লেখা পাঠান আমাদের chayarodpatrika@gmail.com
Showing posts with label সিরিজ কবিতা. Show all posts
Showing posts with label সিরিজ কবিতা. Show all posts

Saturday, January 11, 2025

আরণ্যক দাসের কবিতা, ছায়ারোদ নতুন সংখ্যা

যে অন্ধকার আমাকে শক্তি চেনায়নি

 আরণ্যক দাস

 

১.

 

তিন ঘরে তিনটে লাইট

               তিনটে ফ্যান

               তিনটে প্রাণ।

একজন দিন শেষে ঝিমিয়ে আসে

একজন দেশের, দশের খবর জেনে রক্ত মাথায় তুলে সময় করছেন নষ্ট

আমি ফোনে ব্যস্ত

ফোনে বন্ধুরা...

 

দু'একবার চিৎকার শুনেই

গণশক্তি গুছিয়ে বাবা ভেঙচি কাঁটা ক্ষোভ উগড়ে দেন আমার ওপর।

মা'কে খুশি রাখবার দায় আমাদের

 

কখন নন্টে ফন্টে

          কখন পাহাড়

                  কখন টম এন্ড জেরি

খাওয়ার টেবিলে একসাথে দুটো মুখের মৃদু হাসি আমার নজর এড়ায় না।

এসব দেখেই খুশি থাকতে হয় আমাদের।

 

২.

 

গঞ্জে বহুদিন বৃষ্টির দেখা নেই

বাড়িতে খিচুড়ি রান্না প্রায় বন্ধ

মুখ দুটো ব্যাজার হয়ে থাকে।

 

৩.

 

বাবার বহুকাল কিডনির সমস্যা

মায়ের সমস্যা ফুসফুসে

ওদের মিলিত সমস্যা আমি।

 

৪.

 

আমার বাড়ির ডোমিনেটিং মহিলাদের ভুল সিদ্ধান্তে

পুরোপুরি অন্ধকারে ঢাকা গলিতে এসে পড়েছি

এ জায়গা আমার বসবাসযোগ্য নয়।

 

৫.

 

দিনের শুরুতে মায়ের কোল

দিন শেষে মায়ের বুক

মায়ের গন্ধ।

এই আমার স্থান

কেবল এই গন্ধ নেওয়া আমার কাজ।

 

৬.

 

অগষ্টস জনের মতো অপরিপাটি ছিলাম না।

অন্ধকার গলিটার কুকুরগুলোর সমগোত্রীয় আমি এখন।

অর্ঘ্যকমল পাত্রের কবিতা, ছায়ারোদ নতুন সংখ্যা

কয়েকটি কবিতা

 অর্ঘ্যকমল পাত্র

১.

কবিতায় প্রেমের কথা আসে। কবিতায় আঘাতের কথা আসে। কবিতাই ঘাতক— তাই তোমাকে অস্বীকার করি৷ তোমার চোখ, ঠোঁট, শৌখিন দাঁত, ওদের তাচ্ছিল্য করি৷ তোমার নমনীয় দেহ, উদাত্ত স্তন— তাতে হেলায় থাবা বসাই; আবার ভুলে যাই পরক্ষণে। কবিতায় দেহের কথা আসে। কবিতায় শূন্যতার কথা আসে। কবিতার শূন্যতা— এ-কথা বুঝতে গিয়ে আমি নির্বাক তাকিয়েছি তোমার দিকে; দেখেছি এক-আধটা গাছ, কেমন দীঘির দিকে ঝুঁকতে থাকে কিছুদিন সোজা থাকার পর। দেখি, তারপর চোখ বুজি— প্রেমে কবিতার কথা আসে।

আঘাতে, সম্পূর্ণ কবিতা…

 

২.

