লেখা পাঠান আমাদের chayarodpatrika@gmail.com

Tuesday, January 25, 2022

অশোক অধিকারী

অশোক অধিকারী’র দুটি কবিতা

 

ক্ষয়

 

অচ্ছুৎ স্পর্শ প্রিয় মৃতেরা বড়ই জাগতিক,

কত কাছে কত দূরে ফুলগুলো বড়ো মানবিক;

রুদ্ধ বাক কাজল নয়ন বিষাদের এই পংক্তি মালা,

শোকের ঠুংরি গজল নিঃস্ব প্রদাহের ক্ষুধাদমন পালা।

#

মেতেছি সহবাসে নগ্ন পদ শরীরী মায়ায় রুগ্ন নির্যাস।

রাজা হয়ে উঠে বসি আগুন দিয়ে সারি প্রাতরাশ,

তন্দ্রায় ছুঁয়েছি যাকে তার কাছে অনিরুদ্ধ শ্বাস;

এসো হে আদিম প্রভু আমাদের যুগল বাতাস,

 

 

তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী

 

সেদিনের মতো করে আর তোকে ছোঁব না!

দূর থেকে কিছু চোখের জল আর হাফ সেদ্ধ-

আতপের মন্ড মুখের সামনে তুলে ধরে

বলবো, ‘সেলিব্রেট করো।

এখন মদের চেয়েও সস্তা জীবন;

এখন পর্বতের চেয়েও অনড় ব্লাড রিপোর্ট।

কিছুতেই বদলানো যায় না মৃত্যুর শংসাপত্র,

বেঁটে খাটো লম্বা চেহারাগুলো সব অভিন্ন

যেন ডালটনের পরমাণু তত্ত্ব!

পৃথিবীর সব কালো আর ফর্সা মানুষের

মুখ স্বচ্ছ সেলোটেপে চঞ্চল হরিণ!

গুণমুগ্ধ শিকারীর ছায়ায় বাঁচবার অরণ্য নিবিড়

পেতে চায় আরও কয়েক শতাব্দীর জীবন।

সৌমিতা চট্টরাজ

সৌমিতা চট্টরাজ-এর গুচ্ছ কবিতা

 

অন্ধকারের লেখা গুচ্ছ

 

(১)

আলোয় পিঠ পেতে রাত্রিকে ভালবাসে যারা, ইমানে তাদের আঙুল তুলি!

এতো বড় বেইমান আমি নই।

অথচ মিলিয়ে নিও

ওই পিঠ'টা বাঁচাতে গিয়েই কোনো না কোনো একদিন, কোনো না কোনো একবার

তুমি, আমি, আমরা বেইমানী করবোই।

আসলে কি হয় জানো

আলোর জন্ম দিতে প্রতিপল পুড়ে যান যে পরমপিতা

স্বীকার করি না তাকে!

সে'কথা বলতে পারি, তেমনও তো নাস্তিক আমি নই।

জানি, জানি, খুউব জানি, ইমান নেই আমার

তাই বলে, বড়ো বেশী বেইমানও আমি নই।

 

(২)

তেরো দিনে গলে গেছে সবটুকু লাল

বাতিদানে থকথকে মোম, একে একে মরে আসা সিমপ্যাথি কল

যতদূর দূরত্ব গড়ায় কাছে চাই প্রথাগত মাঠ, আউসের স্তুপ, কালো কালো নষ্ট ফসল।

তেরো দিনে থৈ থৈ বর্ষা নামে

বিষ ভয়ে ছিঁড়ে ফেলি আদুরে আস্তিন,

পোয়াতির নাভী ঠেলে ভাত উঠে আসে, উঠে আসে লেবু মাখা ক্ষীর

ভাঙা জলে টগবগে আতপের চাল, ফিরোজা সকাল

চেনা চেনা সেই তেরো দিন...

