লেখা পাঠান আমাদের chayarodpatrika@gmail.com

Tuesday, January 25, 2022

অমিত পাটোয়ারী

অমিত পাটোয়ারী’র কবিতা

রুদ্রশেখর

 

বাংলার শিশিরে ধুয়ে যাওয়া গদ্যের কুকুর

নিঃসঙ্গ সন্ধ্যায়

তোমার পায়ে এসে ঘষে দিচ্ছে মুখ...

জলরঙে আঁকা তোমার আলতার আবছায়ায়

লেগে থাকা ব্যর্থ দধিমঙ্গল ফোঁটা

ও কি খাবে?

 

তুমি জানো, প্রতিবার তাড়িয়ে দেওয়ার পর

কুবকুবের পাশে জেগে থাকে ও

সারারাত্তির...

অন্ধগলির রাস্তার গরম পিচের ঘ্রাণ,

এই শব্দবন্ধ জুড়ে ও কেবল

তোমার আলতাবালা জন্মের কথা ভাবে।

শুভ্রনীল চক্রবর্তী

শুভ্রনীল চক্রবর্তীর কবিতা

রূপক

নষ্ট সময় বেয়ে ধার করে আনা কিছু জটিলতা

      পাশাপাশি সজ্জিত দেহ বরাবর

          কয়েক ক্রোশ-এর ফারাক

 

মৃতদেহ ছুঁয়ে থাকে আত্মার নারী

   দাহ হওয়ার আগ অব্দি

 

এক সবুজ রোদবেলায় আত্ম বিচ্ছিন্ন জোনাকী

      হারিয়ে যায় শবেদের তেজে

 

গাছের শিকড় মাটি ফুঁড়ে উঠে আসে

       খেলনা যোনির তো কোনো ব্যাথা লাগে না

 

পাশাপাশি রূপকের শোরগোলে হারিয়ে যায় সত্য

                       বিগত পূর্ণিমার মন খারাপে

অতনু টিকাইৎ

অতনু টিকাইৎ-এর গুচ্ছ কবিতা

১.

আড়াল

অনেক ভেবে দেখেছি, আমরা প্রত্যেকে একটি করে শুয়োরের বাচ্চা পুষি, এবং আমাদের জীবনের একটা বড় সময়, সেই শুয়োরের বাচ্চাটিকে আড়াল করতে করতে খরচ হয়ে যায়...

 

২.

রাস্তা

 

যে মানুষগুলো শহরে কাজ করে আর বাড়ি ফেরার সময় কোথাও দাঁড়িয়ে কী যেন ভাবে আনমনে, দেখে বোঝা যায় তারা কেউ অমলকান্তি নয়। রোদ্দুর হতে চায়নি কোনোদিন। তারা অনেকটা জ্বলতে থাকা মোমের মতো...যারা নিজেকে ফুরিয়ে কেবল রাস্তা বানিয়ে চলে...

 

৩.

ইশারা

 

কথায় কিছু বলো না। ইশারায় বলো

 

হলফ করে বলতে পারি, মানুষ

ভালোবাসতে শিখেছিল বলেই

ইশারার কথা জেনেছিল।

 

কথায় যা কিছু বলা সহজ। ইশারায় বলো

অভ্রজিৎ দেবনাথ

অভ্রজিৎ দেবনাথ-এর কবিতা

 

একটা শীতের রাত

 

আমি জানালা খুলে দেখি,

শীতের রাতে রাজপথে দাড়িয়ে আছে এক যুবক,

নাইট কার্ফুর খবর হয়তো সে পায়নি...

শহর ঘুমিয়ে যাবার পরে

সবকিছু থেমে গেছে,

ল্যাম্পপোস্টের আলোয় ছেলেটির ছায়া

দ্যা ভিঞ্চির ছবির মতো...

