সৌমাল্য গরাই-এর কবিতা
দেবতার জন্ম
সাম্রাজ্য অংশত ভগ্ন ছিল আমাদের
দাঁড়ি ও কমার ঘন ঘন আসা যাওয়া
শৃঙ্খলিত করে দিত পথের দুপিঠ
থাকবোই, নিঃশ্বাসও
বলতে পারে না একথা
তবু কিছু ত্রসরেণু ছিল দু'বেলার কড়ি খেলাজুড়ে
সমগ্র বাসর ছিদ্রময়, কালনাগিনীও জানে
অল্পই শাশ্বত চিরপ্রোজ্বল্লিত থাকে
যেরকম উনুন বা শ্মশানের দাহ
আর জেনেছিলাম নিশ্চিত
পরবর্তী স্মৃতিপরগণায় আমি আসব
যেমন চাইবে তার ঈপ্সিত জীবন
ছিন্নপাতাপোশাকের দেশে
অজান্তে সে দিয়েছিল সন্ধ্যামণি, প্রদীপের আলো
তুলসী তলায় শঙ্খপ্রণামের রীতি
আমি তাই দেবতা হয়েছি
সূত্র
আমাদের দেখা হয় রোজ দশমিকে, বিন্দুতে বিন্দুতে
অথচ চিনি না
তেমন
ধরি তুমি এক অজ্ঞাত রাশি
আমি তোমার মান জানতে চাই,
কতপথ, কেমন হবে
তার ফলাফল
জানি বিয়োগের গায়ে ব্যথা
তবু যদি এসে বসো তার পাশে
দুটিতে সমান হই
গণিত এভাবে মেলে
যদি ঠিকঠাক
এগোনো যায়
অবোধ বালিকা তুমি, অংকে কাঁচা
অচেনাকে ভয় পাও
সূত্র কাছেই ছিল, আমিও ধ্রুবক ছিলাম
শুধু মান অজ্ঞাত
ভেবে
ঠিকমতো ধরলে না আমায়...
নজরানা
নজর ঘুরিয়ে হাওয়া কার এলোচুলে
রেখেছে উদ্বায়ী হাত, বয়সের ভুলে
কবির দেশের মেয়ে, শাদা ঝরোকায়
রিমঝিম দুপুরের চশমায়, দেখেছে রোদেরা
ছায়াজামা পরে পায়চারি করে হাঁটাহাঁটি
পুকুরের পাড়ে বসে লেখে
ঝিলমিল জলের কবিতা, আকাশের নীল পিপাসায়
কলতোলা জল হাই তোলে আর ঘুমের মাসিমা
বেড়াতে আসেন খুকুদের বাড়ি,
খুকু কি ঘুমালো তাই?
নরম তোতলানো মন, জানে না কখন
শব্দের বেড়াল আজ হারিয়েছে তার
কীভাবে জাগাবে খুকুমণি, সিঁদুরের সিঁথি
নজর ঘুরানো হাওয়ায় কিছুক্ষণ পর
অঝোর বিবাহে ভেসে যাবে বিরহের ঘর
নরম ঝলসানো মন, জেনেছে এখন
দু'পাশে বহতা
হাওয়ায়
একটাই প্রচ্ছন্ন
চোখ তাকে দু'দিকে কাঁদায়...
গ্রামোফোন
পৃথিবীতে যত বিরহের গান শুনি তোমাকেই মনে পড়ে। কথাগুলো
দাঁড়িয়ে থাকে মাঝ রাস্তায়, অচেনা অলি-গলি
জুড়ে। ভ্রমর কই গিয়ে জানায় না তো সে খবর। বৃষ্টিতে ভরে যায় উঠোন। আশ্বিনের নীলকন্ঠ পাখি এসে জানায় "নিশীথ স্বপনসম" তুমি
স্মৃতি ভুলে গেছ।
দূরত্বের অন্তরালে সেতু কখন যেন সেতার হয়ে যায়, কোলে নিয়ে "নিষ্ঠুর করে" মীড় দাওনি তবু। শুধু
সরে গেছ স্পর্শহীনতার গন্ধ ছড়িয়ে।
নিভৃতে বসে সেই মনোলগটুকু লিখি। স্থির পুকুরের জলে ঢিল
ছুঁড়ে দেয় কেউ কেউ। তোমার প্রসঙ্গ উঠলে
ভরাজল বুকেও কেমন একটা তেষ্টা পায়। মনে মনে অনুভব করি—নৈঃশব্দ্যের অন্তরায়, নিজের
অজান্তেই খুব পুরনো দিনের
একটা বন্ধ হয়ে যাওয়া গ্রামোফোনে
সুর হয়ে থেমে আছ অন্য একটা বিরহের গান হয়ে বাজবে বলে...
ঋণ
কেউ কাছে নেই আর। গতজন্মে ছিল
এখন নতুন জন্ম, নতুন পাঁচিল
বাঁধিয়ে রেখেছি ফ্রেমে। আমিও তো চিনি
পুরনো হাওয়ার দিন একা পুষ্করিণী
হরিণী নিলয় ছোটে, নিজের অতলে
ভেসে যায় জন্মদিন, নক্ষত্র পললে
বৃথা এ নতুন জন্ম, কোলাহল, এত ডাকাডাকি
তোমার অজান্তে এই ছেড়ে যাওয়াটুকু লিখে রাখি
কে বোঝে নিজের ব্যথা, ভাষা তার কত টুকু জানি?
এ লেখা তোমার দান, এ লেখা তোমার কাছে ঋণী
No comments:
Post a Comment