লেখা পাঠান আমাদের chayarodpatrika@gmail.com

Monday, September 7, 2020

আদিদেব মুখোপাধ্যায়

 আদিদেব মুখোপাধ্যায়ের কবিতা

 

অতিরিক্ত হস্তমৈথুন স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়      

 

 

কালো আতঙ্ক দিয়ে সেই স্ফীত বদ্বীপ ঢাকা থাকলে চমকে উঠি। সদ্য কামানো হলে কিছু খুইয়ে ফেলেছি’, এরকম গোপন কষ্ট।

 

দুদিকেই ছড়িয়ে পড়েছে অতর্কিত জঙ্গল। খুব কাছে ঝুঁকলে গিজগিজ করতে থাকে গুবরে পোকারা। তাদের রিনরিনে কোরাস শুনতে পাই।

 

তীক্ষ্ণ পাতাগুলো আড়াল গড়েছে।  ...আঙুলের দুটো ডগাই, ‘অপরাধ করছিএই সম্ভ্রম নিয়ে ক্ষুরধারকে আঁচড়ে দিল।

 

...বুবিট্র্যাপ? শশশ্‌... অশুভ রচিত হচ্ছে! বিদ্রূপে মুচড়ে যাওয়া হাসি। প্লাস্টিকের রোঁয়া, মৃত  ল্যাবাইরিন্থ যদিও ওরা সজাগ এবং খুবই বুদ্ধি ধরে।

 

লোপাটের হাত থেকে চরাচরকে কে বাঁচাবে? আকাঙ্ক্ষার দুই চোয়ালই একটা নিরীহ ঘুমকে কামড়ে ধরেছে! ...যেন নিজের ছায়াকে গিলতে চাইছে গজরাতে-থাকা উড়োজাহাজ... ভরে উঠল আঁধারের বাকি গর্তেরাও।  তবে কি... উপায় আর নেই!

 

গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়ছি ঘাসবনে চারটে রুগণ পা উলটে।

 

ঐ দৃষ্টির সামনে প্রতিবার তুমি একটা নিঃশব্দ কুয়ো হয়ে যাও।

 

একবারও-কাঁপে-না এমন মোমের শিখাও অদেখা তরঙ্গ তোলে, সমস্বরে গুনগুন করে উঠল কারা যেন! ...একটা শক্ত পাথরই নির্দয়ভাবে দলা পাকিয়ে যাচ্ছে তোমার মাথার সিন্দুকে।

 

এক নিরন্তর জেরা, নিঃশর্ত সমর্পনের ডাক। শিরশির করতে থাকে অপরাধবোধ, যেন জানলার দুটো পাল্লারই চুপি চুপি হাট-হয়ে-যাওয়া... কিংবা জলের তলানিতে পা রেখেছে এমন স্বচ্ছতার ভয়!

 

যা বোঝার নিজেই বুঝতে শেখো, জেনো ওরা উত্তর দিতে অনিচ্ছুক।

 

পলক না ফেলার লম্বা প্রতিযোগিতা। কে জিতবে, তার ওপর নির্ভর করছে লুকোনো কষ্ট, দমবন্ধ প্রত্যাশা। ...কিন্তু কোথায় লুকোনো? আর কেনই বা!

 

সাদা পাথরের ওপর কালো পাথর বারবার হারিয়ে যাচ্ছে(কেন?), উঠে আসছে কাঁপতে-থাকা সুরেলা আতঙ্ক(সে কী!)... না, এদেরও কোনও সদুত্তর নেই।

(মে, ২০২০)

 

 চক্রান্ত

 

রমণীর বিস্ফারিত মুখ, স্ফীত চাহনি, কোটর থেকে চোখেরা ঠিকরোয়, এবং দু'খন্ড হয় নাক, আর কানদ্বয়, যারা থেঁৎলে যায় ও ছিটকে পড়ে কর্নারে এবং কর্নার থেকে ক্রমাগত কলরব করতে করতে জাগে আলমারি ও খাট, চেয়ার ও টেবিল, ভেঙে যায় অকথ্য মেঝে এবং তাতে ঢুকে আসে  রমণীর পা, পায়ের ডৌল, ক্রমে অভ্যুত্থানের মতো জাগে টরসো, যা ইদানীং কর্তিত, ভাঙা; জাগে মাথা, যা অতিদ্রুত গলে পড়ে ও ঢুকে যায় বায়ুসমাজের মধ্যে, ঘোলাটে ও দ্বান্দ্বিক হয়, মজে, ছড়ায় স্নায়ু ও শিরা, হিম ও ধ্বংস, এবং পথ পায় মেয়েলিপনা, ঘরোয়াবৃত্তি, বাসনকোসন(যা কিছু নড়ে ওঠে, শব্দ করে ওঠে, যা কিছু জ্যান্ত, উষ্ণ ও যা কাঁপে)... সকলেই ঢুকে যাবে বস্তুর উদরে, ঘুণে, অন্ধকারে, অ-সময়ে, এবং সেই কালো ও ব্যাপক আগুন ঘূর্ণির মতো পাক দেয়, জ্বলে ওঠে, গিলে নেয় তোমায় ও ছিঁড়ে ফেলে সামূহিক জাল... ফিরে যাওয়ার জন্য, অপস্বপ্নের জন্য সহসা তুমি কাতর হয়ে ওঠো!  

