লেখা পাঠান আমাদের chayarodpatrika@gmail.com

Saturday, January 11, 2025

শৌর্যদীপ গুপ্ত'র কবিতা, ছায়ারোদ নতুন সংখ্যা

 শৌর্যদীপ গুপ্ত'র কবিতা

ফ্যালাসি

 

যাদের চলার পথে বন্ধুরতা নেই

তাদের দিগন্তে কোনো আকাশও দেখি না

 

ক্ষয়ের প্রসাদ থেকে যে জীবন আদতে বঞ্চিত

তার চিতা খুঁজে নিতে

পথ হাঁটে শ্মশানের পথে

 

নিজের মুখাগ্নি সেরে গঙ্গাস্নান থেকে

           উঠে আসে তাপস যুবক

ভিক্ষা মাগে, এ জীবনের সমুদ্ভুত আয়, অপব্যয়—

 

স্বগত হাসির ছলে আমার শ্রীভাঁড় হাতে তুলে

নিমেষে আছাড় মারে চাতালের ঢালে

 

তার মুখে অকস্মাৎ

আমার অভূত এক জন্মান্তর দেখি

 

ফিরে আসি একসাথে পথে ও পাথরে ঘষা খেয়ে

আলোর ধারালো ফণা ঠিকরে দেয় নায়াব ওজুদ

অথচ বাইরে তার আশ্চর্য আঁধার

 

হুজুমে হুজুগে ঘুরে— হ্যাটা খাই বাজারে বাজারে

মানুষের মুখ দেখি

মুখের গোপন তহবিলে

উৎসুক আলোর লোভে হন্যে হয়ে দেখি

 

সবাই সবার ভাঁজে আঁধার লালন ক’রে

অন্যকে সন্দেহ করে

তথাপি তাদের ওই মিথোজীবি আত্মার ভিতরে

 

নেই কোনো যুক্তি, নেই আত্মক্ষয়,

প্রশ্নের জর্জরে প্রারব্ধের নেই বিহ্বলতা

 

আপস শাশ্বত জেনে মেছো হাত

                 সুযোগ সন্ধানে ঘোরে—

পশ্চিম সূর্যের বিপরীতে

          নিজেকেই অবশেষে পায় সে প্রতিচ্ছায়ায়

 

ভাবে : এই তার সফল সংগ্রাম

           এই তার বড় হয়ে ওঠা

 

গোপাল ভাঁড়

 

বস্তুত আপনারই সব—

সন্তানসন্ততি এ ভারতে ঘোরে ফেরে

অফিস কাচারি করে আদালতে হাসপাতালে

                 সংবাদ মাধ্যমে

প্রকৃষ্ট মুখোশ পরে ঠাটে বাটে সঙ সেজে

পোশাকের ধুলো ঝেড়ে ঢুকে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে

                                 কবিতা সভায়

 

সবাই বেভুল জানে সবার আড়ালে ঠিক

                  কার মুখ আসলে কেমন

 

মানুন না মানুন, মশাই

বস্তুত আপনারই সব— সন্তানসন্ততি এরা

 

দীনের দুঃখ শুনে সতত কাতর হয় আর—

 

হোমড়া চোমড়া দুনিয়ার নবাব বাদশাকে

চিমটি কেটে ভাবে আচ্ছা নাকাল করেছে

 

বদলে বাগিয়ে নেয় রাজ-পুরস্কার

                    রাজার বালাই

বরখাস্ত হলে পর, শেষ রক্ষা, বুদ্ধির বড়াই

           করে, সুকৌশলে সভাসন ঠিক ফিরে পান

 

এ ঔরস নির্ভুল তোমারই, আব্বাজান

 

মাৎস্যন্যায়ে, শোষণে উৎসবে

কাকুতি মিনতি করে রাজাকে ভাঙিয়ে খাব তবু

                           রাজদ্রোহে কখনও যাব না

 

ডিসেম্বর

 

উপাস্য বুকের ধানে কুহকিনী শীত

গোপনে গহনে ভাষা চায়

হেজে যাওয়া বন্ধ্যা জমি— আয়ুর ফাটল

আবাদির প্রগলভ উচ্ছলতায়

 

ঢলে পড়ে অনায়াসে

পাতার ঝরার ঢঙে, কোলে

 

কিছু আলো পালকে পালকে

আর কিছু ফসলে ফসলে দুলে ওঠে

 

সময় ধারালো ঠোঁটে

যে আদর মুছে গেছে তার ক্ষতচিহ্ন এঁকে রাখে

 

শাশ্বতীর কাঁখ থেকে

কত জল গলে যায় অকঠিন বালুকাবেলায়!

 

আমি তা-ই, করুণ গণ্ডুষে ভরে

যে আসেনি তার দুচোখে তাকাই, বলি: শোনো

 

শরীর দাদন নাও, বলো

আর ছেড়ে যাবে না কক্ষনো!

No comments:

Post a Comment