাবাইনা ঘাসের

ইশারা ইন্দ্রিয়গুলি আর বোঝে না..

 

ইন্দ্রিয়গুলি ভাসছে স্রোতে...

নদীতে...

 

১৩.

যদিও বাড়ি হারিয়ে গেছে

কিন্তু আত্রেয়ীর কোনো ভয় নেই।

 

সে জানে সে আশ্রয় পাবে

কবিতার বাগানে

 

অযাচিত হবে না খুব একটা...

 

১৪.

খসে পড়ে গেছে ডানা;

বাবলা-বকুল গাছের ডালগুলো

খুঁজে পাচ্ছে না আমায়...

 

ডানা খসে গেছে

নদীর স্রোত লেগে...

 

১৫.

জলের নীচে আছে

কাদা আর বালি।

 

কাদা মাখবো না..

 

কিন্তু বালিতে দোষ কোথায়?

 

১৬.

নীল কাপড়ে জড়ানো

এক মহামেঘ;

গোলাপি ওষ্ঠে জেগে থাকে

বৃষ্টি...

 

সহস্র অপরাজিতা ভেসে যায়,

একটা গোলাপের পাপড়ির সাথে...

 

১৭.

খরস্রোতা দেহ...

চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে

এগিয়ে চলে স্রোত;

 

স্রোতের ভিতর

বিদ্যুৎ আছে...

 

১৮.

পিছুটান?

সে কী ছিল বেশ একটা...

মনে নেই এখন

 

স্রোত খালি ফিসফিসায়--

এগিয়ে চলো...

 

১৯.

কিছুটা পাপ জমা থেকে গেছে ;

ধুতে এসেছি

‘আত্রেয়ী’র জলে।

পবিত্র না হোক

কিন্তু

ওই জল স্নিগ্ধ ভীষণ;

 

গঙ্গায় বড্ড বেশি দূষণ...

 

২০.

সে তো সৃষ্টিসুখ;

দৃষ্টিবিষাদ

মোহের ভ্রম

পলকা জাহাজ

 

নিবিড় ঘুম…

 

২১.

জল বরফ হয়ে গেলে,

লক্ষ লক্ষ মাইল পেরিয়ে

পরিযায়ী পাখি চলে আসে এপারে।

মরুভূমিতে লেগে থাকে

আজন্ম হাহাকার...

 

জলে ঝরছে, এই চোখ থেকে আমার

 আর

 সমস্তটা উবে যায়

 

‘আত্রেয়ী’ নদীর নাম। দু-ফোঁটায়

কিছু আসে যায় না...

 

২২.

বাহুমূল থেকে উঠে আসা গন্ধ...

গল্প বলে যায়।

পাহাড় থেকে কিভাবে উঁচু নীচু

গড়ায় জল।

 

বরফগলা জলে পুষ্ট

 

২৩.

এ জলে, এ স্রোতে নৌকা

উল্টেছে কত...

 

অথচ, ডোবেনি কেউ।

কোনো প্রাণসংশয় ঘটেনি।

 

বরং তারা সাঁতার শিখেছে…

 

২৪.

কতখানি টেনেছে বলে

য়ে

যাও

      এতদিন

                 ধরে?

 

এখন, থামাতে হলে

কতজোরেই বা জড়িয়ে ধরব?

 

২৫.

ওই যেমন

একটা ভাঙাচোরা নৌকা

বেঁধেছি বুকে

 

আমি তো জলের মতোই

সহজ

চলব একসাথে…

Sunday, August 30, 2020

সাহিন আক্তার কারিকর

সাহিন আক্তার কারিকরের কবিতা     

      বাতুলতা বনবাস

 

১.

অন্ধকার ভেঙে একদিন মফস্‌সল

ফুটপাত ধরে হেঁটে যাব

মূল্যবোধের মানচিত্রের উপর

হঠকারী চাতরের সবুজ পাতার মতো উপড়ে ফেলে 

হলকর্ষণ জমিতে বারোমাসাশ্চর্য সুখ

২.

তুমি শোষণকারী আবার প্রতিটি রাতে শাসক সাজো

আর কতদিন প্রিয়,

তোমার হাত থেকে বাঁচতে বেছে নিয়েছি বিদ্রোহের পথ

এবার পথেই হবে সংঘাত

 

৩.

তুমি মুক্তির রস খোঁজো যুক্তিতে

আমি তোমাকেই বুঝি

খাঁচাটা গুছিয়ে রাখো রাত হলে

তোতাপাখি হব একদিন

 

৪.

সময় নেই

তারাদের দেখতে পাচ্ছি স্পষ্ট হাসছে

ওরা জেনে গেছে নীরবতার অর্থ

জমে যাওয়া মাটির উপরে আগন্তুক রাখল একটি

লাল গোলাপ

 

৫.

