লেখা পাঠান আমাদের chayarodpatrika@gmail.com

Monday, February 21, 2022

অমিত চক্রবর্তী

অমিত চক্রবর্তী-র গুচ্ছকবিতা


১.

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি

 

মোহাচ্ছন্ন এই কাহিনীতে সে ছিল কেন্দ্রে, মোহেবিভোর

অথবা মোহ ছড়িয়েছিল সেই মায়াবিনী।

কল্পনার কৃশগাড়ি এমনই হয়, মিশিয়ে ফেলে

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, রিওয়াইন্ড করে যায়

পুরোনো দৃশ্যকাব্য।

চরিত্রগুলোকে গুলিয়ে ফেলি আমি

সংবাদে মারীচ হয়ে যায় ডাকসাইটে লেঠেল,

রাবণ সাজে জমিদার। সাড়া দিতে তাই দুবার ভাবতে হয়

এখন, উইন্ডশিল্ড না পোকা কে আমি,

কোন দৃশ্যে আমার প্রবেশ, কখন যবনিকা পতন।

তবুও আকাশকুসুম, তবুও অধ্যাস এ মায়াসন্ধ্যায়

চকখড়ি দিয়ে আঁকা তরীর স্বপ্ন

ভিড়বে কি কোথাও, কোনো এক সোনার গাঁয়?

 

২.

অপরিচিতের অন্য দৃষ্টি

 

 

আমি অপরিচিতের অন্য দৃষ্টি দেখেছি, তেমন কিছু না, প্রায় অদৃশ্য

সমাজ বা সংসার থেকে, এরকম একটি মেয়ে এসে একবার গাছতলায়

দাঁড়িয়েছিল। আমিও বিস্ময় খুঁজছি, আজীবন জাফরি কাটা দাগে,

প্রেমে আঁকা থিরথিরে লজ্জামুখ

 

                                                       জানি না, যাওধরণের সিঁদুরে মেঘে

তাই মেয়েটিকে চোখে পড়ে, হয়তো সাইড গিগ, হয়তো বন্দী সে,

আমারই মতন বাঁধা পড়ে আছে অতীতের গারদে।

 আপনি মানসিক ভাবে

উন্মুক্ত হতে চান কি’, ইত্যাদি কথাবার্তার পর আমরা এখন প্রায় বন্ধু,

যদিও হারিয়ে যাই মাঝেমাঝে, নিজেকে ব্যবহার করি ঢালের মতো, তবুও

গলায় গলায় প্রিয় হতে শিখছি আমরাদুই হেরে যাওয়া মানুষ এখন

প্রৌঢ়ত্বে ধূসর, বাড়ি আঁকে তারা প্যাস্টেল বা জলরঙে

আমার মেটে ঘর ভাল লাগে, নিকোনো, ওনার টালিচাল।

 

৩.

মেঘের ছাপমারা, অনিয়মিত বাঁশি

 

 

এত তীব্র কুয়াশা আজ

গুঁড়ো গুঁড়ো মেঘ বুঝি খেলা করতে এসেছে

ঘাসফুলের সঙ্গে

এরোসল, বিন্দু বিন্দু তরল ফোঁটায়

গাছ ছেয়ে আছে, পাখির বাসা, ঘরদোর

সব পয়েন্টিলিস্ট আঁকার চিত্রম্যাপ।

 

আমাকে কেউ ডাকেনি এখানে,

ব্রাত্য আমি, ভাঙা

তবু মেঘ অসাবধানে ঝুঁকে পড়েছিল,

নুয়ে পড়েছিল,

আমি তাকে চাঙ্গা করি, বলি, ভাল আছ তো

হেরে যাওয়ার একটা আকর্ষণ আছে, সময় উড়ে যাবে শেষে

মেঘনাদ, লুকোনো অস্ত্র ধুয়ে যাবে আলোর ভিড়ে।

 

 সেই গুঁড়ো গুঁড়ো ভেজা আলোয়

গাছ নাকি নতুন হবে শুনি, পাহাড়ও

গায়ে মেখে মেঘের এই নেশানেশা ফেনা

ভেতর ভেতর যে উচ্ছৃংখল জীবন আছে গাছ,

পাহাড়ের

এখন সেই ফাঁকগুলি, শূন্যগুলি

মেঘের ছাপমারা, অনিয়মিত বাঁশি হয়ে বাজবে।

 

সমব্যথী

 