কারো অপেক্ষায় সময়ের অপচয় করে যাচ্ছে অবিরাম।

 

ভোরের সূর্য অনেক দূরে

সমস্ত পথ সরু হয়ে মিলেছে আমার দরজায়,

আশেপাশে এত শেয়াল

ছেলেটা নিখোঁজ হলে

আমি আশ্চর্য  হব না।

সুবর্ণকান্তি উত্থাসনী

সুবর্ণকান্তি উত্থাসনী’র গুচ্ছ কবিতা

 

(১)

 

দ্বিতীয় সূর্য

 

একটি নারী ও একটি পুরুষ চলেছে গাঢ় নীল ব্রহ্মাণ্ডের রথে চড়ে

একটি ঘুমন্ত দেউড়ির গা ঘেঁষে ঘাস খায় একটি আলিসান ঘোড়া

 

নারীর বেগনি খোঁপার মতো ঘোড়ার ক্ষুর পুরুষের লাল দাঁড়ির মতো লোম

আকাশ থেকে ঝরে পড়ছে শাদা বরফ কুচির মতো ইষৎ কবোষ্ণ নক্ষত্র

 

ঝরে পড়ার মধ্যে আছে রৌপ্য তৃষ্ণা

পতনোন্মুখ গোত্রের ঠিক আগে অবধি

আকর্ণ বিস্তৃত মফস্বলের পথ মানুষ ভালোবসেছে

 

শোক'কে নাল পরিয়ে রেস্ জেতার গেঁজুড়ে স্বপ্ন দ্যাখছে কজন

দৃশ্যত বদলের স্বপ্নে ভিটেমাটি কেড়ে গ্যাছে রক্তপূত সত্তরের দশক

 

নারী ও পুরুষটি যে কোথায় হারিয়ে গ্যালো

তাড়ি খেতে খেতে সর্বশ্রান্ত রেসুড়ে

কখন যে মৃত্যুর কোলে ঢলে গ্যালো

আপেল খেতে খেতে তুমি জানতে পারলে কি

 

আধো প্রকৃতি আধো ধর্মে নক্ষত্রের যে রোদ

মোরামে বন্দী হয়ে শূদ্রের উদ্ভাসিত কবচ

 

(২)

 

স্থবিরতা

 

মৃত্যু এসে ঘিরেছে আগে

তারপর নৈঃশব্দ এসেছে ধীরে

                             সলজ্জ অবগুণ্ঠনে

তাকে বলেছি তিষ্ঠ

দীর্ঘ হিসাবনিকাশ বাকি চরাচরের

 

জিহ্বার খেদ পেষিত চাল

সংক্রান্তির স্নান পিণ্ডের খুদকুঁড়ো

ভেসে যাক সুবর্ণরেখার স্রোতে

দর

      ঘৃণা

             শাপে

অবশেষে কিউপিডের স্পর্শে

শীলভদ্র হয়ে মিশে যাবো

                          তার স্থাপত‍্যে

 

(৩)

আক্ষিণ

 

ঘুমের ভেতরে স্বপ্ন নয় কাঁকুড়গাছি স্টেশনের

মালগাড়ির গোঙানি করে চলে প্রদক্ষিণ

 

কিংবা টিক্ টিক্ সতত সঞ্চারিত ঘড়ির কাঁটা

ক্রমশ ধীর বিলম্বিত লয়ে গড়িয়ে চলে

 

সেদ্ধ ধানের নিকোনো উনুন ধান্যলক্ষ্মীর অর্চনা

সুয়োদুয়ো ব্রত চুঙ্গাপিঠা হয়ে আসে ক্ষীণ

 

সিলকাটাইওয়ালা বোঝে না এই দৃশ্যের ভেতর

কতসংখ্যক স্মৃতি জন্ম নেয় কুঁয়োজলে

 

এরইমধ্যে আমার মা তারই সুদূর মেয়েজন্ম

                                      আসে ফেলে

দেবশ্রী দে

দেবশ্রী দের কবিতা


পিছুটান

জন্মের গলিটা কানা। অকপট

উঠে আসে গুনগুন, গালিগালাজ

আর চোরাগোপ্তা চুম্বন

 

সমস্ত উপেক্ষা করে

উঠে যেতে চাই কোনও

ঝকঝকে, বহুমুখী বহুতলে

 