তাড়াতাড়ি আলো হারিয়ে অন্ধকার পেয়েছি

পৈত্রিক সম্পত্তির মতো

উদাসী চুল বাঁশঝাড়ের নৈঃশব্দ্যের মধ্যে

হাত কপালে তুলে নিয়ে নীচু স্বরে

কেউ তো বলছে ভালোবাসি।

Saturday, August 29, 2020

সমীরণ কুণ্ডু

সমীরণ কুণ্ডু'র কবিতা


নৈঃশব্দ্য খোঁড়া জল


তোমাকে প্রতিটি মুহূর্তে ভাবা আমার অভ্যেস। ইচ্ছে হয় সারাদিন কাছে নিয়ে বসে থাকি। গল্প করি। কতদিন বছরের পর বছর এভাবেই চলছে। একটির পর একটি আয়োজন। সমুদ্রের ঢেউ।

 

মাঝেখানে জীবনের অর্ধ্বেক সময় বিস্তর ফাঁকা। একাকী অবয়বহীন অবয়বের সাথে অসীম। আমার ছিন্ন ভাবনাগুলো জুড়ে দিতাম শুধু। শুনতে বুঝি? নিয়তির দুধারে লাবণ্য প্রসারিত গোধূলির আড়াল দেখেছ কখনও? লুকিয়ে কাঁদতাম। ভেবেছ আমাকে? ভুলেই গিয়েছিলে। কতখানি সময় শূন্যে ছিলাম।

 

ওই প্রগতি, ওই তাড়না, ওই ওই আলোছায়া ঘেরা অস্তিত্বের মাঝে কতকাল আস্তাকুঁড়ের পূতিগন্ধে পরাজয়কালীন আকর্ষণ জানতে সে'কথার খেয়ালিপনা?

 

ডেকেছ সেই একবার মাতৃবিয়োগে আচ্ছন্ন সেবেলা তোমায় দেখলাম জড়তা নিয়ে। এছাড়া আমি বহিরাগত। অলক্ষ্য-স্তূপে সন্ধ্যামালতী ফুল প্রতিটি আঁধারে দিনান্তের বাঁশি। তারা গোনা বাতিক ছিল গো।

 

হ্যাঁ, সেই আমি। কোনো ক্রোধ নেই, আক্রমণ নেই, অভিযোগ নেই, হিংসা নেই, দাবি নেই বৃষ্টিতে ধুইয়ে দিয়েছি বন্য প্রেম। সে ফেরে মেঘ হয়ে অগ্নিশুদ্ধ। আমার নিঃশ্বাস। চৈতন্যে। এরপরেও কখনও বলবে আমাকে ছেড়ে যাবে?

 

বায়ুজড়ানো তোমার সমস্ত শরীরে এখন শরতের স্থলপদ্ম, শিউলি, শালুক, নয়নতারা, টগর ও জবা। গন্ধরাজকেও দিলাম নিভৃতে।

Friday, August 28, 2020

আদিদেব মুখোপাধ্যায়ের কবিতা

আদিদেব মুখোপাধ্যায়ে'র কবিতা


জ্বলন্ত ঘরের ভেতর নাচ


একজন মৃত লেখকের ডায়েরি

কাঠের আলমারির ভেতর

অনেক অন্য বইয়ের সাথে

স্থির হয়ে

অপেক্ষা করছে।

 

‘খুব শিগগির আসব’, বলে

তিনবছর আগে

স্যাম হাওয়া হয়ে গেল।

 

আমি দেশলাই জ্বালি

আর তোমার কথা ভাবি

আর শিখার মধ্যে আঙুল চালাই,

সিদ্ধান্তে আসি না।

 

চল্লিশ বছর কেটে গেলে

কেচ্ছা ও কোলাহলের ওপারে

জ্বলন্ত ইশারা উঠে দাঁড়ায়।

 

রাত ঘন হলে

মৃত লেখক

আমার সাথে কথা বলবেন।

 

বেসিনে বীর্যপাত

এই প্রথম না।

 

চোখ ধুতে গেলে

হাতের আঁজলায়

মণি ঝরে পড়ে।

 

বলা হয়েছে, এ এমন এক পাপ

যা বাদ দিলে কোনো পুণ্য নেই

এমন এক অসুখ

যা বাদ দিলে কোনো সুখ থাকে না।

 

২০১৪, জয়পুর।

 

হোটেলের ঘরে শুয়ে

তোমার জন্যে

কাতরাচ্ছিলাম আমি।

 

আমি একটা শহরে আছি

যেখানে কান্নার শব্দ ভেসে আসছে

আর ধোঁয়ার ভেতর হারিয়ে যাচ্ছে

কারোর বিষাদ।

 

সরাইখানার আলো যদি পথ দ্যাখায়

যদি মুখ কালো করে সিগারেট

আর ক্লাউনটি যদি চিৎকার ক’রে ওঠে

তবে দেওয়ালঘড়িতে ঠিক বারোটা।

 

