লেখা পাঠান আমাদের chayarodpatrika@gmail.com

Sunday, November 29, 2020

সমন্বয়, ১৩

সমন্বয়ের কবিতা

কথা

সিন্দুক নিয়ে কি কম লেখা হল

অথচ আমি সময়ে সময়ে ভেবেছি

আমি নিজেই একটা বড় সিন্দুকের ভেতরে


একা। একা। একা। একা। একা...


অথচ কোনো কবি এই সিন্দুক খুলল না...

 

রুপালি একটা চামচ দেখতে

আমার হাতের মতন

 

হাত দিয়ে যা-কিছু তুলতে ও ধরতে

পারি না সেগুলো এই চামচ দিয়ে

তুলি ও ধরি

 

তুলে রাখা-ধরে থাকার

ব্যাপারটা অবশ্য

আলাদা

 

 

দুটো তাকানো, দুটো হাত, দুটো ছায়া

আলাদা আলাদা হয়ে

একজনের ভেতরে যে ছবি

গেঁথে দেয়

 

তার জন্যে দায়ী কেউ নয়

ছায়াদের ওপর অভিমান চলে না

ছায়াদের ওপর রাগারাগি চলে না

ছায়াদের, আদরে ঘুমের থেকে

বাইরে নিয়ে এসে টাঙিয়ে রাখতে হয়

ক্যালেন্ডারের যে কোনো একটা কক্ষে

 

এরপর যে তাকানোগুলো

আর যে হাতগুলো

যাদের-যাদের সরে-সরে গেছে

সকালের চকচকে আলোয়, রাস্তায়

তাদের খুঁজতে বেরোতে হয়...

 

কদিন ধরে এমন হচ্ছে

হাই তুলছি আর হাই তুলতে গেলেই

চেহারার ভেতর ঢুকে যাচ্ছে

অনেক পুরানো সব রাত্রির কালো

 

আমি মনে করছি কালো রঙ ভালো

চেহারার ভেতরে কিছুটা থাকুক,

কিন্তু পরিষ্কার ভাবা যাচ্ছে না,

আমার কিরকম রঙের উষ্ণতা প্রয়োজন,

যদিও শীতের রঙগুলোও টানে

 

হাই তুলতে গেলেই এসব হচ্ছে

চুল আর লম্বা স্নায়ুটার সাথে সম্পর্ক বেড়ে যাচ্ছে আমার

 

এই সময় কোনোরকম যুক্তির সাথে

যোগাযোগ হচ্ছে না মারামারি

গালাগালি অথবা ফিসফিস

 

খালি ঘুম আর তর্কের

মধ্যের গর্ত হয়ে বড় হয় হাই

 

একটা হাই তুলতে তুলতে

গলার ধমনী টমনী মিলে

আমি এক ব্রোঞ্জের পাথর

হয়ে যেতেই পারি

Sunday, November 15, 2020

ধৃতিরূপা দাস, ১২

ধৃতিরূপা দাস-এর কবিতা

বিরোধী দল

    

মায়ের রান্না কিছুটা নোনতা হতো

ততটা লবণ ঢালতে ঢালতে ঢালতে

মায়ের সঙ্গে আমার বিরোধী দল

     

আমাদের মাছ মরে গেলে

তার গায়ে হাত রেখে মা

আঁশযক ছাড়াতে পারে না

 

আমাদের বাজেট


আলোটার চারপাশে ঘুরঘুর করে পোকারা

তার নিচে ডান বাম হাত পেতে বৃষ্টির দিন

ছোট ছেলে মনে করে সাবানের নাম বলে দেয়

 

সাবানের নাম ভেদে ছোটখাটো পৃথিবীর জল

শ্রম বদলায়


মূর্তির পরে

 

কী করে যে সুস্থ হব!

এতকাল চামড়ার রোগ!

নির্বাণে ফেলে গেছে বাবা

মা সেখানে প্রাণীর প্রমাণ

 

এসবের অগ্নি কোথায়?

অথচ বেজিটি আর শিশু

এইতো না-ব্যবহার জুড়ে

নিরাপদে খেলা করে গেল!

