লেখা পাঠান আমাদের chayarodpatrika@gmail.com

Wednesday, January 20, 2021

সোনালী শর্মা, ১৪

সোনালী শর্মার কবিতা

 

কবিতা তোমাকে

 

()

এই দিনলিপির ভেতর হাঁটতে-হাঁটতে,

নিজেকে বড্ড ক্লান্ত লাগে, নাগকেশরের কাছে।

 

উঠোনে এখন রোদ পড়ছে ত্রিকোণ ভাবে।

তুমি এখন যতদূরেই যাও

 

তোমার গলার স্বর,

ক্রমশ ঘনিষ্ঠ হতে থাকে...

 

ক্রমশ ঘনিষ্ঠ হতে থাকে বর্ষার গান।

 

()

দিনগুলি ক্রমশ ডুবে গেলে এভাবেই

সূর্যের অনিয়মে রাত বেঁচে ওঠে

 

সমুদ্রস্নানে, তোমার পায়ের দাগে ছেয়ে গেছে

 

বালিস্তর...

তোমার আমার দূরত্ব পর্যন্ত!

 

অতএব,

অন্ধকারও গুটিয়ে নেয় নিজেকে, শুরু হয়

শামুকের দীর্ঘ চলাচল!

 

()

ভাঙছে কত দিন, পুড়ছে অজস্র কবিতা

তোমাকে দিতে পারিনি কিছুই!

 

এই অভ্যাসে জল মুছতে গিয়ে,

কখন বেলফুলও হয়ে যাচ্ছে মালা।

 

এখন কিছু শব্দ দিয়ে বিনম্র ফুল ফুটিয়ে ফুটিয়ে রাখলাম।

দেবো কোনো একদিন

 

                    কবিতা তোমাকে!

                  

 

()

একই ভাবে শুয়ে আছে ঘাসজমি

আর রাস্তাময় পাথরে ক্রমশ...

 

বাতিস্তম্ভ হয়ে যাচ্ছো তুমি!

 

কোনো এক দুপুরে,

মোম গলিয়ে বাতির সফল কায়দায়।

 

 

সাধারণ মানচিত্র বিন্যাসে মাথা রেখে,

পথে-পথে রাস্তা ভেসে যায়।

 

তারাময় তোমার চোখে শ্লোকগাথা হয়ে,

এখন ভিজে যাচ্ছি প্রায়;

 

আর দূরের কোনো গল্পে মিলিয়ে যাচ্ছে জলদক্ষয়...

 

 

()

তুমি খুব গোপনে লুকোনো

একটি বাক্স বন্দী নদী।

 

আর নদী বন্দি কয়েকটি শব্দে!

 

তবুও কয়েকটি ব্যবধানে আমরা সমুদ্রের

খুব কাছাকাছি ছিলাম।

 

()

সূক্ষ্ম নম্রতায় এই বাষ্প ভরা মেঘ পাঠালাম

তোমার নামে।

 

কিঞ্চিৎ, ফুটোফাটা হলুদ রঙের খামে।

সেই মেঘের জল কি বৃষ্টি হয়ে ঝরেছিল কোনোদিন?

 

সিক্ত হয়েছিল কি ওই হৃদয়ের ডালপালা?

 

-কাব্যিক সেতু ঘুরে,

দীর্ঘ স্তব্ধতার পরেও পেলাম না কোনো মন্তব্য...

 

()

তোমাকে যতই ছুঁতে যাচ্ছি

ততই দূরত্ব বাড়ছে!

 

ভুলে যাচ্ছি,

আমার সামনে তোমার প্রতিবিম্ব।

 

স্বচ্ছ অথচ বিপরীতধর্মী অক্ষাংশের মতো।

 

()

সরলরৈখিক আবর্তনে ভেসে যাচ্ছে কয়েক টুকরো রাত।

তুমি দাঁড়িয়ে আছো এলোমেলো চুলে,

 

ফেলে গেছ শেষ প্রহরে অবাঞ্ছিত

যোগাযোগ।

 

এখন ফাটলে শ্যাওলা হয়ে বেঁচে, ভেসে থাকায় ভালো।

 

 ভেসে থাকায় ভালো, অজস্র জলের ভেতরে

 বাষ্পীভূত জল হয়ে...

