লেখা পাঠান আমাদের chayarodpatrika@gmail.com

Thursday, February 17, 2022

সুবর্ণকান্তি উত্থাসনী

সুবর্ণকান্তি উত্থাসনী’র সিরিজ কবিতা


প্রেম পিপাসা পিণ্ড

 

(১)

একটি নারী ঘর বাঁধে অগণিত পুরুষের

আত্মহুতি লিপ্সিত সুরম্য প্রাসাদে

 

তার বিসর্গীয় নগ্নতা ঢাকতে

যত সুতো লীন হয় অক্লেশে

 

যা কিছু নির্বেদ তা প্রাসঙ্গিকতা

 

ওহে রাধেয়

এসো

ফিরে এসো

সর্বরিপু বুকে করে

 

প্রাগজ্যোতিষ্ শিখী এখনো পেখম মেলেনি

 

(২)

পৃথিবীতে প্রেম শুধু নিশি লাগা ধুতুরার ক্ষেত

একটি প্রেমিকের কাজ সমগ্র স্বত্ত্বা জুড়ে

বহুশ্রমে প্রাপ্ত দ্রাক্ষার কৃত্রিম শৃগাল হয়ে ওঠা

তবুও যে সেই রমণীর পুরুষ বন্ধুরা বঞ্চিত রয়ে যায়

এর কারণ কিছু এই ক্লাইতেমেনেস্ট্রার বুকে হেডিসের

আঁধারের মত যৌবন নেমে এলে রমণী খোঁজে

তার আবাল্যকাল জুড়ে গড়ে তোলা রূপকথা

এর ফলশ্রুতি এই যে সভ্যতা অগ্রগামী হলে

উদ্ভিদ ধারণে অক্ষম মৃত্তিকার মত অম্লপ্লুত সম্পর্ক

যাপন ধারণ করতে পারে না আর

 

(৩)

আমার বাবা এক গোঁড়া ব্রাহ্মণ তাঁর সমগ্র আধ্যাত্মিক

চেতনা আমায় সমর্পণ করে উচ্ছন্নে পাঠিয়েছিলেন

 

আমার মা রোজ পড়শির ঘর থেকে শাক চুরি করে এনে

পেট জ্বললে ফ্যানভাত আর শাকভাজা খাইয়ে তাঁর সমস্ত

বিষয়জ্ঞতা আমাকে সমর্পণ করে উচ্ছন্নে পাঠিয়েছিলেন

 

আমি রোজ বিকেলে গোধূলিকরোজ্জ্বল ধানক্ষেতের পাশে বসে

রোপিত চারার বেড়ে ওঠার বুকে একটি নৈসর্গিক সংসার খুঁজে পাই

 

যখন আমি মফস্বলের রাস্তায় কিংবা নগরীর বস্তিতে

প্রস্তাবিত আদল ধরে শুয়ে থাকি অধোগামী স্রোত হয়ে

 

সালোয়ারটিকে হাঁটু অবধি তুলে সন্তর্পণে যত যত্নে

আঘাত না দিয়ে বৃত্তের অন্তর্বর্তী শূন্যতা ছোঁয়া যায়

 

তার সেই নগ্ন পা দুটিতে আমার দ্বিতীয় কৈশোরের ঘ্রাণ লেগে আছে

 

তার চলে যাওয়ার দৃশ্যে সেজে ওঠে আমার প্রথম পৌঢ়ত্বের শয়নযান

 

(৪)

শোনো এভাবে না

এভাবে না

যেভাবে এতদিন ক্ষয়ে সয়ে জীবাশ্ম হয়েছ

তোমার বুকের ভেতর যে বরাঙ্গ

ক্রন্দসী চিত্রণ করে গ্যাছে

ইষ্টজপে যে অমরত্ব লেপেছে বাকল

নরকের গুহ্যদ্বারে পিঁপড়ের আনাগোনা

মিছেই ভুলেছ জাতিস্মরের ব্যথা

ভিক্ষায় জোটা ভালোবাসার চেয়ে

বঞ্চিত বোধের থেকে বড় মানসিক তৃপ্তি নাই আর

 

(৫)

দ্যাখো প্রথম সূর্য উঠেছে কলুষ সভ্যতার  ললাটে

প্রমা আদিম অনঘ ঘাস মাটি পাথরে সৃষ্ট  তুমি

 

আমি কীটদগ্ধ ত্রিকালদর্শী বক পালকের খাঁজে খাঁজে স্থাপত্য

আমার নাভিমূল থেকে যে স্রোত পারাংয়ের উপত্যকা দিয়ে

সাক্ষী হয়েও সাক্ষ্য মুছে বয়ে যায় চিরকাল

 

এ্যান্টনির বীরদর্পে ধুয়ে গ্যাছে আত্মহুতির কলঙ্ক তেভেরে

কর্ণের ক্লেদাক্ত গৃধ্রভুক দেহ তলিয়েছে অক্লেশে জাহ্নবীতে

 

