পারমিতা চক্রবর্ত্তী’র কবিতা
একা
১)
আমাদের কোনো লিগাল অ্যাসোসিয়েশন আর নেই৷ যে ভাবে
রাস্তায় বেওয়ারিস লাস পড়ে থাকে ৷ কুকুর গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে চলে যায়৷ আমাদের
সম্পর্কটা ঠিক তেমনই৷ কখন যে একটা যতিচিহ্ন বসে গেল বুঝলাম না। গলা ফেটে রক্ত
বেরোয়৷ রক্তাক্ত হয়েছে আমাদের ভূমিকাটা৷
এখন বেঁচে থাকাটা খুব দুরারগ্য ব্যধির মতো৷ তার থেকে মৃত্যুই শ্রেয় ৷
২)
জানি বহুদিন তুমি আলাদা হয়ে গেছো৷ মিথ্যে বলতে বেশ শিখে গেছ৷ কিন্তু আমি কেন এত ভাবি। তোমার গলা ব্যথা হলে তুমি চা খেতে ঘন ঘন৷ ঘুম থেকে উঠে গাছে জল দিতে দিতে এক কাপ আমার হাতের লিকার চা ছাড়া তোমার দিন শুরু হত না। কে করে দেয় এখন এসব তোমায়৷ জানি সবই অভ্যাস৷ তুমি এখন একা থাকতে শিখে গেছো৷ একা থাকার মধ্যে একটা শৌখিনতা আছে৷ তা বেশ বুঝতে পারি৷ তবে আমি কেন এত ভাবি... কে তোমায় ভাত বেড়ে দেয়, মাথার কাছে জল গড়িয়ে দেয়, চশমাটা ঠিক জায়গায় রেখে দেয়৷ জামা ইস্ত্রি করে দেয়৷ আসলে আমি এখনও সত্যিটা বুঝতে বড় দেরি করে ফেলি৷
৩)
আলমারি খুললেই চোখে পড়ে লাল কালো চাদরের কথা।
আমরা জয়পুর থেকে কিনেছিলাম৷ গোটা চাদরটাতেই উটের কারুকাজ। আমাদের তখন একটা ইতিহাস
কিংবা ভূগোল ছিল৷ দূর থেকে দেখা যেত৷ স্বচ্ছ ছিল সবটাই৷ একটা সময় মনে হত তারাদের দেশে পৌছতে এক আলোকবর্ষ পথ আমরা
হেঁটে যেতে পারব৷ আজ ৬/৬ পথটাকে অচেনা মনে হয়। কিছু ভাবতে গেলে গলার কাছে কী যেন
একটা আটকে থাকে৷ খুব অস্বস্তি হয়৷ নিজেকে রাস্তার ধারে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের
আবর্জনা মনে হয়৷ কেমন যেন শেষ হয়ে যাচ্ছি। প্রদীপের তেল ফুরিয়ে এল৷
8)
খোলা আকাশ দেখলেই তাতে তোমার নাম লিখতে ইচ্ছে
করে। মনে হয় উড়ে চলে যাবো হাওযার মতো শক্তিশালী হয়ে৷ ঘরের পিছনে লাউ ডগা গাছটা বেশ
বড় হয়েছে৷ ও বাড়ির খুকি গর্ভবতী৷ সে লাউ শাকের ঘন্ট খায়৷ পিছনের তেঁতুল গাছটাও বেশ বড় হয়েছে। মা তেঁতুল দিয়ে বাসন মাজার সময়
তোমার কথা খুব বলেন৷ মা'র হাতের তেঁতুল মাখা তোমার খুব পছন্দের৷ ভুলে
যাওয়াটা খুব সহজ৷ তাই না...
ছাপোষা জীবনে তোমার মতো ভুল করতে আর পারলাম না ৷
No comments:
Post a Comment