লেখা পাঠান আমাদের chayarodpatrika@gmail.com

Sunday, November 15, 2020

রূপাঞ্জনা ভৌমিক, ১২

রূপাঞ্জনা ভৌমিকের গদ্য

 

ফাইন লাইন

 

দাঁতে দাঁত পিষে নৈঃশব্দ্য যুদ্ধে মত্ত দোটানারা। নিরাশ যুক্তিরা ল্যাবিরিন্থের শিকার। ভাগ্যের রেখা  বাঁকাপথের পথিক। তার উপর টাটকা কয়েকটা পদক্ষেপ। তাদের একধারে দীর্ঘ ভুলভুলাইয়া পদচিহ্নের অমানুষিক শক্তি শরীরের ভিতর ভাঙন-গড়ন চালিয়ে যায়। সেই মুহূর্তে উঁকি মারে আমার প্রতিবিম্ব। অবশ ভাঁজের উপর রঙবেরঙের মুখোশ বসানো। তার ফাঁক দিয়ে আমার চোখ যেন সত্যান্বেষী। উল বোনার মতন গোলকধাঁধা বুনে চলেছে ছলনাময় সমাজ। গীট আলগা উঠে আসে সরল অঙ্ক। দৃষ্টি স্পষ্ট হতেই  নিজেকে খুঁজে পাই এক কাটাকুটি খেলায়। যুক্তি-বুদ্ধি নিয়ন্ত্রণ হারায়। ঘনঘটার আতসকাঁচে দৃশ্যমান আমার গ্রাস হতে থাকা দুর্বলচিত্ত। নজর সরালেই ফের  চেনা চলচ্চিত্র; ভিন্ন মঞ্চে, ভিন্ন মুখে।

        আমি স্থির জলের ঢেউয়ে ধাক্কা খাই, আর মগজ জুড়ে শুধুমাত্র সু-সজ্জিত মঞ্চের মানবিক পুতুল-খেলা।

ঔষ্ণীক ঘোষ সোম, ১২

ঔষ্ণীক ঘোষ সোম-এর কবিতা

 

গন্তব্য

 

দেওয়াল বেয়ে একটা পিঁপড়ে উঠছে

যেমন এই জীবন সরণি ধরে চলেছি আমি।

তফাতটা শুধু একটাই

ও একটু পরেই গন্তব্যে চলে যাবে,

আমারই কোথাও পৌঁছানো হবে না।

 

 

বিসর্জন

 

ভোরের আকাশে তারাদের বিসর্জন দেখতে দেখতে

দর্পণে কেঁপে ওঠা প্রতিমার মুখ মনে পড়ে যায়।

নহবতে বিদায়ী সুর বাজে, ক্লান্ত শহর, ঘুমের ওপারে

কাক ডাকে, কেঁপে ওঠে জল

এখন ওর যাওয়ার সময়...

 

প্রতিচ্ছবি

 

এই ঘরে কোনো আলো নেই

তাই আয়নায় নিজেকে দেখিনি কোনোদিন।

যা দেখেছি, যা ভেবেছি

সবই মনগড়া

 

                     কল্পনা।

 

নিজেকে যেমন দেখতে চেয়েছি

তেমনি তেমনি কল্পনার ছবি

ফুটে উঠেছে মনের আয়নায়।

 

সেই নিয়েই কেটে গেল

 

       সারাজীবন।

 

তারপর,

              বেলা শেষের রোদ্দুর,

                              হঠাৎ

আমার এই অন্ধ-ঘরে কালনাগিনীর মতো এসে

জ্বালিয়ে দিল আমার সব কিছু।

 

আর আমি এই জ্বলে যাওয়া চোখ দিয়ে

প্রথমবার আয়নার দিকে তাকালাম।

 

আয়না টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে গেল।

অনিন্দ্য রায়, ১২

অনিন্দ্য রায়-এর কবিতা

পুরাণভূম

 