তার কাহিনীর সমব্যথী ছিল নদী অথবা সে কি এক বটগাছ,

ক্ষয়ে যাওয়া কান্ড, বিষণ্ণ ঝুরি মাটি ছোঁয়ার আগেই

ভেঙেচুরে খানখান। তারা কেউই কিন্তু গল্পটার পুরোটা শোনেনি,

প্রিয়বন্ধুর মতো ঘাড় নেড়েছে কথায়, দরদ ঢেলেছে

অঢেল, দুর্বল মুহূর্তে। আমিও ঘুরপাক খাই সীমান্তে,

অজান্তে জড়িয়ে পড়ি অভিনয়ে, পাহাড় পেরোলেই তো রূপকথা

কিন্তু ভিসা পাইনি আজও।

 

তাকে সঙ্গে নিয়ে বেরোনোর ইচ্ছে আমার, পাহাড় দেখতে,

নদী বা সুখী মানুষ, আগলে আগলে বুকে জড়িয়ে,

দূরপাল্লার পাড়ি দিয়ে। অথচ কতবার বন্দরের পথে

কুয়াশায় চলে যাই, ভুল এক্সিট নিয়ে অন্য হাইওয়ে।

কিভাবে যে স্বপ্ন শুরু হয়েছিল এবং কী ভাবে বাসা গাড়ল

ধ্বংস নিরুপায়, সে কথা আর বলা যাবে না কাউকে, কারণ

আমিও তার গল্পে এখন খলনায়ক অথবা সাধারণ কোনো

চোরজোচ্চোর, কমিক রিলিফ। 

 

৫.

ও বরং দৌড়ে পেরিয়ে যাক

 

ছুটে যেতে যেতে একবার আমি

থমকে দাঁড়িয়ে ছিলাম

আমলকি তলায়, অথবা চালতা

আর তাতে আমলকি গাছ

একঘেয়ে হয়ে গেছিল তার সাধারণ যাওয়া আসা,

দুঃখ সুখ, মানুষের বিবিধ রতন দেখা

একবার হয়তো চমকে পাশ ফিরে ছিল

একটু কৌতূহল, হয়তো কৌতুক প্রথমে,

কে এই অপরিণত বালক, নিরীক্ষণে

বকুলতলায়, আমলকি বা চালতা

বড়বড় দুটো চোখ মেলে

বুঝে ফেলবে সে, জেনে ফেলবে

আমলকির চকমকি ভয়,

না চকমকি দিয়ে ঢাকা সেই ভয়

ধরে ফেলবে এই রোগা বালক,

তার চোখ দুটো দেখো, সে ধরে ফেলবে

দোকানে সাজানোর রহস্য,

পশরার আসল দাম

ধরে ফেলবে ও এক চিলতে তাকানোয়

একচিলতে স্পর্শ নিয়ে

 

 ও বরং দৌড়ে পেরিয়ে যাক আমলকিতলা

 

 ৬.

একচক্ষু হরিণ

 

একচক্ষু হরিণ আমি দেখিনি ইদানিং

এই অসময়ের অন্যান্য ভিড়ে

সে জল খায় দ্রুত, নদীর ধারে একা, অবহেলায়।

লোকচক্ষুর আড়ালে যখন, পাতা ঝরলেও সে

চমকায়, করুণা চায় ভীরু হরিণ,

হয়তো খানিকটা সে নিজেই করুণায় সৃষ্ট।

 

 আমিও স্বপ্নে জল খেতে যাইলেকে, পাথুরে নদীতে,

আমাদের তৃষ্ণা এখনো মেটেনি, মেটে না আলোতে,

জিনিসের ভারে, ঝলমলে আকর্ষণে,

মেটে না আলোতে      

তৃষ্ণা মেটাতে তাই, ঝাঁপিয়ে, শরীর দিয়ে,

অন্ধ মুনির ছেলের মতো জলের সম্মেলনে যাই

এক চক্ষু হরিণের মতো অন্য বিপদ, অজানা বিপদ

আঁকড়ে ধরি আকন্ঠ, দুহাতে, দুচোখে।

অন্তর চক্রবর্তী

অন্তর চক্রবর্তীর দুটি কবিতা

ভোর

--------

 

গলিঘুঁজি ভেঙেচুরে

অবাধ শহর

 

স্থাণু হল মধুমাসে...

 

বারবার ভুলি

 

সড়ক?

না ক্যানভাসে,

 

থমকেছে ভোর?

 

সুরেলা পরাগশ্বাসে

ফোটে

ওই জাদু-তুলি

 

তোর

 

কাজের মিছিল ভেঙে

ছুটে আসে

 

রাঙা-রাঙা রবিবারগুলি

 

 

 

সাধ

-------

 

 

পাখিহারা, জন্তুহীন

বনে বনে

নীরব কুঠার

 

কেঁদে ওঠে,

 

ঘুরে মরে

জোছনা-মাতাল...