বারবার ডেকে ওঠে মা

সব ওঠানামা গুলিয়ে দ্যায়

বলে, নামিস না, অতটাও নামতে নেই

তমোঘ্ন মুখোপাধ্যায়

তমোঘ্ন মুখোপাধ্যায়ের দুটি কবিতা

 

১. কেন্দুকলাই

 

দেবদাসী ভেবে যার নূপুররটনা করে লোকে,

তার সত্য জানা প্রাণ জগৎ মাতৃকা ভেবে কাঁদে।

নদ ব্রহ্মপুত্র বেয়ে বয়ে যাওয়া কোটি পরমাদে

কেবল নারীটি ধ্রুবপূজার্চনাশোকেবীতশোকে

 

জাগরূক। কামাখ্যার মল বাজে ঘোরা মধ্যযামে।

মন্দিরে চিন্ময়ী নৃত্য। সংসার মায়াবী বোধ হয়।

মৃত খোকা বুকে নিয়ে যে-রমণী কান্নায়প্রণামে

পেয়েছে সন্তান ফিরেতার ভাগ্যে দেবী বরাভয়

 

ছুঁয়ে দিয়ে হাসিমুখে লীন হয়ে গেছে চিদাকাশে।

দেবদাসী ভ্রমে যার মধুনৃত্য রটনায় ওড়ে,

তাকে যে প্রকৃত জানেতার সিদ্ধি যায় কালান্তরে।

তাকেই রচনা রোজগর্ভকক্ষে দিগম্বরী হাসে।

 

অথচ রাজার চক্ষুকৌতূহলীগূঢ় দৃশ্য দেখে

ধ্বংস আনে। ভগবতী পুত্রখাগীঅক্ষমা তামসী।

চিন্ময়ী নর্তনদৃশ্যে কামার্ত পুরুষ রন্ধ্রে রেখে

পাপাতুর মাথা ছিন্ন। রক্ত চাটে কালান্তক অসি।

 

মেনেছি যথার্থ শাস্তি। শিরশ্ছেদে ত্রাণ পেল দেহ।

হত্যাকারিণীর কোলে সসম্ভ্রমেশোয় কাটা মাথা;

বীভৎসা কোমল হবে। সে-ই খুনিসে-ই পরিত্রাতা।

পুত্র-লয় পার করে নেমে আসে গাঢ় পুত্র-স্নেহ।

 

কামাখ্যা-কৃপায় ধৌত জগতে দেবীমাহাত্ম্য এঁকে

আকুল নৈবেদ্যঝরে কেন্দুকলাইয়ের চোখ থেকে...

 

 

২. ইড

 

যেন একটি বাবা এসে ফল কেটে নিয়ে যাবে, ও মা তোকে ভালবাসি যদি...

স্টেপমম পর্নে কিন্তু আলতা দেখানো হয় না; দেখালে কী হত?

এই যে আমরা বিষমবাহু ত্রিভুজে কী সুন্দর এঁটে আছি,

ক্রমশ কত কৌতুক ছিটকে গেল।

 

স্বপ্নের ভেতর, ও মা, রাজকীয় পথ দ্যাখ; দোর খুলে অচেতন ডাকে।

প্লেজা়র, প্লেজা়র... কত ছবি হল, গান হল। তারপর চোখ

জেগে যায়।

 

সামান্যই ঘা ছিল, চেপে রেখে এত বড়, ইদানীং মাথা খেতে আসে।

 

ঘুমের কুয়োয় কত খুন, বমি, রতি, জল। শিশুকাল ডাঙায় অতল...

তবুও ভক্তির জন্ম। বালিঘড়ি ঘুরে গেল। পিতাপ্রেমে পাশাপাশি শুই।

 

আমার খোকাটি আজ কুয়োর তলায় গেছে...

সারারাত কচি গলা শুনি

 

যেন একটি বাবা এসে ফল কেটে নিয়ে যাবে, ও মা তোকে ভালবাসি যদি...