ȫ

আদিগন্ত ধু ধু 

শুধু উপকূলে ভেসে-আসা গুঁড়ি দুটি— একটি অ্যাশগাছের, পোক্ত; আরেকটি নমনীয়, এলমগাছের। বালিতে তাদের পুঁতে শ্বাস দিয়েছেন আর আকৃতি, ইচ্ছা, চলাচল দিয়ে বানালেন যথাক্রমে পুরুষ ও নারী

 

একটি অ্যাশগাছের, পোক্ত, কাঠে হাতল বানানো হয়

আরেকটি নমনীয়, এলমগাছের, কাঠামোর উপযুক্ত

যথাক্রমে পুরুষ ও নারী

 

ȫ

জোড়া নক্ষত্র ওই যে, ওই চোখ

ঈগল-সজ্জার কথা মনে পড়ে? প্রচণ্ড আগুন, পালকের ছাই

      আর্তনাদ মহাকশে ফুরোয়নি আজও কি?

 

ওই চোখ, জোড়া নক্ষত্র ওই যে— কী দেখছে

কাঠের বাক্স একটি আর তাতে অমরত্বের আপেল

মৃত্যুর পরেও লোভ!

 

নাকি বাক্স রয়েছে যাঁর হেফাজতে 

সেই দেবী, কাব্যদেবতার বউ— আরও লোভনীয়

হয়তো কবিতা

        মৃত্যুর পরেই পড়া যায় ঠিকমতো         

 

ও তাঁর আপেলগুলি

শব্দের বাগানে 

 

ȫ

অথচ কবিত্ব মানে রক্তের মদ

দুই বামন বানিয়েছিল জ্ঞানী দেবতাকে ঠকিয়ে হত্যা করে

                                  তাঁর রক্ত দিয়ে

 

দুটি ভাণ্ড আর একটি কেটলিতে ভরা

 

তারপর নৌযাত্রা, হিংসা ও খুন

প্রতিশোধ, কন্যার জিম্মায় পানীয় লুকোনো

 

তারপর ভালোবাসা, মানে মিথ্যে কথা

চুম্বন এবং সংগমের পর

              লুণ্ঠন (সেই রীতি আজও চলেছে)

 

অথচ কবিত্ব মানে দুটি ভাণ্ড আর একটি কেটলি 

চালাকি, ছলনা, হিংসা, কাম— সমস্ত পান করে

                   আদিপিতা বমি করেছেন 

 

আজও কবির রক্তে মদ, প্রতারণা, কান্না, অবিশ্বাস

দুটি ভাণ্ড আর একটি কেটলিতে ভরা

              আমরা অক্ষরবৃত্তে তিনমাত্রা ধরি

Sunday, November 1, 2020

নাসিম বুলবুল, একাদশ সংখ্যা

নাসিম বুলবুল-এর কবিতা


আত্মদ্রোহ ও কৃষ্ণকলি সংবেদন

 

১২.

ধোঁয়ার মতো দুই ঠোঁট গিলে নেয়

বাতিঘর জ্বালানো পরিযায়ী চুমু বলাকা,

অচেনা অনুভূতির সাথে চুপ করে বসে থাকতে হয়।

 

যাকে খুব সহজে বোঝা যায়

সেই আসলে ভীষণ জটিল,

সহজ বুঝে আমরা ঘুমিয়ে পড়ি

পরে বুঝি এ শুধু ছায়াপথ না,

বহুদূরের কোনো অচেনা অজানা নীহারিকা।

 

১৩.

কৃষ্ণকলির মুখে সন্ধ্যে নামে নীল আলোর বৃত্ত দিয়ে

সবসময় তার ভাগ্যলিপিতে সোনালী পাতা নেই

পবিত্র নাম ভেবে সন্ধ্যের নিয়ন নিসর্গে

রঙিন রোশনাইয়ে তাকে ডুকরে ডুকরে কাঁদতে দেখি

 

আসলে অন্ধকার কীআমরা বুঝি না

অন্ধকারই জানে সত্যিটাকে না চেনার বেদনা!

 

১৪.

