লেখা পাঠান আমাদের chayarodpatrika@gmail.com

Tuesday, July 13, 2021

সব্যসাচী হাজরা, ১৬

                     সব্যসাচী হাজরা'র কবিতা


মানুষ-১১

 

শিক্ষার খরা এই খোলাটোলে

মানুষ তবুও খিদের জন্য বাঁকে, টাল খায় আবেগে

দেহতলের ঘুম

আজ মিসেস নি গৃহজাত গলা থেকে

                                  খুলে নেয় গান

মহাচিৎ গ্রহ আগ্রহে ফেরি করা মুখ

আমরাও পড়ি

মনু উচ্চতায়

ধর্মটোলের মাথাচিবিয়ে খাচ্ছে মুখ

মুখোশকে শাসন করি

                     বঙ্গে

                           বাংলায়...

মানুষ-১২


ব্রহ্মপাড়ে দাঁড়িয়ে ভাবছেন ঘুম

কোনাগমন মানুষের   মন গোনাতে যাই            ম্রিয়গানে যাই

ভাবতেই তথাহত

বাজিয়ে নিচ্ছেন ভোট, ভাতের মানুষ মুগ্ধ টেবিলে যায়

কাঠের জন্য গুনগুন করে এস্রাজ

দরাজ থেকে কেটে আনা গলা

ক্লিক করুন

রক্ত ভরুন

                     অন্য মানুষে…

মানুষ-১৩


মন্তব্য করুন নিজের মানুষে

দাঁতের জন্য খোকা খুকুর প্যাঁচা লোহা দেখে কোনাকুনি ওড়ে

-না পড়ে                   +হ্যাঁ

বনজ যোগে সবুজ প্রণাম

শ্রদ্ধা জানাই নীলিমাকে

স্নেহের নীল          ওগো তথাগত ত দেখে থ

ভয়ের জন্য পাতাল খুলে রাখি

প্রত্নতালে নৃতালে ঘুরছে সন্তান

মতামত দিচ্ছি

হাড় হাতে     হরকরায়…

তমোঘ্ন মুখোপাধ্যায়, ১৬

                  তমোঘ্ন মুখোপাধ্যায়ের কবিতা

 

১. এপিটাফ

 

পাথর সত্যের দাঁত। আমার করোটি ছুঁয়ে আছে।

আর কিছু জলাক্ষর, পাশাপাশি। পরিবার যেন!

ছিল বিদ্যা, রতিভ্রম। শব্দের আরাধ্যা গাছে গাছে

আমার আয়ুর রেখা মধ্যরাতে এঁকে গেছে কেন

 

দুর্জ্ঞেয় রহস্য হয়ে রয়ে গেল সেই প্রশ্ন! আয়ু

নিজের নিয়মে আজ ফিরে যায় হিম-সরোবরে।

শিলাখণ্ডে জেগে থাকে গূঢ় লিপি দিয়ে ঘেরা স্নায়ু,

প্রতিটি রাতের তন্তু খসে যাচ্ছে অন্তিম প্রহরে।

 

বাকি রয়ে গেল কিছু? কিছু কি আরম্ভ হয়েছিল?

নাকি জলাক্ষর ছাড়া অন্য কিছু আজ ঋত নয়?

যে যার নিজের স্বপ্নে নিজের মুকুট মুছে নিল।

ভেঙে, রূপকথা ভেঙে স্মৃতিসৌধে রেখে গেল ভয়।

 

শব্দের আরাধ্যা ক্রমে আয়ু মুছে দিল গাছে গাছে।

পাথর মৃত্যুর নখ। আমার সংহার ছুঁয়ে আছে...

 

২. ভ্রমণ

 

নাতিদীর্ঘ চরাচর। অন্ধকারে শুধুমাত্র শরীরী ভ্রমণ

দীর্ঘ হতে হতে কত মারী-মড়কের পথে খোলস সাজিয়ে

হাতছানি দেয়। যাই, ভাগ্যলিপি ছুঁয়ে সব পাথুরে রমণ

পার করে করে যাই রসাতলে আজ কাড়া-নাকাড়া বাজিয়ে।

 

এই ধ্বংসকাল নয় লিপিবদ্ধ। আমাদের লিপিকুশলতা

সব ভ্রমণের শেষে জড়ভরতের মতো বেঁকে পড়ে থাকে।

এবার গার্হস্থ্য; বুকে স্থির সন্ত অধিষ্ঠিত, তবু তঞ্চকতা

প্রকাশ্যে রেখেছি যাতে লোকচক্ষু-অন্তরালে গৃহী প্রতিমাকে

 