নীরবতা জ’মে রূপ পায়।

পুরু হয় ধুলোর আস্তর।

কান্না ক্ষীণ হতে থাকে।

ব্যথা ঘনরং, নীল।

 

এসো, আমরা ছমছমে রাতের কথা বলি।

 

সূর্য আর চন্দ্র দুই ভাই

তাদের মধ্যে এক পুকুর সন্দেহ

পানার তলায় ডুবে আছে

ফন্দি আর স্বার্থের জাল

 

একটা প্রশ্নকে এবার ঢিল হিসেবে

ছুঁড়ে দাও

 

চৌচিরের মধ্যে থেকে উঁকি দেবে

টলটলে অতীত

 

একান্নবর্তী আদর

ঘিরে আছে তাকে

 

রাত্রির ফোঁটা জল হয়ে নেমে এলে

এবার

অনেকক্ষণ ধরে শোনা যাবে

যন্ত্রের গোঙানি। 

 

টুকরো ছাইয়ের মতো শব্দেরা বিছিয়ে

আর

নগ্ন লোকগুলো

ছুটে যাচ্ছে

নিজেদের আড়াল করবে বলে।

 

কথা থেকে কথা গড়ায়

কফির টেবলে,

দপ ক’রে

ফণাতোলা

আগুন জ্বলে ওঠে।

 

কিন্তু শেষ নয়,

যেহেতু এটাই শেষ কথা নয়,

যন্ত্রের গোঙানির তালে

জ্বলন্ত ঘরের ভেতর

আস্তে আস্তে

আমি নাচছিলাম।

 

১০ মে, ২০১৭


Sunday, August 16, 2020

সম্পাদকীয়

 সম্পাদকীয়

ছায়ারোদ পঞ্চম সংখ্যায় কবি অভিজিৎ পালচৌধুরী ও অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা। কবির কাছে কৃতজ্ঞ আমরা। পূর্বকথা অনুযায়ী আমাদের তরফে তাঁকে শ্রদ্ধা :

 

জন্মদিনে

প্রণত শব্দের নূপুরের জ্যোৎস্নায়

             ভেসে যাচ্ছে এ জীবনের যে

জন্মনাম,

 

তাকে দিয়ো বকুলপুরের আলোয়

একটু

স্মৃতিজলের আলগা স্পর্শ ও মধুময়...

 

অভিজিৎ বা অয়ন যে কোনো ব্যক্তির নাম নয়

এটা নিশ্চিত হতেই, ভালোবাসা দিয়ে

               

            পেরিয়ে গেছে এমনও রঙিলা সময়...


                                              প্রচ্ছদ শিল্পী : প্রতাপ মণ্ডল


কুমার চক্রবর্তী

                                            কুমার চক্রবর্তীর কবিতা

 

সন্ধিপ্রকাশ

 

তোমার দেহের বিদ্যুৎ­­­­তোমারই সন্ধিপ্রকাশ

কী করে প্রচ্ছন্ন থাকবে আজ?

বিরহদীর্ঘ এ জীবন—

 

মেঘকালের স্থলপদ্ম যেন

অথচ চক্রবাক পাখির মতো উড়ে গিয়ে

বসা যেত তোমার তীর্থ কৈলাসে

মণিময় উঁচু উঁচু তটে

স্নায়ুভরে নিতে পারতাম তোমার

মুকুলিত রতিসৌরভ!

 

আমি তো ঘরপথ জানি না

জানি না নিজের কাছে পরিচিত হতে,

আমি সেই হারানো জন্মবীজের প্রকাশ, যেন

দক্ষিণের হাওরে কালিম পাখির ডাক, তাই

গন্ধবতীর দিকে যাবার জন্য

আমার রক্ত গর্জন আজ

তোমারই চন্দ্রহারে ধ্বনিত হোক

 

তোমার ধ্বনিময়তায়

 

তন্ত্রমুদ্রার মতো দু-দুটি তিল পাহারা দেয় তোমার শরীর

যেন শুক আর সন্ধ্যাতারা

অদৃশ্যভাবে পাহারা দেয় তোমার অসম্ভব-আকাশ

 

তোমার অস্তিত্বরাশি যেন ভাটিতে নেমে আসা

সালসাবিল, মধুবনে

ঘুমিয়ে পড়া মধুপবন, কার পরশে যে সংবেশিত আজ!

 

এখনই নদীর জল ফিরে যাবে উলটো পথে, নিয়ে আসবে

মালভূমির পূর্বরাগ আর চন্দন বনের নিদ্রালু ঘুমধ্বনি।

আমি টের পাই সময় কীভাবে স্মৃতি হয় আর স্মৃতি আবারও

জন্ম দিতে থাকে অজস্র আয়না মুহূর্তের, যা কিনা

তোমাকে উদ্ভাসিত করতে চায় গুলশান মুখরিত হর্ষময়তায়

যা আজ সুর হয়ে, রাগ হয়ে, তান হয়ে,

আমাকে বিবশ করে যায়!