কবির কাছে কবিতার আসা একটি দুর্ঘটনা মাত্র। বিদ্যুৎ ঝলকের মতো। সেই দূর্ঘটনার কবলে পড়েই, মফঃস্বলের একটি তরুণের দু-চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। অগত্যা, তার দৃষ্টি চলে গিয়ে, যেটুকু পড়ে আছে— তা শব্দ। ফলত, সমস্তরকম গদ্য বাদ দিয়ে, মেদুর অক্ষরবৃত্তে এখন তার নিয়ত চলাচল। একটি কবিতা লেখা শেষ হলে, তা পাঠ করে। একা একা শোনে। এভাবেই দীর্ঘদিন শব্দে অভ্যাস হয়ে যায়। যেমন সিগারেটে। যেমন বিষণ্ণতায়। যেহেতু চোখ নেই, এখন সে আরও অধিক বুঝতে পারে শব্দের জোর! শুনতে পায় ফুল ফোটার শব্দ, ভোরের আলো কেমনভাবে মাটির উপর পা ছড়িয়ে বসার আগে ধুলো ঝাড়ে। শুনতে পায় দেওয়ালের অপরপ্রান্ত থেকে কার যেন এক কামাতুর নিমন্ত্রণ। একটি কবিতা লিখতে গিয়ে শুনতে পায়— তার পেট থেকে উঠে আসছে খিদের চিৎকার…

 

৩.

আর মৃত্যু দেখব না বলে, মৃত্যু বেছে নিয়েছিলাম। তুমি এলে। জাগিয়ে তুললে। দুগ্ধ সজীবতায় জন্ম দিলে নতুন। দেখলাম খাড়াই। চূড়া স্পর্শ করে বুঝলাম— পৃথিবী আদতে ঢালু। কত বাঁক, চোরাবালি, উপত্যকা। কত ভ্রমণ বাকি থেকে গেছিল বলে জীবন বিস্মাদ! কত শব্দ কানে আসেনি বলে আকন্ঠ সুরহীন! মৃত্যু দেখব না বলেই মৃত্যু বেছে নিয়েছিলাম। তুমি এলে। জাগিয়ে তুললে৷ কত রহস্যময় জঙ্গল। শিকারী পশুর থাবা, লালারস— কী বিচিত্র মোহ! রোমাঞ্চকাহিনী। কানে কানে বলে গেলে— জঙ্গলের ভেতরে, নির্জন গুহার ঠিকানা৷ সভ্যতার বিপ্রতীপে বঞ্চিত সময়,  অবহেলিত বিষাদ। মৃত্যু দেখতে চাইনি বলেই মৃত্যু বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি এলে গুহার দরজায়। জাগিয়ে তুললে। আর আমার পরিত্যক্ত লিঙ্গ থেকে তৈরি হতে থাকল নতুন কবিতা…

Sunday, September 25, 2022

শঙ্খজিৎ দে, শারদ সংখ্যা

 

শঙ্খজিৎ দে'র সিরিজ কবিতা


বাজারীকাকের সঙ্গে কথোপকথন

 


 ১.

কেউ দাঁড়াবে। চৌচির হয়ে যাবে সময়।

বুনো ঘাসফুল লতাপাতা নিয়ে—

একটা লাইব্রেরি বেঁচে থাকবে: ধুকপুক, ধুকপুক

 

ছেলেটা দৌড়ে যাবে অমৃতস্তম্ভ খুঁজতে।

প্রেম—ছোঁ মেরে নিয়ে যাবে বাজারী কাক!

নদীর ভিতরে অসংখ্য সীমানা...

সীমানা পেরোতে পেরোতে পাখিরা নিয়ে যাবে আশ্চর্য সব ম্যাজিকের মতো বুক

 

ছেলেটা দৌড়ে দৌড়ে যাবে।

রান্নার উনুনে পুড়ে যাবে যৌবনের কবিতা।

তারাভরা নিঃসঙ্গতার ভিতর—

 

একটা বিকেল, বর্ষা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে উঠোনে।

 

২.

