লেখা পাঠান আমাদের chayarodpatrika@gmail.com

Tuesday, October 5, 2021

তিতাস বন্দ্যোপাধ্যায়, শারদীয়া সংখ্যা

তিতাস বন্দ্যোপাধ্যায়-এর দুটি কবিতা

 

কাপলেট

 

প্রত্যেকটি হৃদয়ে যে কাপলেট

 মাথা নিচু করে বসে থাকে

তার খোঁজ নিতে গিয়ে দেখি,

অদৃশ্য যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হাত থেকে

ভূপতিত রক্ত!

 

সে রক্তের বিবিধ নিষেধাজ্ঞায়,

স্বমেহনের মতো লুকিয়ে পড়েছে ক্রোধ।

 

প্রত্যেকটি হৃদয়ে বহু কাপলেট

মাথা উঁচু করে বসে আছে।

 

দূত

 

মেঘ পিঠে নিয়ে পাখি উড়ে যায়!

মেঘের বদলে যেন সে-ই দূত।

সে-ই যেন ঋতুকে এগিয়ে দেয়

আরেক ঋতুর দিকে!

তারপর ঘুমায়।

 জেগে উঠে,

 বিষাদ-প্রতিমার কাছে

বন্ধক রাখতে যায় জগতসমূহের যাবতীয় জিজ্ঞাসা চিহ্ন।

প্রকাশ ঘোষাল, শারদীয়া সংখ্যা

 প্রকাশ ঘোষাল-এর দুটি কবিতা

 

কর্তৃকারকের আকাশ

 

ভোরবেলা। দীর্ঘ ঈ-কার ছুটছে স্বপ্নের রাস্তায়।

প্রথম বন্ধনীর মধ্যে হরিণের ভূগোল। ঘুরছে।

আর

তৃতীয় বন্ধনীর ভেতর জড়ো হচ্ছে গেঁড়ি-গুগলির নতুন শতক।

 

চোখের বঁড়শিতে কেমন টপাটপ কিডনি  উঠছে। দ্যাখো।

ঝাঁপ মারছে টাগরায়।

সারাদিন ইনহেলার নিয়ে ম্যাজিক শো করছে এক বুড়ো যাদুকর।

সি-শার্পে গ্রাম ভর্তি শহর দেখছে মেঘের দরজা খুলে দেওয়া বিদ্যুৎ কুমারীর স্বাগতম।

 

ঝকঝকে সেলফি তুলছে কর্তৃকারকের আকাশ।

 

 

বিষুবরেখায় দাঁড়িয়ে

 

বিষুবরেখায় দাঁড়িয়ে ঢোল বাজাচ্ছে দাঁড়কাকের দল।

মাটির ম্যাট্রিক্স আজও জানে শর্করা নির্মাণ।

 

তর্জনীর মাথায় শুধু ঘুম আর ঘুম আর

মাথার পিছনে জেগে উঠছে মরুভূমির গাছ।

 

মৃত্যু দিয়ে শাসন হয় না ব'লে এখনো

সাঁকোর ওপারে ট্রেন ছুটে যায়।

অন্তমিলের ভেতর ভেসে ওঠে সারি সারি চোখ।

 

আগামী ২১-শে মার্চ পৃথিবীর উত্তরে

মানুষের অক্ষর এবং দ্রাব্যতা নিয়ে কথা শুরু হোক।

কার্তিক ঢক্, শারদীয়া সংখ্যা

কার্তিক ঢক্-এর দুটি কবিতা

 

চব্বিশ ক্যারেটের সেলাম

 

ন্যাকাজল বয়ে যাচ্ছে হাইড্রেনে

বাসমতীচাল ধুয়ে নিচ্ছে কিছু লোক

রকবাজির টোকায়...

বাদশাভোগ-গন্ধে ম্-ম্ কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী!

ভাত ছড়ালে কাকের শুদ্ধস্নান

ভাদ্র মাসের আগেই কিছু নেড়িকুত্তা

পেটেতে দেশলাই জ্বেলে লেজ নাড়ে।

প্রতি ঘন্টায় চব্বিশ ক্যারেটের সেলাম ঠুকছে

আস্তিনকা সাপ

ভবঘুরে ঢ্যামনাগুলো নির্বিষ হলেও

বংশবৃদ্ধিতে ওস্তাদ...

 

রোদের ডেসিবল

 

মেঘ চলেযাচ্ছে বৃষ্টিকে না রেখেই

মাটি তাই রুখুস্বরে ধূলোরাগের অন্তরা গায়...