পলাশ দাস

পলাশ দাস-এর গুচ্ছ কবিতা

 

জংশন স্টেশন

 

জংশন স্টেশনে দাঁড়িয়ে দেখি প্রবল মায়া স্রোত

টান টান ঢেউ তুলছে সাগরের ফেনিল জল

ভেসে যাই

 

এই ভেবে দু'পা বাড়াতেই

তীব্র মাঘের শীত গায়ে লাগে

শীত বস্ত্রে জড়ানো এ-শরীর

কোথাও নিভে আসছে মনে হয়

 

ভেসে যাই

কথাটা এখন কেমন দূর পরলোকগামী

তবুও দু'চোখে দারুচিনি দ্বীপের স্বপ্ন খেলা করে

জংশন স্টেশনে দাঁড়িয়ে ভিজে যাই তীব্র বিপ্রলম্ভ স্রোতে

 

কুয়াশা

 

কোনো কথা ফেলে গেছে পরশুর গাছপালা

তুমি সারা দুপুর জুড়ে

আজকের সকাল জুড়ে

ভেবে ভেবে মাদুর বুনলে

বিকেল গড়াতেই 

কয়েকটা সাদা দাগছোপ

মাদুরের গা ধরে ঝুলে আছে

রাত বড়ো হলে

কুয়াশা ঢেকে নেয় ঘাসের মাথা

 

ভিড়

 

মাঝ রাস্তায়  জামা খুলে হেঁটে যায় উদাসীন যুবক

ফুটপাথ জুড়ে রাতের ছেঁড়া ফাটা আঁচলার সুতো

দেখতে দেখতে তারই পিছন পিছনে

চলে যাচ্ছে বৌবাজার কলেজ স্ট্রিট  হাতিহাগান

এলিয়ট পার্কের সামনের জমায়েত

শহীদ মিনারের কাছে জিরিয়ে নিতে থাকা বাস

নিউমার্কেটের ফেরিওয়ালা

তুমি ভিড়ে গিয়ে জনসমষ্টি হয়ে উঠলে

 

তোমরা সবাই দেখলে

এক উদাসীন যুবক জামা খুলে হেঁটে চলেছে

সব কিছু পিছনে ফেলে

শুধু দেখলে না এই ফুটপাথ আর 

যেখানে পড়ে আছে আঁচলার সুতো, দ্বিধাবিভক্ত রাতের আদর

নম্রতা সাঁতরা

নম্রতা সাঁতরার গুচ্ছ কবিতা

 

১. প্রেম-প্রারম্ভ

 

বৃষ্টি মুখর একটি দুপুর। অন্ধকার ঘরের বিছানায় উজ্জ্বল রঙের চাদর পাতা। আমি শুয়ে পড়ি। চাই একটি প্রত্যাশিত ঘুম। এই দূরদর্শী মন যেন কেবল জেগেই স্বপ্ন দেখেএই দুরূহ শাসন। সুতরাং এক চোখ খুলেমানুষের ঘুম। এখানেই বিষয়ী চোখে কোনো বিস্মৃত একপাক্ষিক প্রেমের নায়কের বুকে ঘুম ভাঙে। যতটা জল লাগে আমাকে ডোবাতে চেয়ে সে নেয় আকাশের কাছে। এখানে সম্বিত ফেরাতে ইচ্ছে করে না।

 

২.  ঘনায়মান

 

এবার জমাট মেঘের মতো কথা।

অতীতের খোঁড়াখুঁড়ির পর, আগাছারা জন্মায় স্বাভাবিক উদ্ভিদের মতো তৈরি করে বন।

বেশ কিছুদিনএকই সহবাসে শিকার ও শিকারি। হঠাৎ অমিল শিখিয়েছে

সন্তর্পণে চললে দুজন দুজনকে এড়াতে পারে।

 

৩. বিচ্ছেদ-ভাবনা

 

অপ্রত্যাশিত প্রেমের নিবেদন মনের মধ্যে যখন আনন্দ আনেহেরে যায় আমার বর্তমান প্রেমিক। তার আদরের একফোঁটাও মনে করাতে পারে না আমায়। এত সহজ ভেসে যাওয়া? এই সময় হিসেব করে নেওয়া যায় বিচ্ছেদ। এই মুহূর্ত দোলাচলের। আমি ছুঁড়ে মারি তাকে একটি কবিতা ক'লাইন ছন্দের গালি।

