মন্দিরা ঘোষের কবিতা
এবার ঘুরিয়ে নাও চোখ
১.
এবার
ঘুরিয়ে নাও চোখ
চতুষ্কোণে দাঁড়িয়ে আছে সিদ্ধান্তের কাঁটা
সময়
এসে বুলিয়ে নেবে ঠোঁট
গোলাকার সিঁড়ি বেয়ে
নেমে যাবে ভাঙন
চারিদিকে
রতিঘুঙুরের লালা
থকথকে
প্রজাপতির ঘিলু
ছেটানো
ফুলের গর্ভচক্র
মাড়িয়ে
যেতে গেলে গোটা দেশ ডিঙোতে
হয়
ডিঙোতে
হয় রজঃ রক্ত অণুচক্রিকার আঁধার
বেগুনি
আতঙ্কের বাঁশিওয়ালার দল
লন্ডভন্ড করছে শিষকণার ভবিষ্যৎ
ফসলের
প্রসবযন্ত্রণায় ককিয়ে উঠছে মাটি
এবার
জল গড়িয়ে যাবে সেই দিকে
যেদিকে
কোনো জ্যোৎস্নার নদী নেই
একটাই
রাস্তা যেখানে কুয়াশারা
প্রতিবাদী
হয়ে ওঠে
অথচ
ছোঁয়া যায় না তাদের স্বর
সব
লৈখিক ভয় জ্যা মুক্ত হলে
লোকালয়
ফুটে বেড়িয়ে আসবে নীল ধুতুরাভোর
বিপর্যয়ের জলকেলিতে মেঘ ফেটে
জন্ম নেবে অতিবেগুনি শৈশব
২.
দিনের
মৌখিক সারণিতে সাজানো
আচার বিধির জটিল সূত্রগুলি
সমান্তরাল
চাহিদায় দাঁড়িয়ে আছে
বাষ্পীয়
অভিমান
রুমালের
ঘাম মেখে উড়ে যাচ্ছে মিথ্যের শাঁসালো ডানা
ভাঙা
হাঁটুতে অস্পষ্ট ফেরতের ধারবাকি
অবাধ্য
উইপোকারা খেয়ে ফেলছে
অবশিষ্ট ক্যালসিয়াম আর খনিজ
পারস্পরিক
ঠোঁটের ভূমিকায়
কিলোমিটারের
বাঁক
কুয়াশাখেয়ালে
ডুবে যাচ্ছে ধ্বনিমৈথুন
মাটির
গর্ভাশয়ে জরাঘুম
নিরুপায়
ঘামে ভেজা উদ্ভিদের জানলা
শূন্যের
গা ঘেঁষাঘেষিতে ভরাট
অন্তরিন অসুখের ঘর
৩.
এ
এক আশ্চর্য মন্থন গান
যখন
সব শব্দ গুটিয়ে নিয়েছে ডানা
বুকের
নিচে শ্বেতকরবীর গ্রাম
থেকে
থেকে একটা কোকিলের ডাক
শুষে
নিচ্ছে অভ্যন্তরীণ ঋতুর সংলাপ
ফাঁকা
রাস্তায় মেলে দিয়েছে রোদ
স্বাধীন ভবিষ্যৎ
ফ্ল্যাশলাইটে উঁকি মারছে
খেলার
মাঠ, হলুদ পোষ্টকার্ড, ডুরেশাড়ি
যারা নিজেদের বদলে নিয়েছে
দুপুরের মাত্রাজ্ঞানে
জানলাজীবনের
ঘেরাটোপে
উথলে
ওঠা বুদ্বুদ
ফিরিয়ে দিচ্ছে বসন্তের ধারাবিবরণী
৪.
পুরোনো
গলির সকাল হাতে নিয়ে
দাঁড়িয়ে
আছে একদল শিশু
একঝাঁক
মেঘের ফেরিওয়ালা
বৃষ্টি ফেরি করছে মাটির ঘরে ঘরে
একটা
আলতো নদী ফুটপাত ভেঙে
নেমে যাচ্ছে রাস্তায়
রোদে
গলে পড়ছে শপিংমলের মেকআপ
বালির
নিচে লুকোনো আলো খুঁজে চলেছে ক্লান্ত শহর
এবার
আলপথ ধরে হেঁটে যাবে
নিখুঁত বলিরেখার চরিত্রেরা
একটা
গরীব রঙের বাড়ির ঠোঁটে
ঝুলে থাকবে পাঠশালার ভূগোল
পাখি
আর ঘুড়ির মাঝে
মাথা গলাবে না স্কাইস্ক্র্যাপার
বিকল্প সময়ের হাতপাখা
এবার
মুখোমুখি হবে আয়নাপোশাকে
৫.