 

()

আমি বলছি না তুমি প্রেমের প্রতীক!

এমনই মূর্খতা আসে

 

 ঋতুর সমাহারে, বারে বারে

 ভেঙ্গে পড়ে দুরন্ত স্ফটিক।

 

(১০)

বার্ষিক গতির কোনো অপূর্ণতার দিনে বারবার রাতের এই বালিশ জুড়ে,

 

একবার তোমাকে ভাবতে গিয়ে দেখি,

কালপুরুষের দিকে তাকিয়ে আছি আমি।

 

আলুথালু স্বভাবে স্বভাবসিদ্ধ তোমাকে

জেনেছি,

 

তুমি দ্বিতীয় পুরুষ!

 

(১১)

সময়ের পতন ঘটে না কিছুতেই!

যা ঘটার ঘটে পতনের সময়...

Sunday, November 29, 2020

অমিত পাটোয়ারী, ১৩

অমিত পাটোয়ারী’র কবিতা

কৃত্তিস্খলন

 

শো-কেসে একটা বাঘ

মুঠিতে একটা বাঘ

                        ঝাল মিটিয়ে নিস্তেজ

                        রিটেল ছেলের রাগ

রাগের বাবা-মা বুঁদ

আঠায় আঠায় বুঁদ

                        রাগের খোসা পালিয়েছে

                        তাই প্রয়োজন নিজ খুঁদ

কুড়ায় মেয়ের বর

নতুন নতুন বর

                        রিটেল চাইছে অন্য ছেলে

                        ছড়িয়ে পড়ছে ঘর

 

ছড়াচ্ছে ঘর, ছড়াচ্ছে ঘর

ছড়াচ্ছে ঘর, ছড়াচ্ছে

                         এক কোণে শোয়া চারপেয়েটার

                         কাম-ক্রোধ বেড়ে যাচ্ছে

অর্পিতা আদক, ১৩

অর্পিতা আদকে’র কবিতা

রোধক

 

শুধু একটা সত্যের ভেজা নিঃশ্বাস,

বুকের বালুতে হাতড়ে খুঁজি।

চোরাবালির দগদগে ক্ষত মলমের মতো গায়ে লেগে থাকে।

আর মরুভূমি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে খাঁ খাঁ রোদে।

কথা বলা নিঃশ্বাসগুলোর মোক্ষম মোচড়ে পেঁচিয়ে যায় বুকের হাপরগুলো।

তবু হাঁটি।

এক পা, দু পা।

সত্যের জীবাশ্মে পা পিছলে যায়,

মেরুদণ্ডে গভীর চিড় ধরে যায়।

মিথ্যার জিহ্বা লকলক করে হামলা চালায়।

আর গলার আল জিভে আটকে থাকে সত্য।

তবু বেঁচে থাকে সত্য শেষ অবলোকনে,

রক্তের অণুতে, জীবাশ্মের মজ্জায়।

হৃদপিন্ডের দেয়ালে আঠার মতো লেপ্টে থাকে মিথ্যে।

রক্তে সর পড়তে থাকে ঠিক যেমন দুধে হয়।

মিথ্যার শিরশিরানি আর উস্কানিতে যেন সারা শরীরে মাদকতা।

বেঁচে থাকি, দম নিই, এগোই।

একদিন দেখি,

নেশাতুর এক ঘুম ঘুম ভোরে জানলার গরাদে আটকে আছে সাদা চাঁদ, চুঁইয়ে পড়ছে সাদা রক্ত।

টেনে ঢুকিয়ে আনি চাঁদটাকে ঘরের সিলিং-এ,

মশারির চালে ছড়িয়ে দিই গুঁড়ো গুঁড়ো করে।

দিনযাপন করি অমোঘ সত্যের টুকরো টুকরো ইশারায়।

আর মিথ্যা হারায় মিথ্যার অবমাননায়।

ইউসুফ মোল্লা, ১৩

লুইস গ্লিকে’র কবিতা

(নোবেল বিজয়ী: ২০২০)

ভাষান্তর: ইউসুফ মোল্লা

 

অতীত

 

আকাশে ছোট্ট আলো দেখা যাচ্ছে!

