লেখা পাঠান আমাদের chayarodpatrika@gmail.com
Showing posts with label গুচ্ছ কবিতা. Show all posts
Showing posts with label গুচ্ছ কবিতা. Show all posts

Thursday, February 17, 2022

জনক

জনক-এর গুচ্ছ কবিতা

মাছরাঙাটি ও আমি

 

রোজ একটি মাছরাঙা'কে সঙ্গে নিয়ে ঘুরি আমি

হাটে-বাজারে, মাঠে-ঘাটে, শ্মশানে-কবরে,

খেত-খামারে...

ঘুরতে ঘুরতে ক্ষুধায় ক্লান্ত হয়ে পড়লে

আমরা দু'জনেই নদীর বুকের ওপর এসে উড়তে থাকি!

মাছরাঙাটি তার রঙিন ডানায় উড়তে উড়তে

ঝুপ ক'রে ডুব দিয়ে

তুলে আনে জ্যান্ত মাছ, সঙ্গে আমার হতাশাও!

ওর দ্যাখাদেখি আমিও উড়তে থাকি, ডানা ছাড়াই; ডুব দিই...

তুলে আনি নদীর দুঃখ, কান্না ও গভীরতা!

 

আমি কখনও কখনও লজ্জিত হয়ে পড়ি,

আমার পাশে মাছরাঙাটিকে দেখে।

কখনও তার পরনে বাটি প্রিন্টের উজ্জ্বল শাড়ি,

কখনও-বা রঙিন চুড়িদারের সঙ্গে একটি ম্যাচিং ওড়না,

নানান ধরনের সাজপোশাকে সে আমাকে পাগল করে তোলে!

আমিও এক বোহেমিয়ান ছুটে বেড়াই তার পিছু পিছু...

ভরসা করি, আলাপ জমাই

শুরু হয় আমাদের অসামাজিক আলাপ;

আলোচনায় উঠে আসে ব্যর্থতার কথা, বিচ্ছেদের কথা, অবসাদের কথা।

উঠে আসে নদীর কথা, নদীর ভেতরে থাকা মাছের কথা...

সে জানায় কীভাবে রঙিন পালকের জীবনও তুচ্ছ হতে পারে!

শিখিয়ে দেয় বেঁচে থাকার রসদ।

কীভাবে আকাশ থেকে নীচে পড়ার পরেও ডানার ঝাঁপটায় আবার আকাশে ওঠা যায়!

 

এইভাবে আলোচনা চলতেই থাকে

আমি তাকে মানুষের প্রেম ও বিরহের গল্প শোনাই।

ও‌ হাসতে হাসতে উড়তে থাকে,

আর

বেড়ে যায় আমার পৃথিবী সম্পর্কে নানা অজানা কৌতূহল।

আমি যতবার তাকে মানুষের গল্প শোনাই

ততবার সে একটি করে মাছ তু'লে আনে নদীর ভেতর থেকে...

কখনও কখনও মাছরাঙা'টি

নদীর গর্ভ থেকে মাছের বদলে মুখে ক'রে তুলে আনে তোমাকে ঘিরে থাকা আমার জন্মগত কৌতূহল!

 


কিছুটা লেখা, অনেকটাই প্রেম

 

১. 

আমাকে কখনও পাবে না জেনেও

একটি মেয়ে

রোজ নিয়ম ক'রে আসে

আমার

ঘুমে-ঘোরে, স্বপ্নে-বিভোরে, মোহে-মায়ায়

 

 

মুগ্ধতায়...

 

যার পরাবাস্তব আছে, বাস্তব নেই।

 

২.

গুচ্ছের ভাবনা আসে মাথায়। কিছুই ভাল লাগে না।ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আসি তাদের কখনও নদী-পুকুর-জলা-ডোবায়। তবু তারা ফিরে ফিরে আসে। যেভাবে বৃষ্টি আসে। ছদ্মবেশে। তুলে নিই মাথায় আবার। সঙ্গে তোমাকেও,

 

বৃষ্টিবিন্দুর মতো...

 

৩.

আমি একটি মেয়েকে ভালবাসি।

 

নাম, বা গোত্রকিছুই নেই তাঁর।

এমনকি নেই মা-বাবাও।

থাকার মধ্যে আছে কেবল ডাকনামটুকুই

 

আক্ষরিক।

 

এসব জানার পর

সবাই আজকাল আমাকে প্রেমিক কম, পাগল ভাবে বেশি।

 

৪. 