কৃষ্ণকলির জন্য হত্যে দিয়ে মন তোলপাড়

তার জন্য লিখতে পারি ব্রহ্মাণ্ডের ইতিহাস

অথচ এক সময় ইতিহাসকে গল্প কাহিনী ভেবে

কি অবজ্ঞাটাই না করতাম

 

এখন লিখতে চাই মোহর টানে না

তাকে বাঁধনহারা থেকে ফিরিয়ে,

সে যে সৃষ্টিরই প্রলেপসেটা বোঝাতে।

 

কৃষ্ণকলির হাতের রেখায় নির্জন রাত্রির অবকাশ,

অথচ কাছে থেকেও সে ভীষণ দূরের নীলরাঙা আকাশ।

 

১৫.

অন্ধকার হওয়ার আগে

রাঙারোদের পৃথিবীতে সে হাসিখুশিই ছিল

তুলতুলে নরম গালে রোদেলা লাল আভায়

শ্রাবণের শ্রান্ত বিকেলে শান্ত মেয়ের মতো উতলা হতো

একটু ছুঁয়ে দিলেই কৃষ্ণকলি হয়তো গলে পড়ত।

 

অন্ধকার হওয়ার আগে

একসময় এমনই বিকেল ছিল...

 

১৬.

এলোপাথাড়ি প্রেমের কবিতায়

তোমরা কৃষ্ণকলিকে খুঁজলে পাবে না,

বালির ঢিবির বশে সে ঘিরে বৃত্তাকারে...

চিন্তারা গভীর হলে মাথায় বিলি কেটে দেয়

তাসের ঘরের মতো ঠুনকো ছোঁয়া প্রবৃত্তি ভাবলে

 

তার ভীষণ অভিমান হয়আলেয়া হতে চায়।

 

১৭.

মাঝে মাঝে সে মেঘকফিনে

অখণ্ড আত্মার প্রতিচ্ছবি দেখতে পায়

এবং সেটা ভালোবাসার মানুষকে ডেকেও দেখায়

 

কখনও বা সোনালী যন্ত্রণায়

'জানি না' বলে বিরহী সমুদ্রে ঝাঁপ দিতে চায়

 

অথচ সে ভুলে যায়

সীমাহীন অদ্ভুতে আদ্যন্তই সেই-ই তো একটা ঢেউ।

Thursday, October 29, 2020

অন্তর চক্রবর্তী, একাদশ সংখ্যা

অন্তর চক্রবর্তীর কবিতা

 ব্রেকিং নিউজ

 

মানুষেরা ভাঙার পর সেখানে পড়ে আছে কিছু আলাদা মানুষ। একটা অদ্ভুত শহর বিছিয়ে।

মায়ের বিবাহবার্ষিকীতে তাঁর কবরের পাশে প্যাস্টেলে ঝর্ণা ও পায়রা ফুটিয়ে তোলা কোনো বালিকা। কিশোরীস্বপ্নের মতো ঝকঝকে, ছিপছিপে, বোহেমিয়ান ছোকরা, বাবার ক্যানসারের পর কলম আর বেহালা যার রুজি। গোলাপ ও টিউলিপ ফেরি করা কোনো প্রৌঢ়া, বছরচল্লিশেক আগে যাঁর কাছে প্রেমপত্রেরও খানিক আগে এসে পৌঁছেছিল প্রেমিকের মৃত্যুসংবাদ।

এঁরা ভাঙেন না। অশ্রুময় দানবের মতো এঁদের কপালে হাত বুলিয়ে দিই। চন্দ্রাহত শ্রাবণে এলিয়ে দিই অসীম দেহনির্ঝর। বিছোনো শহরটি এক বালক জলকেলিতে ভরে ওঠে। সুলগ্না সসাগরা সাঁতার উঠে আসে হাঁটুতে।

আমার বিক্ষত চোখেরা এ নগরীটির অলক্ষ্য স্মারকসন্ততি, এমনই প্রবাদযাত্রায় জলধারা পৌঁছে যাচ্ছে এক শ্রীজাত মহাশূন্যের নাভিমূলে...