(সেপ্টেম্বর, ২০১৯)

 

প্লেগ

 

বসো নিরালায়, বালিশে, এক্সাইলে; বই দিয়ে গেঁথে তোলা হয় ঘর, ঘর দিয়ে গেঁথে তোলা হয় জগত, এবং সমস্ত আজ দুমড়ে যায়, ভেঙে পড়ে; উন্মাদের মতো আছ, প্রেরিতের মতো আছ, শপথের মতো আছ, কংক্রিট কৃমি, নড়ো ও পাক খাও, নিজেকেই ছক করো এবং তোমার যে হাত, যে লিঙ্গ, যে পা, তোমার বর্ধিত যা কিছু, অর্থাৎ লতলতে, ঝুলে থাকা, পাপক্ষম, তারা তোমাকে ছেঁকে ধরে, জ্বালায়, মাথা খারাপ করে দেয়, আর মজার কথা তুমিও অস্থির হতে থাকো, খেপে যাও, ঘুম ভেঙে বারবার ওঠো (এবং তোমার ঘুমও ইদানীং নিরপেক্ষ নয়), দাও আয়না ফাটিয়ে, আঁচড়াও ড্যাম্প, মাথা ঠোকো... আর নিচু থেকে, অনেক ভেতর থেকে গুমগুমিয়ে উঠতে থাকে শব্দ, দামামা, ধ্বংসধ্বনি, লাল মেঝে থেকে উঠতে থাকে আত্মা থেকে উঠতে থাকে আঁধার থেকে উঠতে থাকে, তারা দলে দলে ওঠে ও তোমাকে খেয়ে নেয়, খায় পা ও হাত, পেট ও লিঙ্গ,  এবং তুমি দুলে যাও সেই তালে, ক্ল্যাপে, জয়োল্লাসে; ক্রমাগত এঁকে যাও ঘোড়া, কেবলই ঘোড়া, কেবলই ঘোড়া ঘোড়া আর ঘোড়া... এবং সেই ঘোড়ারাই একে একে জাগ্রত হয়ে উঠছে, ভারি বৃহৎ দানবের মতো উঠে দাঁড়াচ্ছে এবং নিশ্চুপে চিবিয়ে নিচ্ছে সাফ করে দিচ্ছে তোমার হৃদয়।

(সেপ্টেম্বর, ২০১৯) 

 

বিদায়, বিষন্ন শহর (কোথায় তুমি)

 

আলিঙ্গন, তাও মিথ্যে আমার স্বপ্ন ভরে গেছে দুঃসময়ে, হাড়গোড়ে হাওয়া দিচ্ছে হাড়কাঁপানো― গাড়ির কাচ দিয়ে দেখছি শহর আর শহরের দ্রুত সরে যাওয়া দেখি, সূর্যাস্ত সরে যায় তাও দেখি বাড়িগুলি আছে লম্বমান(‘বিদায়, বিষন্ন সমাধিমিনার’)... দেখি নেমেছে শোভাযাত্রা ও মৃতেরা শুয়ে আছে দুচাকা গাড়িতে খোবলানো মাড়ি দেখে মনে হয়, ‘স্মৃতি, ভোরবেলা জেগে উঠি নীরক্ত আলো, কাঁপি ভয়ে ও তাড়সে

 

আলিঙ্গন, অথচ ভুল, আমি বিক্ষত আঙুলে আজ ছুঁতে চাই তোমায় আছ কি কাচের ওপারে আমি অগণনবার চেষ্টা করছি ও হেরে যাচ্ছি(এই ব্যর্থতা আজো আমায় বাঁচিয়ে রেখেছে), আমি  বলছি বৃথা উত্তেজনা, শিশ্ন দিয়ে ঝরে পড়ে রক্তমেশানো জেলি ক্লান্ত চোখ মেলে দেখছি, মৃতের দীর্ঘ যাত্রা  ঠেলা যারা টানছিল, সেই মিলনপ্রত্যাশীরা চলে যাচ্ছে যাচ্ছে শোক ও উৎখাতের কোরাস গাইতে গাইতে।

(সেপ্টেম্বর, ২০১৯)

No comments:

Post a Comment