রোগা পদ্মপাতায়

ব্যাঙেদের কষ্টকথার ডিটিপি পাঠাচ্ছে

পুকুরের অস্তাচল রং।

চাতকডানার যন্ত্রণার পালক ঝরে যায়

অসম্ভব রোদের ডেসিবেলে।

গোলাপটির শিকড়ে জলের হাহাকার

 

ওগো শ্রাবণ, যতোই কাজল আঁকো

 তোমাকে আজ প্রিয় বলি কী করে...

অরিজিৎ চক্রবর্তী, শারদীয়া সংখ্যা

অরিজিৎ চক্রবর্তীর কবিতা

 

অঙ্কনধর্মী

 

যেকোনো কারণেই হোক

তোমার আমার এই অন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম

সন্তানসন্ততির মনে সঞ্চারিত হয় একদিন।

 

তবুও ক্ষুধার শেষে দুটি সংযোগকারী জীবনের ব্যবহার অব্যবহারের গুমঘর পচনের ভয়াবহ জৈব আলোকে সাংসারিক বিরক্তির স্বপ্ন দেখায়। নিমিত্ত নিজেকে সামনে রেখে প্রবক্তা অপমান থেকে বহুদূরে কেন যে কবিতা লিখি? শঙ্খ বাজলে মধ্যবর্তী সময় ভারী পাথরের মতো গড়াতে থাকে

 

ভাবি রণে ও প্রণয়ে মিথ্যাচার

কোনো পাপ নয় ! যেমন আমরা যে হাতটি বেশি ব্যবহার করি, অন্য হাতের তুলনায় সেটি সক্রিয় হয় ! অপমান, শেষদেখা, বিষাদকথা, দুঃখ বনসাই হয়ে ওঠে একদিন আর অগ্রসর

মেরুদণ্ডী সভ্যতা রাসায়নিক কিছু আবর্জনা নিয়ে ভূপাতিত সম্পদের চাহিদা মেটায়

 

আমি আমার আমাকে শরীরের মধ্যে বিলোপ করে

পাখি ও আরশোলার ডানায় সমবৃত্তীয় অঙ্গের যোগাযোগ খুঁজে পাই

 

যেকোনো কারণেই হোক আমাদের এই অন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম শিকড়ের কাছাকাছি টেনে রাখে গভীর প্রোথিত। যেন আত্মহত্যার পর, একটা স্বপ্ন থেকে বেঁচে ওঠা কথাকলির মুখোশ

সুব্রত পন্ডিত, শারদীয়া সংখ্যা

সুব্রত পন্ডিত-এর দুটি কবিতা

 

গিরগিটির  অভিযোজন

 

আনলা আর জামার দূরত্ব ভাঙতেই

উলঙ্গ রাত্রির শরীরে ঝলসে উঠলো লিরিল রমণী

 

গিরগিটির অভিযোজন নিয়ে তর্ক থেমে গেছে

রাজনীতির বিশ্লেষণে

 

কে কাকে ভাঙাতে পারে এমন এক প্রতিহিংসায়

সিরিয়ালের দর্শকদের মজিয়ে দিয়ে

গ্যালন গ্যালন ক্লেদে ডুবিয়ে রাখে চাঁদেরবাড়ি

মাকুতে স্বপ্ন বুনতে বুনতে ভজন তাঁতি

দিন বদলের নৌকায় ভাসতে থাকে

দিন বদলায় না, বারবার জামা বদল হয়

হতাশার বুদবুদ বেঁচে থাকে হাসপাতালের

স্যালাইন দেওয়া বেডে...

 

চন্দ্রমল্লিকা

 

বাগানে তন্বী বিকেলের মতো

যে একাকী লতাটি অপেক্ষায়

সে আসলে ভালোবাসার বাড়ি

 

স্নান সেরে প্রতিদিন নম্র হয়

তুলসীতলায়

 

ডুরে দেওয়া মেরুন শাড়িটি হেঁটে যায়

সুদৃশ্য লনে...

প্রজাপতি না বসলে রমণ ইচ্ছের ঋতুমাসে

জড়িয়ে ধরে পুরুষ গাছ

 

মিলনের আমন্ত্রণ থাকে বলে

আজও চন্দ্রমল্লিকা ফোটে...

পৌলমী ভট্টাচার্য, শারদীয়া সংখ্যা

পৌলমী ভট্টাচার্য-এর দুটি কবিতা

অলিভ গ্রিন করিডোর

 

অলিভ গ্রিন করিডোর...