এই যে আমি এতকিছু লিখি, তোমাকে ভেবে

 

জানি, এসবের ভেতর তেমন কিছুই নেই।

যা আছে,

তা ভুল আর ভুল

ছন্দে

অলঙ্কারে

বানানে

কাব্যরসে...

 

তবু,

এই যে না-থাকা, তারও ভেতর যেটুকু আছে :

 

নির্ভুল ও চিরকালীন অন্তঃসারশূন্যহীনতায়

 

তুমি

তুমি

আর

 

তুমি,

 

প্রথম প্রেমপত্রটিতে ছিলে যেমন...

 

 

৫. 

ব্যথা হয় তোমার।

যন্ত্রণা হয়

আমাকে ধারণ করতে, শরীরে।

 

প্রসব ব্যথা নয়, তবু জানি

 

তুমিও একদিন

ব্যথায়

যন্ত্রণায়

মায়ের মতোই

ছটফট করতে করতে বের করে দেবে আমাকে ঠিকই,

 

হৃৎপিণ্ড থেকে...

Tuesday, January 25, 2022

অতনু টিকাইৎ

অতনু টিকাইৎ-এর গুচ্ছ কবিতা

১.

আড়াল

অনেক ভেবে দেখেছি, আমরা প্রত্যেকে একটি করে শুয়োরের বাচ্চা পুষি, এবং আমাদের জীবনের একটা বড় সময়, সেই শুয়োরের বাচ্চাটিকে আড়াল করতে করতে খরচ হয়ে যায়...

 

২.

রাস্তা

 

যে মানুষগুলো শহরে কাজ করে আর বাড়ি ফেরার সময় কোথাও দাঁড়িয়ে কী যেন ভাবে আনমনে, দেখে বোঝা যায় তারা কেউ অমলকান্তি নয়। রোদ্দুর হতে চায়নি কোনোদিন। তারা অনেকটা জ্বলতে থাকা মোমের মতো...যারা নিজেকে ফুরিয়ে কেবল রাস্তা বানিয়ে চলে...

 

৩.

ইশারা

 

কথায় কিছু বলো না। ইশারায় বলো

 

হলফ করে বলতে পারি, মানুষ

ভালোবাসতে শিখেছিল বলেই

ইশারার কথা জেনেছিল।

 

কথায় যা কিছু বলা সহজ। ইশারায় বলো

সুবর্ণকান্তি উত্থাসনী

সুবর্ণকান্তি উত্থাসনী’র গুচ্ছ কবিতা

 

(১)

 

দ্বিতীয় সূর্য

 

একটি নারী ও একটি পুরুষ চলেছে গাঢ় নীল ব্রহ্মাণ্ডের রথে চড়ে

একটি ঘুমন্ত দেউড়ির গা ঘেঁষে ঘাস খায় একটি আলিসান ঘোড়া

 

নারীর বেগনি খোঁপার মতো ঘোড়ার ক্ষুর পুরুষের লাল দাঁড়ির মতো লোম

আকাশ থেকে ঝরে পড়ছে শাদা বরফ কুচির মতো ইষৎ কবোষ্ণ নক্ষত্র

 

ঝরে পড়ার মধ্যে আছে রৌপ্য তৃষ্ণা

পতনোন্মুখ গোত্রের ঠিক আগে অবধি

আকর্ণ বিস্তৃত মফস্বলের পথ মানুষ ভালোবসেছে

 

শোক'কে নাল পরিয়ে রেস্ জেতার গেঁজুড়ে স্বপ্ন দ্যাখছে কজন

দৃশ্যত বদলের স্বপ্নে ভিটেমাটি কেড়ে গ্যাছে রক্তপূত সত্তরের দশক

 

নারী ও পুরুষটি যে কোথায় হারিয়ে গ্যালো

তাড়ি খেতে খেতে সর্বশ্রান্ত রেসুড়ে

কখন যে মৃত্যুর কোলে ঢলে গ্যালো

আপেল খেতে খেতে তুমি জানতে পারলে কি

 

আধো প্রকৃতি আধো ধর্মে নক্ষত্রের যে রোদ

মোরামে বন্দী হয়ে শূদ্রের উদ্ভাসিত কবচ

 