তেরছা আলোর গাম্ভীর্যে মুখ বাড়ায়
দিনের ভাষ্যকার
ময়ুরচিবুকে
রোদ মেলে দেয়
বনঘাগরার
সকাল
শালিখদুপুরে
বকুলচিঠির খাম
জলাশয়ে ক্ষমা ফেলে যায় মাছরাঙা
দুটো
হর্তেল বিনিময় করে ঘামসংক্রান্ত
আন্তরিকতা
সন্ধের
শিষ দুপুরের স্তব্ধ ঠোঁটে
গোধূলি
আলোর বাজনায় ডুবে যায়
বিকেলের ঐচ্ছিক
৬.
জেগে
ওঠার পর পুরনো হাইওয়ে ধরে
হেঁটে যায়
ঘুম ও পূর্ববর্তী কর্মসূচি
বিকারের
মতো ঘরোয়া অসুখে
আক্রান্ত
পৃথিবীর সব স্যান্ডক্লক
বালি
থেকে সরে যাচ্ছে
মিশরীয় সভ্যতার শিশির
বৃষ্টির
সাথে পুরনো চিঠিপত্তরের যোগসাজশে
বন্দি কিশোরীমেঘ
বর্ষার
ভিজে শাড়ি বিরহপ্রিয় হয়ে ওঠে
দেরাজে সাজানো
বিচ্ছেদকোটরে
ধিকিধিকি পিতৃতন্ত্রের ধোঁয়া
রোদের স্বীকারোক্তিতে সিদ্ধান্তের ভুল
জড়ো করছে একঝাঁক পায়রা
কোর্টমার্শালে বেঁকে যাচ্ছে পুরুষতন্ত্রের পিঠ
৭.
বিনীত
সকালের গায় লেগে আছে
প্রসবের দাগ
পাখিরাও
জানে কীভাবে
সাজিয়ে
তুলতে হয় ঘর
ঠোঁটে
ঠোঁটে খড়কুটোর অনুরোধ
পালকে কিশোরী বীজের আলো
আমাদের
গ্রামময়তা
উপমায় জিরেতজ্যোৎস্না
মাটির গর্ভে ফসলের উৎসাহ
ফুলের
পরাগ ধ্বনি
আশ্বিনশরীরে
ছায়ামাঠ ডাকে
বিরতি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে নদী
শৈত্যপাথরে কান্নার মৈথুন আঁকা
এবার রজঃস্বলা মেঘ মুছে দেবে
কিশোরী ঘুঙুরের কালশিটে
৮.
সব
বন্দী আলো রোদ হয়ে ওঠার অপেক্ষায়
করাত কলে কাটা পড়ছে
পাখির
পায়ের দাগ
নামাজের রং মেখে এবার উঠে দাঁড়াবে
ছেঁড়া ছেঁড়া সবুজ জনপদ
ভাষ্যকার তৈরি করছে পরবর্তী
ধারাবিবরণী
পাতায়
পাতায় বিচ্ছেদ লিখে
উড়ে যাচ্ছে একদল মেঘতিতির
এখনো গ্রিলের
গায়ে লেগে থাকা
বৃষ্টি
ফোঁটা সাবালক হলো না বলে
জলাশয় হয়ে উঠছে ঘর
শাদা
হাঁসের বিকেল
মাটি
ছুঁয়ে দ্যাখো
সব আলো আলো নয়, মুখোশেরও নাম
রাতের
মৌখিক লেখা আছে
ভোরের
মৈথুনে
ত্রিভুজের কোণে বেড়ে যায় ভুলের মিথোগ্রাফি
জলবিষুব ধরে হেঁটে যায়
সাদা
হাঁসের বিকেল
তোমরা চুপ থাকার অঙ্ক শিখে ফ্যালো
খিদে
এত
খিদের কাছে আকাশ পুড়ে যায়
বৃষ্টিও
অঝোর আঁকে না আর
শোকেরও ভোর নেই
যে
স্পর্শ খুলে যাবে
এত
খিদে নিয়ে কোথায় কুড়োবি মেঘ!
কোথায়
ধরবি জল!
চোখে
যে সমুদ্র আঁকা থরে থরে
No comments:
Post a Comment