লেখা পাঠান আমাদের chayarodpatrika@gmail.com
Showing posts with label গুচ্ছ কবিতা. Show all posts
Showing posts with label গুচ্ছ কবিতা. Show all posts

Sunday, January 12, 2025

সৌমাল্য গরাই-এর কবিতা, ছায়ারোদ নতুন সংখ্যা

 সৌমাল্য গরাই-এর কবিতা

দেবতার জন্ম

 

সাম্রাজ্য অংশত ভগ্ন ছিল আমাদের

দাঁড়ি ও কমার ঘন ঘন আসা যাওয়া 

শৃঙ্খলিত করে দিত পথের দুপিঠ

থাকবোই, নিঃশ্বাসও বলতে পারে না একথা

তবু কিছু ত্রসরেণু ছিল দু'বেলার কড়ি খেলাজুড়ে

 

সমগ্র বাসর ছিদ্রময়, কালনাগিনীও জানে

অল্পই শাশ্বত চিরপ্রোজ্বল্লিত থাকে

যেরকম উনুন বা শ্মশানের দাহ

আর জেনেছিলাম নিশ্চিত

পরবর্তী স্মৃতিপরগণায় আমি আসব

যেমন চাইবে তার ঈপ্সিত জীবন

 

ছিন্নপাতাপোশাকের দেশে

অজান্তে সে দিয়েছিল সন্ধ্যামণি, প্রদীপের আলো

তুলসী তলায় শঙ্খপ্রণামের রীতি

আমি তাই দেবতা হয়েছি

 

সূত্র

 

আমাদের দেখা হয় রোজ দশমিকে, বিন্দুতে বিন্দুতে

 অথচ চিনি না তেমন

ধরি তুমি এক অজ্ঞাত রাশি

আমি তোমার মান জানতে চাই, 

কতপথ, কেমন হবে তার ফলাফল

 

জানি বিয়োগের গায়ে ব্যথা

তবু যদি এসে বসো তার পাশে

দুটিতে সমান হই

গণিত এভাবে  মেলে

 যদি ঠিকঠাক এগোনো যায়

 

অবোধ বালিকা তুমি, অংকে কাঁচা

অচেনাকে ভয় পাও

সূত্র কাছেই ছিল, আমিও ধ্রুবক ছিলাম

শুধু মান  অজ্ঞাত ভেবে

  ঠিকমতো  ধরলে না আমায়...

 

নজরানা

 

নজর ঘুরিয়ে হাওয়া কার এলোচুলে

রেখেছে উদ্বায়ী হাত, বয়সের ভুলে

কবির দেশের মেয়ে, শাদা ঝরোকায়

রিমঝিম দুপুরের চশমায়, দেখেছে রোদেরা

ছায়াজামা পরে পায়চারি করে হাঁটাহাঁটি

পুকুরের পাড়ে বসে লেখে

ঝিলমিল জলের কবিতা, আকাশের নীল পিপাসায়

কলতোলা জল হাই তোলে আর ঘুমের মাসিমা

বেড়াতে আসেন খুকুদের বাড়ি,

খুকু কি ঘুমালো তাই?

 

নরম তোতলানো মন,  জানে না কখন

শব্দের বেড়াল আজ হারিয়েছে  তার

কীভাবে জাগাবে খুকুমণি, সিঁদুরের সিঁথি

নজর ঘুরানো হাওয়ায় কিছুক্ষণ পর

অঝোর বিবাহে ভেসে যাবে বিরহের ঘর

 

নরম ঝলসানো মন, জেনেছে এখন

দু'পাশে বহতা হাওয়ায়

 একটাই প্রচ্ছন্ন চোখ তাকে দু'দিকে কাঁদায়...