টকটকে সিঁথি আর আলতা রেখে;

আল ধরে হেঁটে যায় বিধবা আশ্বিন।

 

(৩)

তড়িঘড়ি খেতে আয় মন

বেলা হোলো, ক্ষিদে বোঝা শেখ

দলা দলা শীতঘুমে দু'হাতা রোদ মেখে দিই

শেষ পাতে বেড়ে দেবো বাড়ন্ত জীবন,

বুঝলি রে মন

পথেঘাটে পাখি খোঁজে যে বুড়ো ব্যাধ

তাকেও তো খেতে ডেকেছি।

আশরাফি খুঁটে খুঁটে আমি ক্লান্ত সিরাজ

ঘুমোবো না, শুতে যাবো আজ

ক্ষিদের বিছানা পেতেছি।

পার্থিব বন্দ্যোপাধ্যায়

পার্থিব বন্দ্যোপাধ্যায়-এর কবিতা

 

হঠাৎ

 

হঠাৎ করেই রাতের তারা গোনা,

ছাদের ঘরে হঠাৎ লুকোচুরি

হঠাৎ করেই কাঁটায় উল বোনা,

হঠাৎ করেই পান্ডুলিপি চুরি...

 

হঠাৎ করেই চরম গালাগালি,

হঠাৎ করেই ঠোঁটের ওপর জিভ

হঠাৎ করেই ভাতের থালা খালি,

হঠাৎ করেই ক্লান্ত কবির নিব...

 

হঠাৎ করেই ঝাঁপিয়ে পড়া প্রেমে,

হঠাৎ করেই ব্লকলিস্টে নাম

হঠাৎ করেই টুপির ভেতর ঘেমে,

হঠাৎ করেই মন্দগতির ট্রাম...

 

সব হঠাৎ-ই হঠাৎ প্রকট হয়,

চতুর্দিকে হঠাৎদেরই আওয়াজ

হঠাৎ করেই হঠাৎ পাওয়া ভয়,

জীবন শুধু হঠাৎগুলোর কোলাজ।

সন্দীপন দাস

সন্দীপন দাস-এর গুচ্ছ কবিতা

 

হেলফায়ার

       

"Abandon hope all ye who enter here"

 

সমুদ্রের ডেকে দাঁড়িয়ে তুমি ভাবছো তোমার কোনো সম্ভ্রম নেই

নেই কোনো আবেগমথিত গোপন...

শুধু ক্লান্ত সুর থেকে ঝরে পড়ে সীগালেরা

তোমার আবেশী শরীর ছুঁয়ে মিলিয়ে যায় কোনো এক স্লিপিং আইল্যান্ডে...

যেখানে অপেক্ষা করে থাকে মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব, এলাচের গন্ধমাখা গোধূলি

অসমাপ্ত পানপাত্র কিংবা পুড়ে যাওয়া কলোজিয়াম!

তোমার মনকেমন হয়....

রোদেলা ডেকে দাঁড়িয়েই তুমি আনমনে আওড়ে ওঠো― 'চিত্ত যেথা ভয়শূন্য...!'

তবু তোমার কেমন শীত শীত করে, চশমার কাঁচে জমতে থাকে ধরা পড়ে যাবার বিন্দু বিন্দু ভয়...

#

ওদিকে সন্ধে নামে!

আরক্তিম ডেক সেজে ওঠে বাহারী আলোয়

শুরু হয়ে যায় মৃত সভ্যতার সব শবেদের পাশবিক আনন্দোৎসব....

তুমি তলিয়ে যেতে থাকো

ক্রমে তলিয়ে যেতে থাকো সমুদ্রের অতলে

তলিয়ে যেতে যেতে দ্যাখো সমুদ্রের ডেকে দাঁড়িয়ে এক ক্যাপ্টেন ভাবছেন

তাঁর কোনো আকাশ নেই, নেই কোনো বশীভূত মায়াবী আয়না...

নেই কোনো বিষাদ বন্দরও!


কোরক

  

আর এভাবেই তুমি পার হয়ে যাচ্ছ সমস্ত কাঁটাতার, শহরের ঘুম, মৌর্য সম্রাটের অহংও...