বজ্রকঠিন হিমশিলাপাতে নিমগ্ন তূণীর

আত্মাভিমানে অবিচল স্ফটিক পদ্মদীঘি

তোমার প্রেতচ্ছায়া কালো মেঘেদের ভিড়

গোধূম আলোয় গৃহে না ফেরার অত্যুক্তি

 

বৃষ্টি বুজেনা মৃগতৃষ্ণিকা হেথা হৃদয়ে আবিল কুরুনারীদের শোক

ভূমি আগ্রাসী সন্ত্রাসীদের থাবা কালো মৃত্যুর যাচিত উপদ্রব

 

তুমি তো বাঁধোনি আমার ফেরার পথ

তবু এঁকে ফিরি ম্লান স্ক্যান্ডেনেভিয়া

অতনুর কোষে কোষে সার্ত্র পর্ণমোচী

দক্ষিণা চুক্তিতে তনু বদলায় ঠিকানা

 

তবু যদি ফিরে আসো ক্যাথারসিস্ হয়ে

যেভাবে গেঁয়ো যোগী ভোগী হয়ে ওঠে

 

কুয়াশাধিকৃত সাঁকোর দুধারে সময়ের স্থবিরতা

নিচে চংক্রমণবৈজয়ন্তী প্লবতা জুডাসের অনুচর

 

স্রোতপ্রাসপাশে যান্ত্রিক সভ্যতা ছুঁয়ে ফ্যালে কৃষ্ণ যবনিকা

মধ্যিখানে প্রতি জন্মান্তরে তোমার সঙ্গে আমার হয় দ্যাখা

রিনি ভট্টাচার্য্য

রিনি ভট্টাচার্য্যের গল্প

 

রসপুলি আর মালপোয়া

 

মাসটা পৌষের শেষ। আজ পনেরোই জানুয়ারি আমাদের বাড়িতে বাস্তুপূজা। মা ভোর তিনটেতে ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে নিয়ে ভেজা গরদের শাড়ি পড়ে ঘোমটা টেনে কাঁপতে কাঁপতে সত্যেন-ভাইয়ার গোবর জল দিয়ে লেপামোছা উঠোনের ঠিক মধ্যিখানে ছটি পাটকাঠিকে জল দিয়ে ফুলের মালায় সাজিয়ে একটা ঝকঝকে কাঁসার পরাতে রেখেছেন। তারপর ছখানি এঁটেল মাটির গোল গোল মন্ড বানিয়ে মাটিতে খুরপি দিয়ে গর্ত করে তার ভেতরে পাঠকাঠিগুলো চেপে বসিয়ে সোজা করে দাঁড় করিয়ে বাগানের থেকে বাবার তুলে দেওয়া, আমার গাঁথা নানা রকমের ফুলের মালা নিয়ে মা সেগুলোকে সাজিয়ে দিলেন। কী অপরূপ লাগছিল দেখতে!

 

একপাশে কাঠকয়লার উনুনে মা আমাদের বাড়ির জার্সি গরুর দুধ দিয়ে পায়েস বানালেন। বিনা চিনিতে। তারপর ধোয়া কলাপাতায় সেই পায়েস সাজিয়ে দিলেন। পাশে পাশে একটু একটু করে নতুন খেজুর গুড়ের টুকরো রাখলেন। তারপর কাঠকয়লার উনুন জ্বালিয়ে তার ওপরে পেতলের কড়াই বসিয়ে তার মধ্যে বনস্পতি ডালডা ঢেলে বাটা মুগের ডালের সাথে বেসন, ময়দা, ক্ষীর ,মধু, কিসমিস, গুঁড়ো ছোট এলাচ মিশিয়ে চটকে মেখে গোল গোল ছোটো ছোটো  গুলি করে ছেড়ে ফুটন্ত ডালডায় ছান্তা দিয়ে নাড়তে লাগলেন। বেশ কড়া করে ভেজে ছেড়ে দিলেন চিনির রসের কড়াইয়ে। এগুলো হল রসপুলি।  কী অপুর্ব ই না খেতে! এবার ময়দা, ক্ষীর, বেসন, সুজি, চালের গুড়ো দিয়ে পাতলা পাতলা গোলা তৈরী করে বেলনা চাকি দিয়ে বেলে গরম ডালডায় ভেজে আখের গুড়ের রসে ডোবানো হল। এ হল মালপোয়া। তার সাথে মার হাতে বানানো নারকোলের নাড়ু, পাঁচ রকমের গোটা ফল, ভেজা সোনা মুগের ও কালো নেনিয়া চাল দিয়ে নৈবেদ্য সাজানো হল। বাঁ ধারে দীপ-ধূপ-ধুনো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল।  পুরো বাড়িটা মধুর সুবাসে ভরে উঠল।