 

গ্রামোফোন

 

পৃথিবীতে যত বিরহের গান শুনি তোমাকেই মনে পড়ে। কথাগুলো দাঁড়িয়ে থাকে মাঝ রাস্তায়অচেনা অলি-গলি জুড়ে। ভ্রমর কই গিয়ে জানায় না তো সে খবর। বৃষ্টিতে ভরে যায় উঠোন। আশ্বিনের নীলকন্ঠ  পাখি এসে জানায় "নিশীথ স্বপনসম" তুমি স্মৃতি ভুলে গেছ।

 

দূরত্বের অন্তরালে সেতু কখন যেন সেতার হয়ে যায়, কোলে নিয়ে "নিষ্ঠুর করে" মীড় দাওনি তবু। শুধু সরে গেছ স্পর্শহীনতার গন্ধ ছড়িয়ে।

নিভৃতে বসে সেই মনোলগটুকু লিখি। স্থির পুকুরের জলে ঢিল ছুঁড়ে দেয় কেউ কেউ।  তোমার প্রসঙ্গ উঠলে ভরাজল বুকেও কেমন একটা তেষ্টা পায়। মনে মনে অনুভব করি—নৈঃশব্দ্যের অন্তরায়,  নিজের অজান্তেই  খুব পুরনো  দিনের   একটা বন্ধ হয়ে যাওয়া গ্রামোফোনে  সুর হয়ে থেমে আছ অন্য একটা বিরহের গান হয়ে বাজবে বলে...

 

ঋণ

 

কেউ কাছে নেই আর। গতজন্মে ছিল

এখন নতুন জন্ম, নতুন পাঁচিল

বাঁধিয়ে রেখেছি ফ্রেমে। আমিও তো চিনি

পুরনো হাওয়ার দিন একা পুষ্করিণী

হরিণী নিলয় ছোটে, নিজের অতলে

ভেসে যায় জন্মদিন, নক্ষত্র পললে

 

বৃথা এ নতুন জন্ম, কোলাহল, এত ডাকাডাকি

তোমার অজান্তে এই ছেড়ে যাওয়াটুকু লিখে রাখি

কে বোঝে নিজের ব্যথা, ভাষা তার কত টুকু জানি?

এ লেখা তোমার দান, এ লেখা তোমার কাছে ঋণী

বাপি গাইন-এর কবিতা, ছায়ারোদ নতুন সংখ্যা

 বাপি গাইন-এর কবিতা

 

ব্যূহ

 

এই দেওয়াল কথা বলবে

আর মাথা নীচু করে সরে আসবে মানুষের কুকুর

 

দেখো— স্পর্শমুখ ভেঙে পড়বে কিছুদূর গিয়ে

আলো ও বাতাস দিয়ে তাকে আর সামলানো যাবে না

অন্যথাও করা যাবে না সে প্রচন্ডকে

 

দুঃখ প্রকাশ করা যাবে কেবল

সম্পর্কের মাথায় হাত দিয়ে দু’এক বিন্দু জল রচনা করা যাবে

যে কোনো দেওয়ালের সামনে জলের প্রতিভার ব্যূহ রচনা করা যাবে কেবল।

 

 

২। অসুখ


মিথ্যে প্রশস্তি বাক্যের মতো দিন যায়

সরলরেখার মতো এ জীবনে

গতি নেই, গতিরোধ নেই কোনো

 

অসুখের ভেতরে বসে শুধু আলো দেখি

জানালার বাইরে দিয়ে 

পৃথিবীর আলো আসে হাওয়া আসে

এই দেহে;

পৃথিবীর ঘ্রাণে কদাচিৎ ভ্রম হয় বেঁচে আছি

 

বেঁচে আছি— এই অনুভূতি ছেড়ে দিতে মায়া হয় খুব

এই দেহ খাবে বলে জেগে আছে আমার অসুখ।

 

 

৩। ব্যর্থ

 

একটি পা চিতায় আর একটি সংসারে

এখন আমি পথভ্রষ্ট আলোর অন্ধকারে

 

দাঁড়িয়ে আছি, অমোঘ যদি স্বল্প দেখা দেয়

হয়তো আমি মুক্তি পাবো, পাবো তো নিশ্চয়?

