জনক-এর গুচ্ছ কবিতা
মাছরাঙাটি ও আমি
রোজ একটি মাছরাঙা'কে সঙ্গে নিয়ে ঘুরি আমি—
হাটে-বাজারে, মাঠে-ঘাটে, শ্মশানে-কবরে,
খেত-খামারে...
ঘুরতে ঘুরতে ক্ষুধায় ক্লান্ত হয়ে পড়লে
আমরা দু'জনেই নদীর
বুকের ওপর এসে উড়তে থাকি!
মাছরাঙাটি তার রঙিন ডানায় উড়তে উড়তে
ঝুপ ক'রে ডুব
দিয়ে
তুলে আনে জ্যান্ত মাছ, সঙ্গে আমার হতাশাও!
ওর দ্যাখাদেখি আমিও উড়তে থাকি, ডানা ছাড়াই; ডুব দিই...
তুলে আনি নদীর দুঃখ, কান্না ও গভীরতা!
আমি কখনও কখনও লজ্জিত হয়ে পড়ি,
আমার পাশে মাছরাঙাটিকে দেখে।
কখনও তার পরনে বাটি প্রিন্টের উজ্জ্বল শাড়ি,
কখনও-বা রঙিন চুড়িদারের সঙ্গে একটি ম্যাচিং
ওড়না,
নানান ধরনের সাজপোশাকে সে আমাকে পাগল করে তোলে!
আমিও এক বোহেমিয়ান ছুটে বেড়াই তার পিছু পিছু...
ভরসা করি, আলাপ জমাই—
শুরু হয় আমাদের অসামাজিক আলাপ;
আলোচনায় উঠে আসে ব্যর্থতার কথা, বিচ্ছেদের কথা, অবসাদের কথা।
উঠে আসে নদীর কথা, নদীর ভেতরে থাকা মাছের কথা...
সে জানায় কীভাবে রঙিন পালকের জীবনও তুচ্ছ হতে
পারে!
শিখিয়ে দেয় বেঁচে থাকার রসদ।
কীভাবে আকাশ থেকে নীচে পড়ার পরেও ডানার ঝাঁপটায়
আবার আকাশে ওঠা যায়!
এইভাবে আলোচনা চলতেই থাকে—
আমি তাকে মানুষের প্রেম ও বিরহের গল্প শোনাই।
ও হাসতে হাসতে উড়তে থাকে,
আর
বেড়ে যায় আমার পৃথিবী সম্পর্কে নানা অজানা
কৌতূহল।
আমি যতবার তাকে মানুষের গল্প শোনাই
ততবার সে একটি করে মাছ তু'লে আনে নদীর ভেতর থেকে...
কখনও কখনও মাছরাঙা'টি
নদীর গর্ভ থেকে মাছের বদলে মুখে ক'রে তুলে আনে তোমাকে ঘিরে থাকা আমার জন্মগত কৌতূহল!
কিছুটা লেখা, অনেকটাই প্রেম
১.
আমাকে কখনও পাবে না জেনেও
একটি মেয়ে
রোজ নিয়ম ক'রে আসে
আমার
ঘুমে-ঘোরে, স্বপ্নে-বিভোরে, মোহে-মায়ায়
ও
মুগ্ধতায়...
যার পরাবাস্তব আছে, বাস্তব নেই।
২.
গুচ্ছের ভাবনা আসে মাথায়। কিছুই ভাল লাগে
না।ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আসি তাদের কখনও নদী-পুকুর-জলা-ডোবায়। তবু তারা ফিরে ফিরে
আসে। যেভাবে বৃষ্টি আসে। ছদ্মবেশে। তুলে নিই মাথায় আবার। সঙ্গে তোমাকেও,
বৃষ্টিবিন্দুর মতো...
৩.
আমি একটি মেয়েকে ভালবাসি।
নাম, বা গোত্র— কিছুই নেই তাঁর।
এমনকি নেই মা-বাবাও।
থাকার মধ্যে আছে কেবল ডাকনামটুকুই—
আক্ষরিক।
এসব জানার পর
সবাই আজকাল আমাকে প্রেমিক কম, পাগল ভাবে বেশি।
৪.
এই যে আমি এতকিছু লিখি, তোমাকে ভেবে—
জানি, এসবের ভেতর তেমন কিছুই নেই।
যা আছে,
তা ভুল আর ভুল—
ছন্দে
অলঙ্কারে
বানানে
কাব্যরসে...
তবু,
এই যে না-থাকা, তারও ভেতর যেটুকু আছে :
নির্ভুল ও চিরকালীন অন্তঃসারশূন্যহীনতায়—
তুমি
তুমি
আর
তুমি,
প্রথম প্রেমপত্রটিতে ছিলে যেমন...
৫.
ব্যথা হয় তোমার।
যন্ত্রণা হয়—
আমাকে ধারণ করতে, শরীরে।
প্রসব ব্যথা নয়, তবু জানি—
তুমিও একদিন
ব্যথায়
যন্ত্রণায়
মায়ের মতোই
ছটফট করতে করতে বের করে দেবে আমাকে ঠিকই,
হৃৎপিণ্ড থেকে...
No comments:
Post a Comment