লেখা পাঠান আমাদের chayarodpatrika@gmail.com

Tuesday, October 5, 2021

সব্যসাচী মজুমদার, শারদীয়া সংখ্যা

সব্যসাচী মজুমদার-এর দুটি কবিতা

 

লোলুপের লেখা

 

(১)

এ লেখার মাতৃকামে চাঁদ হয়ে গেছে

সুদূর বৃক্ষেরা। কুয়াশার সামনে এসে

থমকে আছে জলরেখা। মোকামে মোকামে

শুরু হলো পুঞ্জধ্বনি কর্বূরের নামে।

 

এই দেখো জয় রক্ত পাহাড়ি প্রশ্বাস

অনুলোমলিঙ্গরেত প্রকৃত সন্ত্রাস

হাত ছেঁড়ে চোখ ছেঁড়ে নাভি টেনে খায়

বিষণ্ন ব্রততী যেন শামুকে জড়ায়

ছিন্ন মাথা খুলে নেয় ভরা রাস্তা ঘাটে

আর যোনি ভেপসে ওঠে আমনের মাঠে

 

এ লেখার মাতৃকাম খুঁড়ছে মীরা বাই

আমি এই ছায়ানটে আমাকে বাঁচাই

তবে যে কুয়াশা আছে ওদিকের ঢালে

তার মতো স্রোত হয় নদী অন্তরালে

 

 

(২)

অতীব সরল ধাঁধা রজঃক্ষরা থাক

দূর বাঁওড়ের জলে শটির পরাগ

ভাসে মূদ্রা খুলে আহা শ্যাওলা বিহ্বল

সম্পৃক্ত সারস দেখে ছড়া কাটে জল

 

জলের ঘরানা জানে জলে ভেসে যায়

চারণের জননাঙ্গ। মিথোজীবিতায়

এই যে রয়েছি আমি― এও এক শোক

প্রতি গল্পে ডাইনি হয় মায়ের আনখ

 

আমিও তো হৃতলাশে খেজুর খোঁপাটি

যোনি বন্ধ করে তুলি ঝুমুর গোঙানি

 

দুটো হাঁস আল ঠুকরে শামুক ধরেছে

ক্রেংকারে মাঝে মাঝে বৃন্দাবনী বেজে

উঠে ফের লুপ্ত হয় শীতের নদীতে

তুমি তৃণ। অঙ্গরাগে সমস্ত‌ই দিতে!

ধৃতিরূপা দাস, শারদীয়া সংখ্যা

ধৃতিরূপা দাস-এর দুটি কবিতা

 

জগডুমুর

হাফপ্যান্টের কাপড় যদি

আরামদায়ক না হয় দারুণ

খিস্তি মারতে ইচ্ছে করে

নিষ্ঠ পাথর চুষতে চুষতে

 

ইচ্ছে করার ডাল পাওয়া যায়

অতঃপর সে ডালের ডুমুর

প্যান্টে পকেট দুই থেকে এক

পাথর ভাঙার আওয়াজ শুধু

 

শুনতে পাইনা এই যা দোষের

শ্রবণ ভাঙছেশ্রাবণ-কোশের

অদার্শনিক অন্ধ চরা

এখন মাটির বাহ্য সাজায়

 

সজ্জাটি তার স্বভাবজাত

হাফপ্যান্টের ছন্দ মেনে

ন্যস্ত পুচ্ছ খোয়াব দেখেন

তাঁর খোয়াবের খাইগো ডুমুর

 

কাচ ভাঙা     অব্দি কেউ

এই দহে        স্থল পেয়ে

টলছিল         কাচ ভাঙার

অপেক্ষায়।    কাব্যে নীল

নখগুলি        শব্দভর

জন্মানোর      ইঙ্গিতে

টলছিল।       এক দুটি

ডিম কৃমির    তার ছায়ে

বর্ষণে            ট্যাংরা মাছ...

সম্বলের         এই পুঁজি

রইবে তো?    হেই ঠাকুর!

হেই পিতল!   পথ ছাড়ো।

নির্বাণের        হিমসাগর

চমকে দিক    পথ ছাড়ুক

এইটুকু           নীল গ্রহের

 

নীল আষাঢ়    প্রস্তুতির

ডিম ব্যথায়     অন্তহীন

ব্যর্থ হয়          ব্যর্থ হয়

লিঙ্গহীন         ক্ষেত্রফল

 

পক্ষহীন          ব্যর্থতা

নির্ণীত            এই ফুলের

এই আলোর    কাচ ভাঙা

অব্দি নেয়       বৃক্ষুকে?