বিসর্জন দেওয়া যায়। গঙ্গাবক্ষে ঠিক যেন মৃত বালিকার

ভেসে ভেসে চলে যাওয়া। নাতিদীর্ঘ চরাচর। যত দূর যাক,

ঘুরেফিরে তার প্রত্যাগমনের চিহ্ন ফোটে। দেখি প্রতিমার

মুখশ্রী নিভিয়ে জাগে খড়ের কাঠামো। অগ্নি তার আয়ু খাক।

 

চলাচল প্রহেলিকা। ভ্রমণ অলীক; আজ পথ অন্তরায়।

দাহ্য প্রতিমার গর্ভে নাতিদীর্ঘ চরাচর জ্বলে-পুড়ে যায়...

 

৩. গুহা

 

গুহা বন্দনায় আমি এলোকেশী সঙ্গিনীর সাথে

গুহামুখে গলুইয়ের আনাগোনা সুকৌশলে রাখি।

মাথা খামচে ধরে তার হাপর-জীবন ওঠে নামে।

গুহা বন্দনায় শুধু ধাতু আছে। ফুলের গোলামি

 

আগে হয়তো ছিল, আজ নখের হ্লাদিনী ভঙ্গি দেখে

ফুল নয়, মাংস-মেদ-ঘৃতযোগে কামিনীবিলাস

মগজ গলিয়ে দেয়। গলে যাওয়া বোধ, বুদ্ধি, শোক

গুহাপ্রাচীরের লিপি ছুঁতে ছুঁতে ভিতরে পালায়।

 

কালো মধ্যযামে দেহ পাশবিক। ঘাড়ে সাধিকার

স্খলিত নিঃশ্বাস নামে। ভোঁতা বজ্র শূন্য মন্থনের

শ্রমে, সুখে কাষ্ঠবৎ; সামান্য বৃষ্টির রেখা ক্রমে

গুহামুখে দৃশ্যমান। এলোকেশী তাতেও নাছোড়!

 

সম্ভাবনা ছিটকে গেল। সাধিকার মুখে হাসি ফোটে।

গলুই গুহার প্রান্তে স্থির; ভাসে আঁশটে স্রোতে একা।

এবার প্রতীক্ষা শুরু। এবার কুম্ভের স্ফীতিকাল।

তরল আহুতি পরে গৃহব্রহ্ম কান্নায় কাঁপাবে।

অন্তর চক্রবর্তী, ১৬

                       অন্তর চক্রবর্তীর কবিতা

 

(বৃক্ষপ্রেরণা)

 

আত্মনিভ ছায়ালোক। অস্তাচলে শিরা।

পদচিহ্ন চিনে নেয় শাক্যহরিণীরা।

যতদূর রণখণ্ড। চন্দ্রাহত আশ।

বজ্র ঠেলে খুঁজে ফেরে শিখরী সন্ন্যাস।

 

ভগ্নপ্রায় পারাপার। বিম্বদেশে স্থাণু।

মার্গসুখে বয়ে যায় অক্ষপরমাণু।

ক্ষতজন্মা মহাকাল। শতছিদ্র ওম।

মগ্নশর তূণে জাগে শৈত্যরথ হোম।

 

দ্বিজ এই যজ্ঞপট। রুধিরাহ্নে যুব।

অভিষিক্তা চরাচরে অন্তপ্রাণ ধ্রুব।

ভেঙে যায় ব্যূহকল্প। চূর্ণ বায়ুশাপ।

অয়ন্তিক ফিরে পান গূঢ় পত্রালাপ।

 

শাক্তরব ইঁট, হল ব্রাহ্ম অবসর,

প্রেত নয়, প্রেত নয়। শূন্যে পাওয়া ঘর...

 

শান্ত এই তরুক্ষীর। হিংস্র তরুশব।

অস্ত্রশাখে লেগে আছে ভ্রান্ত পরাভব।

মূলদেশ অশ্রুগামী। অগ্নিশলা স্বরে -

বল্কলেরা কেঁপে ওঠে ঝঞ্ঝাপরিসরে।

 

দ্বন্দ্বচেতা শ্যামশোক। শব্দে বাড়ে ক্রোধ।

হিমপর্বে গাঢ় হয় উষ্মাপ্রতিরোধ।

রাশি রাশি তনূদ্ভব। তপ্ত শ্রমচারী -

বিটপাগ্রে মিশে যায় ছদ্ম দ্রোহসারি।

 

মায়াময় সমরাঙ্গ। সুচারু প্রান্তিক।

জাতবীর্যে মাথা তোলে দৃপ্ত শতানীক।

পরাক্রমে আবাহনী। যুগন্ধর, যার -

তৃণতীক্ষ্ণে পিছু হটে পাদপসংহার।

 

দ্যাখো, এই বনস্পতি। কুঠারপূর্বক,

বাঘ চেয়ে হয়ে উঠল, আস্ত বাঘনখ...