 

শিসের আড়াল

ঠোঁটে

 

প্রায়ান্ধ এক হরবোলা

 

খুইয়েছে চাঁদ, তবু

সাধটুকু তার

 

অশ্রুজল সেঁচে

আজ

 

তোমায় এণাক্ষী করে তোলা

Sunday, February 20, 2022

সোহিনী চ্যাটার্জী

সোহিনী চ্যাটার্জী-র গল্প

 

অপরিচিতা

                                          (১)

কিছু কিছু রাত স্তব্ধতার চাদরে মুখ ঢেকে, শিরশিরে শীত আর ঝিরঝিরে বৃষ্টির ছন্দে শহরের বুকে নিত্যনতুন রূপকথা লিখতে ভালবাসে। সূর্য ওঠার আগে পর্যন্ত, বৃষ্টির রূপোলী স্পর্শ দিয়ে বিভিন্ন রঙের রূপকথার জন্ম ঘটায়। রাত যত ফুরিয়ে আসে, রূপোলী রূপকথাগুলোর শরীরেও অন্ধকারের গোপনীয়তা সরিয়ে, সূর্যের স্পর্শ মেখে স্বীকৃতি পাওয়ার তৃষ্ণা জাগে। তবে সূর্য ওঠার পর হাজার ব্যস্ততা আর ট্রাফিকের ভিড়ে এই রূপকথাগুলো যে কোথায় হারিয়ে যায়তারা আদপে কোনওদিনও পূর্ণতা পায় কিনা, তার খোঁজ কেউ পায় না, বলা বাহুল্য খোঁজ রাখে না কারণ শত হোক, তারা রূপকথা তো! রূপকথা যে একদিন হারিয়ে যাবে তাতে আর আশ্চর্যের কী আছে? হারিয়ে যাওয়াই তো তার ভবিতব্য!

ঘড়ির কাঁটা বলছে রাত একটা বেজে চল্লিশ মিনিট। ডিসেম্বরের নিঝুম কলকাতায় বৃষ্টি নেমেছে আলতো ছন্দে। আর একটা রূপোলী রূপকথা তার ঝিলমিলে ডানা মেলে প্রণয়ের আকাশে উড়ে যাওয়ার উপক্রম করছে সুব্রতর মোবাইলে রাত জাগা মেসেঞ্জারের স্ক্রিনটার ভেতর থেকে। মেসেঞ্জারের দুই পাড়ে রাত জেগে বসে থাকা দুজন মানুষ বোধহয় একটু একটু করে স্পর্শ করতে পারছে এই রূপকথাটা। সুব্রতর কাচের জানালা ভেদ করে আসা সোনালী ল্যাম্পপোস্টের ভিজে আলোটা অকারণে হেসে যাচ্ছে ওদের দেখে। টিং করে আবার একটা মেসেজ ঢুকল তার ফোনে

কি গো, বললে না তো, এই যে তোমার গান গাইতে এত ভালো লাগে, গলাটাও এত সুন্দর, তাহলে গায়ক না হয়ে খামোকা ইঞ্জিনিয়ার হলে কেন?

অনন্তরূপার এই প্রশ্নে কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিল সুব্রত। সবে এক মাস হল ফেসবুকে তার আলাপ হয়েছে এই মেয়েটার সঙ্গে। এর মধ্যেই নিজের সম্বন্ধে অনেক কথা বলে ফেলেছে সুব্রত। কিন্তু ঐ পাড়ের মানুষটা এখনও অবধি কিছুই বলেনি। এমনকি ওর একটা ছবি পর্যন্ত দেখেনি সুব্রত। অনন্তরূপার প্রোফাইলের আলো-আঁধারি প্রোফাইল পিকচারে শুধু এক গোছা চুলে ঢাকা একটা রহস্যময়ী মুখের কিছুটা ছায়া ছায়া অংশ ছাড়া আর কিছুই বোঝা যায় না। তার প্রোফাইলে আর কোনও ছবিও নেই। টাইমলাইন জুড়ে শুধুই রাশি রাশি কবিতা। ছবি চাইতে গেলে বলে এখনও তাকে দেখার সময় হয়নি সুব্রতর। প্রোফাইলের নামটাও আসল নয়, ম্যাডামের মতে এখন আসল নাম জানারও নাকি সুব্রতর সময় হয়নি।

সে তো তুমিও অনেক কিছুই বলোনি অনন্তরূপা। এই কথাটা আমিও নাহয় নাই বললাম।

ঐ দেখো, রাগ করলে তো? তোমাকে তো বলেছি, আগে আমার কবিতা দিয়ে আমায় চেনো, তারপর সব বলবো। এখনো সময় হয়নি তোমার সবটা জানার সুব্রত।

রাগ করিনি, কিন্তু এত কিসের গোপনীয়তা বলো তো তোমার? তুমি একটুও বিশ্বাস করো না আমায় তাই না? বিশ্বাস করলে সব বলতে।

