লেখা পাঠান আমাদের chayarodpatrika@gmail.com

Monday, February 21, 2022

অমিত চক্রবর্তী

অমিত চক্রবর্তী-র গুচ্ছকবিতা


১.

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি

 

মোহাচ্ছন্ন এই কাহিনীতে সে ছিল কেন্দ্রে, মোহেবিভোর

অথবা মোহ ছড়িয়েছিল সেই মায়াবিনী।

কল্পনার কৃশগাড়ি এমনই হয়, মিশিয়ে ফেলে

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, রিওয়াইন্ড করে যায়

পুরোনো দৃশ্যকাব্য।

চরিত্রগুলোকে গুলিয়ে ফেলি আমি

সংবাদে মারীচ হয়ে যায় ডাকসাইটে লেঠেল,

রাবণ সাজে জমিদার। সাড়া দিতে তাই দুবার ভাবতে হয়

এখন, উইন্ডশিল্ড না পোকা কে আমি,

কোন দৃশ্যে আমার প্রবেশ, কখন যবনিকা পতন।

তবুও আকাশকুসুম, তবুও অধ্যাস এ মায়াসন্ধ্যায়

চকখড়ি দিয়ে আঁকা তরীর স্বপ্ন

ভিড়বে কি কোথাও, কোনো এক সোনার গাঁয়?

 

২.

অপরিচিতের অন্য দৃষ্টি

 

 

আমি অপরিচিতের অন্য দৃষ্টি দেখেছি, তেমন কিছু না, প্রায় অদৃশ্য

সমাজ বা সংসার থেকে, এরকম একটি মেয়ে এসে একবার গাছতলায়

দাঁড়িয়েছিল। আমিও বিস্ময় খুঁজছি, আজীবন জাফরি কাটা দাগে,

প্রেমে আঁকা থিরথিরে লজ্জামুখ

 

                                                       জানি না, যাওধরণের সিঁদুরে মেঘে

তাই মেয়েটিকে চোখে পড়ে, হয়তো সাইড গিগ, হয়তো বন্দী সে,

আমারই মতন বাঁধা পড়ে আছে অতীতের গারদে।

 আপনি মানসিক ভাবে

উন্মুক্ত হতে চান কি’, ইত্যাদি কথাবার্তার পর আমরা এখন প্রায় বন্ধু,

যদিও হারিয়ে যাই মাঝেমাঝে, নিজেকে ব্যবহার করি ঢালের মতো, তবুও

গলায় গলায় প্রিয় হতে শিখছি আমরাদুই হেরে যাওয়া মানুষ এখন

প্রৌঢ়ত্বে ধূসর, বাড়ি আঁকে তারা প্যাস্টেল বা জলরঙে

আমার মেটে ঘর ভাল লাগে, নিকোনো, ওনার টালিচাল।

 

৩.

মেঘের ছাপমারা, অনিয়মিত বাঁশি

 

 

এত তীব্র কুয়াশা আজ

গুঁড়ো গুঁড়ো মেঘ বুঝি খেলা করতে এসেছে

ঘাসফুলের সঙ্গে

এরোসল, বিন্দু বিন্দু তরল ফোঁটায়

গাছ ছেয়ে আছে, পাখির বাসা, ঘরদোর

সব পয়েন্টিলিস্ট আঁকার চিত্রম্যাপ।

 

আমাকে কেউ ডাকেনি এখানে,

ব্রাত্য আমি, ভাঙা

তবু মেঘ অসাবধানে ঝুঁকে পড়েছিল,

নুয়ে পড়েছিল,

আমি তাকে চাঙ্গা করি, বলি, ভাল আছ তো

হেরে যাওয়ার একটা আকর্ষণ আছে, সময় উড়ে যাবে শেষে

মেঘনাদ, লুকোনো অস্ত্র ধুয়ে যাবে আলোর ভিড়ে।

 

 সেই গুঁড়ো গুঁড়ো ভেজা আলোয়

গাছ নাকি নতুন হবে শুনি, পাহাড়ও

গায়ে মেখে মেঘের এই নেশানেশা ফেনা

ভেতর ভেতর যে উচ্ছৃংখল জীবন আছে গাছ,

পাহাড়ের

এখন সেই ফাঁকগুলি, শূন্যগুলি

মেঘের ছাপমারা, অনিয়মিত বাঁশি হয়ে বাজবে।

 