 

এ সবই হল বাস্তু পূজার উপচার। কত সুন্দর করে মা সাজিয়ে দিলেন সেই পাটকাঠি ঠাকুরদের সামনে! এখন অপেক্ষা আমাদের গৃহ পুরোহিত অমূল্য বক্সীর জন্য। তিনি আসেন শালগ্রাম শিলা  হাতে নিয়ে। তাই মৌনীবাবা হয়ে থাকতে হয়। এমনিতে সাধারণত একটু তুতলে কথা বলেন। আমরা তিন ভাই-বোন ওঁকে জেঠুমনি বলে ডাকি।

 

আমি শৈলেয়ী। বড়ো দাদা শিরীষ। ছোটো দাদা শিল্পিক। বাবা শিরোদেশ গঙ্গোপাধ্যায়। মা পদ্মাক্ষী গঙ্গোপাধ্যায়। আমাদের এই বাড়িটাতে অনেক গাছ আছে। তাতে কত ধরনের পাখির বাসা! একটা লিচু গাছ আছে। সে গাছের মাঝের শক্ত শাখায় দাদারা একটা সেগুন খাটের পিঁড়িতে পুরনো কাপড় দিয়ে জড়িয়ে চার ধারে ফুটো করে চারফালি পাটের দড়ি দিয়ে বেঁধে একটা দোলনা বানিয়েছে। আমরা তাতে দুলে দুলে লেখাপড়া করি।

 

বাস্তুপূজা সকাল নটার মধ্যেই শেষ হল। আমরা তিন ভাই-বোন কুয়োর জলে স্নান করে স্কুল যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম। তারপর মার দেওয়া পুজোর প্রসাদ খেতে বসলাম। বিনা চিনির পায়েস খেজুরের গুড় দিয়ে মেখে খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। তার সাথে রসপুলি ও মালপোয়া! ভাবা-ই যায় না!

 

 

 

বড় দাদা পড়ে ক্লাস টুয়েলভে। ছোটজন দশম শ্রেণীতে। আমি ক্লাস এইটে। মা ও বাবাকে প্রণাম করে যে যার স্কুলের দিকে রওনা দিলাম বাবার ঠিক করা রিক্সা করে। এই দিনটা বড়ই স্পেশাল। খুশিমনে এগোতে শুরু করলাম। স্কুলেও আমরা খুব মজা করলাম। টিফিনে পিঠে খেলাম। মায়ের বানানো পিঠেপুলি-পায়েস-নাড়ু তো অতুলনীয়! স্কুল থেকে ফিরে দেখি বাড়ি ভর্তি লোকজন। অতিথি।  আমাদের উৎরাই পাড়ার মানুষেরা, বাবার বন্ধু ও সহকর্মী, দাদাদের বন্ধুরা, ও আমার কয়েকজন খেলার সাথী।

 

সবাই আমাদের গোলাকার আঙিনার চারপাশে বসে মার বানানো রসপুলী ও মালপোয়া  পরম পরিতৃপ্তির সাথে খাচ্ছেন ও খাচ্ছে। একদম পিছনের সারিতে এক অচেনা কিশোর লাজুক মুখে বসে আছে। কিছুই খাচ্ছে না। বড়ো দাদা তার কাছে গিয়ে বলল,  কী রে জহর? খাচ্ছিস না কেন রে? অত লজ্জা দেখাতে হবে না। খেয়ে নে। না হলে আমাদের মা-বাবা কষ্ট পাবেন। বুঝিস না?”

 

সেই ছেলে মৃদু কন্ঠে বলল, “পুজোর প্রসাদ তো! আমার কি খাওয়া উচিত?”

 

সেকথা শুনে মা তার কাছে গিয়ে বললেন, “কেন রে বাবা খাচ্ছিস না? খেতে ইচ্ছা করছে না বুঝি?”

 

সে  মাথা নিচু করে বলল, “মাসিমা! আমি যে মুসলমান। আমার পুজোর প্রসাদ কি খাওয়া উচিত?”

 

মা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে উত্তর দিলেন, “খা তো। কিচ্ছু হবে না। কিছু হয় না ভালবাসার প্রসাদ খেলে। তোদের বাড়িতে ইদের দিন গিয়ে আমরাও খেয়ে আসবো

 

জহর হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। মাকে জিজ্ঞেস করল, “সত্যি? যাবেন আমাদের বাড়িতে। ছোটো বাড়ি কিন্তু! অসুবিধে হবে না তো?” আমি দেখছিলাম, শুনছিলাম, ভাবছিলাম যে মুসলমান হওয়াটা কি অপরাধ? অন্যায়? পাপ?