 

এইতো কাছের জঙ্গলে

এইতো কাছেই জঙ্গলে

মূর্তির পরে যদিও

আমাদের হাতে কিছু নেই

 

স্বায়ত্বশাসন

 

পাণ্ডুলিপি খুলে রাখি স্থাবরের পাশে

সেখানে কৃষ্ণের কীটসরকারি পাম্প

 

আমাদের আবহবিকার ফুল-পথ্যহীন

রাঁধা-বাড়া স্বৈরাচারী, নিরপেক্ষ দেহ

 

খুলে রাখলে একে একে শিরিষ স্মৃতি-নুন,

মফস্বল, সংখ্যাগুরু ওজন ফিরে আসে

 

 মানিপ্লান্ট

 

নুনে পোড়া মাছ ভুলে যেতে যেতে

হাতে টাকা ফুরোনোর নির্বাণ

শ্রাবণের বৈরাগে যতদূর

ক্রমশ কি বোবা হয়ে যাচ্ছি?

 

ছড়া বলা ফসলের মহাদেশে

আসলে কৃষক মাটি ক্ষীণায়ু

 

গোপন দোআঁশ মেপে নিচ্ছে

অয়ন ঘোষ, ১২

অয়ন ঘোষ-এর কবিতা

জাতক বন্দনা

 

রাত খুবলে নিয়েছে চোখ

অস্থি মজ্জায় কেবলই ধুনোর গন্ধ

মনসার গান, শঙ্খ লেগেছে অসীমে।

 

ঈর্ষা প্রতি ঠোঁটে, শীত বন্দি আগুন

সুখের পরতে পরতে নুনের ছিটে

লাল শালুতে মোড়া বিশ্বাস বুঝি, শেষ ঘুমে।

 

দু'হাত জড়ো করে প্রণাম চেনা পাথরে

উর্বর প্রেতযোনি, জন্মস্নান বিরুদ্ধ ফসলে।

জেম, ১২

জেম-এর কবিতা

 

সিসিফাসের কবিতা

 

আমার সামনে সারি সারি কাচের মুখোশ রাখা।

রোজ একটি মুখোশ পরি, ঘুরে বেড়াইবইয়ের দোকান

মুদিখানা, হোটেল, মদের দোকান, পার্টি অফিসফের রাখি যথাস্থানে।

কেউ আমাকে বিশ্বাস করে না, যারা করে বলে জানিয়েছিল

তাদের আমি হারিয়ে ফেলছি কবিতার লাইন মনে রাখতে রাখতে।

আর যাই হোক মুখোশগুলো বিশ্বাস চেয়েছিলএকটা সময়ের পর

একটা-দুটো করে ভেঙে গুঁড়ো হল সেগুলোও

এখন অনেক রাত করে যখন ফিরি, সেই পেরেক টুকরোগুলোয় পা ফেলে পিছলে যাই

দেখি কীভাবে আমার বাড়ি দূরে সরে যাচ্ছে আমার থেকে, ক্রমশ...

আমার মুখে দীর্ঘ অবসাদের মতো জেলখানার ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

আমি দূরে সরে যেতে যেতে বুঝতে পারি কোথাও পৌঁছানো সম্ভব না,

অবসরের মোহনা ছাড়া জীবন কোথাওই নিয়ে যায় না।

নদীর মতন জীবন চেয়েছিলাম কি?

হেঁটে হেঁটে বেরিয়ে পড়ি,

স্পষ্ট স্রোতের ভেতর প্রকাণ্ড সব প্রস্তরখন্ড, যতসব মৃত বন্ধুর অভিপ্রায়!

তাদের জিজ্ঞেস করি

কীভাবে এলি তোরা এতদূর!

আমিও আমার মাথাটাকে বয়ে নিয়ে এসেছি সারাজীবন

নদীর পাশেদাগ কেটে কেটে।

 

গিল্ট কমপ্লেক্স

 

পিঠের দিকটায় এখন রোজ ব্যথা লেগে থাকে।

আয়নার সামনে জামা খুলে দাঁড়াইদেখি

অজানা এক ভয় এসে কুচি বরফের মতন জমে আছে।

 