ওরে পাগল, নাম, পরিচয় এই সবই তো পার্থিব। এসবের ঊর্ধ্বে গিয়ে এই মানুষটাকে চেন না। কবিতাগুলো বুঝতে পারলে অনেকখানি জেনে যাবি আমার ব্যাপারে।

ধুর! আবার জ্ঞান দেওয়া শুরু হয়ে গেল। এই কী চাও বলো তো তুমি? এইসব জ্ঞান দিয়েই সারা জীবন চলবে? আর কিছু জানতে পারব না তোমার ব্যাপারে কখনও? কী চাও সেটা সত্যি করে বলো তো আমায়, আমিও তাহলে সেভাবেই মিশবো তোমার সাথে।

কী আবার চাইবো! আপাততঃ একটা গান শুনতে চাই। আজ শ্রাবণের পূর্ণিমাতে  কী এনেছিস/ হাসির কানায় কানায় ভরা নয়নের জল/ বাদল-হাওয়ায় দীর্ঘশ্বাসে যূথীবনের বেদন আসে/ ফুল ফোটানোর খেলায় কেন ফুল-ঝরানোর ছল…” এই গানটা রেকর্ড করে একটু পাঠাও তো। রাত অনেক হল, এটাই শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়বো।

তুমি না আর শুধরোবে না!

খামোকা ঝামেলা না করে পাঠাও না গানটা। প্লিজ।

আচ্ছা বাবা ঠিক আছে। পাঠাচ্ছি।

গিটারটা নিয়ে গান রেকর্ড করতে বসল সুব্রত। বাইরের বৃষ্টিটা বোধহয় সেই গান শুনতেই আরেকটু ঝেঁপে এলো।

 

                                                            (২)

দুপুর একটা বেজে পঁয়তাল্লিশ মিনিট। অফিসের ক্যান্টিন থেকে টিফিন সেরে এসে, মোবাইলের নেটটা অন করতেই ভুরুটা কুঁচকে গেল সুব্রতর। রোজ একটা থেকে দেড়টার মধ্যে একবার ফোন বা অন্তত একবার মেসেজ করে অনন্তরূপা। কিন্তু আজ কোন মেসেজ বা মিসড কল কিছুই নেই। গত চার মাসে একটু একটু করে সম্পর্ক গাঢ় হয়েছে সুব্রত আর অনন্তরূপার। এখন হোয়াটসঅ্যাপ বা ফোনেই অধিকাংশ সময় কথা বলে তারা। রাত জাগা মেসেঞ্জারের এখন পদোন্নতি হয়েছে সারা রাতের ফোন কলে। তবে অনন্তরূপার আসল পরিচয় এখনও জানতে পারেনি সুব্রত। দেখাও করেনি দুজন কোনওদিন। অনন্তরূপা দেখা করতে বা নিজের পরিচয় দিতে এতটা অনিচ্ছুক বলে ভেতর ভেতর তার ওপর একটা চাপা অভিমান আছে সুব্রতর। তবে অনন্তরূপাকে সে খুব বেশি জোর করতে সাহস পায় না। সে জানে অনন্তরূপাও তাকে ভালবাসে, ভালবাসার টান সে অনুভব করতে পারে, কিন্তু কোনো একটা অজানা কারণে তার আসল পরিচয় সে সুব্রতকে কিছুতেই দিতে চায় না। সুব্রতরও আজকাল তার পরিচয় জানতে চাইতে একটু ভয় করে। তার মনে হয়, অনন্তরূপার সাথে তার এই নামহীন সম্পর্কটা যেন একটা স্বপ্ন, ওর পরিচয় জেনে গেলেই যেন স্বপ্নটা শেষ হয়ে যাবে, ঘুমটা ভেঙে যাবে অসময়ে। ফোনটা ডেস্কের নিচে রেখে ল্যাপটপে আঙুল রাখতেই সুব্রতর ফোনটা বেজে উঠল। অনন্তরূপা ফোন করেছে।

হ্যালো

কী ব্যাপার? আজ এত দেরি করলে ফোন করতে? মেসেজও করোনি কোনও। টেনশন হচ্ছিল। তুমি ঠিক আছো তো?

আরে হ্যাঁ রে বাবা আমি একদম ঠিক আছি। তুমি বড্ড বেশি চিন্তা করো আজকাল।

কী আর করবো! চিন্তা করা ছাড়া আর কোন উপায় রেখেছো আমার? ফোনে না পেলে যে বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেবো, তাও তো হবে না। আর কোনওভাবে যে বাড়ির খোঁজ করব, কী বলবো লোককে? যার বাড়ি খুঁজছি তার নামটাও আমি জানি না?

