লেখা পাঠান আমাদের chayarodpatrika@gmail.com

Thursday, September 10, 2020

কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়

কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়-এর কবিতা

গুহামন

১.

চাঁদের কাছে যাবো বলে টিকিট করেছিলাম

কিন্তু হঠাৎ-ই চাঁদ ভালোবাসা হারিয়ে ফেলায়

আমার সফর বাতিল হয়েছে

 

কোনও উজ্জ্বলতা কি আমার সহ্য হয় না

নাকি আমাকে সহ্য হয় না উজ্জ্বলতার

 

অথচ রোদ্রালোকিত সময়, চন্দ্রালোকিত সময়

আমাকে বিভোর করে

 

কীসের এত বিভাজন        বুঝি না

 

মন ও মান দুটিই খুব সূক্ষ্ম জানি

ভালোবাসা কি তার চেয়েও সূক্ষ্ম

 

২.

হাইওয়ে ধরে ছুটে যাওয়া মন

স্মৃতি কোনোদিন ভুলবে না

 

একটা জলজ নদী

আর তার গভীর নাব্যতায়

আজও রোদ চিক চিক করে

 

আমি জানি প্রেম মানে একটা শিশুকাল

 

সব কালে সব প্রেমের ভেতর

শিশুরাই লুকিয়ে থাকে

 

৩.

ও ভাবে ডেকো না আকাশ

ও ভাবে ডেকো না মাটি

 

আমি তো মানুষ

অস্থির হয়ে যাই

 

অলীক শূন্য আর গভীর বাধা

অনন্ত আলো আর ভীষণ আঁধার

সবকিছু সমান আজ আমার কাছে

 

বুকের ওপরে কার শ্বাস পড়ে

 

ও কি আমি না আমার পৃথিবী

 

উদাসী সময় একান্তে লিখে রাখছে ---

ফুলগুলি ফুটেছিল

ফুলগুলি ঝরে যাচ্ছে নিয়মেই

 

৪.

সীমাহীন আকাশ ছিল তার

অথচ ওইটুকু তো বুক

 

আজানের সুর আর সন্ধে শাঁখের আওয়াজ

বিভোর করে রাখতো সময়

 

অস্ফূট কথা তার, কাতর কথা

রাত্রি আর শিউলি ঝরিয়ে দিত

 

মেরুর টানে জানি গভীর চুম্বক

তার চেয়েও গভীর টানে নিবিড় পাখি

 

৫.

তবে কি নদীর অভিশাপ মিলে যাবে

তবে কি জলের অভিশাপ মিলে যাবে

ওগো দুঃখ বিলাসী জীবন

কালপুরুষের কাছে তুমি কি কিছুই শিখলে না

 

ঋতুতে ঋতুতে আকাশ অপরিবর্তনীয়

মেঘের আভাসটুকু নিয়ে বেঁচে থাকা দিন

কেবলই কল্পজগতের জন্ম দেয়

চাঁদ আসে, জ্যোৎস্না আসে

সদাগর নৌকা ভাসাই গভীর মনে

 

অসংখ্য বুদবুদ আর স্রোতের থেকে

যে অতীত উঠে আসে

তার সবটাই অভিশাপের প্রতিচ্ছবি

 

৬.

মানুষই মানুষকে সবেচেয়ে বেশি ব্যবহার করে

এবং কাজ শেষ হয়ে গেলে ছুড়ে ফেলে দেয়

 

মানুষই মানুষকে ভেলকি দেখায়, আয়না দেখায়

রঙিন বাক্সের সামনে বসিয়ে বলে

এই নাও তোমার সমুদ্র নদী সূর্য এবং চাঁদ

 

মানুষ মানুষের কাছে সব সময়ই বোকা

চালাকি বলে যে শব্দটি উঠে আসে

সেটা তার অন্তর্গত মন, মনের ব্যর্থ প্রকাশ

 

একটা স্বচ্ছ দরজার কাছে এসে মানুষ

খুলে ফেলে তার প্রকৃত চরিত্র

 

৭.