দুপুর নামলে উত্তাপ হয়

ভিঞ্চি সাহেবের হাতের তেলো

 

মশগুল হয় বাহারি রং

 

ক্যানভাসের বুকে নামে রোমাঞ্চকর প্রবাস

গণিত সূত্র মেনে তুলি টানে

ভিজে কাজল...

মন্দাক্রান্তা ছন্দর বেবাক অবয়ব

 

বিদ্যাপতির পুরুষ পরীক্ষা

মাদল বাজায় কাজল কোণে

গ্রিন করিডোরে মাতে মাতাল স্যাক্সোফোন

 

মোনালিসার ঠোঁটে বসেছে ইন্টালেকচুয়াল নন্দন তত্ত্ব

আদ্রতা পৌঁছায় দুপুরের সেলসিয়াসের পাদদেশে

 

ইমপ্যাক্ট সচেতনতা জারি হয়

অলিভ করিডোরের উত্তর সীমান্তে।।

 

ব্রাত্য চাহিদাদের কেমিক্যাল চেঞ্জেস

 

ঘুমিয়ে পড়া জলে, জল ছিটলে

আমি ভিজি ব্যাকরণ না মেনে

 

ভিজে চুল বেয়ে অ্যালিটারেশনের চোরাগলি

 

আমার মগজ কোষে সজীবতার আদ্যপান্ত সমীকরণের ঢং

সিন্দুকে গচ্ছিত নিপুণতায়

 

ব্রাত্য চাহিদাদের কেমিক্যাল চেঞ্জেস মঞ্চে উপস্থাপন করলে

মলিকিউল গুলো মুখোশ ছাড়ে

মনের ভূগোলে আত্মস্থ হয় ছদ্মবেশীর  ইতিকথা

 

শরীর জুড়ে তোমার কঠিনীভবনের লীনতাপ

প্রত্নখনন চলে আমার অনুর্বর পরিধি ঘিরে

আকর্ষণের ঘণীভবন তোমায় ছুঁলে

রহস্যের রসাল রসায়ন বারুদের কারখানায়

ইকোনমি ডায়েরিজ আঙুলের মগডালে,

কেবলি হাসো...

আমার নিরক্ষর করবীতে ভিড় করে

স্বেদন জলের বুঁদবুঁদ

 

মানদণ্ড হাতে নিয়ে স্টিমুলেটেড হরমোন যাত্রা করে দূরবর্তী অঞ্চলে

শ্যাওলা ধরে আমার প্রতীক্ষায়।।

সিদ্ধার্থ দাস, শারদীয়া সংখ্যা

সিদ্ধার্থ দাস-এর দুটি কবিতা

 

প্রক্সি

 

অন্য যখন অনন্য হয়, মধ্যিখানে '' বসে,

চিরাচরিত উচ্চারণে ন্যাকা; শুনতে মারভেলাস।

 

ড্যাংগুলি হাওয়ায় উড়িয়ে চঞ্চল নীলমণি;

পোষ্য কুকুরের লেজে লঙ্কা পটকা বেঁধে, মাতন উল্লাস!

 

সবাই নিজের মত হতে চেয়ে রুমাল চুরি খেলছে।

সুর অসম্ভব ধ্বনির দৈর্ঘ্য, অন্ধ মুনিষের মর্মবাণী।

 

মানুষ আবেগ থেকে কাঁদে, গলা তখন খনা শোনায়।

প্রশংসা বাদ দিলে খাঁটি বসন্ত, অব্যক্ত পলাশ জীবনী।

 

স্বপ্ন নিয়ামক

 

মানুষ ও কবির মধ্যে দূরত্ব সবসময় একইরকম।

যেটা তার পছন্দ অন্য করো হাতে মানায় না।

সশব্দ এগিয়ে বাক্যে চক্রবৃদ্ধি, মাশুল গুনতে বাধ্য খানদান।

 

আমরা হেসে হালকা করি সৌভাগ্য।

পিণ্ড সম্যকসূর্য নীল আলোক দ্যুতি?

কেউ যায় ভাসিয়ে সত্বর কাঙাল।

 

যখন কোনো অসংগতি ধরা পড়ে চোখ কাজলে মিলিয়ে যায়।

জল অথৈ সর্বদা, সর্বশেষ সংযোজন মৃত্যু!

আমিনা তাবাসসুম, শারদীয়া সংখ্যা

 

আমিনা তাবাসসুম-এর দুটি কবিতা

 

অনাবশ্যকীয় দ্বিপ্রহর

 

এ এক অনাবশ্যকীয় দ্বিপ্রহর

      শব্দ খুঁড়িয়ে চলে

            ঘাড়ের আঁচিল থেকে

                         বুক পকেটে...