আরে! হঠাৎ বাড়ি নিয়ে পড়লে কেন বলো তো? আমার দেরি হল একটা লেখা শেষ করতে গিয়ে বুঝলে? আর তাছাড়া...

তাছাড়া?

তাছাড়া সারপ্রাইজ পেতে গেলে একটু অপেক্ষা করতে হয়। নাহলে সারপ্রাইজের মজাটা থাকে না। আর আমি চাইনি সেই মজাটা নষ্ট হোক।

মানে?

মানে কালকে তোমার জন্মদিন না?

তোমার মনে ছিল?

আমার মনে থাকবে না তো কার থাকবে শুনি? কাল তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।

সারপ্রাইজ? কী সারপ্রাইজ শুনি?

এখনই শুনবে না রাতে বলব?

বলো না বাবা! এখন না শুনলে আমার কিন্তু কাজে মন বসবে না। আমি কিন্তু

রাত্রি অবধি অপেক্ষা করতে পারবো না বলে দিলাম।

আচ্ছা রে বাবা বলছি বলছি শোনো। কাল ভাবছি তোমার এতদিনের আব্দারটা মিটিয়ে দেব। দেখা করবো তোমার সাথে, তোমার অফিসের পাশের ক্যাফেটায় অপেক্ষা করো। আর এইযে তোমায় রাত অবধি অপেক্ষা না করিয়ে এখনই বলে দিলাম সারপ্রাইজটা, সেইজন্য কাল তোমার থেকে আমার একটা চকোলেট পাওনা রইলো কিন্তু।

সুব্রতর ফোন ধরা হাতটা সজোরে কেঁপে উঠল একবার। তার শিরদাঁড়ার ভেতর দিয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল। এসব কি বলছে অনন্তরূপা! তার মনে হল এই গোটা পৃথিবীতে যতটুকু আনন্দের বাস, সবটুকু আজ এসে দাঁড়িয়েছে তার সামনে। আজকের আগে অনন্তরূপাকে অনেকবার দেখা করতে বলেছে, তার পরিচয় জানবার জন্য জেদ করেছে, কিন্তু অনন্তরূপার

সাথে সত্যি সত্যি দেখা হলে সে যে এতটা খুশি হবে, এতটা খুশি যে সে কোনওদিন হতে পারে, সেটা কখনও উপলব্ধি করতে পারেনি সুব্রত।

কী গো চুপ করে রইলে কেন? দেখা করবে না? নাকি চকোলেট দেবে না? কোনটা?

এই তুমি সত্যি বলছো? তুমি সত্যি দেখা করবে কালকে আমার সাথে?

বোঝো কাণ্ড! ভর দুপুরবেলায় ফোন করে তোমায় খামোকা মিথ্যে বলতে যাবো কেন? তবে একটা কথা তোমায় আগেই বলে রাখি সুব্রত। কালকের পর থেকে আমাদের সম্পর্কটা কিন্তু আর নাও থাকতে পারে। এটা নিয়ে আমি অনেক ভেবেছি, আমার টাইমলাইনে শেষ কিছুদিনে পোস্ট করা কবিতাগুলো পড়লেই বুঝতে পারবে যে আমি কতখানি দ্বন্দ্বে ছিলাম। তারপর মনে হল এত ভেবে আর কী হবে, যা হবে দুজনের ভালোর জন্যই হবে নিশ্চয়। রবি ঠাকুর অভয় দিলেন, “ভাল মন্দ যাহাই আসুক, সত্যেরে লও সহজে…” তাই সত্যটাকে সহজ ছন্দে পরিস্ফুট করে তুলতেই কাল যাচ্ছি তোমার সঙ্গে দেখা করতে।

এসব কী বলছ তুমিএত ভাল একটা খবর শুনিয়ে মনটা ভেঙে দিচ্ছ কেন? দেখা হলে সম্পর্ক শেষ হবে কেন শুধু শুধু? তুমি কি আর এই সম্পর্কটা রাখতে চাও না? তাই দেখা করে সান্ত্বনা পুরস্কার দিয়ে চলে যাচ্ছ?

ধুর! তুমি কিছুই বোঝো না। আমি কি একবারও বলেছি যে আমি সম্পর্কটা আর রাখতে চাই না? আমি শুধু এটাই বলছি যে যা হবে সেটা মেনে নেওয়ার শক্তিটুকু রেখো নিজের মধ্যে। যাই হোক, তুমি কাজ করো, পরে কথা হবে আবার, রাখি।

অনন্তরূপা ফোন রেখে দেওয়ার পর, আকাশের দিকে তাকিয়ে অনেকক্ষণ বসে রইলো সুব্রত। নানা রকমের চিন্তা ভাবনা আশঙ্কা, তাকে ঘিরে ধরেছে একসঙ্গে। শেষ দুপুরের ক্লান্ত রোদ্দুর তার কপালের দুশ্চিন্তার ভাঁজগুলো ছুঁয়ে দিয়ে আবার মিলিয়ে যাচ্ছে কোথায়। তার ভয়টাই সত্যি হবে না তো? স্বপ্নটা শেষ হয়ে যাবে না তো? ঘুম ভেঙে যাবে না তো অসময়ে?