ফুলগুলো সব অন্ধকার হয়ে আছে

জানি মিথ্যে এ আতরদান—

আততায়ীর কোলে মাথা রেখেছি বারংবার;

জীবনস্তোত্র ভুলে যেতে যেতে

পথহীন ক্রমাগত রৌদ্রজ্জ্বল সন্ধ্যায়।

 

ফিরি এ বন্ধ্যা নক্ষত্রের কাছে—

আলো নেই, আশ্চর্য নেই, ঠিক নেই, ভুল নেই

 

এক একটা বিড়ালের শীৎকার শুনে

ভাবি অমঙ্গল ঘুরপাক খাচ্ছে পথে

 

মিছিলের শব্দ আসে ভোরে

দূরন্ত আগুনের নদী, শুক্রগ্রহ জ্বলজ্বল করে দ্রুত।

 

জানি এ প্রত্যন্ত বাসনা, পৃথিবীকে ঘিরে আছে ক্ষুধা-মাংস-লালা

সমস্ত প্রেমিকাই সেখানে নিতান্ত ফ্যাকাশে অবয়ব।

 

জানি এ সীমান্তরেখাজল

আসা হবে না কোনোদিন ছুঁতে

 

যাও, যাও পৃথিবীর কাছে

ফণা তুলে দাঁড়িয়ে আছে জীবন।

 

৩.

উড়ে যাচ্ছে, সাংকেতিক—

তরুণীর চুল।

 

একবার আলো-বাতাসের মতো

বাতাসের কাছে খুলে রাখি আগুনের ডানা,

ডানাজোড়া ভরে আছে মা-র যন্ত্রণা,

ভরে আছে নিদ্রিত বাবার ক্যানসার

ভরে আছে ভাদ্র দুপুরের ঘুম,

আমাদের বাড়িটির কাছে, বাড়িটির গায়ে

পুরোনো বর্ষাকাল— শ্যাওলার গায়ে জল থই থই

 

উড়ে যাচ্ছে তরুণীর চুল

কাছে গিয়ে ডাকাডাকি করি

 

অর্জুনের, পলাশের, কদম্ব, আকন্দ ছায়ায়

একদিন দেখা হবে। একদিন, অনন্ত দুপুর...

শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়, শারদ সংখ্যা

শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়-এর কবিতা

 সীমান্তিনী সিরিজ

১.

সেবার ফেনিল হয়ে উঠলে। ঝাপটা মারলে একবার, দুইবার নৌকোর বুকের কাছে। এ অপরিচিত ঢেউয়ের হিংস্র ঝাপটা কতক্ষণ সহ্য করে থাকা যায় । এই ভিক্ষু, যে ক্ষুধা কাতর সেজে অনিমেষ বসে আছে তোমার পায়ের কাছে, তাকে একবার দেখেছো কখনো। হৃদয় হারিয়ে গেছে তোমার সিঁথির মতো ঘন প্রপঞ্চ বাগানে। আশাবরী মেঘগুলি এতোদিন ভেসে গেল নিয়ত নৌকার দিকে, তবু তুমি গান গেয়ে ওঠোনি একবার। কতদিন কোকিলের গলা চেপে ধরেছি তোমার কন্ঠস্বর  শোনার তাগিদে। তুমি ফেনিল হয়ে রয়ে গেলে সীমান্তিনী চিরকাল।

 

২.

এ বিকট সমুদ্র গর্জন শুনতে শুনতে লবনাক্ত কান বধির হয়ে গেছে। আমার কাতর ডাক একবার শুনে যদি নৌকো ভেড়াতে আমার তটে। আমি রবিসন ক্রুশো নই। এতো বঞ্চনা সহ্য হয় না। পাগল হয়ে যাবো অচিরেই। আমার মাথার উপর উড়ছে ক্ষুব্ধ অ্যালব্রেসট্রিস। ভয় করে সীমান্তিনী। ভীষণ ভয়ের কোলে আমি ডুবে যাচ্ছি অতলান্ত।

 

৩.

যে বিপন্নতা আমাকে দ্যাখাবে বলে এতোদূর এতোপথ নিয়ে এলে, আমি তার মোরাম ফলকগুলি গুনে রেখেছি। লাল শুষ্ক মোরামের ধুলো এখনও আমার আস্তিনে জড়িয়ে আছে। সেই রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে স্পষ্ট মনে পড়ে তুমি হাতের আঙুল ছেড়ে দিলে সহসা, কুয়াশা জড়িয়ে নিল তোমাকে। কালো অন্ধকার কূপিত পাষাণের দ্বীপে বন্ধুদের অভিশাপ গায়ে মেখে বসে আছি সেই থেকে। যৎসামান্য আলো বেরিয়ে আসছে আমার কপাল ফেটে। শরীর থেকে বেরোচ্ছে অন্তিম ম্যাগটের দল। তুমি দেখতে পাচ্ছ না!  শুনতে পাচ্ছ না!  জল দাও সীমান্তিনী। পিপাসার্ত আমি।

 

৪.

