শঙ্খজিৎ দে’র সিরিজ কবিতা
ধ্যানচোখে অসংখ্য অবয়ব
১.
সন্ধ্যের দিকে ফিরে আসা যায়
গেট বন্ধ হয়ে আছে আশ্চর্য শিকলে
মনোরম, সবুজস্নাত বারান্দা
নদীরাজ্য ভেসেছে প্রাগৈতিহাসিক আঁধিঘুম
এখনও যুবতী শাখাটি এসে জল ছিটিয়ে দোষী সাব্যস্ত
করল না!
২.
মা তোমার চোখ এখনও—
ভুল হয়ে আছে পরিত্যক্ত আগুনে।
এখনও দেওয়ালময় প্রশ্নচিহ্ন
ঘুরপাক খাচ্ছে নক্ষত্রগুলো
দূরে হাতে তালি মেরে সাইরেন বাজাচ্ছে নির্জনতা।
স্তন্যঋণ শোধ করব বলে, জিহ্বারাজ্যে মৃদু অন্ধকার!
৩.
যে ভুলপথে বয়ে চলে গেছে
তার জন্য ভেবে ভেবে ডুবসাঁতারে বেঁচে আছি।
যে ভুলপথে চলে যাচ্ছে একা,
তার নিশ্চয়ই সন্ধ্যাতারা জমানো আছে বুকে।
৪.
ফাল্গুন কৃষ্ণা একাদশীর দিন
মধ্যরাতে সফেদ হয়ে যাচ্ছে বারান্দার রঙ।
আমি চোখ খুলতেই পারলাম না।
রজনীগন্ধার শাদারঙ ছেয়ে ফেলেছে দেহ।
মা, তুমি
দুগগা-দুগগা উচ্চারণ করে
আমাকে চলে যেতে দাও....
'যাই নয়, আসি...'
৫.
পরিক্রমা করতে করতে কর্তাল বাজিয়ে ঘরে ফিরি ভোরে।
কুয়াশার ভিতর জন্মান্ধ পাখিগুলো মেঘ ঝাপ্টাচ্ছে।
দূরপাল্লার ট্রেনগুলো এত আওয়াজ করে কেন?
নিঃসঙ্গতার ব্রত ভেঙে যায়!
৬.
বাড়িতে পিলসুজগুলো
একখণ্ড দুঃখ কাঁধে দাঁড়িয়ে আছে।
কালিপুজোর বাজনা ফুরিয়ে গেছে বাবার চিতায়...
পুকুরে কাঠামের গা বরাবর ফেলে এসেছি পিতৃপিণ্ড।
৭.
সন্ন্যাসবস্ত্র পরতে পারিনি বলে
গোধূলিলগ্নে দাঁড়িয়ে ছিলাম একা।
মহাকাল ঠেলে ফেলে দিচ্ছে,
ঐ দ্যাখো স্রোতস্বিনী জীবন...
৮.
পায়রাগুলো স্নান করতে করতে
হয়ে উঠল নারীটির বৈধব্য।
শূন্যে চোখ চলে যাচ্ছে
অন্ধকার-পাখিরা টহল দেয় আকাশ।
৯.
একটা শিশু
ঢিল মেরে ভেঙে ফেলল কবির জানালা
ঢিল কি কখনও—
মানুষের ভীষ্মতিরের ফলা হয়ে উঠতে পারে?
একটা শিশু কবিটির জন্য সভ্যতার কাছে
আসন পাতল...
১০.
যোগেশগঞ্জের প্রৌঢ়া প্রতিমার কাদামাটি দেহে
একটা বিষণ্ণ অঙ্কুরের সবুজ।
নৈহাটির গঙ্গা দিয়ে ভেসে যাচ্ছে পুরোনো আলাপ।
ভ্যালেন্টাইন, তোমার জন্য আরো একবার মরব...
১১.
প্রেমিকার বাবার পাঞ্জাবিটায়
হাত বুলিয়ে চোখ মুছেছি আরামে।
বাবা, তুমি কি
বোধিগাছ,
এই জন্মে চিনলাম না!
১২.
মা, তোমার কপালে—
লেগে আছে বিগত জন্মকালের ক্ষত।
বুকে মাথা রাখো
তোমাদের বাড়ির ভিতর আমারই অসংখ্য অবয়ব স্তম্ভইট
হয়ে আছে।
১৩.
শান্তিনিকেতন, তোমার পলাশ
গাছের নীচে—
পাতা ছেয়ে আদর পেতে রাখো।
ধ্যানচোখ চলে যায়
আমাদের দাম্পত্যের গাঢ়,
তোমার শুক্লপক্ষের চাঁদ…
No comments:
Post a Comment