একটা পাখি উড়ে গ্যালো তোমার শরীর ছুঁয়ে

আর রেখে গ্যালো এক অদ্ভুত আলো

যে আলো ছুঁয়ে একে একে ঘুমিয়ে পড়ছে রাহী, অশ্বমেধের ঘোড়া, শূন্যতার অস্থিরতা...

ঘুমিয়ে পড়ছে সন্ধেমণি ফুলের আত্মহত্যা, পর্ণমোচী আঙুলের বিপণ্ণতা...

শুধু জেগে থাকছেন এক মানুষবেশী ঈশ্বর

যিনি নিশ্চিন্তে পায়চারি করে বেড়াচ্ছেন শহরের ঘুম থেকে এত এত আলোর সাম্রাজ্য

#

তোমার গায়ের গন্ধ টুপটাপ করে ঝরে পড়ছে আমার কবিতায়

আর এভাবেই তুমি পার হয়ে যাচ্ছ আমাকে

আমার নির্মিত সব ছল-চাতুরীও...

 

সৌপ্তিক

 

সন্ধে নামছে...

চারিদিকে জ্বলে উঠছে অভ্যাসী আলো,

ম-ম করছে ধূপ, আতরের গন্ধ;

এখনই শুরু হবে শবসাধনা

তবু তুমি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছো বুদ্ধের দিকে

পাদপদ্ম থেকে এক শান্ত আলো ঠিকরে বেরোচ্ছে

সেই আলোয় তোমার চোখদুটো আরও উজ্জ্বল হয়ে

উঠছে সোমদত্তা

তুমি বুঝতে পারছো জন্মান্তর আসন্ন!

তোমার শরীর থেকে, আইলাইনার থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে

বেরিয়ে যাচ্ছে প্রজাপ্রতি শৈশব, বশীভূত বিশল্যকরণী, কামুক রুদ্রাক্ষ কিংবা সব বিজয়ের কাহিনী...

তবু তোমাকে অলক্ষ্যে অনুসরণ করছে বিষণ্ণ এক জাদুকর, লেখা এ কবিতা...

#

সন্ধে নামছে...

চারিদিকে জ্বলে উঠছে আবেশী আলো

বেজে চলেছে কাঁসর, ঘন্টা, শঙ্খ...

তুমি একদৃষ্টিতে আবারও তাকিয়ে আছো তথাগতর দিকে

তথাগতের চোখ থেকেও ঠিকরে বেরোচ্ছে এক অদ্ভুত নীল আলো

তোমার সারাশরীর ফেটে বেরোচ্ছে পূর্ণিমার কলঙ্কিত চাঁদ, লুকানো শেষ ব্রক্ষ্মাস্ত, আধপোড়া কবিতা...

তুমি বুঝতে পারছো আরো একটা পরাজয়!

শুধু বুঝতে পারছো না তোমাকে অলক্ষ্যে অনুসরণ করছি বারবার জিতে যাওয়া আমি, জাদুকরের টুকরো হয়ে যাওয়া মায়াবী আয়না...

শতানীক রায়

শতানীক রায়-এর গুচ্ছ কবিতা

 

আজব গল্পকথা

 

আজব সে দেশ: বনের দানো ঘুরছে ধারে কাছে,

মীনকুমারী গাছের ডালে দেখবে বসে আছে।

                      আলেকজান্ডার পুশকিন

 

সেই যে দেখেছি নগরী। মানুষ মানুষীর খেলা। ঘরবাড়ি। আর স্বচ্ছ নদী। আজআমিই সেই দেশ থেকে উঠে আসা শরীর। আমি কল্পনা করতে পারি না। স্বয়ং কল্পনাগাছই আমাকে কল্পনা করে। সেই যে কল্পতরু গাছটি তারই নীচে আমি বসেছি কতদিন। এভাবে যখন জেনেছি নদীতর আরও গভীর আছে। মানুষ বেঁচে থাকে আরও কোথাও। শরীরহীন। অথচ সেই নদী দেখা। গিরিখাতে না তাকিয়ে গিরিখাত জেনে যাওয়া। এও একরকম কল্পনা। কল্পনাও একরকম আমি।