 

সবার খাওয়া হলে  লোহার বালতিতে রাখা জল দিয়ে দাদারা তামার ঘটি করে সকলের হাত ধুইয়ে দিলেন। জহর নামের ছেলেটি বিনীতভাবে দাদাদের বলল, “ছেড়ে দাও না গো! আমি নিজেই হাত ধুয়ে নিচ্ছি। আমাকে অত সমাদর করার কী দরকার শিরীষ?” দাদা সত্যিই রেগে গিয়ে জহরের কান ধরে নিজে ঘষে ঘষে ওর হাত ধুইয়ে দিল। তারপর ওর হাত ধরে টানতে টানতে আমাদের বসার ঘরে নিয়ে এসে বসালো। আমার কাছে একটা তোয়ালে চাইল। আমি এনে দিলাম। দাদা ওর হাত দুটো মুছে দিলো। সে সময় আমি জহরকে ভালো করে দেখলাম। ভারি হ্যান্ডসাম দেখতে। বেশ পাঠানী পাঠানী চেহারা।

 

ও আমার দিকে তাকলো। আর আমি ওর দিকে। কী যে হল জানিনা। আমরা দুজনে একে অপরের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকলাম। সময় পেরোতেই থাকলো। হঠাৎ সে উঠে দাঁড়ালো। দাদাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “এবার যাই রে দোস্ত। কাল সকালে কলেজে যেতে হবে। একটা প্রোজেক্টের দায়িত্ব আমায় দিয়েছেন রজত স্যার। তাই রাত জেগে কাজটা শেষ করতেই হবে!

 

আমার জানতে ইচ্ছে করছিল ও কী পড়ে? কোন কলেজে? কীসের প্রোজেক্ট? দাদাকে জিজ্ঞেস করতে বেশ লজ্জা লাগছিল। তারপর জহর মা ও বাবাকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো। অন্যান্য অতিথিদের নমস্কার করে বেরিয়ে গেল। আমার ভেতরটা শূন্য হয়ে গেল।  এমন উপলব্ধি তো আগে কখনও হয়নি! বুকের ভেতরটা ধুকপুক করছিল।

 

রাতে খাওয়ার সময় বাবা দাদাকে প্রশ্ন করলেন, “শিরু! তোর বন্ধু তো মুসমান। ওর নাম জহর কেন?” দাদা এক মর্মন্তুদ কাহিনী শোনালো-  জহরের আব্বার নাম ছিল তাজঊদ্দিন আহমেদ। ওরা চট্টগ্রামের মানুষ। মেসোমশাই যুক্ত হলেন মাস্টারদা সূর্য্য সেনের সাথে। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের ভয়ংকর কাজে যোগ দিয়েছিলেন এবং সেই অসম লড়াইয়ে ব্রিটিশ সৈন্যদের গুলীতে মারা গিয়েছেন। ওর আম্মা পরভিন বিবি এক পুলিশ অফিসারের দ্বারা ধর্ষিতা হয়ে আত্মহনন করেন। ও তখন ছিল এক বছরের এক অনাথ শিশু। এরপর দেশ স্বাধীন হল। অনাথ আশ্রমের কর্মাধক্ষ এক হিন্দু ব্যক্তি যাঁর নাম সুবিমল সেন। তিনি ঐ বাচ্চাটার বুদ্ধিমত্তায় মুগ্ধ হয়ে ওকে দত্তক নিলেন। ওঁর স্ত্রী ছিলেন মুসলিম। তাঁদের কোন সন্তান ছিল না। তাই তাঁরা দুজনেই ওকে পরম স্নেহে গড়ে তুললেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে। ওর ডাক নাম জহর। অফিশিয়াল নাম মুনাব্বর আহমেদ। ও জেলা স্কুল থেকে মাত্র পনেরো বছর বয়সে হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করেছিল ন্যাশনাল স্কলারশিপ পেয়ে। এখন গভর্নমেন্ট কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে। ফার্স্ট ইয়ারে। ওর বাবা ও মা এখন বৃদ্ধ। আয়ও কিঞ্চিৎ। আজকাল মাসিমা ও মেসোমশাই দীনবাজারের মেন রোডের ধারে একটা ছোটো চা ও জলখাবারের দোকান চালান। বাকি সংসার খরচ চলে  জহরের টিউটোরিয়াল হোমে পড়ানোর আর স্কলারশিপের টাকায়। এসব সৎ মানুষদের দেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সমাজ কি মনে রাখে? বলো বাবা?”

 

বাবার দুচোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে।  মা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। আমাদের তিন ভাই-বোনের চোখেও জল। আমাদের বাস্তুপূজার আনন্দের অন্ত হলো এক সম্মিলিত চোখের জলের নদীতে!!!

