শাশ্বত বন্দ্যোপাধ্যায়-এর কবিতা
১.
সেবার
ফেনিল হয়ে উঠলে। ঝাপটা মারলে একবার, দুইবার নৌকোর বুকের কাছে। এ অপরিচিত ঢেউয়ের হিংস্র
ঝাপটা কতক্ষণ সহ্য করে থাকা যায় । এই ভিক্ষু, যে ক্ষুধা কাতর সেজে অনিমেষ বসে আছে
তোমার পায়ের কাছে, তাকে একবার দেখেছো কখনো। হৃদয় হারিয়ে গেছে তোমার সিঁথির মতো ঘন
প্রপঞ্চ বাগানে। আশাবরী মেঘগুলি এতোদিন ভেসে গেল নিয়ত নৌকার দিকে, তবু তুমি গান গেয়ে
ওঠোনি একবার। কতদিন কোকিলের গলা চেপে ধরেছি তোমার কন্ঠস্বর শোনার তাগিদে। তুমি ফেনিল হয়ে রয়ে গেলে সীমান্তিনী
চিরকাল।
২.
এ
বিকট সমুদ্র গর্জন শুনতে শুনতে লবনাক্ত কান বধির হয়ে গেছে। আমার কাতর ডাক একবার শুনে
যদি নৌকো ভেড়াতে আমার তটে। আমি রবিসন ক্রুশো নই। এতো বঞ্চনা সহ্য হয় না। পাগল হয়ে
যাবো অচিরেই। আমার মাথার উপর উড়ছে ক্ষুব্ধ অ্যালব্রেসট্রিস। ভয় করে সীমান্তিনী। ভীষণ
ভয়ের কোলে আমি ডুবে যাচ্ছি অতলান্ত।
৩.
যে
বিপন্নতা আমাকে দ্যাখাবে বলে এতোদূর এতোপথ নিয়ে এলে, আমি তার মোরাম ফলকগুলি গুনে
রেখেছি। লাল শুষ্ক মোরামের ধুলো এখনও আমার আস্তিনে জড়িয়ে আছে। সেই রাস্তা দিয়ে হাঁটতে
হাঁটতে স্পষ্ট মনে পড়ে তুমি হাতের আঙুল ছেড়ে দিলে সহসা, কুয়াশা জড়িয়ে নিল তোমাকে।
কালো অন্ধকার কূপিত পাষাণের দ্বীপে বন্ধুদের অভিশাপ গায়ে মেখে বসে আছি সেই থেকে। যৎসামান্য
আলো বেরিয়ে আসছে আমার কপাল ফেটে। শরীর থেকে বেরোচ্ছে অন্তিম ম্যাগটের দল। তুমি দেখতে
পাচ্ছ না! শুনতে পাচ্ছ না! জল দাও সীমান্তিনী। পিপাসার্ত আমি।
৪.
কোনো
প্রার্থনা যদি না শোনো, তবে হত্যার পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলো দেখিয়ে দাও। আমার অপারগতা
পানাফুল হয়ে ফুটে উঠছে তোমার প্রেমিকের ফেলে রাখা মদের গেলাসে। কেমন হাসতে হাসতে ছিঁড়ে
নিচ্ছ তার কুঁড়ি। সাজাচ্ছ খোঁপায়। কোন্ অপারেজ শক্তিতে আমাকে ঠেলে দূর করে রেখেছ আমি জানি না। সাত তাবাক দূরে বসে খিলখিলিয়ে হাসছ, হাড় ওঠা দেহের দিকে তাকিয়ে। ঘুরে
তাকাও সীমান্তিনী, আমি আছি, অকৃত্রিম। কেবল পাথর হয়ে শুকিয়ে গেছি। জল দাও। এ কোনো
অনুরোধ নয়। দয়া করো। সায় দাও আকুতিতে। কোনো আত্মহনন আমাকে শান্ত করবে না।
No comments:
Post a Comment