হঠাৎ করে দুটি পাইন গাছের মাঝখানে,

তাদের সূক্ষ্ম সূঁচগুলি এখন আলোকসজ্জার উপরে ছড়িয়ে গেছে।

আর এই উপরে উচুঁ পালকযুক্ত স্বর্গের বাতাসকে গন্ধময় করতে।

 

এটাই সাদা পাইনের গন্ধ,

সবচেয়ে তীব্র হয় তখন,

যখন বাতাস এর মধ্য দিয়ে বয়ে চলে।

আর শব্দটা একইভাবে অদ্ভুত করে তোলে,

যেকোনো সিনেমার বাতাসের শব্দ মতো।

 

সিনেমার একটি দড়ির ছায়া,

আর যা থেকে তৈরি করছে শব্দ।

আপনি এখন যে শব্দ শুনতে পাচ্ছেন

তা নাইটেঙ্গেলের শব্দের মতো।

পুরুষপাখিটি স্ত্রীপাখিটিকে শোনাবে সেই কন্ঠটা।

 

দড়িটাকে যদি পাল্টে দাও,

ঝাঁঝরা বাতাসে হ্যামককে

দুটি পাইন গাছের মধ্যে দৃঢ়ভাবে বাঁধা পাবে।

 

বাতাসে ঝাঁঝালো গন্ধ।

এটাই সাদা পাইনের গন্ধ।

 

যেটি আপনি শুনতে পান,

সেটা আমার মায়ের কন্ঠস্বর

অথবা গাছগুলি কেবল এই শব্দ করে

যখন বাতাস তাদের মধ্য দিয়ে যায়।

 

 এটা কোনো শব্দ করবে না,

কারণ বাতাস এর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে না!

অনিমেষ, ১৩

অনিমেষ-এর মুক্তগদ্য

অন্তঃশ্রোত পর্ব

 

এই আপোষহীন ব্যাথার উপশম কোথায়! ঝরঝরে কথার কাছে এসে এই যে নঞর্থক দাঁড়ানো তা কি কেবল বোধবিচারের! বলো অর্চন! শেষবার যখন দেখা তখন নদীর গতিপথ বদলে যাওয়া নিয়ে আলোচনা করতে করতে শৃঙ্গের ঢেকে যাওয়া দেখলাম।

 

এত আকুল বিচার, চিৎকার, শুভেচ্ছার বন্যা এগুলো তো বন্ধ্যা করে দেয় তাই না!

 

অথচ তুমি আমি দুজনেই জানি আজ নয় কাল গাড়ির যাত্রী নেমে যাবে। শেষপর্যন্ত যে কেউ যায় না! টিকিট কাটা থাকলেও সুন্দর স্টেশন এলে মনে হয় নেমে যাই অথবা কখনও ট্রেনলাইন বন্ধ থাকলে। তবুও তো একটা গুমোট গরমে এসব কথা নিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কি থাকে!

 

দেখো অর্চন তোমাকে বিশ্বাস করে চলে যেতে চাই সব ছেড়ে তাই বলে মাথার উপরের পাখাটার যে তীব্রতা কমে যাবে সে তো নয়! ও ওর মতো ঘুরবে যে নিজের মতো এসে বসবে সে বাতাস পাবে। কারো জন্যই তো মরুভূমি আলাদা আলাদা করে শীত গরম সাজিয়ে রাখে না! না জেনে খালি পায়ে দৌড়োলে পা পুড়বেই।

তবুও তো আমরা বসে থাকি নিভৃতে। যারা অন্ধকার পথ চিনে একা যেতে পারবে বলে মনে হয় তারাই আগে হোঁচট খায়।

 

সেবারেও এমন গরম ছিল। শীতের কোনো স্পর্শ পর্যন্ত পাইনি। চাদর দিয়ে মুড়িয়ে রাখিনি রক্তাক্ত দেহটা‌। ভেতরে এত জ্বালা তার দহন শক্তি কতটা নিশ্চয় বুঝেছ! মলম লাগিয়ে দিই তখনই আমরা যখন বুঝতে পারি কতজোড়ে আঘাত লেগে গেছে। অথচ কথা ছিল না এমন হবার।

 

অর্চন কখনও শুনেছ কি, মাঝরাতে ফাঁকা ছাদে কী নিয়ে পড়ে থাকা যায়? আমরা তো শুধু দেখে যাই নিচের ঘরে লিভিং রুমে মানুষের আসা যাওয়া। কখনও আটকে একরাত থেকে যেতে বললে বুকের মধ্যে ছুরি গেঁথে দেয়। অথচ থাকবে বলেই তারা আসে। তারা চলে গেলে এত বিরামহীন স্রোত কেন উলটোদিকে ছোটে!