 

 ৪. এবং পুনরাবৃত্তি

 

কিছু নির্লজ্জতা আকাশের কাছে শেখা। যেদিন পরিষ্কার সকাল হয় কিন্তু বেলা হলে বৃষ্টি পড়ে, সেই নির্লজ্জতা।

 শাসনহীন ভাবনার পুনরাবৃত্তি

 হাজার বার প্রেমের নামে পৌঁছে যাই সেই জাহ্নবী তীর

 এখানে আমি ভেবেছিলাম আমার সকল সম্ভাবনারা আমার সন্তানের পিতা।

নিমাই জানা

নিমাই জানার কবিতা

 

ধৃতরাষ্ট্র ও অণু শব্দের মাঠ

 

দ্বিভাজিত রাত্রির মতো এক প্রতিবন্ধী আগুন কিনে লুকিয়ে রাখি

উলটানো ব্যঞ্জনবর্ণের নিচে

 

গলার কাছে আটকে থাকে

সিস্টোলিক সিওপিডি পাঞ্চজন্য ও বিবিধ শরীরের সংখ্যারেখার আয়ুপত্র

রাত্রিকালীন সঙ্গম কথা ধৃতরাষ্ট্র জেনে ফেলেছেন ছায়াঘরের

 

মিলিত অনুশব্দ নিয়ে,

 

আমি গোপন অন্ধকারের ভেতর থাকা সব মৃত মানুষদের খুঁজে

খুঁজে পড়ে ফেলি তিলকহীন পুরুষের চতুর্বেদ কথাস্মিতমুখে

উদ্ভূত জনহীন উলঙ্গদের মাঠে একবার যীশু এসেছিলেন বিনীত, 

তারপর পেরেকের শব্দ ভেঙে তৈরি করেছেন রঙিন জরায়ুগুচ্ছ

 

রাধাচূড়ার পর্বমধ্যের সব নারীরাই কাল্পনিক অঙ্কুরোদগম বীজতলায় দাঁড়িয়ে বিষাক্ত নাভি চুম্বন করে, এখানে একবার ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ক্রাইসিস দেখা যাচ্ছে আমার রুমাল পাখিটির জন্য

আমি এক ফল ভান্ডারের তলা থেকে লাল রঙের তিল ক্ষেত্রগুলো কুড়িয়ে নেব

পাতিলেবু গন্ধ মিশিয়ে

 

আমাদের মৃতপ্রায় ঘোড়াটি এক যুগ আগে স্কেলিটন মার্কা নিয়ে আরো গর্ভগৃহে চলে যায়

মহেশ্বর এখানেই তুলসীপাতার তপস্যা করছেন পরম ঈশ্বরের জন্য

নীপবীথি ভৌমিক

নীপবীথি ভৌমিক-এর দুটি কবিতা

 

আত্ম জিজ্ঞাসা

 

এইসব ক্ষত মুছে গেলে আর

     কোথায় পাবে তুমি হেমন্তের রঙ?

 

   জেগে ওঠে কুয়াশা ঘর

      জেগে ওঠে নিশ্চুপ বিষাদ।

 

 আমাকে প্রশ্নে বেঁধে পেরেছ কি

       নিজেকে জেতাতে?

   

    তাই ক্ষত থাক বরং। স্নান সেরে নাও

     ওই ধূসর জলের দিনে।

      মাটিকে না ছুঁলে কি বোঝা যায় আর

        ভালবাসা কাকে বলে

 

 

  

অসময়ের চায়ের কাপ

  

 

গাঙচিল উড়ে গেলে শূন্য হয়ে যায় আকাশ

   পৃথিবীটা মস্ত বড় লাগে তখন

   শূন্যে ঝোলে মৃত সাপ, আর খোলস ছাড়ানো

    কুমিরের কান্না

 

       কোনো একটা মানুষ আজ হঠাৎ এসে পড়েছে

       আমাদের অচেনার ঘাসের সবুজ বাগানে,

         ‌সুর বাঁধছে বিসমিল্লা, দরবাড়ীতে গভীর ‌ঘুম

 