সমব্যথী

 

তার কাহিনীর সমব্যথী ছিল নদী অথবা সে কি এক বটগাছ,

ক্ষয়ে যাওয়া কান্ড, বিষণ্ণ ঝুরি মাটি ছোঁয়ার আগেই

ভেঙেচুরে খানখান। তারা কেউই কিন্তু গল্পটার পুরোটা শোনেনি,

প্রিয়বন্ধুর মতো ঘাড় নেড়েছে কথায়, দরদ ঢেলেছে

অঢেল, দুর্বল মুহূর্তে। আমিও ঘুরপাক খাই সীমান্তে,

অজান্তে জড়িয়ে পড়ি অভিনয়ে, পাহাড় পেরোলেই তো রূপকথা

কিন্তু ভিসা পাইনি আজও।

 

তাকে সঙ্গে নিয়ে বেরোনোর ইচ্ছে আমার, পাহাড় দেখতে,

নদী বা সুখী মানুষ, আগলে আগলে বুকে জড়িয়ে,

দূরপাল্লার পাড়ি দিয়ে। অথচ কতবার বন্দরের পথে

কুয়াশায় চলে যাই, ভুল এক্সিট নিয়ে অন্য হাইওয়ে।

কিভাবে যে স্বপ্ন শুরু হয়েছিল এবং কী ভাবে বাসা গাড়ল

ধ্বংস নিরুপায়, সে কথা আর বলা যাবে না কাউকে, কারণ

আমিও তার গল্পে এখন খলনায়ক অথবা সাধারণ কোনো

চোরজোচ্চোর, কমিক রিলিফ। 

 

৫.

ও বরং দৌড়ে পেরিয়ে যাক

 

ছুটে যেতে যেতে একবার আমি

থমকে দাঁড়িয়ে ছিলাম

আমলকি তলায়, অথবা চালতা

আর তাতে আমলকি গাছ

একঘেয়ে হয়ে গেছিল তার সাধারণ যাওয়া আসা,

দুঃখ সুখ, মানুষের বিবিধ রতন দেখা

একবার হয়তো চমকে পাশ ফিরে ছিল

একটু কৌতূহল, হয়তো কৌতুক প্রথমে,

কে এই অপরিণত বালক, নিরীক্ষণে

বকুলতলায়, আমলকি বা চালতা

বড়বড় দুটো চোখ মেলে

বুঝে ফেলবে সে, জেনে ফেলবে

আমলকির চকমকি ভয়,

না চকমকি দিয়ে ঢাকা সেই ভয়

ধরে ফেলবে এই রোগা বালক,

তার চোখ দুটো দেখো, সে ধরে ফেলবে

দোকানে সাজানোর রহস্য,

পশরার আসল দাম

ধরে ফেলবে ও এক চিলতে তাকানোয়

একচিলতে স্পর্শ নিয়ে

 

 ও বরং দৌড়ে পেরিয়ে যাক আমলকিতলা

 

 ৬.

একচক্ষু হরিণ

 

একচক্ষু হরিণ আমি দেখিনি ইদানিং

এই অসময়ের অন্যান্য ভিড়ে

সে জল খায় দ্রুত, নদীর ধারে একা, অবহেলায়।

লোকচক্ষুর আড়ালে যখন, পাতা ঝরলেও সে

চমকায়, করুণা চায় ভীরু হরিণ,

হয়তো খানিকটা সে নিজেই করুণায় সৃষ্ট।

 

 আমিও স্বপ্নে জল খেতে যাইলেকে, পাথুরে নদীতে,

আমাদের তৃষ্ণা এখনো মেটেনি, মেটে না আলোতে,

জিনিসের ভারে, ঝলমলে আকর্ষণে,

মেটে না আলোতে      

তৃষ্ণা মেটাতে তাই, ঝাঁপিয়ে, শরীর দিয়ে,

অন্ধ মুনির ছেলের মতো জলের সম্মেলনে যাই

এক চক্ষু হরিণের মতো অন্য বিপদ, অজানা বিপদ

আঁকড়ে ধরি আকন্ঠ, দুহাতে, দুচোখে।

No comments:

Post a Comment