লেখা পাঠান আমাদের chayarodpatrika@gmail.com

Tuesday, July 13, 2021

তমোঘ্ন মুখোপাধ্যায়, ১৬

                  তমোঘ্ন মুখোপাধ্যায়ের কবিতা

 

১. এপিটাফ

 

পাথর সত্যের দাঁত। আমার করোটি ছুঁয়ে আছে।

আর কিছু জলাক্ষর, পাশাপাশি। পরিবার যেন!

ছিল বিদ্যা, রতিভ্রম। শব্দের আরাধ্যা গাছে গাছে

আমার আয়ুর রেখা মধ্যরাতে এঁকে গেছে কেন

 

দুর্জ্ঞেয় রহস্য হয়ে রয়ে গেল সেই প্রশ্ন! আয়ু

নিজের নিয়মে আজ ফিরে যায় হিম-সরোবরে।

শিলাখণ্ডে জেগে থাকে গূঢ় লিপি দিয়ে ঘেরা স্নায়ু,

প্রতিটি রাতের তন্তু খসে যাচ্ছে অন্তিম প্রহরে।

 

বাকি রয়ে গেল কিছু? কিছু কি আরম্ভ হয়েছিল?

নাকি জলাক্ষর ছাড়া অন্য কিছু আজ ঋত নয়?

যে যার নিজের স্বপ্নে নিজের মুকুট মুছে নিল।

ভেঙে, রূপকথা ভেঙে স্মৃতিসৌধে রেখে গেল ভয়।

 

শব্দের আরাধ্যা ক্রমে আয়ু মুছে দিল গাছে গাছে।

পাথর মৃত্যুর নখ। আমার সংহার ছুঁয়ে আছে...

 

২. ভ্রমণ

 

নাতিদীর্ঘ চরাচর। অন্ধকারে শুধুমাত্র শরীরী ভ্রমণ

দীর্ঘ হতে হতে কত মারী-মড়কের পথে খোলস সাজিয়ে

হাতছানি দেয়। যাই, ভাগ্যলিপি ছুঁয়ে সব পাথুরে রমণ

পার করে করে যাই রসাতলে আজ কাড়া-নাকাড়া বাজিয়ে।

 

এই ধ্বংসকাল নয় লিপিবদ্ধ। আমাদের লিপিকুশলতা

সব ভ্রমণের শেষে জড়ভরতের মতো বেঁকে পড়ে থাকে।

এবার গার্হস্থ্য; বুকে স্থির সন্ত অধিষ্ঠিত, তবু তঞ্চকতা

প্রকাশ্যে রেখেছি যাতে লোকচক্ষু-অন্তরালে গৃহী প্রতিমাকে

 

বিসর্জন দেওয়া যায়। গঙ্গাবক্ষে ঠিক যেন মৃত বালিকার

ভেসে ভেসে চলে যাওয়া। নাতিদীর্ঘ চরাচর। যত দূর যাক,

ঘুরেফিরে তার প্রত্যাগমনের চিহ্ন ফোটে। দেখি প্রতিমার

মুখশ্রী নিভিয়ে জাগে খড়ের কাঠামো। অগ্নি তার আয়ু খাক।

 

চলাচল প্রহেলিকা। ভ্রমণ অলীক; আজ পথ অন্তরায়।

দাহ্য প্রতিমার গর্ভে নাতিদীর্ঘ চরাচর জ্বলে-পুড়ে যায়...

 

৩. গুহা

 

গুহা বন্দনায় আমি এলোকেশী সঙ্গিনীর সাথে

গুহামুখে গলুইয়ের আনাগোনা সুকৌশলে রাখি।

মাথা খামচে ধরে তার হাপর-জীবন ওঠে নামে।

গুহা বন্দনায় শুধু ধাতু আছে। ফুলের গোলামি

 

আগে হয়তো ছিল, আজ নখের হ্লাদিনী ভঙ্গি দেখে

ফুল নয়, মাংস-মেদ-ঘৃতযোগে কামিনীবিলাস

মগজ গলিয়ে দেয়। গলে যাওয়া বোধ, বুদ্ধি, শোক

গুহাপ্রাচীরের লিপি ছুঁতে ছুঁতে ভিতরে পালায়।

 

কালো মধ্যযামে দেহ পাশবিক। ঘাড়ে সাধিকার

স্খলিত নিঃশ্বাস নামে। ভোঁতা বজ্র শূন্য মন্থনের

শ্রমে, সুখে কাষ্ঠবৎ; সামান্য বৃষ্টির রেখা ক্রমে

গুহামুখে দৃশ্যমান। এলোকেশী তাতেও নাছোড়!

 

সম্ভাবনা ছিটকে গেল। সাধিকার মুখে হাসি ফোটে।

গলুই গুহার প্রান্তে স্থির; ভাসে আঁশটে স্রোতে একা।

এবার প্রতীক্ষা শুরু। এবার কুম্ভের স্ফীতিকাল।

তরল আহুতি পরে গৃহব্রহ্ম কান্নায় কাঁপাবে।

No comments:

Post a Comment