(২)

 

স্থবিরতা

 

মৃত্যু এসে ঘিরেছে আগে

তারপর নৈঃশব্দ এসেছে ধীরে

                             সলজ্জ অবগুণ্ঠনে

তাকে বলেছি তিষ্ঠ

দীর্ঘ হিসাবনিকাশ বাকি চরাচরের

 

জিহ্বার খেদ পেষিত চাল

সংক্রান্তির স্নান পিণ্ডের খুদকুঁড়ো

ভেসে যাক সুবর্ণরেখার স্রোতে

দর

      ঘৃণা

             শাপে

অবশেষে কিউপিডের স্পর্শে

শীলভদ্র হয়ে মিশে যাবো

                          তার স্থাপত‍্যে

 

(৩)

আক্ষিণ

 

ঘুমের ভেতরে স্বপ্ন নয় কাঁকুড়গাছি স্টেশনের

মালগাড়ির গোঙানি করে চলে প্রদক্ষিণ

 

কিংবা টিক্ টিক্ সতত সঞ্চারিত ঘড়ির কাঁটা

ক্রমশ ধীর বিলম্বিত লয়ে গড়িয়ে চলে

 

সেদ্ধ ধানের নিকোনো উনুন ধান্যলক্ষ্মীর অর্চনা

সুয়োদুয়ো ব্রত চুঙ্গাপিঠা হয়ে আসে ক্ষীণ

 

সিলকাটাইওয়ালা বোঝে না এই দৃশ্যের ভেতর

কতসংখ্যক স্মৃতি জন্ম নেয় কুঁয়োজলে

 

এরইমধ্যে আমার মা তারই সুদূর মেয়েজন্ম

                                      আসে ফেলে

পলাশ দাস

পলাশ দাস-এর গুচ্ছ কবিতা

 

জংশন স্টেশন

 

জংশন স্টেশনে দাঁড়িয়ে দেখি প্রবল মায়া স্রোত

টান টান ঢেউ তুলছে সাগরের ফেনিল জল

ভেসে যাই

 

এই ভেবে দু'পা বাড়াতেই

তীব্র মাঘের শীত গায়ে লাগে

শীত বস্ত্রে জড়ানো এ-শরীর

কোথাও নিভে আসছে মনে হয়

 

ভেসে যাই

কথাটা এখন কেমন দূর পরলোকগামী

তবুও দু'চোখে দারুচিনি দ্বীপের স্বপ্ন খেলা করে

জংশন স্টেশনে দাঁড়িয়ে ভিজে যাই তীব্র বিপ্রলম্ভ স্রোতে

 

কুয়াশা

 

কোনো কথা ফেলে গেছে পরশুর গাছপালা

তুমি সারা দুপুর জুড়ে

আজকের সকাল জুড়ে

ভেবে ভেবে মাদুর বুনলে

বিকেল গড়াতেই 

কয়েকটা সাদা দাগছোপ

মাদুরের গা ধরে ঝুলে আছে

রাত বড়ো হলে

কুয়াশা ঢেকে নেয় ঘাসের মাথা

 

ভিড়

 

মাঝ রাস্তায়  জামা খুলে হেঁটে যায় উদাসীন যুবক

ফুটপাথ জুড়ে রাতের ছেঁড়া ফাটা আঁচলার সুতো

দেখতে দেখতে তারই পিছন পিছনে

চলে যাচ্ছে বৌবাজার কলেজ স্ট্রিট  হাতিহাগান

এলিয়ট পার্কের সামনের জমায়েত

শহীদ মিনারের কাছে জিরিয়ে নিতে থাকা বাস

নিউমার্কেটের ফেরিওয়ালা

তুমি ভিড়ে গিয়ে জনসমষ্টি হয়ে উঠলে

 

তোমরা সবাই দেখলে

এক উদাসীন যুবক জামা খুলে হেঁটে চলেছে

সব কিছু পিছনে ফেলে

শুধু দেখলে না এই ফুটপাথ আর 

যেখানে পড়ে আছে আঁচলার সুতো, দ্বিধাবিভক্ত রাতের আদর

নম্রতা সাঁতরা

নম্রতা সাঁতরার গুচ্ছ কবিতা

 

১. প্রেম-প্রারম্ভ

 