সমস্ত হাড়গুলো ফুসফুসের সাথে পচে জল হয়েছে

একটু আগে পেচ্ছাপ করে তাদের গন্ধ আমি শরীর থেকে বের করে দিয়েছি।

যাদের কথা জানা যায়নিতারা এখন মাথায় পৌঁছে যাবে

তাই অপরাধবোধ আমাকে উল্টো করে ঝুলিয়ে রেখেছে।

 

আগুন ও কবিতা

 

অতঃপর, আমার সমস্ত কবিতার খাতা পোড়ানো শেষ হল

এরকমই এক সম্পূর্ণ আত্মত্যাগের পরে মুক্তি আসে,

তবুও কেউ যেন শূন্যতা ছাপিয়ে চলেছেস্বাধীনভাবেঅনন্তকাল ধ'রে।

 

সন্ধ্যার বিছানা ছেড়ে বেরিয়ে পড়ি রাস্তায়, নিজের ছায়ার দিকে তাকাই সম্দেহে,

হঠাৎ বুঝতে পারলাম, সবাই তাকিয়ে আছে অক্ষত অক্ষরের তমসাঘোরে আমার দিকে।

দৌড়ে ফিরি... পোড়া কবিতার গন্ধে ঘর ভরে আছে এখনও

আবার নতুন করে কবিতা লিখি, এবার কবিতা আমাকে পোড়াচ্ছে...

বিশ্বজিৎ সাহু, ১২

বিশ্বজিৎ সাহুর কবিতা


অ বু জ   ক বি তা

 

আমার দু'হাতে পাতা নীল চিঠি

সাদাপাতা চোখজ্বলে সিক্ত

 

খামের আগুন রং পলাতক ঢঙে বিবর্ণ বিদুর

সহস্র বাতি নিভে গেলে ধোঁয়া, ধোঁয়াশায় আদল মুখ

মনে নেই কামরাঙ্গা বেলা? এখন অচিনপুর সব!

হেমন্তের কাপড়-খসা-রাত সাহসে ভরপুর

 

বসন্ত ফোটার আগেই বেইমান, প্রতারক নাকি

শুধু সাহসটা লেপমুড়ি দেয় প্রতিটি কঠিন শীত রাতে...

অভিষেক সৎপথী, ১২

অভিষেক সৎপথী’র কবিতা


পরম অসুখ

 

রোদের চাদর ফেলে এসেছে অনেক আগে

                                            শীতের সকাল

    সাপের খোলসের মতো হীনমন্যতায় নয়।

 

তোমার হাতে খড়ি উঠে অথচ ভোর হয় না

                 রোদ এইরকমই স্বভাব সহজাত

 

তোমার অধিবৃত্ত হয়তো ভূগোলকের স্বেদকোরক    কিংবা সন্ধিপদী চলন

                                                  

ভারত মহাসাগরের স্ফীত লবণ রেখা ধরে    

অনায়াস আনাগোনা

 

অনভ্যস্ত ঝাউ বিন্যাস সরিয়ে দেখি

নিষ্কলঙ্ক কাজুবন ঘেঁষে

আমার দুহাতে রোদমাখা পরম অসুখ।

পার্থ সারথি চক্রবর্তী, ১২

পার্থ সারথি চক্রবর্তীর কবিতা


জয়গান

 

কিসের পেছনে বারবার ছুটে যাইকোন ধ্রুবতারা?

নাকি সবটাই মনের ভুল, অধরা আলেয়া!

মনে মনে গড়েছিলাম এক কাঁচের ঘর

ভেঙে গেল এক আলতো টোকাতেই সহসা!

 

ফেলে আসা পথ আজো মনে উঁকি দেয়,

শৈশব ঘেরা সেই সবুজ গ্রামের জীবনরেখা।

বুকের মাঝে শুয়ে থাকে রাশিরাশি গাছ

এক নরম ছায়ার মায়াবী পেলবতায়।

 

মায়াঘেরা সেই মায়ের আঁচলে বাঁধা ছিল

যে সুর আর গান, তা আজো অম্লান;

শিয়রে শাস্তি জেনেও সন্ধের আকাশে ভুল;

কানফাটা চিৎকারের পাশে গিরিখাতের শূন্যতা।

 