————————————————————————

 

(প্রত্যুষ)

 

সন্তদের খিদে থেকে, উঁকি দিচ্ছে রক্তবর্ণ টিলা

ঢালের অতন্দ্রে লেগে একজোড়া দিকশূন্যপুর

স্তব্ধলয় মহাকাল, তরঙ্গের সমস্ত অছিলা,

ভূ-ভাঁড়ার বেঁধে নিল অন্তহীন সলিলমুকুর

 

এ কেমন ইন্দ্রজাল? সহোদর ধরাস্বপ্ন তবে?

মধ্যভাগে স্মৃতি আর লাখো লাখো অশথহরিৎ

মুখোমুখি মরুপর্ব ফিরে যাচ্ছে পাতালনীরবে

নিরঙ্কুশ অর্কোপলে লিপি নিল রোপণচরিত

 

মুহুর্মুহু ঘুণাক্ষর দিয়ে গড়া এষণাকাঠামো

প্রবুদ্ধ ঝুরির খাঁজে গুচ্ছময়ী রোশনাই-শাঁস

নামো হে পাঁজরসখা, এইবেলা অশ্রুপাতে নামো

ভবিতব্যে দ্যাখো চেয়ে পারঙ্গম অরণি-আভাস

 

নবীন অতন্দ্র জাগে দশবাঁও আবির্ভাব-জলে

সন্তদের গ্রাসটুকু, উঁকি দিচ্ছে তুষের অনলে...

 

ইতিবৃত্তে মনষ্কাম, সাহচর্যে সিক্ত বাহুমূল

বিন্দু বিন্দু করোদ্গমে অবিরল দিকনির্দেশিকা

অভিষেকে মেধারাজ্য। নিরুদ্দেশে গেল অনুকূল

সন্নিকট শিলাযুগ, কেন্দ্রভূমে চান্দ্রমাস-টীকা

 

সূচ্যগ্র আতপদল, রশ্মিমন্ত্রে স্বীয় যজ্ঞাগার

আত্মাধিক অর্ঘ্যকুণ্ডে ঋজুচেতা অশ্বমেধ-লহু

উদাত্ত কণিকাবাহে ভেসে যাচ্ছে শ্রমণকুঠার

আশ্চর্য আঘাতশিরা, তর্পণের নিখুঁত হুবহু

 

ছলোচ্ছল পাকদণ্ডী ঘিরে ওঠা স্নায়ুশৈল-ত্বক 

রন্ধ্রে রন্ধ্রে শ্রমাঙ্কুর, বল্গাহীন অবয়বশ্রেণী

আনাগোনা ছুঁয়ে আছে দেবগ্রস্ত মনীষারূপক

নির্নিমেষ চতুরঙ্গ, অভিষবে সৌরকায় ছেনি

 

ইতিবৃত্তে যতিদাগ? পদার্পণ তুরীয় নিস্পৃহ?

ঊষার অদৃষ্ট ফেটে স্পষ্ট হল ভাস্করসমীহ...

অমিত পাটোয়ারী, ১৬

                         অমিত পাটোয়ারীর কবিতা

 

আই হোল

 

দিদিমার শ্বাস উঠছে হসপিটালে

প্রবাল বসানো আংটি সমুদ্রসৈকতে ছুঁড়লাম

অ্যাসিড ভেবে ভুল করে হারপিক-পায়ী হল বন্ধু

 

কী স্বচ্ছ এই সবকিছু

বাথরুমে জলের বালতিতে।

বক্র কেবল চোখ, ভ্রু-যুগল, সিলিং আর

একটার নিচে একটা না ফেলা

ক্যালেন্ডার

 

এগরোল

 

ও আজকাল নিয়মিত আসে না

কখনো উপরতলায়, কখনো নিচে গুঁজে দিচ্ছি নিজেকে

বাড়িতে না কাটা মাছ এলেই মনে পড়ে

আমার আর মায়ের রক্তের গ্রুপ আলাদা

পুচকুটা মামমামের কাছে লেগে থাকে আঠার মতন

বাবার সুগার, চোখে ছানি

একটু একটু করে কাটছে

 

আমাদের পায়ের তলায় মাটি সমতল নয়

অবতল। যেমন স্ন্যাক্স্ হোটেলে থাকে!