( ২০১৬ )

 

কিছুদূর হাঁটার পর থেকে কবিতারা এক এক করে ভাঙতে শুরু করে। তারপর ইচ্ছেমতো ছড়িয়ে পড়ে তামাম শহরতলিতে। বাসস্টপ, স্টেশন, ট্রামডিপো, বন্দর। ঘাট, উদ্যান, লেক। মল, মেলা, ফুটপথ। মাল্টিপ্লেক্স, সিঙ্গল স্ক্রিন। কর্পোরেট, কাছারি, কাউন্টার। কফিশপ, ফুডকোর্ট, ক্যান্টিন, গুমটি। সমাবেশ, ওয়াকআউট, সেমিনার, অবরোধ। বইপাড়া, ক্লাসরুম, লাইব্রেরী, ফ্রেশার্স। মেস, টুবিএইচকে, থ্রিবিএইচকে। বেশ্যাবাড়ি, লাউঞ্জ, রিসর্ট।

 

শেষরাতে গায়ে এন্তার পশম জড়িয়ে এরা ফের জড়ো হয়ে এক সবুজ পিরিচশোভায় দাঁড়ানো পল্লীপ্রবণ কনকনে পাঠাগারে।

 

দীর্ঘ রোদস্নান সেরে সেখানে এলেন তথাগত কবিবর। বসলেন। দেখলেন, আঙুল থেকে অঝোরে গড়িয়ে পড়ছে অবাধ্য লালচে নুনঢেউ। উপন্যাসোপম...

( ২০১৫ )

 

ভাঙছি। ভেঙে যাচ্ছি। কীভাবে জানি না, তবে এমনই অভিপ্রেত। বিন্যস্ত ফলাহারে প্রখর অরুচির তুফান লেলিয়ে দিলাম সপাটে। ছুরির উল্টোমুখে দাঁড়িয়ে অভদ্র কামড়ে ফালাফালা করলাম সাজানো আলোবাতাসের চতুর দৃশ্যায়ন। ধূর্ত কাচের কপাটসজ্জাকে হিড়হিড় করে টেনে ছুঁড়ে ফেললাম দক্ষিণের জঙ্গলে।

 

কিন্তু আর কত? রেহাই কোনো জলীয় কসরত নয়। তা জেনেও দাঁতে ভর করে রইলাম আর কি। শনশন শুনে কপাল উঁচিয়ে বুঝলাম, ধারাল ঈগলপ্রজ্ঞায় শিয়রে নেমে এল সাদাকালো চৌখুপিদল। আছড়ে পড়ল সশব্দে। দড়াম...

 

ভাঙছি। ভেঙে যাচ্ছি। ভাঙলাম। কীভাবে, এতক্ষণে মোটামুটি স্পষ্ট। ঘোর কাটতেই খানিকটা ভেসে এলাম। এক রগরগে মগডালে চড়ে দেখলাম, নীচেই এক প্রকাণ্ড লালাভ স্তূপ থেকে টাটকা মাংসঘুঁটি নিয়ে আনকোরা দাবার শরীরে সাজাচ্ছে দুটি শিশুনেকড়ে...

( ২০১৭ )

Monday, October 26, 2020

সাত্যকি, একাদশ সংখ্যা

সাত্যকি-র কবিতা

 

অক্ষর জন্মের পূর্বে

 

অক্ষর জন্মের বহু পূর্বে দেখেছি এই জানলায় দাঁড়িয়ে

শরীরে ডুবেছে শব্দহীন কথায়

                যাদের ভাষা পথ করে দিয়েছে  

মরু পথের দিকে

          যেখানে শব্দগুলোর ছায়া সন্ধ্যার মতো...

 

আজও হাতের ইশারায় বুঝিয়ে দেওয়া কথা থেকে বেরিয়ে আসে

সেই আলোড়ন যার প্রত্যেক স্বর আমার অপরিচিত এক পৃথিবী

এঁকে দেয় ছাই নেমে আসে শরীর জুড়ে মুহূর্তে শরীর ঢেকে যায় 

বিষাক্ত নেশায়...