কোনো প্রার্থনা যদি না শোনো, তবে হত্যার পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলো দেখিয়ে দাও। আমার অপারগতা পানাফুল হয়ে ফুটে উঠছে তোমার প্রেমিকের ফেলে রাখা মদের গেলাসে। কেমন হাসতে হাসতে ছিঁড়ে নিচ্ছ তার কুঁড়ি। সাজাচ্ছ খোঁপায়। কোন্‌ অপারেজ শক্তিতে আমাকে ঠেলে দূর করে রেখেছ আমি জানি না। সাত তাবাক দূরে বসে খিলখিলিয়ে হাসছ, হাড় ওঠা দেহের দিকে তাকিয়ে। ঘুরে তাকাও সীমান্তিনী, আমি আছি, অকৃত্রিম। কেবল পাথর হয়ে শুকিয়ে গেছি। জল দাও। এ কোনো অনুরোধ নয়। দয়া করো। সায় দাও আকুতিতে। কোনো আত্মহনন আমাকে শান্ত করবে না।

সিদ্ধার্থ দাস, শারদ সংখ্যা

সিদ্ধার্থ দাস-এর কবিতা

উদয়ভানু

 

১.

ভালোবাসা পেলে হৃদয়সঙ্গী ফকির হবে—এমনটাই জানি। ছায়া ছুটছে মানুষের পিছনে। আমরাও ছুটছি ছায়ার পিছনে তুঙ্গে মনোবল। বাস্তবিক মিলনে কখনো থেমে থাকে না নটরাজ। সূর্যাস্তে গর্ভপাতের ছায়া। অনুভূতি ভিন্ন কেউ ট্যাগ করবেন না নন্দনকানন। সম্পর্কক্রান্তি প্রদীপের ব্যাকুলতা চোখে সন্ধে নেমেছে উত্তরণের শিখায়, চন্দ্রলেখা যেমন নির্ভীক।

 

২.

রুটি রুজি মিলিয়ে সংসার। রাজরাজাদের সন্তাপ শেষ হলে মরে অন্যত্র, অধিকাংশ কোকিলের ডিম। নিজের প্রতিবিম্ব হাজার দেখবে বলে রাজা আয়না ভেঙে ফেলেছিল। একটা টুকরো ছিটকে পড়ে আছে আজও, উজ্জ্বল মূল্যবোধ। কাকে নিয়ে বাঁচবে সে প্রশ্ন রেখাপাত! বিলক্ষণ জানি, তুমিও ভালো নেই, জ্যোৎস্না নামাঙ্কিত সন্ধ্যায় উদ্যম পারিপার্শ্বিক।

 

সাম্প্রতিক উস্কানিমূলক

১.

কার ছবি জানি না।

সম্ভবত নিজেরই

ক্রীড়নক ছেলেবেলা।

 

যা চেয়েছে, দিইনি

রাস্তাতেই শেখা,

অধিকাংশ অজানা।

 

সংস্কার নিয়ে বাঁচে

আর একবার ভাবো

যদি কিছু করা যায়।

 

যুদ্ধ অপরিবর্তনীয়

বাড়তি কুটিরশিল্প

চাকরি আর হবে না!

 

২.

যা ভাবলে অস্পষ্ট

যদি শুদ্ধ উচ্চারণে

মল্লার অনুরাগ বৃষ্টি

 

তিওর বশংবদ ভাত

নেড়েচেড়ে দেখাও

কাঁকর কোথায়!

 

হাঁড়িতে ফুটছে সের

ধান জমানো বারান্দা

তুঘলক পর্দা ওঠে!

 

কান্না মুখে মানায় না

অভাবে স্রোতস্বিনী

চিরকাল ব্যঞ্জ ফাটায়।

 

৩.