না কোনো বন্ধকী কথা

না কোনো নিছক আদিখ্যেতা

     পাউরুটি

            চাউমিন

                   চিলি সস্

একান্নবর্তী কবিতার ঘর সংসার।

 

যেভাবে দুঃখ মোছে সাবান

আর

বিনষ্ট পেয়ারার মধু চেটেপুটে খায়

                 কাঠবেড়ালীর সহধর্মিণী

ততটা সহজতা নিয়ে নিয়ম ও মধ্যাহ্ন

ততটা আশা রাখা

       দেহতত্ত্ব বুকের খাঁজে।

 

পবিত্রতার শেষ পঙক্তিতে

একটা আলখাল্লা ঢাকা মুখ, গভীর বিস্ময় ঠোঁটে

কিছু নিরাশার প্রেতের মতো স্বপ্ন দেখে দুটি চোখ।

কোনো গাছ, পাতা, স্টেশন কিংবা পথ নয়

শব্দের স্রোতে গা ভাসায় সে।

 

বন্ধ কামরা আর কিছু রংচটা অতীতের পাতা

গুনতে গুনতে দিন পেরোয়, সন্ধ্যা নামে।

কবিতার খাতা গল্প হলে প্রেমিক আসে অন্ধকার বেয়ে।

তারপর বাস্তব ধুলো বালি হলে

ভবিষ্যত বসে চোখের মহল্লায়।

 

রক্ত-শোক শিরদাঁড়া বেঁধে গঙ্গায় ডুব দেয়

ঠিক তখনই...

পবিত্রতার শেষ পংক্তিতে প্রেম মেশাই,

আবার হৃৎপিণ্ডের পাহাড় গুঁড়িয়ে দিতেই।

শ্রীরূপ বিশ্বাস, শারদীয়া সংখ্যা

শ্রীরূপ বিশ্বাস-এর দুটি কবিতা

 

গরুড়

 

অযথা ডানার থেকে পালক ঝরেছে, বেসামাল।

রাত্তিরে নিভে আসে রোশনাই তারাদের। সাল

থেকে মাস থেকে দিনের হিসেবে রেখে যাওয়া

কিছুতে সহজ নয়। বহুদূরে ফুরফুরে হাওয়া।

 

সে হাওয়ায় ভেসে আসে রঙিলা জাদুর গালিচা,

ছাতের ওপরে সেকি শাহজাদী নাকি খালি চাঁদ

বেবাক থমকে আছে। তারও কি থমকে গেছে বুক?

অযথা স্তম্ভ থেকে ঝরে গেছে আলো অহেতুক।

 

হাহাকার শেষ হ'ল। আলগোছে নেমে এলো ঘরে,

লোডশেডিং-এর রাত। আবছায়া। বড় নড়বড়ে

উড়ান সামলে নেবে ঠিক। তার খরতর শোক

অযথা, ভেবেই বুঝি, খসিয়ে দিয়েছে সে পালক।

 

 

শ্রাবণ

 

বর্ষা হলেই তোমার কথা উঠোন জুড়ে

জল জমেছে জলের ওপর, দ্বিপ্রহরে

বর্ষা ভীষণ শহর জুড়ে ভাষার মতো

 

বর্ষা হলেই তোমার চুলে মেঘ জমেছে,

সরিয়ে নিচ্ছো হাওয়ার মতো চুলের গোছা।

বর্ষা হলেই মুখরিত আরব সাগর

 

উঠছে ফুলে। বিচ্ছিরি সব রাস্তাগুলো

ভিজেই যাচ্ছে কখন থেকে আনন্দময়।

বর্ষা হলেই আশ্রয়হীন দাঁড়িয়ে আছো।

 

হঠাৎ ভিজে ঝাপসা দেখায়। চশমায় জল

তোমার। বুঝি দীঘির বুকে সিঁধ কেটে যায়

অজস্র মাছ। দিব্যি মেয়ের আঙটি পায়ের,

 

যাচ্ছে ভিজে। বহুযুগের ওপার হতে,

এমন একটা অসাবধানী দ্বিপ্রহরে

বৃষ্টি হচ্ছে। তোমার কথা উঠোন জুড়ে।

অন্তর চক্রবর্তী, শারদীয়া সংখ্যা

অন্তর চক্রবর্তী’র গুচ্ছকবিতা

নির্বাণ

 

.

