লেখা পাঠান আমাদের chayarodpatrika@gmail.com

Thursday, February 17, 2022

সুবর্ণকান্তি উত্থাসনী

সুবর্ণকান্তি উত্থাসনী’র সিরিজ কবিতা


প্রেম পিপাসা পিণ্ড

 

(১)

একটি নারী ঘর বাঁধে অগণিত পুরুষের

আত্মহুতি লিপ্সিত সুরম্য প্রাসাদে

 

তার বিসর্গীয় নগ্নতা ঢাকতে

যত সুতো লীন হয় অক্লেশে

 

যা কিছু নির্বেদ তা প্রাসঙ্গিকতা

 

ওহে রাধেয়

এসো

ফিরে এসো

সর্বরিপু বুকে করে

 

প্রাগজ্যোতিষ্ শিখী এখনো পেখম মেলেনি

 

(২)

পৃথিবীতে প্রেম শুধু নিশি লাগা ধুতুরার ক্ষেত

একটি প্রেমিকের কাজ সমগ্র স্বত্ত্বা জুড়ে

বহুশ্রমে প্রাপ্ত দ্রাক্ষার কৃত্রিম শৃগাল হয়ে ওঠা

তবুও যে সেই রমণীর পুরুষ বন্ধুরা বঞ্চিত রয়ে যায়

এর কারণ কিছু এই ক্লাইতেমেনেস্ট্রার বুকে হেডিসের

আঁধারের মত যৌবন নেমে এলে রমণী খোঁজে

তার আবাল্যকাল জুড়ে গড়ে তোলা রূপকথা

এর ফলশ্রুতি এই যে সভ্যতা অগ্রগামী হলে

উদ্ভিদ ধারণে অক্ষম মৃত্তিকার মত অম্লপ্লুত সম্পর্ক

যাপন ধারণ করতে পারে না আর

 

(৩)

আমার বাবা এক গোঁড়া ব্রাহ্মণ তাঁর সমগ্র আধ্যাত্মিক

চেতনা আমায় সমর্পণ করে উচ্ছন্নে পাঠিয়েছিলেন

 

আমার মা রোজ পড়শির ঘর থেকে শাক চুরি করে এনে

পেট জ্বললে ফ্যানভাত আর শাকভাজা খাইয়ে তাঁর সমস্ত

বিষয়জ্ঞতা আমাকে সমর্পণ করে উচ্ছন্নে পাঠিয়েছিলেন

 

আমি রোজ বিকেলে গোধূলিকরোজ্জ্বল ধানক্ষেতের পাশে বসে

রোপিত চারার বেড়ে ওঠার বুকে একটি নৈসর্গিক সংসার খুঁজে পাই

 

যখন আমি মফস্বলের রাস্তায় কিংবা নগরীর বস্তিতে

প্রস্তাবিত আদল ধরে শুয়ে থাকি অধোগামী স্রোত হয়ে

 

সালোয়ারটিকে হাঁটু অবধি তুলে সন্তর্পণে যত যত্নে

আঘাত না দিয়ে বৃত্তের অন্তর্বর্তী শূন্যতা ছোঁয়া যায়

 

তার সেই নগ্ন পা দুটিতে আমার দ্বিতীয় কৈশোরের ঘ্রাণ লেগে আছে

 

তার চলে যাওয়ার দৃশ্যে সেজে ওঠে আমার প্রথম পৌঢ়ত্বের শয়নযান

 

(৪)

শোনো এভাবে না

এভাবে না

যেভাবে এতদিন ক্ষয়ে সয়ে জীবাশ্ম হয়েছ

তোমার বুকের ভেতর যে বরাঙ্গ

ক্রন্দসী চিত্রণ করে গ্যাছে

ইষ্টজপে যে অমরত্ব লেপেছে বাকল

নরকের গুহ্যদ্বারে পিঁপড়ের আনাগোনা

মিছেই ভুলেছ জাতিস্মরের ব্যথা

ভিক্ষায় জোটা ভালোবাসার চেয়ে

বঞ্চিত বোধের থেকে বড় মানসিক তৃপ্তি নাই আর

 

(৫)

দ্যাখো প্রথম সূর্য উঠেছে কলুষ সভ্যতার  ললাটে

প্রমা আদিম অনঘ ঘাস মাটি পাথরে সৃষ্ট  তুমি

 

আমি কীটদগ্ধ ত্রিকালদর্শী বক পালকের খাঁজে খাঁজে স্থাপত্য

আমার নাভিমূল থেকে যে স্রোত পারাংয়ের উপত্যকা দিয়ে

সাক্ষী হয়েও সাক্ষ্য মুছে বয়ে যায় চিরকাল

 

এ্যান্টনির বীরদর্পে ধুয়ে গ্যাছে আত্মহুতির কলঙ্ক তেভেরে

কর্ণের ক্লেদাক্ত গৃধ্রভুক দেহ তলিয়েছে অক্লেশে জাহ্নবীতে

 

বজ্রকঠিন হিমশিলাপাতে নিমগ্ন তূণীর

আত্মাভিমানে অবিচল স্ফটিক পদ্মদীঘি

তোমার প্রেতচ্ছায়া কালো মেঘেদের ভিড়

গোধূম আলোয় গৃহে না ফেরার অত্যুক্তি

 

বৃষ্টি বুজেনা মৃগতৃষ্ণিকা হেথা হৃদয়ে আবিল কুরুনারীদের শোক

ভূমি আগ্রাসী সন্ত্রাসীদের থাবা কালো মৃত্যুর যাচিত উপদ্রব

 

তুমি তো বাঁধোনি আমার ফেরার পথ

তবু এঁকে ফিরি ম্লান স্ক্যান্ডেনেভিয়া

অতনুর কোষে কোষে সার্ত্র পর্ণমোচী

দক্ষিণা চুক্তিতে তনু বদলায় ঠিকানা

 

তবু যদি ফিরে আসো ক্যাথারসিস্ হয়ে

যেভাবে গেঁয়ো যোগী ভোগী হয়ে ওঠে

 

কুয়াশাধিকৃত সাঁকোর দুধারে সময়ের স্থবিরতা

নিচে চংক্রমণবৈজয়ন্তী প্লবতা জুডাসের অনুচর

 

স্রোতপ্রাসপাশে যান্ত্রিক সভ্যতা ছুঁয়ে ফ্যালে কৃষ্ণ যবনিকা

মধ্যিখানে প্রতি জন্মান্তরে তোমার সঙ্গে আমার হয় দ্যাখা

No comments:

Post a Comment