 

তুমি। অন্য কোথাও থেকে আস্তে করে চলে আসতে পারো এখানে। তোমার বদলে এতদিন একটি নদী কেবল বড়ো হয়েছে। আমি ভেবেছি নদী জীবন পায় স্পর্শে। আর স্পর্শের পর স্পর্শে মানুষের ভেতর গড়ে ওঠে জীবন। কোথাও এই প্রবেশ করা। মুছে যাওয়া। ঘুমের সঙ্গে তোমার অদলবদল। অথবা তোমার বদলে সেই যে নদী এরও নাম হয়তো কল্পনা।

 

সেই যোগাযোগ দিয়ে নিপুণ করতে পারো এই জীবন? আস্তে আস্তে দৃশ্যে এসে পড়া জীবনও স্বাভাবিক মেপে নেয়। যেভাবে শিশু আর মা। আদানপ্রদানের শৃঙ্খল। গাছ থেকে বেরিয়ে যাওয়াও তো সবকিছু। তোমারই ভেতর রক্ষা করো প্রভু। যেদিন চাঁদ উঠবে আকাশে সমুদ্র বইয়ে অন্যখাতে। জলের পাশে বনস্পতি হবে। কোথাও খুব নিবিড় ছায়া হবে। অথবা এই যোগাযোগ আর নিপুণ শব্দ নিয়ে কেউই আর সেভাবে কাজ করবে না হয়তো। তুমি ভুলে যেতে পারো আমার নদী সমুদ্র গাছের শৃঙ্খলা। সব রেখে তুমি আমি এক অদ্ভুত কৌশলে যাই সূর্যের দেশে।

 

যোগাযোগ তৈরি হয়েছিল...

"কোন সে দেশের কোন সাগরের পারে

সবুজ বরণ কল্পতরু, সোনার শিকল তাতে।"

 

যেখানে যেমন ফুরিয়ে আসি। তারপর নৌকা ছাড়ে বহুদূর দুটো নদীর মিলন দেখে ফিরি। এই নদীর ইতিহাস। এই সংগম। অনেক হওয়ার বোধ। অনেক মানুষের ভেতর কীভাবে যে একত্র।

 

আর... আমাদের এখানে অনেক অনেক বছর আগে সরু একটি নদী ছিল। আমার শিশুবেলা কেটেছে তার বাঁকে বাঁকে...

 

দিন হল। সব বর্ণনা শস্য হবে। তুমি কথা বলবে এসো। শরীরের যে-সব স্থানে এখনও ছিটেফোঁটা সত্য লুকিয়ে আছে। আর এভাবেই কবিতা থেকে অনেকদূরে... যেখানে অজস্র পানকৌড়ি ঝাঁকের তির সাজিয়ে ওড়ে। সেখানে সকাল কাটে গল্পের ছলে। সেই ভূমিতে আজও 'বলাই' নামের বালকের গল্প কথিত হয়... গাছ বড়ো হয়...

আমিনুল ইসলাম

আমিনুল ইসলাম-এর গুচ্ছ কবিতা

 

অন্ধকারগুচ্ছ

 

আলোকিত ছায়ায় অন্ধ আলোর অনুকম্পন

সর্বহারা এক চিলতে বাতাসের সংমিশ্রণ

প্রসব করছে জল

এই জল সামান্য বদলে পানি হয়ে নামে চোখে

 

জানতাম অশ্রু-লবণ, দুঃখ ও কষ্টের~

 

ছায়া ও ছায়া ঘন আলোর হৃদয়ে উত্তাপ~

গভীর শূন্যে দেখা আলোর অন্তর্জলি ডানা কাটা পরীর নিঃশর্ত সৌন্দর্যে পুড়ে মুগ্ধ হয়

এমন ছায়া ও আলো বর্ণে নৌকো হারালো~

 