 

দিন পেরোতে থাকলো, আমাদের কাঞ্চনগুড়ি শহরের দুই খান নদীর বহমান জলের মতো। এর মধ্যে জহর কতবার এসেছে আমাদের বাড়ি। আমরা ও গিয়েছি ওদের বাড়ি সব কটা ইদের দিনে। ইদের বিরিয়ানি, অন্যান্য  খাবার ও ফিরনি ও শরবত খেয়ে এসেছি। ওকে আমার ভাললাগা যে গভীর ভালবাসায় রূপান্তরিত, আমরা দুজনেই টের পাইনি। ও এখন বিখ্যাত মেকানিক্যাল ইন্জিনিয়ার। দাদারা কলেজের পাঠ সমাপ্ত করে একজন এম বি এ করছে আর একজন আই এস আই এ পড়ছে। আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স নিয়ে পড়াশুনা করছি। আমরা আলাদা করে দেখাও করি। ও আমায় ছোঁয়। আমিও ওকে। কী যে ভালো লাগে! মা-বাবা-দাদারা অল্প-বিস্তর বোঝেন। আমাকে যথেষ্ঠ প্রশয় দেওয়া হয়। কারণ জহরের মতো ভালো ছেলে এ পৃথিবীতে বোধহয় একটিই আছে।

 

এদিকে ওর চাকরির বন্দোবস্ত প্রায় হয়েই গেল। জিআরই-তে অসাধারণ মার্কস পেয়ে রিসার্চ করার জন্য বোস্টনে এমআইটি-তে চান্স পেয়ে গেল। ইতিমধ্যে ওর বাবা প্রয়াত হলেন। ও ভাবছিল মাকে সাথে নিয়েই যাবে না কি। আরো একজনকে নিয়ে যাবার জন্য ও কথা বললো আমার মা-বাবা-দাদাদের সাথে। তাঁরা রাজি। আমি তো বিহ্বল হয়ে পড়েছি। ও তো আমার মুন। আর আমি ওর শৈলী।

 

আমাদের আত্মীয়স্বজন ও পাড়ার বেশিরভাগ মানুষ এই বিয়ের ব্যাপারটাতে বেশ বিরক্ত হলেন। মা ও বাবাকে বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেন। আমরা প্রায় সামাজিক ভাবে একঘরে হয় গেলাম। তাতে কারোরই কোনও উচ্চবাচ্য ছিল না। স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন অফিসে নোটিশ দেওয়া হল।

 

এর মধ্যে যা ঘটলো তাতে বাড়ির সকলে সত্যিই চিন্তিত ও ভীত হয়ে পড়ল। শহরের কুড়ি-পঁচিশ জন মস্তান ধরনের লোক বাবা ও দাদাদের শাসিয়ে গেল। তাদের বক্তব্য হল, এই বিয়ের আগেই আমাদের চরম বিপদ আসন্ন। তারা জহরের ক্ষতি করবে এবং আমারও। এর পরে মা,বাবা ও দাদারা আশঙ্কিত হয়ে পড়লেন। দুই দাদাই জহরের বাড়িতে গেল। ওকে সব কিছু বলে আপাতত বাড়ি থেকে বেরোতে মানা করে এল। আমি এতই ভাবিত হলাম যে মাকে বললাম, “মা গো! এই বিয়েটা ভেঙে দাও। জহরের প্রাণের থেকে বিয়েটা কি বেশি জরুরি? আমারও তো কোনও না কোনও বিপদ হতেই পারে। তাছাড়া, বাবা ও দাদাদের নিরাপত্তার কথাও তো ভাবা দরকার

 

মা চোখের জল মুছে রুখে দাঁড়িয়ে বললেন, “তুই আমার  মেয়ে হয়ে এত ভীতু কি করে হলি? কি করতে পারে ওরা? কতটা ক্ষতি? আমরা হার মানবো না। বিয়ের পর তোরা তিনজনে বিদেশ চলে যাবি। পাসপোর্ট-ভিসা সব তো প্রস্তুত। বিয়ে হবেই। আমাদের নিজের শহর। আমাদের কিছু আত্মীয়রা, তোর বাবার ও দাদাদের হিতৈষীরা তো আমাদের পাশে আছে রে। ভালো কাজে কত বিপদ আসে। সেগুলোকে ভেদ করে এগিয়ে যেতে হয় এক আলোকময় জীবনের পথে। তুই একদম ভয় পাবিনা। আমরা তো আছি রে!মা আমার কপালে চুমু দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। আমি খানিকটা আশ্বস্ত হলাম। মায়ের কথা কখনও ভুল হতেই পারেনা

 

দিন এসে গেলো রেজিস্ট্রির। আমাকে মা সাজিয়ে দিলেন তাঁর মনের মতো করে। ওদিকে মুনকে দাদারা প্রস্তুত করে নিয়ে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে গেলো রেজিস্ট্রি অফিসের উদ্দেশে। মা-বাবার সাথে আমিও রওনা হলাম। মাত্র তিন কিলোমিটার পথ। যাবার সময়ে রাস্তার দেখলাম অনেক পুলিশ। চারপাশে ছমছমে। নিঃশব্দ। হঠাৎ ফায়ারিং- এর প্রচন্ড আওয়াজ শুনতে পেলাম। একজন পুলিশ  অফিসার আমাদের গাড়িটা থামিয়ে দিলেন। এবং বাড়ি ফিরে যেতে বললেন। রাস্তার মোড়ে নাকি ভীষন গণ্ডগোল হচ্ছে। একজন মৃত। আমরা শিউরে উঠলাম। বাবা জানতে চাইলেন, “তার পরিচয় জানেন কি? নাম ইত্যাদি?”