 

কিন্তু দিকে দিকে পাহারা সম্ভাবনা কই

দাঁড়িয়ে থাকার সম্পর্কে আমিও বন্ধু হই

 

ওই আসাটির, যা এখনও আসতে দেরি আছে

শরীর ভীতু শরীর আমার ব্যর্থ হয়ে বাঁচে।

 

 

৪। স্মৃতি


স্মৃতি এক অভিশপ্ত জোনাকি

একা মানুষের ঘরে

আটকে পড়েছে। 

Saturday, January 11, 2025

সমিধ গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা, ছায়ারোদ নতুন সংখ্যা

সমিধ গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা

হিং টিং ছট


 

সৈনিকের সরবতায় আচার সুরধুনি

চুলকে মাথা সূর্য ফেলে দাও,

দাবনাবিস্তারের যা যা শ্লোগানতম, ফাউ

 

লৌহফাঁদে আছড়ে ভৌতিক

 

টকেছে দাঁত প্রিয়ংবদা বিষ?

 

***

তিলোত্তমা সংক্রমণে পাগল ঠাওরালে

 

বঁটির আঁশ ইন্দ্রজালে গিলছে মা'গো ওরা কি

ঝালবাটা?

রসিক বিনা উস্কানির শাঁসালো ভুল চুক?

 

এ নির্মমে কবিশেখর বিবাগী, তেলতেলে

 

***

অপার তুমি ক্ষয়েছ ঘোড়াশালে

কুয়াশাটিও বিন্দুবৎ

নালের ঠোকা সয়েছে পশ্চিমে

 

ফর্মা তিন বায়না এল বারান্দার ঝাঁকে

কুমিরে কম্পাসের মালিকানা

 

***

শিকারদোষে রাগপ্রধান তুমি

 

স্নায়ুবিরত জোনাক হয়ে যাও আলোর

নির্বিকার মূলে

 

***

ধনুক ভাঙে আগুনে পরিযায়ী

গর্ভ তার ব্যক্তিগত হাঁড়ির ঢাকনাটি

সমূহ নাসা হারিয়ে আগলায়

 

***

আরণ্যক বল্লমের দিশারী ঘটকালী

অফুরন্ত লগ্নে ফসকাচ্ছে আনবাড়ির মাথাব্যথা

 

বদ্ধজমি পাকানো মৃগনাভি

যে টংকারে শুশুক উল্টোয়

 

***

বন্দুকের ডগায় দেখি নৃত্যপরচুলো

 

আরশোলার পুতুল হাঁচে পলকা জানলায়

প্রথমবার বাতাস লেগে স্মারকলিপি হল

 

আর ক'জন দিস্তে লাগে তুকতাকের জলে?

গুটি চলেছে পেনসিলের মদে ছলাৎ

তালিকাপ্রাণ আঁতকে উঠবে না?

 

***

সানাই হোক দ্বিতীয় মুদ্রণ

নহবতের ঘামাচি মারা পেশা

যে-হাত মাখে শিরদাঁড়ার অনেক খড়িমাটি

 

ছাপার ভুলে দাঁও মেরেছে

গন্ধতেলে খাস্তা সংসার

 

***

ভিড়ের মতো তুমি কে আর আছে?

আঁটো পোশাক বারংবার শৈশবের শিবিরে পস্তায়

 

***

যত্ন তুমি নির্মমতা গড়ো

ভীমপলাশী তাম্বুলের পাখনা খুলে রুদ্ধ হয়ে ওঠে

বাক্যে মাপো সহায়িকার পেছনপাকা চিঠি

শৌর্যদীপ গুপ্ত'র কবিতা, ছায়ারোদ নতুন সংখ্যা

 শৌর্যদীপ গুপ্ত'র কবিতা

ফ্যালাসি

 

যাদের চলার পথে বন্ধুরতা নেই

তাদের দিগন্তে কোনো আকাশও দেখি না

 

ক্ষয়ের প্রসাদ থেকে যে জীবন আদতে বঞ্চিত

তার চিতা খুঁজে নিতে

পথ হাঁটে শ্মশানের পথে

 

নিজের মুখাগ্নি সেরে গঙ্গাস্নান থেকে

           উঠে আসে তাপস যুবক

ভিক্ষা মাগে, এ জীবনের সমুদ্ভুত আয়, অপব্যয়—

 