 

কোথায় থাকে বলো অর্চন এইসব নিবিড় শোক, এত উদ্দাম যন্ত্রণা! কোথায় মন পুড়লে কেবল মানুষ পোড়ে না! তুমিও বা কোথায় খুঁজে  দেবে বলো!

 

সবাই যে আমরা সিঁদুরে মেঘ দেখতে পেয়েও নৌকা নিয়ে ছুটি সমুদ্রে, একটু আত্মসংহার ছেড়ে হাক দেবো বলে জোরে। কেউ তো শান্ত বায়ু ছড়িয়ে দেয় না! এত হাহাকার এত ক্ষুধা এত নিস্তব্ধ মৃত্যু কোথায় রাখি অর্চন!

 

কাকে দিই যার নেই উপসংহারের ভয়! কাকে উপহার দিই বলো! এই চুড়ান্ত ব্যাধি!...

অনিকেশ দাশগুপ্ত, ১৩

অনিকেশ দাশগুপ্ত’র কবিতা

স্নান

 

জল বয়ে যায় কলঘরের নাগাল না পেয়ে

একটা উষ্ণ স্নানে দুপুর কেটে যায় 

সাবানের বুদবুদ ঘেরা বাতাসগুলি বাসা বাঁধে

আমাদেরই শ্রান্ত শরীরে...

আয়তাকার কলঘরে

কবেকার মহাশূন্যে

জল জমে, পাইপলাইন বোজাতে বোজাতে

আমাদের শ্যাওলা ত্বকে মাত্র কিছুক্ষণ

ফুটেছিল আলোর ম্যাপ

বাতাসের বল নিয়ে বিস্ময়কর স্নানক্রীড়ার পর

পৃথিবীময় নিরাময়ের ঘোর লেগে থাকে

 

দ্রষ্টা

 

আমার প্রেমিকা সমস্ত ভোরে একটা রোদেলা দিনের বায়না করে

তুষারপাতের বিকেলে বরফের স্তূপ সরিয়ে

হঠাৎ কালো অসাধারণ রাস্তা

অনুসরণ করতে করতে বাগানের ধারে

এক উষ্ণ লম্বা টুপি খুলে রাখে

 

ভিড়ের থেকে বিচ্ছিন্ন হলুদ― চন্দন যুবতী

হাতব্যাগ বলতে মনে পড়ে তুলো,পশম ও দেবীর বিচক্ষণ খড়্গ

জিভ কেটে দেখানো রঙিন রক্তাল্পতা

ভীষণ জরির ময়দানে নুন ও কাঁটা গাছের চেয়েও সুদূর

নিরালম্ব প্রেমিকা আমার

ঠিক করে নিতে পারে

একটা হিংস্র নিয়মিত শৃঙ্খলা

একটা রোদ-সাদা বিছানায় কতখানি তাচ্ছিল্যের হাসি রাখবে

 

 

আগুন

 

আগুনের একটা তল থাকে

আগুনের তলে স্মৃতিদের সমাপতন হয়

আগুনের কাছে ভাষা নেই,

আগুনের কাজ

সমাজের ভাষার মতো আপেক্ষিক;

উৎসর্গের আগুন

ব্যাভিচারের আগুন

আগুন ফুরিয়ে যাওয়ার আগে

দপ ক’রে জ্বলে ওঠা আগুন...