                                                                     (৩)

ক্যাফের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতে যেতেই একটা দমকা হাওয়ার ঝাপটা এসে লাগল সুব্রতর মুখে। হাওয়ায় ভর করে যেন হাজারটা স্বপ্নের গন্ধ লুটোপুটি খেতে খেতে আঙুল বুলিয়ে দিয়ে গেল সুব্রতর বুকে। আজ তার স্বপ্ন সত্যি হওয়ার দিন। কাল রাতে নিজেকে অনেক বুঝিয়েছে সুব্রত, আজ যাই হয়ে যাক না কেন, অনন্তরূপাকে সে তার থেকে আলাদা হতে দেবে না। নিজের ইচ্ছেশক্তির ওপর এইটুকু বিশ্বাস আছে তার। তাই এখন আর ভয় করছে না । এখন শুধু এক পৃথিবী অপেক্ষা জমাট বেঁধে রয়েছে তার বুকে। অনন্তরূপার আসার কথা ছিল ঠিক দুপুর একটার সময়। এখন ঘড়িতে একটা বেজে পাঁচ মিনিট। কেন যে এত দেরি করছে কে জানে। সুব্রত একবার ভাবলো তাকে ফোন করে দেখবে কিনা। তারপর ভাবল থাক, আর একটু অপেক্ষা করতে যেন তারও ইচ্ছে করছে। অনন্তরূপার সাথে থাকতে থাকতে সেও এখন অপেক্ষার মাধুর্যটা বুঝতে শিখেছে। অনন্তরূপা যদি প্রথম দিন-ই তার সাথে দেখা করতে রাজি হতো, তাহলে আজকের দিনটা এতটা বিশেষ হয়ে উঠত না সুব্রতর কাছে। আজ এত আনন্দ, এত ভাল লাগা, সবকিছু ওই অপেক্ষারই ফল। আসার সময় একতোড়া হলুদ গোলাপ কিনে এনেছে সুব্রত। অনন্তরূপার হলুদ গোলাপ খুব পছন্দ। সেগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অনন্তরূপার সাথে প্রথমদিন ফেসবুকে আলাপ হওয়া থেকে শুরু করে সব কথা মনে পড়ছিল সুব্রতর। যে ইচ্ছেগুলো নিয়ে সে কাল পর্যন্ত তার মনে এত ভয় ছিল, এত সংশয় ছিল, আজ সবকিছু সত্যি হতে চলেছে।

ভাবনার স্রোতে ভেসে যেতে যেতে ঘড়ির দিকে খেয়ালই করেনি সুব্রত। ওয়েটারের ডাকে চমক ভাঙল তার। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল দুটো বাজছে। কী ব্যাপার? এতটা দেরি হওয়ার তো কথা নয়। অনন্তরূপা কি তাহলে চিনতে পারেনি তাকে? ও কি এখানেই আছে কোথাও? নাহ! এবার একবার ফোন করতেই হচ্ছে। পকেট হাতড়ে ফোনটা বের করে অনন্তরূপার নম্বর ডায়াল করতে যেতেই, তার ফোনটা বেজে উঠল। অনন্তরূপা ফোন করেছে। এবার বোধহয় অবশেষে তার অপেক্ষা শেষ হবে। প্রচন্ড উত্তেজনায় ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে একটা অপ্রত্যাশিত পুরুষ কন্ঠ ভেসে এলো।

মিঃ সুব্রত রায় বলছেন?

আজ্ঞে। কিন্তু আপনি কে? এই ফোনটা পেলেন কোথায়? এই ফোনের যে মালিক সে কোথায়?