দেহময় এক অস্ফুট বাজনামায়া জাগায় মনে

কাঙাল হতেও রাজিশুধু কেড়ে নাও উন্মত্ততা।

বারবার তাও কেঁপে কেঁপে ওঠে ঢেউয়ের শিহরণ

জানি হবে ক্ষয়, তবু নামাবলী গায়ে তুলি।

 

এপিটাফের মতো সাদা ফুলের প্রত্যাশায় থাকি

কখনো কদাচিৎ মৃদু গন্ধও অনুভব করি,

ইট, বালিসুরকি ফেলে সেই কাঁচ খুঁজি

ভঙ্গুর সেই কাঁচে শিসমহল গড়ে তুলি।

 

দিন-রাত, সকাল-সন্ধ্যা যেন একসাথে মাখামাখি

আঘাতের পর আঘাত পেয়েও, তারই কাছে মলম খুঁজি

যে রাতে মায়াবী চাঁদ নিয়ে যায় সব বিষাদ

আমার সঙ্গে শুধু জেগে থাকে একফালি চাঁদ।

 

ঝড় উঠে উঠুক, চেয়েছি শুধু কয়েক ফোঁটা জল

তার সাথেই জল মিশিয়ে কাটাব জীবন,

স্মৃতি থেকে তুলে আনা স্তব্ধতাকে অস্ত্র ক'রে

মুখরিত হই আবার শারদ জীবনের জয়গানে।

অর্ঘ্যকমল পাত্র, ১২

অর্ঘ্যকমল পাত্রর কবিতা

তিন-এ নেত্র

 

প্রাইভেট টিউটর

 

তুই যে আনোখা দীঘি

জলের কাছে রাখা

                  অনুভূতির-ই দেনা

 

আমি তো দাদাই' খুব

ক্ষণে ক্ষণে ছুঁড়ি ঢিল। আর,

 তোর শিহরণ থামছে না

 

পূর্বরাগ

 

প্রেম বিয়োগান্তক— সদা ফসলি

কলমি শাকের ক্ষেত

 

আলের ইন্তেজারে পড়ে পা

সর্বজনের এ বেদনা

পথিক তুলে নিয়ে যায়... ভরে পেট

 

বয়ঃসন্ধি

 

বয়স উদ্ধত ভীষণ।

পুরোনো চটির ফিতে খুলে যায়

                   বোঝে মুক্তির সুখ

 

হাভাতে নতুন ফিতে আসে

জানে না সে দুনিয়াদারি

   ওপরওয়ালার পায়েই গুঁজে রাখে মুখ

 

 

রূপাঞ্জনা ভৌমিক, ১২

রূপাঞ্জনা ভৌমিকের গদ্য

 

ফাইন লাইন

 

দাঁতে দাঁত পিষে নৈঃশব্দ্য যুদ্ধে মত্ত দোটানারা। নিরাশ যুক্তিরা ল্যাবিরিন্থের শিকার। ভাগ্যের রেখা  বাঁকাপথের পথিক। তার উপর টাটকা কয়েকটা পদক্ষেপ। তাদের একধারে দীর্ঘ ভুলভুলাইয়া পদচিহ্নের অমানুষিক শক্তি শরীরের ভিতর ভাঙন-গড়ন চালিয়ে যায়। সেই মুহূর্তে উঁকি মারে আমার প্রতিবিম্ব। অবশ ভাঁজের উপর রঙবেরঙের মুখোশ বসানো। তার ফাঁক দিয়ে আমার চোখ যেন সত্যান্বেষী। উল বোনার মতন গোলকধাঁধা বুনে চলেছে ছলনাময় সমাজ। গীট আলগা উঠে আসে সরল অঙ্ক। দৃষ্টি স্পষ্ট হতেই  নিজেকে খুঁজে পাই এক কাটাকুটি খেলায়। যুক্তি-বুদ্ধি নিয়ন্ত্রণ হারায়। ঘনঘটার আতসকাঁচে দৃশ্যমান আমার গ্রাস হতে থাকা দুর্বলচিত্ত। নজর সরালেই ফের  চেনা চলচ্চিত্র; ভিন্ন মঞ্চে, ভিন্ন মুখে।

        আমি স্থির জলের ঢেউয়ে ধাক্কা খাই, আর মগজ জুড়ে শুধুমাত্র সু-সজ্জিত মঞ্চের মানবিক পুতুল-খেলা।