ভালোবাসা তাপ ও ওম ভেঙে গেছে বারবার

জলের কিনারে দাঁড়িয়ে জলের প্রতিশ্রুতি

সূর্যাস্ত আকাশ দেখছে আজ

 

ফল ও পল্লবে সুসজ্জিত নগর---

সবুজ জলবায়ু

কোনও কোনও পথের বাঁকে অদৃশ্য হয়ে যায়

 

তবু পথ ও সময় কিছুই থেমে থাকে না

 

যেমন ভ্রূণের জন্মরহস্য যাদের কাছে অধরা ছিল

তারাই আজ নতুন পৃথিবীর জন্ম দেয়

 

৮.

তোমার ক্ষমার পাশে কোনোদিন বসাবে না জানি

তবু ভুলকে ভুল ভেবে ধরে নিলে

জানি বকুল ঝরে যাবে আমাদের যৌথ বাগানে

 

আমাদের মাথার ওপর প্রতিদিন

একটি একটি করে জন্মকণারা আসে

তার হাত ও চক্র

মনের জলবায়ু বদলে বদলে দেয়

 

কী ভীষণ মায়াময় এই সংসার জগত

সকালসূর্য আর বিকেলসূর্যর মাঝে

যে দীর্ঘ আলোকচিহ্ন

সে শুধু সূত্রের পাশে প্রশ্নবোধক

ক্ষমা ও ভুল একে অপরকে চিনতে পারে না কোনোদিন

 

৯.

পৃথিবী একটি ধূসর গোলক

আমার বিকেলবেলা নীলধূসরতা মন টেনে রাখে

 

একটি নদীর কথা মনে পড়ে

একটি তীব্র স্রোতের কথা

একটি উপাসনা মণ্ডপ আর

ভীষণ ঘনিষ্ঠ হওয়া ব্রহ্মমন্ত্র

 

শরীরে কি ঘাম খুব বেশি ছিল

অথচ প্রকৃতি ছিল খুব যত্ন মাখা

 

সেই প্রথম ও শেষ

সেই শেষ ও প্রথম

 

আজও নদীর সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে

নদীর সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে

ধূসর পৃথিবী আমার প্রথমটুকুই বয়ে নিয়ে যায়

 

 

১০.

জীবন একটি বৃত্তাকার পরিক্রমণ

 

ফেলে আসা ঘাট, জল, স্রোতের সাথে

প্রায়শই দেখা হয়ে যায়

 

যে মেঘ কথা দিয়েছিল

বর্ষাকে আমার সাথে রাখবে

সেই মেঘকে মাঝে মাঝেই দেখি

আমাদের খিড়কি মাঠে বর্ষাকে নিয়ে

ঘুরে বেড়াতে

 

আসলে জীবন নিজেই একটা আস্ত পৃথিবী

যার নিজস্ব দণ্ডের ওপর

গুহাচিত্রের মতো আঁকা থাকে মায়াবি গহ্বর

11 comments:

  1. অসাধারণ লাগল কল্যাণ। রেশটা রয়ে যাবে সারাদিন, ভালোবাসা♥️

    ReplyDelete
  2. "কী ভীষণ মায়াময়"।

    অসাধারণ,কল্যাণ। খুব ভালো লাগল

    ReplyDelete
  3. দারুণ সুন্দর হয়েছে প্রতিটি কবিতা।

    ReplyDelete
  4. সব কবিতা গুলি ভীষণ সুন্দর

    ReplyDelete
  5. সব কবিতা গুলি ভীষণ সুন্দর

    ReplyDelete
  6. দারুণ দাদা।খুব ভালো লাগলো

    ReplyDelete
  7. অন্তর্গত বিষাদের কাব্যিক প্রকাশ।শূন্যতাও বাঙ্ময় হয়ে ওঠে

    ReplyDelete
  8. অন্তর্গত বিষাদের কাব্যময় প্রকাশ ।শূন্যতাও বাঙ্ময় হয়ে উঠেছে

    ReplyDelete
  9. জন্ম রোমান্টিক কল্যাণ । কে বলে বিনা খাদে গয়না হয় না ? এইতো কেবল খাঁটি প্রেম দিয়ে গড়া একটি যুবক ।

    ReplyDelete
  10. প্রেমিক কল্যণের কবিতা ভালো লাগলো।

    ReplyDelete
  11. অনন্য বোধ উচ্চারণ। মন ছুঁয়ে গেলো। আন্তরিক শুভেচ্ছা রইলো।

    ReplyDelete