জীবনের গন্ধ মাখা ব্যক্তিগত একটা স্তর থেকে

সূর্যাস্তের আগুন রং, সিংহের আগুন রং

বিপরীত দিকে হেঁটে যায়

সন্দীপন দাস, ১৩

সন্দীপন দাসের তিনটি কবিতা

 

১. ভলক্যানো

 

আকাশ মেঘলা, মনখারাপ করে শুয়ে আছে নদী

একটা সারস উড়ে এসে বসে ঠোঁটে এক অদ্ভুত আলো নিয়ে

অন্ধকার তা দ্যাখে, দ্যাখে সন্ধেমণি ফুল, মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবও...

কিন্তু কেউ সেই আলো ছুঁতে পারে না

শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দ্যাখে তুমি কি নিপুণতায় ওই আলো নিয়ে মেখে নাও তোমার সারা শরীরে

আর তারপর...

তারপর ঠোঁটে করে সমস্ত মনকেমন, মেঘরঙা ইচ্ছে

আর সম্রাটের জন্মান্তর নিয়ে উড়ে যাও কোনো এক

ভলক্যানোর দেশে...

আমার সমস্ত ফেরা মিথ্যে হয়ে যায়

দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখি আকাশ মেঘলা, মনখারাপ করে শুয়ে আছে চোখ হারানো একটা সারস...

 

২. দ্রোহ

 

তোমার হাত গলে যে জলটুকু ছলকে পড়ে তা চেনা ব্যথা

দমকা হাওয়ায় উড়ে যায় মেঘ, ধুলোমাখা বর্ণপরিচয়ের ছেঁড়া পাতা... কেবল শূন্যতা জেগে থাকে

এ পথ থেকে ও পথ... ও পথ থেকে এ পথ

অন্ধকারের অবস্থাও তাই, এ ভোরের আলো ফোটার আগেই পিঠে চাঁদ বেঁধে গোপনে পাড়ি দ্যায় সীমান্তে...

আগুনপাখিদের দেশে... ঝরাপাতার দেশে...

 

তোমার খোঁপা থেকে অসাবধানতায় যে অক্ষরগুলো

ছিটকে পড়ে ধ্রুপদ ঘরানার দেশে, তাদের গায়ে লুকিয়ে থাকে গোপন রক্তের দাগ...

তারা এ কবিতাকে একা ফেলে মিলিয়ে যায়...

মিলিয়ে যায় কাঁটাতারের ওপারে...

 

৩. রুটমার্চ

 

মাথার ভেতর ঘুমিয়ে পড়ছে বিকেলগুলো

চেটেপুটে খাওয়া সব মাংসের সাদা হাড়গুলোও...

তবু সন্ধে দেখি, দেখি নিয়ন আলোর নিচে সমস্ত সংযমকে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে...

দেখি ভোর চেয়ে বন্ধুদের কল্পতরু বৃক্ষের কাছে মাথা কেটে

বুকপকেটে ছুরি লুকিয়ে সন্তর্পণে সন্ধেমণি ফুলের পাশে গিয়ে বসি... শুনি দিন ফুরোবার গল্প...

উঠোনের পাতাবাহারীর হাত ধরে তোমার পাবলো পিকাসোর দেশে উড়ে যাওয়ার গল্প...

আর তারপর শহর ঘুমোলে চুপিচুপি ফিরে এসে হাঁটুমুড়ে বসা ফায়ারপ্লেসের আগুনে...

 

মাথার ভেতর এভাবেই ঘুমিয়ে পড়ছ তুমি...

সমন্বয়, ১৩

সমন্বয়ের কবিতা

কথা

সিন্দুক নিয়ে কি কম লেখা হল

অথচ আমি সময়ে সময়ে ভেবেছি

আমি নিজেই একটা বড় সিন্দুকের ভেতরে


একা। একা। একা। একা। একা...


অথচ কোনো কবি এই সিন্দুক খুলল না...

 

রুপালি একটা চামচ দেখতে

আমার হাতের মতন

 

হাত দিয়ে যা-কিছু তুলতে ও ধরতে

পারি না সেগুলো এই চামচ দিয়ে

তুলি ও ধরি

 

তুলে রাখা-ধরে থাকার

ব্যাপারটা অবশ্য

আলাদা

 

 

দুটো তাকানো, দুটো হাত, দুটো ছায়া

আলাদা আলাদা হয়ে

একজনের ভেতরে যে ছবি

গেঁথে দেয়

 

তার জন্যে দায়ী কেউ নয়

ছায়াদের ওপর অভিমান চলে না

ছায়াদের ওপর রাগারাগি চলে না

ছায়াদের, আদরে ঘুমের থেকে

বাইরে নিয়ে এসে টাঙিয়ে রাখতে হয়

ক্যালেন্ডারের যে কোনো একটা কক্ষে

 

এরপর যে তাকানোগুলো

আর যে হাতগুলো

যাদের-যাদের সরে-সরে গেছে

সকালের চকচকে আলোয়, রাস্তায়

তাদের খুঁজতে বেরোতে হয়...