 

তিনি বললেন, “ঐ মুনাব্বর আহমেদ নামের এক টেররিস্ট। যান...যান...বাড়ি ফিরে যান। একটু পরেই খানাতল্লাশি শুরু হবে ও কার্ফু লাগু করা হচ্ছে 

 

আমি আর কিছু জানিনা। কতকাল কেটে গেল। আমি তো এখন পুদুচেরিতে অনাথ শিশুদের পড়াই। ভালোই আছি।

শুভ্রনীল চক্রবর্তী

শুভ্রনীল চক্রবর্তী’র কবিতা

মহব্বত জিন্দাবাদ

 

ছেয়ে গেছে ধ্বজা কুয়াশা

চারদিকে কালো ধর্মের কোলাহল

      অর্থের ওজনে পদপিষ্ট ক্ষুধার্ত শিশু

জাতপাত রাজনীতির দাবানল ছেড়ে

                 মহব্বত জিন্দাবাদ

 

মেঘের সাথে দুঃখের মিলন

        সাহিত্যের প্রেমে কারাগার বনবাস

অস্ত্রের ভিড়ে হোক শুধু ভাষার প্রতিবাদ

                মহব্বত জিন্দাবাদ

 

শ্লীল অশ্লীল স্মৃতিমেদুর

        যৌনসুধায় অন্তর্বাস

শ্রেণী সমাজের কবরে ফুটছে মানব বন্ধন

            মহব্বত জিন্দাবাদ

 

গোলাবারুদের মাঝে হাত থাক শক্ত

        মন্দির মসজিদ ভাই ভাই

নিকার আসনে ব্রাহ্মণ শুদ্র

         মহব্বত জিন্দাবাদ ।।

দেবাশিস

দেবাশিস-এর কবিতা


তোমার মনে মেঘ, আমার চোখে জল

 

কি হবে এই উল্লসিত উদযাপনে!

যদি তুমিই পাশে না থাকলে!

 

বুকের মাঝে মুখ গুজে হৃদয়ের শব্দ শুনো।

হাতে হাত চেপে ভালোবাসা মেপে নিয়ো।

দেখবে, তোমার মনে মেঘ, আমার চোখে জল।

দেখো, তোমার তুলসী তলায় বাতি, নিশ্চিত জ্বলছি আমি।

জানি, তখনই বৃষ্টি হয়ে পড়বে তুমি।

 

প্রতি পলে যদি তোমার নাম লেখা হয়ে যায়

তাহলে এই দিনের কি নেহাত প্রয়োজন হয়?

তোমার নামে আজও ভিড় ভেঙে ট্রাম চলে আনমনে।

তোমার নামে আজও সমুদ্রে মন কেমনের ঢেউ ওঠে।

তোমার নামে আজও মনে মনে সাতপাকে বাঁধা আছি।

তোমার নামে আজও প্রতিদিন  নতুন সূর্য ওঠে।

 

চোখ মেলে দেখো সেখানেই লুকিয়ে আছে আমাদের প্রতিদিনের 'গোলাপ' যেন।

পিয়ালী বসু

পিয়ালী বসু’র সিরিজ কবিতা

 

বিপন্নতা কে যেভাবে দেখি

 

( ১ )

জীবনটাকে ইচ্ছাকৃত বিঁধিয়ে দিই আজকাল আলপিনের ডগায়।

ক্রমশ অভ‍্যস্ত্ হয়ে ওঠা আবহাওয়ায়

অহর্ণিশ ডেকে যায় ছায়া অস্থিরতা।

 

( ২ )

সময় ঘুরে দাঁড়ায়।

চেনা উপসংহারের দিকে ধাক্কা খেয়েও

ক্লোজফ্রেমে ধরা দেয় ফেলে আসা মায়া শব্দ

নিমগ্ন নির্জনতার মাঝে স্পষ্ট হয় আলোক দ্যুতি।

 

( ৩ )

হাওয়ার দাপটে

ভাবনার সাথে রঙ মিশিয়ে নেবার পরও

নীল আকাশটা বাতিল শব্দগুলিকে প্রশ্রয় দেয়

মুঠোর ভিতর ছটফট করে বসন্তগন্ধ।

 