দাঁড়ান। শান্ত হোন। আমি লোকাল থানার সাব ইন্সপেক্টর অমিত সুর। এই ফোনের যিনি মালিক, অর্থাৎ অপরাজিতা পাল, তাঁর একটা ভয়াবহ অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। ক্যাবে করে যাচ্ছিলেন কোথাও একটা। ড্রাইভার, প্যাসেঞ্জার দুজনেই স্পট ডেড। ঘটনাস্থল থেকে তাঁর মোবাইল ফোন, আর একটা ব্যাগ উদ্ধার করা গেছে। ফোন চেক করতে গিয়ে দেখলাম আপনার নম্বরেই সবথেকে বেশি কল গেছে এই মোবাইল থেকে। আপনি নিশ্চয়ই ওঁর খুব পরিচিত কেউ হবেন। তাই আপনাকে ফোন করছি । যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, ঘটনাস্থলে চলে আসুন, ডেড বডি নিয়ে এক্ষুনি হসপিটালে যেতে হবে ডেথ সার্টিফিকেট জেনারেট করার জন্য। আর এতগুলো স্টেপ ওঁর কোনও পরিচিতের উপস্থিতি ছাড়া আমাদের পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়।

স্পট ডেডকথাটার পরে আর কোনো কথাই ঢোকেনি সুব্রতর কানে। তার মনে হচ্ছে সে যেন আর তার দেহভার সামলে রাখতে পারছে না। এক্ষুনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবে। তবু কী একটা ক্ষীণ আশাকে আঁকড়ে ধরতে চেয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো,

কী নাম বললেন? অপরাজিতা পাল? কিন্তু এই ফোনটা তো অনন্তরূপার..

অনন্ত সামথিং না? হ্যাঁ ওটা তাঁর ছদ্মনাম মনে হয়। ওঁর ব্যাগ থেকে পাওয়া আইডি কার্ডে আসল নামের পাশে ব্র্যাকেটে এই নামটাও লেখা আছে। যাই হোক, চলে আসুন তাড়াতাড়ি। আমি লাইভ লোকেশন পাঠাচ্ছি আপনার হোয়াটসঅ্যাপে। ডেডবডি নিয়ে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করা যাবে না।

ফোনটা ছিটকে পড়ে গেল সুব্রতর হাত থেকে। চাপা কান্নার দমকে তার শরীর কেঁপে উঠছে বারবার, কিন্তু সে কাঁদতে পারছে না, কাঁদার শক্তিটুকুও এখন তার নেই। সে শুধু ভাবছে ভাগ্যের এ কেমন পরিহাসহা ঈশ্বর! তাদের প্রথম দেখা তাহলে এইভাবেই হবার ছিল? যাকে দেখার জন্য আর কয়েক মুহূর্ত আগে পর্যন্ত তার অপেক্ষার বাঁধ ভেঙে যাচ্ছিল, এখন তাকেই দেখতে যাচ্ছে সে, কিন্তু পৃথিবীর সব আনন্দ আর স্বপ্নের রং পাল্টে একটা কালচে বিষাদের বিষ এখন ঘিরে ধরেছে তাকে। এই বিষ রঙের তীব্র হুঙ্কার, স্বপ্ন, রং, প্রেম এই সবকিছুর ওপর থেকে তার বিশ্বাসগুলোকে টেনে ফেলে দিচ্ছে কোন গভীর অন্ধকার খাদের ভেতর। চরম তিক্ততায় ভরিয়ে দিচ্ছে চারিদিক।

 

                                                                    (৪)

ঘটনাস্থল সুব্রতর অফিস থেকে খুব একটা দূরে ছিল না। ক্লান্ত পায়ে সেখানে পৌঁছে ভিড় ঠেলতে ঠেলতে ডেডবডির সামনে এগিয়ে যেতে লাগল সুব্রত। কিন্তু সেখানে পৌঁছে সে যেটা দেখল, তার জন্য সে একেবারেই প্রস্তুত ছিল না। বিস্ময়ের সীমা রইল না তার। এ তো সেই তার কলেজের সহপাঠী অপরাজিতা পাল! পরমা সুন্দরী ছিল একসময়। ফার্স্ট ইয়ারে সুব্রত তাকে পছন্দও করত। সে বুঝত উল্টো দিকের মানুষটাও তাকে পছন্দ করে। মাঝে মাঝে টিফিন ব্রেকে কথা হত দুজনের। কিন্তু দুজনের দুজনকে ভাল লাগার কথাটা কেউ কোনওদিন সাহস করে বলে উঠতে পারেনি। তারপর স্ট্রিম আলাদা বলে, দুজনের সেকশন আলাদা হয়ে যায়। যোগাযোগ বা একে অপরের প্রতি আকর্ষণও কমতে থাকে। অবশ্য অপরাজিতার দিক থেকে আকর্ষণ বোধহয় কোনওদিনই কমেনি। তাই তো থার্ড ইয়ারে পড়ার সময় অপরাজিতার ওপর যখন অ্যাসিড অ্যাটাকটা হল, হসপিটাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরেই সে প্রথম এসেছিল সুব্রতর কাছে। এসেছিল সঙ্গ খুঁজতে, একটা বন্ধুত্বের হাত আশা করেছিল সে সুব্রতর কাছ থেকে। অ্যাসিড অ্যাটাকের খবর কলেজে সবাই জানত। সুব্রতও জানত। তবু যেন এই অবস্থায় কিছুতেই চিনতে পারছিল না সে অপরাজিতাকে। তার বিভৎস মুখ দেখে ভয় করছিল সুব্রতর, একটু একটু ঘেন্নাও করছিল। সকলের সামনে অপরাজিতাকে নিজের বন্ধু বলে পরিচয় দিতে লজ্জা করছিল তার। অপরাজিতাও বোধহয় বুঝেছিল সে কথা। তাই কিছু না বলেই, চোখের জল মুছতে মুছতে চলে গিয়েছিল সেদিন। আর কোনওদিন আসেনি সুব্রতর কাছে। তার সেই চলে যাওয়াটা কোনওদিন ভুলতে পারেনি সুব্রত। যতবার সে কথা মনে পড়ত, লজ্জায় নিজের সামনেই নিজের মাথা হেঁট হয়ে যেত তার।