সহজপ্রাপ্য সৃষ্টি জল

আকাশ ভরা পাথেয়

ভার্সান এগিয়ে চলে।

 

অনেকে না জানলেও

অধিকাংশ জানে

ভাবাবেগ নদী বর্ণিত।

 

চিহ্নিত সময়ের অংশ

রাজত্বপাট গুটিয়ে

বেনজির বিরহপঞ্জী।

 

সভ্যতা আদিম ভাবতে

কার না ভালো লাগে

তন্মাত্র সততা অনুপ্রাণিত!

 

মাতৃভূমি লোকাল

 

কতটা লুকিয়ে রাখতে পারলে নিজেকে বোঝাও ন্যায়রত্ন!


বিরিয়ানির চাল সিদ্ধ হতে দম লাগে, অঙ্গার হাঁড়ির ঢাকনায় কলরোল।

ছিটেবেড়ায় গোবর নিকনো, নয়তো আমা ধরে যেত পুরো দেয়াল।

 

বলেছে সন্ধি করে নাও। না-হলে জাপটে ধরো লেবু চোর, কিছুতে  ছাড়বে না!

বালি খসে যেতে পরিতাপের অন্ত নেই।

 

সময়মতো সংসারী না হলে ছেলেরা শনি, মেয়েরা খনি হয়ে ওঠে।

বাধ্য কাউকে বাঁচতে দেয় না।

এমত সম্ভাবনাময়। ফুল ফল পাতার কিরণে—বিকাশ অপরিহার্য।

Monday, April 11, 2022

শঙ্খজিৎ দে

শঙ্খজিৎ দের সিরিজ কবিতা

ধ্যানচোখে অসংখ্য অবয়ব

১.

সন্ধ্যের দিকে ফিরে আসা যায়

        গেট বন্ধ হয়ে আছে আশ্চর্য শিকলে

 

মনোরম, সবুজস্নাত বারান্দা

নদীরাজ্য ভেসেছে প্রাগৈতিহাসিক আঁধিঘুম

 

এখনও যুবতী শাখাটি এসে জল ছিটিয়ে দোষী সাব্যস্ত করল না!

 

২.

 

মা তোমার চোখ এখনও

ভুল হয়ে আছে পরিত্যক্ত আগুনে।

 

এখনও দেওয়ালময় প্রশ্নচিহ্ন

ঘুরপাক খাচ্ছে নক্ষত্রগুলো

 

দূরে হাতে তালি মেরে সাইরেন বাজাচ্ছে নির্জনতা।

স্তন্যঋণ শোধ করব বলে, জিহ্বারাজ্যে মৃদু অন্ধকার!

 

৩.

 

যে ভুলপথে বয়ে চলে গেছে

তার জন্য ভেবে ভেবে ডুবসাঁতারে বেঁচে আছি।

যে ভুলপথে চলে যাচ্ছে একা,

 

তার নিশ্চয়ই সন্ধ্যাতারা জমানো আছে বুকে।

 

৪.

 

ফাল্গুন কৃষ্ণা একাদশীর দিন

 

মধ্যরাতে সফেদ হয়ে যাচ্ছে বারান্দার রঙ।

 

আমি চোখ খুলতেই পারলাম না।

রজনীগন্ধার শাদারঙ ছেয়ে ফেলেছে দেহ।

 

মাতুমি দুগগা-দুগগা উচ্চারণ করে

আমাকে চলে যেতে দাও....

 

'যাই নয়, আসি...'

 

৫.

 

পরিক্রমা করতে করতে কর্তাল বাজিয়ে ঘরে ফিরি ভোরে।

কুয়াশার ভিতর জন্মান্ধ পাখিগুলো মেঘ ঝাপ্টাচ্ছে।

 

দূরপাল্লার ট্রেনগুলো এত আওয়াজ করে কেন?

নিঃসঙ্গতার ব্রত ভেঙে যায়!

 

৬.

 

বাড়িতে পিলসুজগুলো

একখণ্ড দুঃখ কাঁধে দাঁড়িয়ে আছে।

 

কালিপুজোর বাজনা ফুরিয়ে গেছে বাবার চিতায়...