স্বগত হাসির ছলে আমার শ্রীভাঁড় হাতে তুলে

নিমেষে আছাড় মারে চাতালের ঢালে

 

তার মুখে অকস্মাৎ

আমার অভূত এক জন্মান্তর দেখি

 

ফিরে আসি একসাথে পথে ও পাথরে ঘষা খেয়ে

আলোর ধারালো ফণা ঠিকরে দেয় নায়াব ওজুদ

অথচ বাইরে তার আশ্চর্য আঁধার

 

হুজুমে হুজুগে ঘুরে— হ্যাটা খাই বাজারে বাজারে

মানুষের মুখ দেখি

মুখের গোপন তহবিলে

উৎসুক আলোর লোভে হন্যে হয়ে দেখি

 

সবাই সবার ভাঁজে আঁধার লালন ক’রে

অন্যকে সন্দেহ করে

তথাপি তাদের ওই মিথোজীবি আত্মার ভিতরে

 

নেই কোনো যুক্তি, নেই আত্মক্ষয়,

প্রশ্নের জর্জরে প্রারব্ধের নেই বিহ্বলতা

 

আপস শাশ্বত জেনে মেছো হাত

                 সুযোগ সন্ধানে ঘোরে—

পশ্চিম সূর্যের বিপরীতে

          নিজেকেই অবশেষে পায় সে প্রতিচ্ছায়ায়

 

ভাবে : এই তার সফল সংগ্রাম

           এই তার বড় হয়ে ওঠা

 

গোপাল ভাঁড়

 

বস্তুত আপনারই সব—

সন্তানসন্ততি এ ভারতে ঘোরে ফেরে

অফিস কাচারি করে আদালতে হাসপাতালে

                 সংবাদ মাধ্যমে

প্রকৃষ্ট মুখোশ পরে ঠাটে বাটে সঙ সেজে

পোশাকের ধুলো ঝেড়ে ঢুকে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে

                                 কবিতা সভায়

 

সবাই বেভুল জানে সবার আড়ালে ঠিক

                  কার মুখ আসলে কেমন

 

মানুন না মানুন, মশাই

বস্তুত আপনারই সব— সন্তানসন্ততি এরা

 

দীনের দুঃখ শুনে সতত কাতর হয় আর—

 

হোমড়া চোমড়া দুনিয়ার নবাব বাদশাকে

চিমটি কেটে ভাবে আচ্ছা নাকাল করেছে

 

বদলে বাগিয়ে নেয় রাজ-পুরস্কার

                    রাজার বালাই

বরখাস্ত হলে পর, শেষ রক্ষা, বুদ্ধির বড়াই

           করে, সুকৌশলে সভাসন ঠিক ফিরে পান

 

এ ঔরস নির্ভুল তোমারই, আব্বাজান

 

মাৎস্যন্যায়ে, শোষণে উৎসবে

কাকুতি মিনতি করে রাজাকে ভাঙিয়ে খাব তবু

                           রাজদ্রোহে কখনও যাব না

 

ডিসেম্বর

 

উপাস্য বুকের ধানে কুহকিনী শীত

গোপনে গহনে ভাষা চায়

হেজে যাওয়া বন্ধ্যা জমি— আয়ুর ফাটল

আবাদির প্রগলভ উচ্ছলতায়

 

ঢলে পড়ে অনায়াসে

পাতার ঝরার ঢঙে, কোলে

 

কিছু আলো পালকে পালকে

আর কিছু ফসলে ফসলে দুলে ওঠে

 

সময় ধারালো ঠোঁটে

যে আদর মুছে গেছে তার ক্ষতচিহ্ন এঁকে রাখে

 

শাশ্বতীর কাঁখ থেকে

কত জল গলে যায় অকঠিন বালুকাবেলায়!

 

আমি তা-ই, করুণ গণ্ডুষে ভরে

যে আসেনি তার দুচোখে তাকাই, বলি: শোনো

 

শরীর দাদন নাও, বলো

আর ছেড়ে যাবে না কক্ষনো!