জলে সমূহ স্বপ্নের প্রতিরূপ ভাসান

চেতনায় ভাস্বর নভশ্চর

 

উল্কাপিণ্ড খসে পড়ছে বুকে~


নশ্বর দেহ থেকে চেতনা বিয়োগ হলে সূর্য

অন্য কোনো আকাশে ছড়িয়ে দেয় জোৎস্না

এই ত্রিফলা অন্ধকারে নিজেকে গুছিয়ে নিচ্ছে কাক

 

ভোজবাড়িতে কুকুরগুলোকে দেখে মনে হয়

আজন্ম বিপ্লব চলছে~

কেননা একটির অন্ত্যেষ্টিতে অন্যটির সুত্রপাত

 

এই মেঘের রাজ্যে জাগরিত লাটাই

সুতোয় উড়ছে খেয়াল~

দৈন্যতার আলপিনগুলো গেঁথে আছে ক্যালেণ্ডারে

পিয়ানোর কাছে কান্নার স্মরণ সভা

 

গিটারটি কাঁদতে জানে না

সন্তরণের মাত্রা ভেঙেছে বিষাদ

রজনীগন্ধার বুকে একতারার মর্মান্তিক আগুন~

 

প্রসারিত আলোয় জানালাগুলোর অবগাহন

 

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে যে নক্ষত্রের ডানা খুলে নিঃস্ব হওয়ার কথা

তার নিখোঁজ সংবাদ ছড়িয়ে যাচ্ছে দেবালয়ে~

 

অচলায়তন থেকে ছড়ানো বাঁশির সৌরভ~

ফুল ফোটার সম্ভাবনায় বিলম্বিত মৌমাছির গুঞ্জন

অন্ধকারের আঁশটে হাওয়ায় মূর্ছিতধর্ষিত হলে

 

 

চোখ থেকে খুলতে থাকে তাবিজ~

 

 

ঘোরের ভেতর নানান আলোয় উল্লসিত সানাই

তরল-প্রজাপতি, ডানাওয়ালা-ডলফিন এবং কিছু শান্ত-নরখাদক ঘুমিয়ে আছে

ঘুমের মখমল ছড়ানো উঠোনে কলাবউ নেই

 

কেউ একজন রিংমাস্টার সেজে জমিয়ে তুলেছে আসর

আর এই নির্বোধ দেশে সার্কাস চরম

জনগণ চায়লেন মনের পরিবর্তন

শৃঙ্খলিত হলো পাখি~

 

 

এবং কিছু ডানা ছাঁটা স্বপ্নের ঢেউ উথলে পড়ল লোকালয়ে~

দীপ ঘোষ

দীপ ঘোষ-এর গুচ্ছ কবিতা


রঙচঙে

 

লাল

 

ফ্যাকাশে উত্তরসূরি, প্রশ্নকর্তা বাবা কিংবা জেঠু,

তাকে প্রথম প্রশ্নটি করা হয়েছিল,"আপেলের রঙ কী?"

মিচকে হাসি, উথলে ওঠা কৈশোর জবাব দিল 'লাল'।

"কতরকমের লাল হয় জানো? "

বন্ধুর মৃতদেহ নিয়ে ছুটে যাওয়া কিশোর, রক্তের লাল দেখেছে।

মিছিলের শেষে, চা-বিস্কুট খেতে খেতে লাল চুড়িদার দেখেছে।

বয়স্ক বাবার জন্য আপেল কেনা যুবক, যেভাবে মন দিয়ে লাল দেখে,

তা পৃথিবীর যেকোনো দৃষ্টিকে হার মানাতে পারে।

পৃথিবীতে একটি ব্যবসা গড়ে উঠতে পারত।

কিংবা হয়তো চলছে।

উত্তরসূরি তবু এখনও বোঝে না

আপেলের মতো গাঢ় লাল পৃথিবীতে হয় না বিশেষ।

 