 

কদিন ধরে এমন হচ্ছে

হাই তুলছি আর হাই তুলতে গেলেই

চেহারার ভেতর ঢুকে যাচ্ছে

অনেক পুরানো সব রাত্রির কালো

 

আমি মনে করছি কালো রঙ ভালো

চেহারার ভেতরে কিছুটা থাকুক,

কিন্তু পরিষ্কার ভাবা যাচ্ছে না,

আমার কিরকম রঙের উষ্ণতা প্রয়োজন,

যদিও শীতের রঙগুলোও টানে

 

হাই তুলতে গেলেই এসব হচ্ছে

চুল আর লম্বা স্নায়ুটার সাথে সম্পর্ক বেড়ে যাচ্ছে আমার

 

এই সময় কোনোরকম যুক্তির সাথে

যোগাযোগ হচ্ছে না মারামারি

গালাগালি অথবা ফিসফিস

 

খালি ঘুম আর তর্কের

মধ্যের গর্ত হয়ে বড় হয় হাই

 

একটা হাই তুলতে তুলতে

গলার ধমনী টমনী মিলে

আমি এক ব্রোঞ্জের পাথর

হয়ে যেতেই পারি

Sunday, November 15, 2020

ধৃতিরূপা দাস, ১২

ধৃতিরূপা দাস-এর কবিতা

বিরোধী দল

    

মায়ের রান্না কিছুটা নোনতা হতো

ততটা লবণ ঢালতে ঢালতে ঢালতে

মায়ের সঙ্গে আমার বিরোধী দল

     

আমাদের মাছ মরে গেলে

তার গায়ে হাত রেখে মা

আঁশযক ছাড়াতে পারে না

 

আমাদের বাজেট


আলোটার চারপাশে ঘুরঘুর করে পোকারা

তার নিচে ডান বাম হাত পেতে বৃষ্টির দিন

ছোট ছেলে মনে করে সাবানের নাম বলে দেয়

 

সাবানের নাম ভেদে ছোটখাটো পৃথিবীর জল

শ্রম বদলায়


মূর্তির পরে

 

কী করে যে সুস্থ হব!

এতকাল চামড়ার রোগ!

নির্বাণে ফেলে গেছে বাবা

মা সেখানে প্রাণীর প্রমাণ

 

এসবের অগ্নি কোথায়?

অথচ বেজিটি আর শিশু

এইতো না-ব্যবহার জুড়ে

নিরাপদে খেলা করে গেল!

 

এইতো কাছের জঙ্গলে

এইতো কাছেই জঙ্গলে

মূর্তির পরে যদিও

আমাদের হাতে কিছু নেই

 

স্বায়ত্বশাসন

 

পাণ্ডুলিপি খুলে রাখি স্থাবরের পাশে

সেখানে কৃষ্ণের কীটসরকারি পাম্প

 

আমাদের আবহবিকার ফুল-পথ্যহীন

রাঁধা-বাড়া স্বৈরাচারী, নিরপেক্ষ দেহ

 

খুলে রাখলে একে একে শিরিষ স্মৃতি-নুন,

মফস্বল, সংখ্যাগুরু ওজন ফিরে আসে

 

 মানিপ্লান্ট

 

নুনে পোড়া মাছ ভুলে যেতে যেতে

হাতে টাকা ফুরোনোর নির্বাণ

শ্রাবণের বৈরাগে যতদূর

ক্রমশ কি বোবা হয়ে যাচ্ছি?

 

ছড়া বলা ফসলের মহাদেশে

আসলে কৃষক মাটি ক্ষীণায়ু

 

গোপন দোআঁশ মেপে নিচ্ছে