লেখা পাঠান আমাদের chayarodpatrika@gmail.com

Sunday, November 29, 2020

অনিমেষ, ১৩

অনিমেষ-এর মুক্তগদ্য

অন্তঃশ্রোত পর্ব

 

এই আপোষহীন ব্যাথার উপশম কোথায়! ঝরঝরে কথার কাছে এসে এই যে নঞর্থক দাঁড়ানো তা কি কেবল বোধবিচারের! বলো অর্চন! শেষবার যখন দেখা তখন নদীর গতিপথ বদলে যাওয়া নিয়ে আলোচনা করতে করতে শৃঙ্গের ঢেকে যাওয়া দেখলাম।

 

এত আকুল বিচার, চিৎকার, শুভেচ্ছার বন্যা এগুলো তো বন্ধ্যা করে দেয় তাই না!

 

অথচ তুমি আমি দুজনেই জানি আজ নয় কাল গাড়ির যাত্রী নেমে যাবে। শেষপর্যন্ত যে কেউ যায় না! টিকিট কাটা থাকলেও সুন্দর স্টেশন এলে মনে হয় নেমে যাই অথবা কখনও ট্রেনলাইন বন্ধ থাকলে। তবুও তো একটা গুমোট গরমে এসব কথা নিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কি থাকে!

 

দেখো অর্চন তোমাকে বিশ্বাস করে চলে যেতে চাই সব ছেড়ে তাই বলে মাথার উপরের পাখাটার যে তীব্রতা কমে যাবে সে তো নয়! ও ওর মতো ঘুরবে যে নিজের মতো এসে বসবে সে বাতাস পাবে। কারো জন্যই তো মরুভূমি আলাদা আলাদা করে শীত গরম সাজিয়ে রাখে না! না জেনে খালি পায়ে দৌড়োলে পা পুড়বেই।

তবুও তো আমরা বসে থাকি নিভৃতে। যারা অন্ধকার পথ চিনে একা যেতে পারবে বলে মনে হয় তারাই আগে হোঁচট খায়।

 

সেবারেও এমন গরম ছিল। শীতের কোনো স্পর্শ পর্যন্ত পাইনি। চাদর দিয়ে মুড়িয়ে রাখিনি রক্তাক্ত দেহটা‌। ভেতরে এত জ্বালা তার দহন শক্তি কতটা নিশ্চয় বুঝেছ! মলম লাগিয়ে দিই তখনই আমরা যখন বুঝতে পারি কতজোড়ে আঘাত লেগে গেছে। অথচ কথা ছিল না এমন হবার।

 

অর্চন কখনও শুনেছ কি, মাঝরাতে ফাঁকা ছাদে কী নিয়ে পড়ে থাকা যায়? আমরা তো শুধু দেখে যাই নিচের ঘরে লিভিং রুমে মানুষের আসা যাওয়া। কখনও আটকে একরাত থেকে যেতে বললে বুকের মধ্যে ছুরি গেঁথে দেয়। অথচ থাকবে বলেই তারা আসে। তারা চলে গেলে এত বিরামহীন স্রোত কেন উলটোদিকে ছোটে!

 

কোথায় থাকে বলো অর্চন এইসব নিবিড় শোক, এত উদ্দাম যন্ত্রণা! কোথায় মন পুড়লে কেবল মানুষ পোড়ে না! তুমিও বা কোথায় খুঁজে  দেবে বলো!

 

সবাই যে আমরা সিঁদুরে মেঘ দেখতে পেয়েও নৌকা নিয়ে ছুটি সমুদ্রে, একটু আত্মসংহার ছেড়ে হাক দেবো বলে জোরে। কেউ তো শান্ত বায়ু ছড়িয়ে দেয় না! এত হাহাকার এত ক্ষুধা এত নিস্তব্ধ মৃত্যু কোথায় রাখি অর্চন!

 

কাকে দিই যার নেই উপসংহারের ভয়! কাকে উপহার দিই বলো! এই চুড়ান্ত ব্যাধি!...

No comments:

Post a Comment