বৃষ্টি মুখর একটি দুপুর। অন্ধকার ঘরের বিছানায় উজ্জ্বল রঙের চাদর পাতা। আমি শুয়ে পড়ি। চাই একটি প্রত্যাশিত ঘুম। এই দূরদর্শী মন যেন কেবল জেগেই স্বপ্ন দেখেএই দুরূহ শাসন। সুতরাং এক চোখ খুলেমানুষের ঘুম। এখানেই বিষয়ী চোখে কোনো বিস্মৃত একপাক্ষিক প্রেমের নায়কের বুকে ঘুম ভাঙে। যতটা জল লাগে আমাকে ডোবাতে চেয়ে সে নেয় আকাশের কাছে। এখানে সম্বিত ফেরাতে ইচ্ছে করে না।

 

২.  ঘনায়মান

 

এবার জমাট মেঘের মতো কথা।

অতীতের খোঁড়াখুঁড়ির পর, আগাছারা জন্মায় স্বাভাবিক উদ্ভিদের মতো তৈরি করে বন।

বেশ কিছুদিনএকই সহবাসে শিকার ও শিকারি। হঠাৎ অমিল শিখিয়েছে

সন্তর্পণে চললে দুজন দুজনকে এড়াতে পারে।

 

৩. বিচ্ছেদ-ভাবনা

 

অপ্রত্যাশিত প্রেমের নিবেদন মনের মধ্যে যখন আনন্দ আনেহেরে যায় আমার বর্তমান প্রেমিক। তার আদরের একফোঁটাও মনে করাতে পারে না আমায়। এত সহজ ভেসে যাওয়া? এই সময় হিসেব করে নেওয়া যায় বিচ্ছেদ। এই মুহূর্ত দোলাচলের। আমি ছুঁড়ে মারি তাকে একটি কবিতা ক'লাইন ছন্দের গালি।

 

 ৪. এবং পুনরাবৃত্তি

 

কিছু নির্লজ্জতা আকাশের কাছে শেখা। যেদিন পরিষ্কার সকাল হয় কিন্তু বেলা হলে বৃষ্টি পড়ে, সেই নির্লজ্জতা।

 শাসনহীন ভাবনার পুনরাবৃত্তি

 হাজার বার প্রেমের নামে পৌঁছে যাই সেই জাহ্নবী তীর

 এখানে আমি ভেবেছিলাম আমার সকল সম্ভাবনারা আমার সন্তানের পিতা।

দেবলীনা চক্রবর্তী

দেবলীনা চক্রবর্তীর গুচ্ছ কবিতা

 

শুধু তোমারই জন্য

 

প্রপঞ্চ কাটিয়ে উঠে

দেখা দিলো একফালি ভোর

বহুদিন বাদে এই আলোতে তোমায় দ্যাখা,

 

চারদিকে ছড়িয়ে থাকা উপাদান

খুঁজে নিচ্ছে চোখের থৈ থৈ

 

আমিবিসমিল্লার সানাইয়ের মতো

রেখাবি বাদি স্বর আঁকড়ে ধরি, আর

মর্মমূল থেকে ঝরে পড়া সমস্ত

সম্বাদি স্বর ভেঙে ফেলি...

অলীক ভ্রম, ব্যর্থ প্রেম, মিথ্যে আশ্বাস

অন্ধ বিশ্বাসের মতো!

 

সবটুকু ছিঁড়ে ফেলতে চাই

যেটুকু আনত ঠুনকো ভাবাবেগ

 

কিন্তু কি সহজে ভেঙে পড়ে

বিরহী রোদবেলা

আমার কাঁচ দেওয়াল ছুঁয়ে জ্যামিতিক নকশা...

 

বেলা পড়ে আসে

তলানি আশ্বাসটুকু নিয়ে কেঁপে ওঠে

পোয়াতী পায়রা অনিত্য সুখে!

 

তারপর...