                                                       

 

 

স্নান

 

বহুবার এই স্নান ঘর দেখেছে আমার শরীর

আমিও দেখেছি এঁকে

খুব নিবিড়

খুব আপনার করে 

এর সাথে খেলেছি অনেক

একাকী দুপুরের সেই প্রহর

যেখানে দাঁড়িয়ে থাকত আমার বিষণ্ণ শরীরের 

জমানো স্মৃতি আর ধোঁয়াশা ইচ্ছেরা

 

এই বিশাল ঘরের দেওয়াল

ওই স্নান ঘর আর আমার বিষণ্ণ শরীর খুঁজে যায় সময়

এই অন্ধকার ঘরের দেওয়াল চাতাল কল ঘরের শ্যাওলা

গুমোট গন্ধের শোয়ার ঘর তোষক বালিশের ঘাম আর

পুরানো তুলোর শরীরের রোঁয়া

আমাকে গিলে নিতে আসে

তবুও সহবাসে কোনোদিন ছেদ পড়েনি বলে

এখানেই বন্ধ দেরাজের ভিতর ড্রয়ারের ভিতর

ভাঙা কাঁচের আয়নায় মুখ দেখে চিনে নিই 

যে শরীর হারিয়ে ফেলেছে পরিচিত গন্ধ বিলাস...

রূপক ব্যানার্জী, একাদশ সংখ্যা

রূপক ব্যানার্জী-র কবিতা

 

১. অভিষিক্তা

 

অভিষিক্তার পিঠে শাশ্বত জরায়ুর শ্লোক

ভগ্নাংশের কাছে পূর্ণতা দাবি করা লোক

 

জীবদ্দশায় শুধু মরীচিকা তাড়া করে করে

আটকে পড়েছে অতিসর্পিল নিস্পৃহডোরে

 

জলপ্রপাত খসা লোভাতুর পায়রার ডাকে

রাজত্ব সঁপে দিয়ে চলে যায় অভিষিক্তাকে

 

ভগ্নাংশের কাছে পূর্ণতা দাবি করা লোক

অমাবস্যার রাতে স্বেচ্ছামৃত্যুবাহী হোক...

 

 

২. মেটাফর

 

বৃতির মাথা নরম হয়ে খসতে থাকা ফুলে

অতর্কিতে ছুটতে থাকে লজ্জা-রাঙা দুল

শ্রান্তিহীনা শরীর এসে ছায়ার পাশে শুলে

কানের লতির ব্যালকনি'ও অরণ্যসংকুল

 

কর্নেটোরোদ ছিটকে আসা বায়বমাস্তুলে

সালতামামি করতে বসে স্বেচ্ছাসেবীমেঘ

অন্ধ'জোনাক ভর্তি হলে প্রাইমারি ইস্কুলে

ধর্মাবতার কমিয়ে দেন নিক্ষেপণের বেগ

 

দগ্ধ মহীরুহের ডালে, ইচ্ছে-শিশির মূলে,

মফস্বলি সায়াহ্নঘুম ঢলছে ঘরে ঘরে...

কিংবা কিছু এলিপ্টিকাল রক্তজবা তুলে

স্বর্গে দেবী সেপিয়াটিক, মর্ত্য-মেটাফরে

সুপ্তোত্থিতা_সাথী, একাদশ সংখ্যা

সুপ্তোত্থিতা সাথী-র কবিতা

 

টাচ উড

 

বুকের উপর ঝিম ধরানো তিলধুকধুকিতে নজরকাঠি-চোখ

ভীড়ের মাঝে অসাবধানী দিলআসতে-যেতে একটু দেখা হোক!

চোখের উপর ঝাউপাতাদের ভীড়ঠোঁটের কোণে বিপজ্জনক হাসি

ভ্রুকুটিতে ধরাও বুকে চিড়কারণ ছাড়াই তোমায় ভালোবাসি।

নাস্তানাবুদ স্লিপিং পিলের রাতহা-হুতাশেই জীবন চাতক হয়

পিঞ্জরাতে মনপাখী চিৎপাতসোনার-কাঠি-হাত ছোঁয়ালেই জয়।

ঝালর ওড়া মেঘের মতন চুলজাফরানি ঠোঁট ভাঙছে যুক্তি-বোধ

দূরত্বতে হার্ট-রিডিং-এও ভুলমনপুরীতে কার্ফুঅবরোধ।

 