 

নেয় যদি         এই কৃষির

জগডুমুর         নিক প্রভু

নিক প্রভুর       কাচ দেহ

ফল ঝরার       কাচ শরীর

দেবীপ্রসাদ বটব্যাল, শারদীয়া সংখ্যা

দেবীপ্রসাদ বটব্যাল-এর দুটি কবিতা

 

চন্দন'গাছের অংক

 

কী করে যাব ?

প্রেমিকার মতোই শশ্মান আমাকে ডাকে !

ওহ হ্ বিস্মৃত রঙের জোঁক পুষেছিল

যোনিতে। সিঁড়ি ভাঙার গানে

ধরা যাক X= লাল পেয়ারা,

এবং Y= পাখীর ঠোঁটএবার

Z জিগজ্যাগ নাভিমণ্ডলে কিছু দানা ছড়ানো থাক

খুঁপতে খুঁপতে

চড়ুই ঠ্যাং আর পাতা ফাঁদের অংক পাশ

করতে পারলে

কোনো একদিন নদীর চরে লুকিয়ে

তোমার প্রতি বাঁকে চন্দন গাছ লাগাব।

 

"---তীর্থক্ষেত্র---+"

 

পর্ণগ্রাফি ভেবে দেখলেনই না,

অথচ আমি কী বর্ণময়ই না হয়েছিলুম।

ইচ্ছে করেই লিখলেন না তবু

 

লেখকের নাম নিলুম

ধরুন, লেখকের নাম ধর্মতলা

ডালহৌসি অব্দি একটা টিকিট কেটে নিন

গুঁতিয়ে টুতিয়ে বাসের মাঝ'রডে ঠেকনা দিন

 

সবাইকে হতবাক করে আর্মহার্টস্ট্রীটে নেমে

খোঁজ করুন কতটা হাঁটলে

ছ্যাঁড়া গলি, ট্যানা গান  টাকা দুয়েক রতি'

'কাটাহাড়' মার্কা শঙ্খযোনি আপনার কলম চেখেছিল ।।

শীর্ষা, শারদীয়া সংখ্যা

শীর্ষা-র কবিতা

শ্রাবণ

কোথাও একটা শ্রাবণ হতে থাকে, অঝোর শ্রাবণ, মায়ার শ্রাবণ! পাখিরা ফেলে যায় নিজস্ব পালকের ছাপ, খড়কুটো ভেসে যায় প্রকৃতির ডাকে। সুদীর্ঘ পৃথিবী কমলালেবুর মতো রং নিতে থাকে এভাবেই। আলোকবর্ষ পেরিয়ে ইন্দ্রপ্রস্থের দিকে হাঁটতে থাকে সময়ের ধুন। এরপর একদিন প্রগাঢ় নিশুতি নেমে এলে চাঁদের উঠোনে মিটমিট করে শাবকের ঘুম মা পাখিটি কুড়িয়ে নিয়ে আসে সেই আদিম পালকের ছাপ, আর এঁকে দেয় শিশুর কপালেঅমোঘ মায়ার এক অবিনাশ পরমতিলক!

সোহম বিশ্বাস, শারদীয়া সংখ্যা

সোহম বিশ্বাস-এর গুচ্ছ কবিতা

 

মেটাফোর

 

ছয় মাস বমি করেছি

একশো আশি-টা আলপিন

বেরিয়েছে গলা থেকে।

 

পকেটে রেখে দিই সেগুলো

শোয়ার আগে মাথায় গাঁথি।

 

ঘুম

 

এখনো মাঝে মাঝে হাওয়া বয়।

ঠোঁট, চোখ শুকিয়ে আসে।

চামড়া-গুলো কুড়িয়ে নিই!

শীতে আগুন জ্বালাই

 

স্পার্ক

 

দূরে সরছিল ফ্রেমগুলো

কপালের ছোট্ট বিন্দুটা পরিষ্কার।

 

ডিজিটাল ঘড়িগুলো এক সেকন্ড করে পিছোচ্ছে সেই থেকে!