পুকুরে কাঠামের গা বরাবর ফেলে এসেছি পিতৃপিণ্ড।

 

৭.

সন্ন্যাসবস্ত্র পরতে পারিনি বলে

গোধূলিলগ্নে দাঁড়িয়ে ছিলাম একা।

মহাকাল ঠেলে ফেলে দিচ্ছে,

ঐ দ্যাখো স্রোতস্বিনী জীবন...

 

৮.

পায়রাগুলো স্নান করতে করতে

হয়ে উঠল নারীটির বৈধব্য।

 

শূন্যে চোখ চলে যাচ্ছে

 

অন্ধকার-পাখিরা টহল দেয় আকাশ।

 

৯.

একটা শিশু

        ঢিল মেরে ভেঙে ফেলল কবির জানালা

 

ঢিল কি কখনও

মানুষের ভীষ্মতিরের ফলা হয়ে উঠতে পারে?

 

একটা শিশু কবিটির জন্য সভ্যতার কাছে

আসন পাতল...

 

১০.

 

যোগেশগঞ্জের প্রৌঢ়া প্রতিমার কাদামাটি দেহে

একটা বিষণ্ণ অঙ্কুরের সবুজ।

 

নৈহাটির গঙ্গা দিয়ে ভেসে যাচ্ছে পুরোনো আলাপ।

 

ভ্যালেন্টাইন, তোমার জন্য আরো একবার মরব...

 

১১.

 

প্রেমিকার বাবার পাঞ্জাবিটায়

হাত বুলিয়ে চোখ মুছেছি আরামে।

 

বাবাতুমি কি বোধিগাছ,

 

এই জন্মে চিনলাম না!

 

১২.

মা, তোমার কপালে

লেগে আছে বিগত জন্মকালের ক্ষত।

 

বুকে মাথা রাখো

 

তোমাদের বাড়ির ভিতর আমারই অসংখ্য অবয়ব স্তম্ভইট হয়ে আছে।

 

১৩.

 

শান্তিনিকেতনতোমার পলাশ গাছের নীচে

পাতা ছেয়ে আদর পেতে রাখো।

 

ধ্যানচোখ চলে যায়

 

আমাদের দাম্পত্যের গাঢ়,

তোমার শুক্লপক্ষের চাঁদ…

পারমিতা চক্রবর্ত্তী

পারমিতা চক্রবর্ত্তীর কবিতা

একা

১)

আমাদের কোনো লিগাল অ্যাসোসিয়েশন আর নেই৷ যে ভাবে রাস্তায় বেওয়ারিস লাস পড়ে থাকে ৷ কুকুর গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে চলে যায়৷ আমাদের সম্পর্কটা ঠিক তেমনই৷ কখন যে একটা যতিচিহ্ন বসে গেল বুঝলাম না। গলা ফেটে রক্ত বেরোয়৷ রক্তাক্ত হয়েছে আমাদের ভূমিকাটা৷ এখন বেঁচে থাকাটা খুব দুরারগ্য ব্যধির মতো৷ তার থেকে মৃত্যুই শ্রেয় ৷

 

২)

জানি বহুদিন তুমি আলাদা হয়ে গেছো৷ মিথ্যে বলতে বেশ শিখে গেছ৷ কিন্তু আমি কেন এত ভাবি। তোমার গলা ব্যথা হলে তুমি চা খেতে ঘন ঘন৷ ঘুম থেকে উঠে গাছে জল দিতে দিতে এক কাপ আমার হাতের লিকার চা ছাড়া তোমার দিন শুরু হত না। কে করে দেয় এখন এসব তোমায়৷ জানি সবই অভ্যাস৷ তুমি এখন একা থাকতে শিখে গেছো৷ একা থাকার মধ্যে একটা শৌখিনতা আছে৷ তা বেশ বুঝতে পারি৷ তবে আমি কেন এত ভাবি... কে তোমায় ভাত বেড়ে দেয়, মাথার কাছে জল গড়িয়ে দেয়, চশমাটা ঠিক জায়গায় রেখে দেয়৷ জামা ইস্ত্রি করে দেয়৷ আসলে আমি এখনও সত্যিটা বুঝতে বড় দেরি করে ফেলি৷

