সন্দীপন দাস-এর গুচ্ছ কবিতা
হেলফায়ার
"Abandon
hope all ye who enter here"
সমুদ্রের ডেকে দাঁড়িয়ে তুমি ভাবছো তোমার কোনো
সম্ভ্রম নেই
নেই কোনো আবেগমথিত গোপন...
শুধু ক্লান্ত সুর থেকে ঝরে পড়ে সীগালেরা
তোমার আবেশী শরীর ছুঁয়ে মিলিয়ে যায় কোনো এক
স্লিপিং আইল্যান্ডে...
যেখানে অপেক্ষা করে থাকে মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব, এলাচের গন্ধমাখা গোধূলি,
অসমাপ্ত পানপাত্র কিংবা পুড়ে যাওয়া কলোজিয়াম!
তোমার মনকেমন হয়....
রোদেলা ডেকে দাঁড়িয়েই তুমি আনমনে আওড়ে ওঠো― 'চিত্ত যেথা ভয়শূন্য...!'
তবু তোমার কেমন শীত শীত করে, চশমার কাঁচে জমতে থাকে ধরা পড়ে যাবার বিন্দু বিন্দু ভয়...
#
ওদিকে সন্ধে নামে!
আরক্তিম ডেক সেজে ওঠে বাহারী আলোয়
শুরু হয়ে যায় মৃত সভ্যতার সব শবেদের পাশবিক
আনন্দোৎসব....
তুমি তলিয়ে যেতে থাকো
ক্রমে তলিয়ে যেতে থাকো সমুদ্রের অতলে
তলিয়ে যেতে যেতে দ্যাখো সমুদ্রের ডেকে দাঁড়িয়ে এক
ক্যাপ্টেন ভাবছেন,
তাঁর কোনো আকাশ নেই, নেই কোনো বশীভূত মায়াবী আয়না...
নেই কোনো বিষাদ বন্দরও!
কোরক
আর এভাবেই তুমি পার হয়ে যাচ্ছ সমস্ত কাঁটাতার, শহরের ঘুম, মৌর্য সম্রাটের অহংও...
একটা পাখি উড়ে গ্যালো তোমার শরীর ছুঁয়ে
আর রেখে গ্যালো এক অদ্ভুত আলো
যে আলো ছুঁয়ে একে একে ঘুমিয়ে পড়ছে রাহী, অশ্বমেধের ঘোড়া, শূন্যতার
অস্থিরতা...
ঘুমিয়ে পড়ছে সন্ধেমণি ফুলের আত্মহত্যা, পর্ণমোচী আঙুলের বিপণ্ণতা...
শুধু জেগে থাকছেন এক মানুষবেশী ঈশ্বর
যিনি নিশ্চিন্তে পায়চারি করে বেড়াচ্ছেন শহরের
ঘুম থেকে এত এত আলোর সাম্রাজ্য
#
তোমার গায়ের গন্ধ টুপটাপ করে ঝরে পড়ছে আমার
কবিতায়
আর এভাবেই তুমি পার হয়ে যাচ্ছ আমাকে
আমার নির্মিত সব ছল-চাতুরীও...
সৌপ্তিক
সন্ধে নামছে...
চারিদিকে জ্বলে উঠছে অভ্যাসী আলো,
ম-ম করছে ধূপ, আতরের গন্ধ;
এখনই শুরু হবে শবসাধনা
তবু তুমি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছো বুদ্ধের দিকে
পাদপদ্ম থেকে এক শান্ত আলো ঠিকরে বেরোচ্ছে
সেই আলোয় তোমার চোখদুটো আরও উজ্জ্বল হয়ে
উঠছে সোমদত্তা
তুমি বুঝতে পারছো জন্মান্তর আসন্ন!
তোমার শরীর থেকে, আইলাইনার থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে
বেরিয়ে যাচ্ছে প্রজাপ্রতি শৈশব, বশীভূত বিশল্যকরণী, কামুক
রুদ্রাক্ষ কিংবা সব বিজয়ের কাহিনী...
তবু তোমাকে অলক্ষ্যে অনুসরণ করছে বিষণ্ণ এক
জাদুকর, লেখা এ কবিতা...
#
সন্ধে নামছে...
চারিদিকে জ্বলে উঠছে আবেশী আলো
বেজে চলেছে কাঁসর, ঘন্টা, শঙ্খ...
তুমি একদৃষ্টিতে আবারও তাকিয়ে আছো তথাগতর দিকে
তথাগতের চোখ থেকেও ঠিকরে বেরোচ্ছে এক অদ্ভুত
নীল আলো
তোমার সারাশরীর ফেটে বেরোচ্ছে পূর্ণিমার
কলঙ্কিত চাঁদ, লুকানো শেষ ব্রক্ষ্মাস্ত,
আধপোড়া কবিতা...
তুমি বুঝতে পারছো আরো একটা পরাজয়!
শুধু বুঝতে পারছো না তোমাকে অলক্ষ্যে অনুসরণ
করছি বারবার জিতে যাওয়া আমি, জাদুকরের
টুকরো হয়ে যাওয়া মায়াবী আয়না...