 

 

মণিশংকর বিশ্বাস, শারদীয়া সংখ্যা

মণিশংকর বিশ্বাস-এর দুটি কবিতা

 

ম্যাজিক

 

আমি ইউরি গেলার

রিমঝিম বলে মেয়েটির ভিতর যে সুরেলা চামচখানি আছে

আমি তাকে আমার ইচ্ছেশক্তি দিয়ে বাঁকিয়ে ফেলতে চেয়েছিলাম

আমি জানি রিমঝিম, ওর বন্ধুরা, বাড়ির লোক

একে আমার বুজরুকি ভেবেছিল

সে যে যা ভাবে ভাবুক

আমি চাইছিলাম একটা ম্যাজিক করতে

 

এক চামচ রিমঝিম, চামচে করে তুলে নিয়ে আসতে

 

মৃত মানুষের ইনবক্সের পাসওয়ার্ড

 

বাইপোলার ডিসঅর্ডার

পরম শূন্য তাপমাত্রার আশেপাশের কোনো সংখ্যা

নামহীন একটা গন্ধ

পিঁপড়ের ডিম ও ফেরোমন

ঘর ছেড়ে চলে যাওয়া মেয়েটির অন্তর্বাস

গুগল আর্থে এখন আর নেই

এমন কোনো নদী আর তার আত্মায়

বিঁধে থাকা একটা মাছের ইম্প্রেশন

 

যার কানকোর ভিতর শেষমেশ আশ্রয় নিয়েছিল

একটা আস্ত ছায়াপথ

বাসব মণ্ডল, শারদীয়া সংখ্যা

বাসব মণ্ডল-এর কবিতা

 

যাপন

 

বন্ধ জানলার গরাদ পেড়িয়ে

আমি ছায়াদের কড়ানাড়া শুনি

সেই আওয়াজ আস্তে আস্তে

চিৎকার হয়ে ওঠে।

চেনা অচেনা সম্পর্কের

আড়ালে গজিয়ে ওঠে

হাজারো নখ, দাঁতশিং।

 

আমার জানলার বাইরে

মাথা উঁচু করে

দাঁড়িয়ে আছে একটা মাধবীলতা গাছ।

নিশুত সম্পর্কগুলো

আর মাধবীলতার ফুল

হাত ধরাধরি করে

আমার অস্তিত্বের অঙ্গ হয়ে যায়

অজান্তে।

 

শুধু একটুকরো জেহাদ 

পুষে রাখি,

গোপন সেনোটাফে।

সন্দীপন দাস, শারদীয়া সংখ্যা

সন্দীপন দাস-এর কবিতা

 

.জ্যা

 

আমাদের কোনো আকাশ নেই

মা সেই থেকে কেবল অনাদির কাছে

হাত পেতে বসে আছেন তো বসে আছেন

তবু হাতে মিলছে না আগামী দিনের রসদ

আমাদের কোনো আলো নেই

তবু আলো দ্যাখার আকুলতা আছে...

যে আকুলতা বুকে চেপে প্রিয় গাছগুলিকে হাঁটাতে হাঁটাতে

বাবা মাথা নিঁচু করে চলে যান গোয়ালঘরের দিকে...


সন্ধে নামে... মা উঠে পড়েন

 

জীবন সেদ্ধ করতে করতে আনমনা হয়ে

তাকিয়ে থাকেন হারানো পথের মতই...


অদূরে মায়াবী তূণ লুকিয়ে অপেক্ষা করো তুমি...


ডিরেক্টরের মনকেমন হয়...

সমুদ্রপার জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে

একলা টুপি, মায়ের অপেক্ষাতুর চোখ, বাবার হেরে যাওয়া

কিংবা আবছা আলোর গন্ধ...


আমাদের কোনো পাখিধরা খাঁচা নেই

কেবল একটা ঝিমধরা পাখি আছে

প্রতিদিন ভোর হওয়ার সাথে-সাথেই

যার দেহ থেকে খসে পড়ে এক-একটা নেশাতুর পালক...

পলাশ দাস, শারদীয়া সংখ্যা

পলাশ দাস-এর কবিতা


বাজারের মধ্যিখানে এসে 

টনটনে রোদ আঁশবঁটির মাঝ পথ জুড়ে

পিস পিস করে কাটা হচ্ছে মাছ

প্রায় ভেঙে যেতে চাওয়া

স্টিলের থালায় তুলে রেখে দিচ্ছেন জনৈক মাছওয়ালা

 

কিছু মাছি ভন ভন

কয়েকটি মেনি বিড়াল

আর ফ্ল্যাট বাড়ির মতো সুদৃশ্য চেহারার ঘোরাফেরা

তাদের গা থেকে ছিটকে আসা চন্দনের গন্ধ নিতে নিতে

সূর্য থমকে দাঁড়িয়েছে মাথার উপর

 

বাজারের মধ্যিখানে এসে এসব দেখছি

 

আমিনুল ইসলাম, শারদীয়া সংখ্যা

আমিনুল ইসলাম-এর কবিতা


ইলাস্টেন


নিজেকে এই রূপান্তরে সামিল করা হলে

বিন্দু থেকে ক্রমশ বেড়েই চলবে দুঃখবাদ

আর সুখ অপহরণ করা হয়েছে

 

গাছ কাটার পর আনন্দে সেজেছে শোবার ঘর

আর বারান্দা জানালা ও দরজা

 

শরীরের আঁচড় থেকে রক্ত ঝরে; অনুভব সজাগ হয়

 

হাসিগুলো যত্র তত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে মলিন

আর ধবধবে রাস্তা ও শপিংমল থেকে কিনছেন

হাসির ফোয়ারা...