( ৪ )

সাদা স্তব্ধতা, চুমু সমেত ঠোঁটছাপ রাখে

ফারেনহাইটে বাড়তে থাকা জ্বরের মাঝেও

আমি আলো নির্মাণের কথা ভেবে চলি।

 

অথচ, ক্রিসেনথিমামের মতো ছিমছাম ছিল আমাদের শৈশব। যৌবনে আমি বুঝে গিয়েছিলাম, প্রেম কুড়িয়ে আনা, আসলে নারীর কাজ। তাই বারবার শেষ হয়েছিল সব পণ্ডশ্রম। অনন্ত আঁধার গ্রাস করেছিল সমগ্রতা।

 

পালটে ফেলি নিজেকে

অপেক্ষার অনিঃশেষ পাতাঝরা ফ্রেম পেরিয়ে আলিঙ্গন করি মৃত্যু ও বিভঙ্গের রাত

এক হই বিপন্নতার সাথে আধভাঙা অন্ধকারে।

প্রদীপ ঘোষ

প্রদীপ ঘোষে’র মুক্তগদ্য

ডায়েরির একটা পাতা

 

একটি বন্ধ দরজা অপার রহস্যের সমাহার। শুধু একটাই বলবো, বেশি তো বলতে আসিনি! হতেই পারে অন্য কেউ তখন চন্দ্রবদন; সঙ্গতে তুমি সুহাসিনী!

 

সে যাহোক কিন্তু একটি তালা বন্ধ দরজা মানে অনেক কিছু। কিন্তু কোনো রহস্য নেই, খানিকটা ওই ওপেন সিক্রেট। যেমন তস্করে-র বিপরীত চিন্তা গৃহস্থের! হতে পারে। আবার অনুপস্থিতির কারণে হয়তো পরিচিত কাউকে-ই সাময়িক প্রবেশের অননুমতি! হতে পারে। বিশেষ কাউকে বুঝিয়ে দেয়া, চিরতরে এ গৃহাশ্রমে তুমি ব্রাত্যজন! তাও তো হতে পারে! নয় কি?

 

নিজেদের শিকারে-র ওপর, বাঘ বা সিংহ থাবা বসাতে এলে যেভাবে নেকড়েরা ছিটকে সরে যায় খনিকের তরে!

কুপির আলো কেঁপে উঠলে; মুলিবাঁশের বেড়ার এ জলসাঘরে আঁধারে আলো জেগে ওঠে তেমনই। কিন্তু আমি! গৃহস্বামী জানি, আলো থির হলে অন্ধকার আবার জাঁকিয়ে বসবে। আসলে আলোর পরিখা সদা-ই অন্ধকারের বৃত্তে আবদ্ধ। নেকড়ের দল সংখ্যায় বেশি হওয়াতে, এক-ই ভাবে। বাঘ বা সিংহকেও পিছু হটতে-ই হবে।

 

শক্তি বা ক্ষমতা বেশি বলে না বুঝেই ওদের মতো এভাবে কেড়ে নিতে গিয়ে বোকাবনে পিছুহটা কিংবা যাত্রাদলের অধিকারী হওয়া আমার বিবমিষার। তাহলে মাইকেলের মতো "আশার ছলনে ভুলি কী ফল লভিনু হায়"! নাকি নবীনচন্দ্র সেনের মতো "ধন্য আশা কুহকিনী" বলব?

 

বুকে রক্ত নদীর ঝিলাম বয়ে চলে অনুক্ষণ। এই যে অন্ধকারের একবগ্গা অভিযান মেসিডোনিয়ানের মতো! এতো, এতোবার! সহ্য করেছি কী করে, ভেবেছো কখনো? অভিমান আমারও তো হয়! নিজের সঙ্গে-ই পরাজয়ের গ্লানিতে অপরিসীম লজ্জায় টেক্টোনিক প্লেট নড়ে গিয়ে যে কোনোদিন ভিসুভিয়াস জেগে উঠে আমাকেই ছাই করে দিতে পারে।

 

ঠিক তখন-ই এ পৃথিবীর অন্য কোনো প্রান্তে জ্বলন্ত ধূমকেতু দেখে মানতের অমিত প্রাপ্তির কৃতজ্ঞতায় চায়ের কাপে তুমি চিনি দ্রব। অভিমান মানুষকে নিরেট করে তোলে এমন-ই যেন চিত্তবৈকল্য তরল নাইট্রজেনে ডুবে থাকা সিমেন। এ দেহে মন বলে কিছু থাকে নাকি আর? থাকলেও তার সাকিন আমার জানা নেই। তোমাকে-ই বা জানতে পারলেম কই নন্দিনী! হ্যাঁ বলতে পারো; শেষবেলায় কেন? আগে কেন বলিনি ?