ছাব্বির আহম্মেদে'র কবিতা, ছায়ারোদ নতুন সংখ্যা

ছাব্বির আহম্মেদে'র কবিতা

 

রাত্রিবাসে ডুবে গেছে মোহিনী চারুকলা


একটা নীরব আকাশ

যেখানে সারিসারি চোখের মাইল ফলক

আর হাজারো নক্ষত্রের রাত্রিবাসে

ডুবে গেছে মোহিনী চারুকলা

 

বহ্নিশিক্ষার আঁচল ছুঁয়ে আছে সময়ের বালুচরে

বুকের ভিতর গেয়ে ওঠে সমুদ্রের তলার নিস্তব্ধতা

এক অস্থায়ী মরীচিকার আত্মাকে সঙ্গে নিয়ে

সূর্যের ডানার ভিতর ঝুলিয়ে রাখছিলাম আমার আর্তনাদ

 

সুদূর মৃত্যুপুরীর পথ

যেদিক দিয়ে যাওয়ার জন্য সমস্ত পৃথিবীর পরিচয় লাগে

আর খোলা আকাশের চিঠি

তবুও দেখতে দেখতে পার হতে পারি ঐতিহাসিক ঘড়ির কাটা

যার শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা নদীর সাঁকোর মতো রাজসভা

 

জীবন পারাপারের ব্যস্ততায়

সন্ধ্যার মুখের প্রলেপ যেন খসে পড়ছে

নৌকার দাঁড়ের আঘাতে কতগুলো জোনাকি উঠে আসছে

আর আমি ডুবে যাচ্ছি জীবনের অন্তিম নদীতে

 



অপরিপক্ক ঠোঁটের অস্থিমজ্জা

 

ঘুণ ধরা বাঁশের মতো পলাশের ঔদ্ধত্যও হারিয়েছে

পৃথিবীর বর্ণালীতে যত আলো ছিল

সবগুলোই এক এক করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে

তোমার গায়ের ফুলদানির গৌরবময় আঁচলে

 

শিশিরের চুপ থাকার কারণে সজাগ দৃষ্টি দিয়ে

আমি ফিরে পেয়েছি হিমাদ্রির সকাল

যেখানে উন্মাদ সহিষ্ণুতা দিয়ে আপন খেয়ালে চলে যাবো

মৃদু বাসন্তীর মরীচিকায়

 

কোকিলের সুরে এক চিলতে রোদ্দুর ছেঁকে নিয়ে

ঘুরিয়ে দিয়েছি তোমার বসন্তের ছায়াবৃত্ত

আর দিল-দরদিয়া মায়ায় চোখের কাজলে ধুয়েছি

তোমার কপোল গড়া অশ্রু

 

আকাশের কালসর্পের নিথর অপেক্ষায়

আমার অপরিপক্ক এক কোনায় ভাতের মাড়ের মতো চাপটে লেগে থাকে

তোমার ঠোঁটের অস্থিমজ্জা

আর আবছা নদীর বালুচরে বসে হাতের ছোঁয়ায়

গড়ে তুলি সেই খোঁপার পাহাড়

 

 

অঘ্রানী পেয়ালার ঠোঁট

 

তুমি হয়তো বলবে জীবনের প্রতিটা মুহুর্তই পোয়াবারো,

কিন্তু একটা অগোছালো মানুষকে গুছিয়ে রাখতে না পারলে,

তার দায় প্রলেপ দেওয়া হৃদয়ের কার্নিশ নেয় না

তবে এই যে ঘটা করে বিভর হয়ে থাকা দরদিয়া সম্বোধন

তোমার কাছ থেকেই শিখেছি প্রিয়

 

কেনো এমন হয় বলতে পারো?

