লেখা পাঠান আমাদের chayarodpatrika@gmail.com

Saturday, January 11, 2025

অর্ঘ্যকমল পাত্রের কবিতা, ছায়ারোদ নতুন সংখ্যা

কয়েকটি কবিতা

 অর্ঘ্যকমল পাত্র

১.

কবিতায় প্রেমের কথা আসে। কবিতায় আঘাতের কথা আসে। কবিতাই ঘাতক— তাই তোমাকে অস্বীকার করি৷ তোমার চোখ, ঠোঁট, শৌখিন দাঁত, ওদের তাচ্ছিল্য করি৷ তোমার নমনীয় দেহ, উদাত্ত স্তন— তাতে হেলায় থাবা বসাই; আবার ভুলে যাই পরক্ষণে। কবিতায় দেহের কথা আসে। কবিতায় শূন্যতার কথা আসে। কবিতার শূন্যতা— এ-কথা বুঝতে গিয়ে আমি নির্বাক তাকিয়েছি তোমার দিকে; দেখেছি এক-আধটা গাছ, কেমন দীঘির দিকে ঝুঁকতে থাকে কিছুদিন সোজা থাকার পর। দেখি, তারপর চোখ বুজি— প্রেমে কবিতার কথা আসে।

আঘাতে, সম্পূর্ণ কবিতা…

 

২.

কবির কাছে কবিতার আসা একটি দুর্ঘটনা মাত্র। বিদ্যুৎ ঝলকের মতো। সেই দূর্ঘটনার কবলে পড়েই, মফঃস্বলের একটি তরুণের দু-চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। অগত্যা, তার দৃষ্টি চলে গিয়ে, যেটুকু পড়ে আছে— তা শব্দ। ফলত, সমস্তরকম গদ্য বাদ দিয়ে, মেদুর অক্ষরবৃত্তে এখন তার নিয়ত চলাচল। একটি কবিতা লেখা শেষ হলে, তা পাঠ করে। একা একা শোনে। এভাবেই দীর্ঘদিন শব্দে অভ্যাস হয়ে যায়। যেমন সিগারেটে। যেমন বিষণ্ণতায়। যেহেতু চোখ নেই, এখন সে আরও অধিক বুঝতে পারে শব্দের জোর! শুনতে পায় ফুল ফোটার শব্দ, ভোরের আলো কেমনভাবে মাটির উপর পা ছড়িয়ে বসার আগে ধুলো ঝাড়ে। শুনতে পায় দেওয়ালের অপরপ্রান্ত থেকে কার যেন এক কামাতুর নিমন্ত্রণ। একটি কবিতা লিখতে গিয়ে শুনতে পায়— তার পেট থেকে উঠে আসছে খিদের চিৎকার…

 

৩.

আর মৃত্যু দেখব না বলে, মৃত্যু বেছে নিয়েছিলাম। তুমি এলে। জাগিয়ে তুললে। দুগ্ধ সজীবতায় জন্ম দিলে নতুন। দেখলাম খাড়াই। চূড়া স্পর্শ করে বুঝলাম— পৃথিবী আদতে ঢালু। কত বাঁক, চোরাবালি, উপত্যকা। কত ভ্রমণ বাকি থেকে গেছিল বলে জীবন বিস্মাদ! কত শব্দ কানে আসেনি বলে আকন্ঠ সুরহীন! মৃত্যু দেখব না বলেই মৃত্যু বেছে নিয়েছিলাম। তুমি এলে। জাগিয়ে তুললে৷ কত রহস্যময় জঙ্গল। শিকারী পশুর থাবা, লালারস— কী বিচিত্র মোহ! রোমাঞ্চকাহিনী। কানে কানে বলে গেলে— জঙ্গলের ভেতরে, নির্জন গুহার ঠিকানা৷ সভ্যতার বিপ্রতীপে বঞ্চিত সময়,  অবহেলিত বিষাদ। মৃত্যু দেখতে চাইনি বলেই মৃত্যু বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি এলে গুহার দরজায়। জাগিয়ে তুললে। আর আমার পরিত্যক্ত লিঙ্গ থেকে তৈরি হতে থাকল নতুন কবিতা…

No comments:

Post a Comment