 

হাফসোল

 

পদ্মপাতার উপর ভগবান দাঁড়িয়ে ছিলেন;

পৃথিবী তখন মাটিশূন্য।

একটা আশ্চর্য বড় পুকুর,

যার পাড়ে বসে অশৌচ খন্ডন করতে হয়

 

সাঁওতালডিহি থেকে মাটি এনে

ভগবান তৈরি করলেন ঘাস

 

মেয়েদের জন্য গাছের আড়াল

 

আড়ালে

পাতালবাসিনী সূত্রধরের সাজপোশাকে এসে

ভগবানকে বানিয়ে দিলেন

কাঠের রাস, স্নান, ব্যাধ,

                             দূর্বা...

 

বাই পোল

 

ইটসুড়কিপাথর নিয়ে তেড়ে আসছে, রাস্তায়।

শুনশান

 

অদ্ভুত পটিয়সী শাল

দরদাম করছি, যেন ইটসুড়কি ছাড়াই

 

আমরা ঠান্ডা, স্থিতধী, স্থৈর্যবান, সহিষ্ণু

আর ওরা

ওরা

ওরা এক একটা...

 

ধুস শালা, আর লিখবই না!

আমিনা তাবাসসুম, ১৬

                     আমিনা তাবাসসুম-এর কবিতা

 

নিস্তব্ধ শহরের রানি

 

দুঃখের সমস্ত চেতনা টুকরো টুকরো করে চিবিয়ে খেলে

সালোকসংশ্লেষ আর রসায়নে কোনো পরিবর্তন হবে কি জানা নেই

কিন্তু এক বুক পাথর বয়ে নিয়ে একটা সাম্রাজ্য চালনা করতে

অনেক দম লাগে বস!

বিষাদের পরতে পরতে সিগারেটের উড়ন্ত ধোঁয়া সমানুপাতিক...

টমেটো সসে চিনির বিকল্প নেই জানলেও

বিশ্রী শব্দে ডেকে ওঠে সকালের কাক,

তৈরি হয় নির্জন কারাগারে চিৎকারের বানভাসি বন্যা।

এখন আমি নিস্তব্ধ শহরের রানি

রহস্যের দুনিয়ায় যতরকম পাপ থাকে

আমি আত্মস্থ করি

যতক্ষণ না শেষ হয়ে আসে আমার অন্তিম নিঃশ্বাস।

তারপর একদিন মোরগের ডাকে চোখ না খুলে

পাড়ি দেবো, বিষাদের টুঁটি টিপে নিয়ে

বহু বহু প্রজন্মের আদিম বিছানার গর্ভে।

 

বাইশ থেকে পনেরো

 

অপেক্ষা শেষের গন্ধ কিছু অন্যরকম ছিল

অনুভব বুঝতে দেয় না কষ্টের মহড়া

সামনে বোধহয় আলো অন্ধকারের লুকোচুরি আছে

তাই শ্বাস বদলে খুশি আসে অথবা কোনো স্বপ্ন...

 

জোৎস্নার পর চাঁদ খুঁজে নেয় প্রেম

কোনো অবসর অথবা নতুন নিয়মের ভাঁজ থেকে,

এদিকে শ্রাবণে বসন্তের ডাক শুনছি আমি

অন্যথায় উজাড় হওয়ার অভিসার

ওত পাতে কাব্যের শহরে।

 

বাইশ থেকে পনের...

হিসেব গোলমেলে বেশ

আমি পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছি

অপেক্ষা আমার দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে অবিরত।

 

নির্জন শহরের চিলেকোঠায়

 

অগোছালো কাব্যের গণ্ডি পেরিয়ে এসে খুঁজি অক্ষর

মেঝের ওপর ছেড়া কাগজের স্তূপ পাশে রেখে

দৃষ্টি ফেরায় আগামীর বাক্য প্রসবে

এখন একটা ভালো কবিতার জন্য এ শহর তল্লাশি করতে হবে

বৃষ্টির মুছে যাওয়া দাগের থেকে

কিংবা আবহাওয়ার মসৃণ ত্বক বেছে নিয়ে।

 