 

কাল ও তুমি

 

সন্ধ্যার নদীকূল ভালো, অবলোপী

দেখা যায় জলের বিষাদ

একটি খঞ্জনা পাখি এইমাত্র উড়ে গেল

মনে তার বিস্ময় অপার

বধিরেরা এই পথে আনমনে বয়ে চলে বেদনার ভার

 

তোমার বসন্তকুঞ্জ হয়েছে যে ঋদ্ধ, এইবার

ফুলে–ফলে কোরকের ছলে

কিন্তু জেনো হিমবতী ঋতু অনুবর্তী

একটি ছায়ার মতো বিস্ফারিত, মৃত্যুর কৌশলে

 

যেসব পুষ্প কলি ফোটালে, কী আশায় আশায়

কালের বন্দনাগীত স্তব্ধ হলে

সে-কোন অজানা থেকে ভেসে আসা নিশ্চিহ্নের দান

গ্রহণ করতে হল নিয়তির বরে

জন্মনক্ষত্রের দিকে ছুটে গেল একটি প্রলয়

প্রবল প্রচণ্ড খেলাচ্ছলে!

 

তবু থাকো প্রীতি নিয়ে, প্রেমনদী বেয়ে দিন যাক

আশ্চর্য দিনের পরমায়ু তোমাকে অস্থির করে

ভিড়বে আমার কাছে আজ

 

পেছনেই পড়ে থাক মরণের রক্তচক্ষু, শূন্যগর্ভ মাঠ!

অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়

                        জন্মদিনের কবি

        

অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা


যাপনলিপি-এক


মিয়োনো দুপুর ডানা-ঝাপটানো পায়রার ডাক

বাক্সর পাঁজর খাঁখাঁ--ডাক নেই, কেউ তো ডাকেনি

এ কোন সময়ে আছি, সত্যি-সত্যি আছি নাকি নেই...!

মানুষেমানুষে সংখ্যাতীত হোয়াটস অ্যাপের ফারাক

 

ওরা তাও বাড়ি ঢোকে, ভুলেও ঢোকে না কোনও খাম

আঁকড়ে ধরে বসে-থাকা বাতিল সাবেকি সেই মন

নিথর রোদ্দুর ভেঙে কতকাল আসে না পিওন

ভিতর শার্সি খুলে সারাদিন দাঁড়িয়ে ছিলাম

 

এল না হলুদ-চিঠি, গায়ে ডাক-পাঠানোর-ডাক

কোথায় পায়রা ওড়ে, বাতাস বিষাদে পুড়ে খাক

 

যাপনলিপি- দুই


আকাশের মুখে-আঁটা বাঁকাচোরা মেঘের মুখোশ

আগুনের ফুলকি বুঝি ঝরে যাচ্ছে মেঘলা জীবনে

ক্রমে ভারী হয়ে উঠল বাড়ি-বসে-থাকবার দোষ...

কোনওদিন ভিজে যেত কত অফুরন্ত আকর্ষণে

 

ভেজার ছ্যাঁকায় ওই ত্বকভরা ফোস্কার দাগ

আশরীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে আদর করছে জলরেখা

পুরাতন নেশা হয়ে রক্তে মিশে রয়েছে সোহাগ

কাগজের নৌকো করে ভাসিয়েছি কবেকার লেখা

 

কমবয়সের বৃষ্টি আজ কেন বয়সের দোষ...!

অঝোর ধারার তোড়ে যাক ধুয়ে জমা আফসোস...

 

যাপনলিপি- তিন


বন্ধুরা কোথায় থাকে? শব্দসাড়া পাওয়া যায় না আর...

রিক্সা-চাকায় ঘুরপাক খায় না সম্ধেরাতগুলো...

আড্ডা ফুরিয়ে গেছে, নটেগাছ মুড়িয়ে গেছে তার...

রূপকথার মলাটে জমে একপরত ছেলেবেলার ধুলো...

 

উড়ন্ত সন্ধে ছিল, দুরন্ত চা-আড্ডা জমিয়ে

গরম পকোড়ার ভাপে তেতে-ওঠা ফ্রেডরিকনগর...

কেরীসাহেবের দেশে কেউ ঘোরে কুয়াশা জড়িয়ে...

আড্ডাখানা ঝাঁপফেলা, তবুও কে ফিরল না ঘর!...

 

বন্ধুরা কোথায় আছে? কোন দ্বীপে? দেশ না বিদেশ ?

আমি কীরকমভাবে বেঁচে আছি দ্যাখ, নিখিলেশ