কিন্তু সেই অপরাজিতাই যে অনন্তরূপা, সেটা সে স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। আনমনেই অপরাজিতার মুখের পোড়া দাগের ওপর হাত বোলাতে থাকে সুব্রত। আজ একটুও ঘেন্না লাগছে না তার। তার বুকের ভেতরটাও তো ঠিক এইভাবেই পুড়ছে। সেখানেও এমনি অজস্র পোড়া দাগ। তাই ওই পোড়ার যন্ত্রণাটা আজ অনেকটাই বুঝতে পারছে সুব্রত, আঙুল দিয়ে অনুভব করার চেষ্টা করছে পোড়া দাগগুলো।

চলুন মিঃ রায়, এই বডি আর ফেলে রাখা ঠিক হবে না। যা রক্তপাত হয়েছে, তাতে আর ফেলে রাখলে পচন ধরতে শুরু করবে। ও হ্যাঁ, ঘটনাস্থল থেকে ওঁর মোবাইল আর ব্যাগ ছাড়া আরেকটা জিনিসও উদ্ধার হয়েছে। আপনার নাম লেখা একটা প্যাকেট। এই বলে একটা গোলাপি রঙের প্যাকেট এনে সুব্রতর হাতে ধরিয়ে দিয়ে গেলেন সাব ইন্সপেক্টর অমিত সুর। কাঁপা কাঁপা হাতে প্যাকেটটা খুলে সুব্রত দেখল একটা গীতবিতান রাখা রয়েছে। তার প্রথম পাতায় কবিসুলভ জড়ানো হাতের লেখায় লেখা আছে রবি ঠাকুরেরই একটা গানের কিছুটা অংশ,

তুমি মোর পাও নাই পরিচয়

তুমি যারে জান সে যে কেহ নয়, কেহ নয়

মালা দাও তারি গলে, শুকায় তা পলে পলে,

আলো তার ভয়ে ভয়ে রয়

বায়ুপরশন নাহি সয়॥

এসো এসো দুঃখ, জ্বালো শিখা,

দাও ভালে অগ্নিময়ী টিকা।

মরণ আসুক চুপে, পরমপ্রকাশরূপে,

সব আবরণ হোক লয়

ঘুচুক সকল পরাজয়…”

বইটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইল সুব্রত। শেষবেলার রোদ্দুর আলতো বিলি কেটে দিয়ে যাচ্ছে সুব্রতর ক্লান্ত চুলে। সেই একই রোদ্দুর গিয়ে পড়ছে অনন্তরূপার অ্যাসিডে পুড়ে যাওয়া মুখের ওপর। এই আলোর সাজে খুব জীবন্ত লাগছে অনন্তরূপাকে। তার ফেসবুকের ছায়া ছায়া প্রোফাইল পিকচারের থেকে অনেক অনেক বেশি জীবন্ত লাগছে। যে অনন্তরূপা আজ পর্যন্ত সবচেয়ে রহস্যময়ী নারী ছিল তার জীবনে, আজ যেন সে নিজেই এই সূর্যের রঙ ধরে এসে নিজেকে মেলে ধরতে চাইছে সুব্রতর চোখের সামনে। সুব্রতও একটু একটু করে চিনতে পারছে তাকে। সুব্রতর চোখের কোলটা এখনও ভিজে। কিন্তু এখন আর আগের মতো অসহায় লাগছে না তার। মনে হচ্ছে একটু একটু করে যেন সে চিনতে শিখছে অনন্তরূপাকে। তবে পুরোটা চিনে উঠতে আরও একটু সময় লাগবে। অনন্তের রূপ যার তাকে চিনতে তো সময় লাগবেই! একটা জীবন সময় কি তার জন্য যথেষ্ট?