       গাঙচিল আজ উড়ে যাক

          আকাশে নামুক মৃত সাপ

      অসময়ের চায়ের কাপে লেখা কবিতাগুলো

       জমে উঠুক আবার ফাঁকা ডাস্টবিনের গল্পে।

দেবলীনা চক্রবর্তী

দেবলীনা চক্রবর্তীর গুচ্ছ কবিতা

 

শুধু তোমারই জন্য

 

প্রপঞ্চ কাটিয়ে উঠে

দেখা দিলো একফালি ভোর

বহুদিন বাদে এই আলোতে তোমায় দ্যাখা,

 

চারদিকে ছড়িয়ে থাকা উপাদান

খুঁজে নিচ্ছে চোখের থৈ থৈ

 

আমিবিসমিল্লার সানাইয়ের মতো

রেখাবি বাদি স্বর আঁকড়ে ধরি, আর

মর্মমূল থেকে ঝরে পড়া সমস্ত

সম্বাদি স্বর ভেঙে ফেলি...

অলীক ভ্রম, ব্যর্থ প্রেম, মিথ্যে আশ্বাস

অন্ধ বিশ্বাসের মতো!

 

সবটুকু ছিঁড়ে ফেলতে চাই

যেটুকু আনত ঠুনকো ভাবাবেগ

 

কিন্তু কি সহজে ভেঙে পড়ে

বিরহী রোদবেলা

আমার কাঁচ দেওয়াল ছুঁয়ে জ্যামিতিক নকশা...

 

বেলা পড়ে আসে

তলানি আশ্বাসটুকু নিয়ে কেঁপে ওঠে

পোয়াতী পায়রা অনিত্য সুখে!

 

তারপর...

আমার সিঁদুর-মধুমন্তিবেলা

দিগন্ত সূর্যকে শুনিয়ে যায় ব্যক্তিগত সানাইয়ের ধুন

 

যা তোমাকেও ছুঁয়ে যাবেই একদিন

 

স্রোতস্বিনী

 

এই যে পড়ন্ত বেলার চামর দুলিয়ে অকস্মাৎ

 ছুঁয়ে যাও নদী

 তিরতিরে ঢেউ খেলে যায় স্বচ্ছতোয়ার আ-বুক জুড়ে

 ক্রমশ গাঢ় রং ধরে আবেগী বিস্তৃতিআর

 

পাঞ্চজন্য বেজে ওঠে আন্তর স্রোতে

যে নিনাদ শুনতে পায় কেবলই নীল চোখের পাখিটি

 

এভাবে ছুঁয়ে যাওয়া বা বেবাক উদাসীনতা

সবটাই যেন একগুচ্ছ প্রণয়সম্ভার।

 

প্রিয় সুজনভাজনেসু

 

ব্যক্তিগত সমস্ত তর্যার আবেগপ্রবতা জলাঞ্জলি দিয়ে

মুখোমুখি হই নিয়ন্ত্রিত ইচ্ছা বেসাতের

 

মানভঞ্জনের আদলে এসে দাঁড়ায় প্রিয় সুজনভাজনেসু

 

এলাচ গুঁড়োর অ্যারোমাটিক সৌহার্দ্যে খুলে যেতে থাকে দিনমানের ঋনাত্মক ইচ্ছেগুলো,

যতিচিহ্ন ছাড়াই দৌড়ে বেড়ায় ইমোজির পুঁটুলিতে স্ক্রীন টু স্ক্রীন

সদাহাস্য মুখ বা ভালোবাসার স্ফীত ঐশ্বর্য্য নিয়ে।

 

তখন সব ভুলে অভিসারি সেফটিপিনের জিভ চিরে দি আর

 

রাষ্ট্রের ইচ্ছাধীন কোনো এক জ্যোতিষ্কের উজালায়

আমি সর্বাঙ্গে স্নাত হই ~

 

তখনই

পৃথিবীর যোনি বেয়ে গড়িয়ে আসতে দেখি ভেজা অন্ধকার!