নীল

 

নামিয়ে ফেলা যায় অনায়াসে গলা দিয়ে,

তবু বিষ কন্ঠে রয়েছে।

বেঁচে থেকে প্রতিদিন সাজাচ্ছে মৃত্যুর বিলাসিতা।

মৃত্যুতে পড়ে না য্যানো নীল আকাশের কোনো ছায়া।

অথচ নিজেই সে আকাশের কাছাকাছি কিছু,

অথচ নিজেই সে পাখিদের যাতায়াত পথ।

বাড়ি থেকে দূরে যায় প্রতিদিন কেরানীর কাজে,

 ফিরে এসে রোজ ভাবে, না ফেরাও যেত।

 

 

সবুজ

 

ভাগাড়ের ধারে দেখি বেঁচে আছে কিছু লোক,

পাশেই সাজানো আছে তাঁবু,

পেটমোটা বাচ্চার হাড় গোনা যায় চাইলেই।

তবুও মরে না। বেঁচে থাকে। কেড়ে খায় যা কিছু দ্যাখে...

ওর মা ভাত রাঁধে, সবজিও

সবজি সবুজ থাকে, ভাত য্যানো ময়লা মেশানো,

লরির কারো ধোঁয়া মিশে গ্যাছে, মশলা জাতীয়।

যা দেখে বমি পায়, তা খেয়ে বেঁচে থাকে রোজ।

কুড়িয়ে আনা জামা ধীরে ধীরে খসে পড়ে যায়,

বুক দ্যাখা যায় প্রায়ই, সবুজ এক ব্লাউজের ফাঁকে।

থুতু আসে, বাঁ দিকে নর্দমা বয়।

 

 

সামনে দাঁড়িয়ে থাকে ফল নিয়ে একখানা ভ্যান,

আপেল কিনে প্রায়শই বাড়ি ফেরে প্রাচীন যুবক,

নতুন কিছুই য্যানো হচ্ছে না তার সাথে আর।

রিনি ভট্টাচার্য্য

রিনি ভট্টাচার্য্যের দুটি কবিতা


কোন এক অনার্য তীরন্দাজ

 

বলেছিল কেউ কাউকে কখনো অব্যর্থ নিশানায়

তারপর সে গেল মাছ ধরতে অন্ধ ঝিলে।

ছিপের টোপ সন্ধ্যাতারা আর মাছেরা আগুনে ঝলসানো

বদমেজাজি আধ মরা অর্ধ শব। তাদের না থাকে

রসালো দেহ। না থাকে সুস্বাদ। কটু দগ্ধ হৃদপিন্ড

 

না নড়ে। না চড়ে। ছটপটানিও থেমে যাবে এই

যাঃ! থেমেই তো গেলো। এবার শুরু অনার্যদের

ভোজনের পালা।

 

 সন্চারিনি

এক পোড়া মত্স্য

নৈমিষারন্য

 

তুমি...তুমি...তুমি

 

এ রাত বিশ্বাষঘাতক

এ রাত  আত্মহনক

এ রাত পরিব্রাজক

এ রাত বড়ই অপরিজ্ঞেয়

 

এই রাতে পূর্ণগ্রহণ শ্রেয়

এমন রাত হয় দুর্বিনেয়

 

আজের রাতে শোন অধৃষ্য

সৃষ্টি-স্থিতি-লয়ের গমক

মুদ্রিত নয়নে ছুঁয়ো না দৃশ্য

 

 

না শুয়ে জানো নৈশচরের ঠমক

জেনে রাখো এ রাতে তুমি...তুমি

...তুমি আসো পরে বিলুপ্ত পোশাক

 

এ রাতের তুমি আর তুমি নেই

আমি হয়ে গিয়েছি শুধুই  আমি

তুমি ভুলে যাও যে তুমিই তুমি

আমিও ভুলছি যে আমিই আমি