 

চিরুনি চালিয়ে দাঁত আচঁড়ে নিন; চুল ব্রাস করে ধুয়ে ফেলুন

 

পেটের ভিতর ইদুঁরের দাঁত খিলখিল

গোপন ডিওড্রন বেড়িয়ে আসছে

 

নাক উচু স্বভাব চরিত্র খননকালে এমন হয়; পাথরের হৃদয়

শুধু, মানুষই লালন পালনে ব্রতি হয়ে উঠবেন...

রিনি ভট্টাচার্য্য, শারদীয়া সংখ্যা

রিনি ভট্টাচার্য্যর গুচ্ছ কবিতা

 

ঐন্দ্রিয়িক

 

কাজ করো করো কাজ...

না যদি পারলে প্রেম করো।

এক নগরে এক গ্রামে এক...

রত্নচ্ছায়ায় হোগলারা তোমার।

দেহলির এক কোনের ফাঁকে...

কৌমুদির ছটা আজ ক্রন্দসী।

ভূধরের গর্তরা রুধীর ভরা...

চলো প্রেম করি-গলায় গলায়।

কাজ ভুলোনা ভুলোনা কাজ...

ভালবাসার ঘর গুলো ভাঙ্গছে।

এসো! ঘর গুলো বাঁধি বাঁশের...

বল্কল কুড়িয়ে। পরান্নে ঘর বাঁধি।।

 

জাহান্নাম

 

আমি চলছি জাহান্নামের পথে...

জানি তো এ পথে একাই যেতে

হয়। সুবিধেজনক দুরত্ব থেকে

 দ্যাখো তোমরা আর বিষ বর্ষণ

করো আমার উপর। ঠাট্টাও করো।

এপথে আছে হারগিলাআছে শকুন

 আছে বিষাক্ত কাঁকড়া, অক্টোপাসও

আমি ওদের সাথে চলি ঢালু খাদের

দিকে। একমনে দেখে যাই জাহান্নামে

ঢোকার অর্গলে শ্যাঁওলা-পোশাকে সজ্জিত

এক মস্ত পাথর। তাকে সরাই সবাই

মিলে। ভয়ের নাটক তো আমাদের নয়

ছিলো না তো কখনও। ভয় একফোঁটা

তো ছিল তোমাদের লৌকিক জগতকে

 তোমাদের সুসভ্য সার্কাসের সাহচর্যকে।

আমরা প্রবেশ করলাম জাহান্নামে। কে

যেন ঘন্টা বাজায় ছান্দিক তানে অজ্ঞেয় 

এই নিশীথে ঘুটঘুটে আঁধারে গভীরতম

ভালবাসায়।

 

আমরা আর তো ফিরলাম না। ফিরবো

কেন বলো তো!

অধঃপতিত আত্মা জাহান্নাম...

 

শালিক, চড়াই ও পানকৌড়ি

 

তিন বন্ধু খেলা করে ঐ রাধাচুড়াটার ডালে

আমিও খেলি ওদের সাথে। আমি হলুদ বসন্ত।

সেই ভোরের কচি আলো থেকে গোঁধুলি লগনের

কমলা কিরণে। যাবার আগে গেয়ে যাই কিচির

মিচির...টুই...টুই...শিষ বাজিয়ে বিদায় জানাই

তোমাদের। আর আমাদের কাক, ডাহুক, ঘুঘু, বাবুই,

টুনটুনিকবুতর সাথীরা মিলে সভা করে থাকি

গাছের পাতার আন্তর্জালে জুম করে। আমরা বলি

কবিতা, গপ্পো, রাজনীতির বেয়াদপি, তোমাদের

সমাজ-তত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, অর্থ-তত্ত্ব, সাহিত্য-তত্ত্ব এই সব।

এবার তৈরী হই। আজের সভার মুল বিষয় হবে

বাতাসের, আকাশের, জলের, মাটির কষ্ট ও ব্যাথা

ও উঠে দাঁড়ানো। আমন্ত্রণ রইলো আপনাদের সকলের। 

কোভিড বিধি মানা আবশ্যক।

হলুদ বসন্ত রাধাচুড়ার শাখা