 

সন্ধে বাড়ায় ডিপ্রেশনের রোগভীড়ের ভেতর একলা একা পথ

বুক পকেটে নোনতাজলের ভোগপায়ের পাতায় টলমলানো শ্লথ।

ঝিল পাড়াতে ঝিঁঝিঁদের ফিসফাসহাঁটুর ভাঁজে নিশ্চুপ ক্রন্দন

এমন সময় কাঁধ জুড়ে নিশ্বাসবুকের মধ্যে ঢিপঢিপ স্পন্দন।

পেছন ফিরেই ফের হতাশার ছোপদেখতে যেন চাইছিল মন কাকে!

জীবন এখন দাবার নিথর খোপভালোবাসাও নিখোঁজ কোনো বাঁকে।

 

 

কিই বা করারযা গেছে তা গেছেহোঁচট খাওয়া এক্কা-দোক্কা চাল

ভাঙা মাস্তুল আটকে ছিল প্যাঁচেবাঁধতে হবে যত্নে ছেঁড়া পাল।

আগের মতোই সেই চেনা বাসস্টপঅধির চোখে খুঁজছে ফেরার বাস

পাশের সিটে গা ঘেষা লালটপবুকের মধ্যে ড্রাম পেটানো ত্রাস।

নামার স্টপেজ আর কয়েকটা পর... জানলা'পারে তারাদের ঝিকমিক

কাঁধের'পরে ঝুঁকলো মাথা, ক্লান্তিতে জর্জরপ্যাসেঞ্জারি ঠোঁট করে ফিকফিক।

বাসের ভাড়া মিটিয়ে দিলো দু'টোরনামার আগে ম্যাডাম! সাইড প্লিজ!

পরের দিনই বাসস্টপ শুনশানছাতার উপর জমছে তখন বর্ষার মজলিস।

 

 

বাসস্টপেজে নামল তেড়ে বৃষ্টি তখনছাঁট ভিজে যায়বাসের আশায়

মন-কাড়ানী সেই মেয়েটা আসলো কখন! "অমন করে চুপ থাকে কেউ ভালোবাসায়!"

বৃষ্টি ছাঁটে একটা ছাতায় ভিজছে দু'জনঝিম ধরানো নজর এখন চার চোখেতে

জলের ফোঁটায় জুড়ছে তখন মাইলযোজনঠোঁটের উপর অল্প কাঁপন উঠল মেতে।

ভরল শহর দোলনচাঁপার সুগন্ধেতেআবেগ মেখে বুকও কাঁপে থরোথরো

অস্থিরতাও স্থির হয়ে যায় এ'সন্ধেতেদু'জন এখন একটা ছাতায় জড়োসড়ো।

 

গৌতম মণ্ডল, একাদশ সংখ্যা

গৌতম মণ্ডল-এর কবিতা

 

অনুবাত ঢাল

 

এখানে এসো না প্রিয়

এখানে এসো না, এই বৃষ্টিচ্ছায়ে

অনুবাত ঢাল বেয়ে নেমে আসে ধুম্র গুমোট

শুষ্ক ইথাকা জুড়ে তীব্র দহন

এখানে এসো না প্রিয় আত্মহত্যার উপত্যকায়।

 

এখানে অপেক্ষা নেই সঙ্গমের

বিপরীত ঢাল জুড়ে মেলা বসে অবাধ যৌনতার

সঙ্গম শেষে রজনীজল নেমে যায় উৎসবের মতো

এখানে এসো না তুমি প্রিয়,

তোমার শারীরিক কোনারক স্পৃষ্ট হবে না প্রাক্‌-সঙ্গম খেলায়,

এদেশের সমস্ত সুন্দরীরা চলে গেছে লোমশ উর্বর বন্যার টানে,

তুমি এসো না প্রিয় এই বৃষ্টিচ্ছায়ে,

আমার নিজেরই বুক আমাকে ছেড়ে গেছে অবৈধ আত্মার সাথে,

তুমি এসো না প্রিয় এই বৃষ্টিচ্ছায়ে।