নির্জন অন্ধকারের  চিলেকোঠায়

যে অতীত লেখা আছে সমুদ্রের ভাঁজে ভাঁজে

তাতে এ খোলা আকাশ আর ওই বিষন্ন পেঁচাদের রাজা

জেনে গেছে অবসাদের ভাষা।

এক টুকরো চামড়ার নীচে ফুরিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য্য

কোনো কাব্য লেখেনি কখনও।

তবু সকাল হলে ডেকে ওঠে প্রাচীন কবিতা

জ্বলন্ত সিগারেট পোড়া প্রাণের উচ্ছ্বাস

এই রাত লিখবে আবারও

গহন কোনো মেহগনির গহ্বরে

কিংবা সময়ের অনিশ্চিত রাজসভায়।

সন্দীপন দাস, ১৬

                     সন্দীপন দাসের কবিতা

 

জ্যা

 

আমাদের কোনো আকাশ নেই

মা সেই থেকে কেবল অনাদির কাছে

হাত পেতে বসে আছেন তো বসে আছেন

তবু হাতে মিলছে না আগামী দিনের রসদ

আমাদের কোনো আলো নেই

তবু আলো দ্যাখার আকুলতা আছে...

যে আকুলতা বুকে চেপে প্রিয় গাছগুলিকে হাঁটাতে হাঁটাতে

বাবা মাথা নিঁচু করে চলে যান গোয়ালঘরের দিকে...

#

সন্ধে নামে... মা উঠে পড়েন

 

জীবন সেদ্ধ করতে করতে আনমনা হয়ে

তাকিয়ে থাকেন হারানো পথের মতই...

#

অদূরে মায়াবী তূণ লুকিয়ে অপেক্ষা করো তুমি...

#

ডিরেক্টরের মনকেমন হয়...

সমুদ্রপার জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে

একলা টুপি, মায়ের অপেক্ষাতুর চোখ, বাবার হেরে যাওয়া

কিংবা আবছা আলোর গন্ধ...

#

আমাদের কোনো পাখিধরা খাঁচা নেই

কেবল একটা ঝিমধরা পাখি আছে

প্রতিদিন ভোর হওয়ার সাথে-সাথেই

যার দেহ থেকে খসে পড়ে এক-একটা নেশাতুর পালক...

 

দ্য প্রোটাগনিস্ট

 

তোমার অপেক্ষায় আলো ছুঁয়ে থাকি...

#

রাত নামে...

আলনায় বাবার লুকানো ঝাঁপি থেকে লাফ দিয়ে বেরোয় একটা সাদা বেড়াল

মিউ মিউ করতে করতে জীবন শোঁকে আনাচ-কানাচ

রাতের ভাত চাপিয়ে ঝিমটি কাটেন মা

আমার কেমন যেন শীত শীত করে...

তাই দেখে বিড়ালটার খুব অভিমান হয়

ও লেজ উঁচু করে ভাতের হাঁড়ির সামনে

মা আধপোড়া কাঠ নিয়ে ছুটে যান...

ভাত তখনও ফোটে...

সাদা ধোঁয়া থেকে বার হয়ে আসে ক্ষুধার্ত বাঘিনী

আমার ঘেঁটি ধরে নিয়ে যায় আলোর সাম্রাজ্যে

আমার চোখে-মুখে ধাঁধা লেগে যায়

আমি রা কাটতে পারি না... মুখ থুবড়ে পড়ি

তাই দেখে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ো তুমি

ভাবো, এই বুঝি নির্বাণ পেয়ে গেলে...

#

ভোর রাত হয়ে আসে

মুখে রক্ত নিয়ে আমি এখন খিদেপেটে শুধু মা'কে ছুঁয়ে থাকি...

 

রাহী

    

এ ভোর অভিমানী... তোমার অনেক ভাষা।

আমি চেয়েও ফিরে পাইনি সেই সব শব্দদের

যারা বারবার নিজেদের ঈশ্বর বলে দাবি করত...

#

একা মেঘ তখন শান্ত নদীতে ভেসে যায়...

#

ঘরফেরত পাখিদের ডানা জুড়ে তোমার সাজিয়ে দেওয়া

অভিমান, আনমনা সন্ধে...

পলকে আলো সাজাতে গিয়ে দেখি

মুখ লুকিয়ে একা একা কাঁদছে চেনা ডাকনামগুলো...

বন্ধুরাও ছোঁয়াচে কান্না ফেলে যায় আড়ালে...

#

এ সকাল বড় মনখারাপের... তোমার অনেক কথা।

আমি নীরবে কান্না মুছে তবু ফিরে পাইনি

অভিমানের বাংলা ভাষা...