 

পৌরবের রাজার মতো বিক্রমের-অনুগ্রহ চাইনি তোমার কাছে কখনও; লেডি মেসিডোনিয়ান। চাইনি রাজা পুরু-র মতো, না বিক্রম আর না-ই অনুগ্রহের সামন্ত রাজার সম্মান; কোনোটা-ই আকাঙ্ক্ষার ছিল না কোনোদিন।

 

তাবাদে অবহেলার ক্ষত যে তখনো সারেনি........

 

প্রশস্তির হাত রাখো কাঁধে, মধু তিষ্ঠতি জিহ্বাগ্রে

কুন্তলে রাখো শরমাছতো বোঝেনি তুমিই ধীবর।

অয়ন ঘোষ

অয়ন ঘোষে’র কবিতা

বিষণ্ণতার ভাষ্য

 

 

ঘুমের ভিতর আঙ্গুল ছোঁয়াতেই বেজে ওঠে

ভোরের বিসমিল্লা...

নোঙরে চোখ রেখে বানভাসি ঢেউ বড্ড অভিমানী।

 

ভিতর ঘরের পাখি ডানা সাজায়

নিজস্ব আকাশের মাপে,

সেই ডানার নীচে মধুকল্প জীবন

কেবলই পাক খায় নিজেরই চারদিকে

গোপন অন্বেষণ, সাদা কালো প্রেম।

 

শীর্ষ-বিন্দু ছোঁয়ার আগেই ভাঙল

বাতাসের দেওয়াল, বিপন্ন কাঁচের স্বর্গ।

সে ছিল প্রিয় অসুখের শৃঙ্গার, তারই করতলে

এক মুখর শুন্যতা কাছে জমা রইল

এই পৃথিবীর বিষণ্ণতম ভাষ্য,

 

                                        প্রেম।

সমিধ গঙ্গোপাধ্যায়

সমিধ গঙ্গোপাধ্যায়-এর সিরিজ কবিতা

 

কুঞ্জবন

১.

বিষণ্ণ জামায় লিখি অনিরূদ্ধ মাখাসন্দেশ
আহাগন্ধে এ বিহান নধর শান্তিজলে ছাই
রঙিন শেকলে বাঁধা দুষ্টুমি, হরিণী অশেষ

নেহাতই অচেনা হলে, হাল? না, ছাড়ি না
 বরং আরো কিছুটা মাত্রা ছাড়াই

আসলে ছদ্মবেশে সবার কাছ থেকে
তোর নিছকের পালা কেড়ে নিতে চাই...

 

২.

তোমার নবনী মুখ
স্বচ্ছতর ব্যথার প্রমাণ

ফেরার রাস্তায় আরো গভীর
নিরঞ্জন থাকে

এত ঘেঁষাঘেঁষি বাঁচা খানিকটা
অস্বস্তিকর

তবু টের পাবো ব'লে গুছিয়ে নিই
এঁটোকাঁটা, বাসনকোসন

শব্দে বিকেল ধুয়ে যায়...

 

৩.

লালনে ফাল্গুন এসেছেন
হাড়ে কী বিষম ঝাঁপতাল


তোমাকে বোঝাতে গেলে
মনে মেঘ আসে

পাখসাটের গহনে প্রিয়তর
পাঁক জমে ওঠে...

 

৪.

আলজিভে তুমিই পরম

এ ভাষ্যে বিকেল শেষমেশ,
ঝাপসা চশমা বসিয়েছে

পুরোনো স্নেহের মতো খয়েরি
স্মৃতির ঘাসজমি
আর তোরঙ্গে কিছু অনাবিল
কামিনীকাঞ্চন


নাতিদীর্ঘ শিমূলে অকারণ,
সন্ন্যাস শিখে নিয়ে
শুন্যতা ঢেলে দেয়
ছুঁতে না পারার মতো দূরে, বহুদূরে...

করবীর মৃত ইতিহাসে
এভাবে ফুরোয় রঞ্জন।

তন্তুঝড়ের স্মৃতি থেকে


বসেছো সুইচবোর্ডে
ও মেঘের হাসন মল্লার

ধাতু ধারণার পরে
ধুধু বাক্য নিভলে সেই,
পড়ে থাকে অমল সংহার

আমার বাসনাপর্বে রোদের আন্দাজ অনসূয়া
তাকে প্রতিঘাত শেখালেই
ছান্দসিক সূর্যাস্তে মাথামুণ্ডু সমেত দৃঢ় স্নান

আমার প্রথম শয্যা শরে পরিপাটি হলে
মেধাকান্ত কলাম দ্বিরালাপী

তারপর...

বালিশচাদরজিভদাঁতমাংসচামড়াউফআঃলাগছেলাগুক
শুনে শুনে

সেসব বিকেলও আজ নিশ্চিন্তে বিয়োতে পারে
আদর আর ঘৃণার সন্তান।