আকাশের ফুটফুটে বুকে

সাদা বকের আলতা মাখা পা'গুলো সাঁতার কাটে

যদিও বা সেখানে কোনো নদী নেই,

শুধুমাত্র দুটো মখমল জান্নাতী সহজিয়া ঠোঁটের অপুষ্টতা জমে আছে,

আর তাতেই তোমার আঁচলের বৈকুন্ঠে কিঞ্চিৎ বেবাগী রঙ লাগে

 

সমস্ত টানাপোড়নে তটিনীর স্থবিরতা,

গোধুলি বেলায় তোমার হাতের ছোঁয়ায় ঝিমিয়ে পড়লে

একটা একটা করে স্বপ্নের ঘাটে সাজিয়ে রেখেছি

কাঠ পোড়ানোর মতো বিপরীত মেরুর বেনিয়মের শরীর

 

ভোরের বাসি কাপড়ের মতো যত অবহেলিত দিন ছিল

সেখানে আমার মধ্যবিত্ত সংসারে ক্লান্ত কোকিল বড়োই অসহায়

আর তোমার নানান ইঙ্গিতের শরীর সহ্য করে

কড়াই-এর মতো সন্ধ্যার নিষ্ঠুর অত্যাচার

কিন্তু তুমি দুচোখ চন্দ্রমল্লিকায় ভরে দিয়েছিলে

গেয়েছিলে প্রদীপের কলতানী সুর

 

মনপিঞ্জরের ঝরে যাওয়া কদম যেমন করে দিনলিপি আঁকে,

যেমন করে খড় বিছানো সভাস্থলে রাত্রি বাসর হয়

ঠিক তেমন করে তুমি আমার অঘ্রানী পেয়ালার হাতল ধরে

জীবনের স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছো, যার কোনো গন্তব্য নেই

Saturday, December 14, 2024

আফজল আলির কবিতা, ছায়ারোদ নতুন সংখ্যা

আফজল আলির কবিতা

 

মেধার সূচকে

 

ঘুম বিষয়ক কোনো স্বপ্ন লেখার পর নিশ্চয় আপনি ভাববেন

হাতির পায়ের আকার এত মোটা হল কেন

এ বিষয়ে একটাও সদুত্তর পাবেন না অ্যারিস্টটল বা সক্রেটিসের কাছে

বরং নীৎসে কিছুটা আভাস দিতে পারেন

যখন আপনার লেখা দেশ এ  ছাপা হচ্ছে তখন নিশ্চিত

আপনি নতুন কিছু ভাবতে পারছেন না

অথবা যখন কবিতার অনুষ্ঠানে সরকার উপস্থিত

এই মর্মে ভেবে নিতে হবে

আপনি একটি  সহায়ক ছায়া চাইছেন যা আত্ম বিষয়ক

কিন্তু মেধার সূচকে আপনি রয়ে যাচ্ছেন সেই অধীনস্থ

অধীনস্থ মানেই  বাঁধন-যুক্ত

ফলে

আপনি হাতি বিষয়ক কবিতা লিখতে পারবেন না

আপনি শূন্য ধারণের কবিতা লিখতে পারবেন না

আপনি পারবেন না

নতুন স্বপ্ন দেখার বিজ্ঞাপন দিতে

তাই আপনি সিংহ দেখে চমৎকৃত হবেন

এবং একটি ভেড়া দেখে আজীবন সুন্দর থাকার চেষ্টা করবেন

 

স্মরণযোগ্য অতীত থেকে

 

স্মরণযোগ্য একটি অতীত থেকে তিনটি ফুটবল ছোঁড়া হল

এখন আপনি কোন দলে থাকবেন

সেমিফাইনাল নাকি কোয়ার্টার

অমরত্বের হাতছানির পাল্লায় পড়লে সুখ উড়ে যাবে

এ কথা জেনে নিন

তাহলে একটি সিগারেট ধরাবার পূর্বে কিঞ্চিত দার্শনিক হবার ভান বন্ধ রাখুন

স্পষ্ট করে বলতে পারি আর্থ্রাইটিসে আপনি ভুগছেন না

আপনার জন্য একটি প্রেমের ডাকবাক্স খোলা হয়েছে

এবং নিশ্চিত করেই এটি চাঁদে

চাঁদ এখন আমাদের নিজের মামা, একদম কাছের

সেই স্বর্গ থেকে পল পল অনুভব করেছি

কীভাবে ধান ভানতে শিবের গীত গাইতে হয়

হৃদপিণ্ডে ঝুম ঝুম আওয়াজ হচ্ছে

ও কোকিলা তোকে সুধাই রে, শিরার কোনখানে তুই

মায়াময় অন্ধকারে বসে কপালে ভিক্স লাগানো যাবে কি

এরকম তো চাইনি পরিকল্পনা

তুমি তো মগজে আন্দাজ হাঁকছিলে চাঙ্গা হবার, আর আমি তখন

 