 

৩)

আলমারি খুললেই চোখে পড়ে লাল কালো চাদরের কথা। আমরা জয়পুর থেকে কিনেছিলাম৷ গোটা চাদরটাতেই উটের কারুকাজ। আমাদের তখন একটা ইতিহাস কিংবা ভূগোল ছিল৷ দূর থেকে দেখা যেত৷ স্বচ্ছ ছিল সবটাই৷ একটা সময়  মনে হত তারাদের দেশে পৌছতে এক আলোকবর্ষ পথ আমরা হেঁটে যেতে পারব৷ আজ ৬/৬ পথটাকে অচেনা মনে হয়। কিছু ভাবতে গেলে গলার কাছে কী যেন একটা আটকে থাকে৷ খুব অস্বস্তি হয়৷ নিজেকে রাস্তার ধারে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের আবর্জনা মনে হয়৷ কেমন যেন শেষ হয়ে যাচ্ছি। প্রদীপের তেল ফুরিয়ে এল৷

 

8)

খোলা আকাশ দেখলেই তাতে তোমার নাম লিখতে ইচ্ছে করে। মনে হয় উড়ে চলে যাবো হাওযার মতো শক্তিশালী হয়ে৷ ঘরের পিছনে লাউ ডগা গাছটা বেশ বড় হয়েছে৷ ও বাড়ির খুকি গর্ভবতী৷ সে লাউ শাকের ঘন্ট খায়৷ পিছনের তেঁতুল গাছটাও বেশ বড় হয়েছে। মা তেঁতুল দিয়ে বাসন মাজার সময় তোমার কথা খুব বলেন৷ মা' হাতের তেঁতুল মাখা তোমার খুব পছন্দের৷ ভুলে যাওয়াটা খুব সহজ৷ তাই না...

ছাপোষা জীবনে তোমার মতো ভুল করতে আর পারলাম না ৷

Thursday, February 17, 2022

শীলা বিশ্বাস

শীলা বিশ্বাস-এর সিরিজ কবিতা


গহীন লতাবিতান

 

১.

মৃদু করতালে সকাল বেজে গেল নিরুপম

সমর্পণের ভঙ্গিমায় হেঁটে যাচ্ছি অতীতের দিকে

রস ও রূপের দিকে গলে পড়ছি নাথ

যজ্ঞ দৃশ্যের আগুন ঝরছে পথের ধুলায়

জল হব তৃষ্ণার, অবহেলার কাক

ভিক্ষাপাত্রের তণ্ডুল হব, ঘোর ক্ষুৎকাতর

দেওয়ালে দরজা ফুটে উঠুক চৈতন্যভুক

এইতো মানচিত্রের গহীন লতাবিতান

ঈশ্বরের খাস তালুক

 

২.

জানি এ শ্রীখোল সময়, সমাগত উৎসব

তৃণাদপি সুনীচেন যে আমি খুঁজে নিই তোমার আকাশ

তসবীতে মিষ্টিসিজম খুঁজি নাকন্ঠীতে কোনো ব্যাকুল নেই

ভিতরের পীড় পরাই জানেজানে হরি ওঁ তৎ সৎ

একবার হৃৎকমলে ঘুঙুর বাজিয়ে দে

দেগে দে একটা জোছনার কলরব

পান করি, স্নান করি চৈতন্যের দুধ সরোবর,

ওগো অক্ষরের আশাবরী

ঈশ্বরের বাহানায় তোমাকেই জানি

 

 ৩.

 

বিন্দুবৎ রেখেছি চোখে

গর্ভগৃহে প্রতিষ্ঠা করেছি তোমার বিগ্রহ

ধ্যানযোগে আলোর চলাচল জেনেছি

ছলাৎ লেগে বাতি নিভে গেছে

সলতে পোড়া গন্ধ

জানি না ফুরিয়ে আসা আয়ু কার নাম লেখে

তুমিও গোপনে করতল দেখালে

মোনাজাতে ভারী হয়ে আসে

শীত সন্ধ্যার গান