ভূতপূর্ব যা যা পথ, অকাতর ইষ্টজগতের

সমাহিত অবশেষে সবিস্তার নিগূঢ় ঐহিক

বিনাশ? না আয়ুমূল? ছদ্মরবে কৌতূহলরাশি

পরমে আকুতি সঁপো, সঁপো, সূক্ষ্ম অনুভা-তালাশ

বারংবার বাত্যাবিঘ্নে ইতস্তত সাধনসমাধা

কৈবল্যমুখর তবু সুজঙ্গম জিগীষামহিম

পান্থশ্রমে দ্যাখো ইহ, নিরঙ্কুশ মহাজাগতিক

 

.

মুহুর্মুহু স্মৃতিচিহ্নে দীর্ঘতর হল ক্ষতদাগ

অন্তর, জাগাও দ্রোহ, ভাস্করের শিরা-উপশিরা

খোদাই-প্রকৃতি গুণে সমুজ্জ্বল ধমনীজোয়ার

স্পন্দনে নিপুণ ঢালো অনিমিখ রাহীকুশলতা

নীবরের স্ব-আঘাতে চিরঞ্জীব অসীমাবয়ব

বিশদ স্ফূরণজোড়া মৌসুমীর পরতে পরতে

সরল নিশ্চিহ্ন হল সমগ্র জখমস্মারক

.

উৎফুল্ল নিদ্রালোক জেগে আছে তুষারশয়ানে

সন্তাপের প্রাত্যহিকে অকপট মায়াব্যতিক্রম

প্রেয়সী তিতিরচোখ, রাখি মৃদু ক্ষুধা-অনুরোধ

দুর্জ্ঞেয় নিঝুম চিরে ঝাপটাও কৃশানু-উড়াল

দাহপর্ব সমাপনে মেলে যেন কণ্ঠমাত্র দেহে

স্নায়ুর ক্ষরণজলে রাঙা রাঙা বাল্য অস্থিফুল

নিদ্রাভোজে সমারূঢ় ঊষানাভি, ওমে ফেরা শীত

 

.

 

অবসাদে বাঁধাধরা পরিত্যক্ত নোঙর-মানস

দেখেছি ধ্বংসের কোণে, বেলাশেষে স্বভাবী ছায়ায়

সেও তো চেয়েছে আজ মহোত্তম জাহাজী প্রত্যয়

কবেকার অপঘাতে শুয়ে আছে স্তব্ধজল পোত

ফেরাও ভোঁ-এর শ্বাস অনাবিল, আজন্মের ভোর,

সুপ্রখর অর্চিদণ্ডে, দাও এই মহার্ণব সেঁচে

নোঙরের ওষ্ঠাধরে শ্বেতস্পর্ধা পালোমা-আভাষ

 

১০.

দ্যাখা যায় ওই দূরে, নাস্তিকের শ্রান্ত পাদুকারা

কাঙাল আবেশে লিখি মনোযোগী ভাবানুসরণ

সদ্যোজাত মক্শখানি জড়দ্গব ঊষর পেরোয়

উপল-কাঁটায় বিঁধে, লিপিবদ্ধ ভ্রমের অধিক

আয়াসী আঙুল বেয়ে আচম্বিতে মৃদু করজোড়

আদিগন্ত প্রপঞ্চের ক্ষুরধার বজ্রসমাহারে

নাস্তিকের পাদুকায়, নেমে আসে ঈশ্বরের ভূম

অমিত চক্রবর্তী, শারদীয়া সংখ্যা

অমিত চক্রবর্তী-র কবিতা

আঙুরফল টক

সে স্বপ্নে মাখে গান অথবা খুনসুটি,

আমি বিজোড় সংখ্যা, আমি তালু মাথায় ঢেকে

বিভোর, দলিল অথবা দস্তাবেজ পড়ি

 

কবে চলে গেছ সেই তালা ঝুলিয়ে,

স্বর্গে এখন পিতলের গোদরেজ, এদিকে

তোমার বাড়িতে বৈদ্যুতিন,

নিরাপত্তা,

জানলা ঘিরে দীর্ঘ পুরুষ তার হাসিহাসি ছায়া

আমি নীচু, আমি বাগানে বসা রুগ্ন,

আমি স্বপ্নে গাছতলায়।

 

ভোর চারটের এই উপাখ্যানে

ঠান্ডা ভাব আসে একটা, চাদর উড়ে যায়

ঝড়ে, লাখ লাখ সমস্যা, বাণী,

মন্তব্য ভিড় করে আসে, তোমাকে কেমন

হেরো মনে হয়, ঠকে যাওয়া

খোলাবাজারের, দরকষাকষির আখড়াতে।