আমার সিঁদুর-মধুমন্তিবেলা

দিগন্ত সূর্যকে শুনিয়ে যায় ব্যক্তিগত সানাইয়ের ধুন

 

যা তোমাকেও ছুঁয়ে যাবেই একদিন

 

স্রোতস্বিনী

 

এই যে পড়ন্ত বেলার চামর দুলিয়ে অকস্মাৎ

 ছুঁয়ে যাও নদী

 তিরতিরে ঢেউ খেলে যায় স্বচ্ছতোয়ার আ-বুক জুড়ে

 ক্রমশ গাঢ় রং ধরে আবেগী বিস্তৃতিআর

 

পাঞ্চজন্য বেজে ওঠে আন্তর স্রোতে

যে নিনাদ শুনতে পায় কেবলই নীল চোখের পাখিটি

 

এভাবে ছুঁয়ে যাওয়া বা বেবাক উদাসীনতা

সবটাই যেন একগুচ্ছ প্রণয়সম্ভার।

 

প্রিয় সুজনভাজনেসু

 

ব্যক্তিগত সমস্ত তর্যার আবেগপ্রবতা জলাঞ্জলি দিয়ে

মুখোমুখি হই নিয়ন্ত্রিত ইচ্ছা বেসাতের

 

মানভঞ্জনের আদলে এসে দাঁড়ায় প্রিয় সুজনভাজনেসু

 

এলাচ গুঁড়োর অ্যারোমাটিক সৌহার্দ্যে খুলে যেতে থাকে দিনমানের ঋনাত্মক ইচ্ছেগুলো,

যতিচিহ্ন ছাড়াই দৌড়ে বেড়ায় ইমোজির পুঁটুলিতে স্ক্রীন টু স্ক্রীন

সদাহাস্য মুখ বা ভালোবাসার স্ফীত ঐশ্বর্য্য নিয়ে।

 

তখন সব ভুলে অভিসারি সেফটিপিনের জিভ চিরে দি আর

 

রাষ্ট্রের ইচ্ছাধীন কোনো এক জ্যোতিষ্কের উজালায়

আমি সর্বাঙ্গে স্নাত হই ~

 

তখনই

পৃথিবীর যোনি বেয়ে গড়িয়ে আসতে দেখি ভেজা অন্ধকার!

সৌমিতা চট্টরাজ

সৌমিতা চট্টরাজ-এর গুচ্ছ কবিতা

 

অন্ধকারের লেখা গুচ্ছ

 

(১)

আলোয় পিঠ পেতে রাত্রিকে ভালবাসে যারা, ইমানে তাদের আঙুল তুলি!

এতো বড় বেইমান আমি নই।

অথচ মিলিয়ে নিও

ওই পিঠ'টা বাঁচাতে গিয়েই কোনো না কোনো একদিন, কোনো না কোনো একবার

তুমি, আমি, আমরা বেইমানী করবোই।

আসলে কি হয় জানো

আলোর জন্ম দিতে প্রতিপল পুড়ে যান যে পরমপিতা

স্বীকার করি না তাকে!

সে'কথা বলতে পারি, তেমনও তো নাস্তিক আমি নই।

জানি, জানি, খুউব জানি, ইমান নেই আমার

তাই বলে, বড়ো বেশী বেইমানও আমি নই।

 

(২)

তেরো দিনে গলে গেছে সবটুকু লাল

বাতিদানে থকথকে মোম, একে একে মরে আসা সিমপ্যাথি কল

যতদূর দূরত্ব গড়ায় কাছে চাই প্রথাগত মাঠ, আউসের স্তুপ, কালো কালো নষ্ট ফসল।

তেরো দিনে থৈ থৈ বর্ষা নামে

বিষ ভয়ে ছিঁড়ে ফেলি আদুরে আস্তিন,

পোয়াতির নাভী ঠেলে ভাত উঠে আসে, উঠে আসে লেবু মাখা ক্ষীর

ভাঙা জলে টগবগে আতপের চাল, ফিরোজা সকাল

চেনা চেনা সেই তেরো দিন...

টকটকে সিঁথি আর আলতা রেখে;

আল ধরে হেঁটে যায় বিধবা আশ্বিন।

 

(৩)

তড়িঘড়ি খেতে আয় মন

বেলা হোলো, ক্ষিদে বোঝা শেখ

দলা দলা শীতঘুমে দু'হাতা রোদ মেখে দিই

শেষ পাতে বেড়ে দেবো বাড়ন্ত জীবন,

বুঝলি রে মন

পথেঘাটে পাখি খোঁজে যে বুড়ো ব্যাধ

তাকেও তো খেতে ডেকেছি।

আশরাফি খুঁটে খুঁটে আমি ক্লান্ত সিরাজ

ঘুমোবো না, শুতে যাবো আজ

ক্ষিদের বিছানা পেতেছি।