দেহের স্বপ্নে প্রেমজ

 

মুরগির ডিমের কি কলঙ্ক থাকে, এ কথা ভাবতে গিয়ে

 একটু হেসে ফেললাম

তবে সত্যি যে, খাসির মাংসে ফাইবার থাকে

কতদিন দেখতে চেয়ে দুপুর হয়ে গেছো তুমি

অভয় দিয়ে গেছো রোদ থেকে সানসাইন আর ভিটামিন নিতে

গণিতের মাস্টারমশাই ঢুলছিলেন তখন

ভয়েস কল রেকর্ড করতে বয়স কমিয়ে আনা কোনো ব্যাধি নয়

বুঝেছি, এরপর নিশ্চয় বলবে, আমি তো অবলা সখি—

আরে ধ্যাৎ

সেই ধানাই পানাই

আমাদের কোষের ভিতর ক্রোমোজোম লুকিয়ে থাকে

তা কি জানো

রক্তের টান বড়ো প্রলুব্ধকর হে,  সে ছাড়ে না

ভীষণ কষ্টে বিলিরুবিন অন্বেষণ দেয়, কী বলবে দেহের স্বপ্নে প্রেমজ

 

নিঃসঙ্গতার ক্ষরণ

 

কী যেন লিখতে চাইছিলাম,  একটি দশমিক নাকি

 পাতাঝরার গান

'একা' শব্দের পাশে দশমিক বিন্দু যোগ করলাম

জানি ভিতরে এই যে নিঃসঙ্গতার ক্ষরণ

এর পিছনের জানালাগুলো  চলে গেছে দূরে

বিকেল গড়ালে কীভাবে দখল নেয় হেরে যাওয়া জীবন

যখন অন্যমনস্ক সহজ হয়ে ওঠে

তখনই বুকের ভিতর  গুঁড়ো হয় পুরনো স্মৃতির রেণু

এমনটাই কি চেয়েছিলাম যা ঘটে চলেছে

শূন্যস্থানের কয়েকটা আজগুবি বাজনা

আর পৃথিবীর উপর ধসে পড়া চাঁদের আওয়াজ

ছায়াগুলো ঠান্ডা হয়ে আসে

পাখিরা মেঘ ধরার কাজে ব্যস্ত

এখন মোবাইল কেনার স্বপ্ন দেখে কী করব আমি

 

আগামীকালের হিস্যা

 

খুব বেশি ভালোবাসলে আঘাত পেতে হবে

কথাটায় একটু ফোড়ন দিয়ে দেখি সহজপাচ্য হচ্ছে কিনা

মানে ব্যাপারটা হলো গিয়ে বেশি ভালোবাসা ভালো না

পিরিত যদিও কাঁঠালের আঠা, লাগলে ছাড়ে না

 হয়তো আপনি ভাববেন

গুঁড়ো গুঁড়ো হচ্ছে পরমায়ু কোন সমতল কেটে

 কী হল? এত সিরিয়াস কেন হও

হালকা হালকা থাকো

শুনানির পর যা হবে সে তো আগামীকালের হিস্যা

বুকের ভিতর

বুকের ভিতর

তীব্র ক্ষত চিহ্নের দাগ এখনও মিলিয়ে যায়নি

একটু সুখ খুঁজছিলাম জানো, যেন মালিকানার পূর্বে  ছিলাম

 কেমিস্ট্রি বলতে

সেই ফেলে আসা দিনগুলো যখন রান্না করে খাওয়াতে

যেন এক বৃহত্তর মিলনের পথ চেয়ে