জয়শ্রী ঘোষের কবিতা
শ্রাবণ
১
কপালে দিলাম লাল টিপ
ছোটবেলায় মা যখন চাঁদ দেখিয়ে বলত
"আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা"
সেইদিন কি জানতাম চাঁদে কলঙ্ক!
প্রতিটি পূর্ণিমার রাতে মায়ের কথা মনে পড়ে
পূর্ণিমারাতে কলঙ্কিনী হওয়ার জন্য
ছটফট করি
কলঙ্কিত চাঁদের মতোই ঝলমল করতে ইচ্ছে করে
পূর্ণিমা রাতগুলিতে
চাঁদের মতো জ্বলজ্বল করে আমার মায়ের মুখ
ও চাঁদ
২
আমার কবিতার বই উৎসর্গ করেছিলাম
আমার ভালোবাসার মানুষগুলোকে
'চাঁদ তোকে'
আমি ভাবতাম আমি শিল্পী হবো
চাঁদের গায়ে তুলি দেব নিজেই
সৃষ্টির আসা যাওয়া ওখান থেকেই শুরু হবে
আমার প্রেমের মানুষটিকে আমি চাঁদ বলি
আমার পেটেরটি, তাকেও চাঁদ বলেই ডাকি
আমার শৈশব রাষ্ট্রকাঠামো ভেঙে ফেলতে
চেয়েছিলাম বহুবার
তবু প্রেরণা
তো প্রেরণাই
৩
মৃত্যুর চেয়ে বড় সত্যি নেই
হৃৎপিন্ড স্তব্ধ হলেই নদীতে কলকল জল বয়
বয়ে যাওয়া জলে শুধু জড়শব্দ
আমি নদীর পারে বসে থাকি
মায়ের কথা লিখি
কিন্তু সব শব্দ বোঝা অত সহজ তো নয়
প্রবেশ করি অরণ্যের পথে
গাছ আর গাছ রাস্তা আঁকাবাঁকা
গাছের সঙ্গে নদীর একটা সম্পর্ক আছে
যার কখনো শেষ নেই
৪
আমাদের গন্তব্য আরো দীর্ঘ হোক
যখন রাতের পর রাত জাগি, নিশাচর জীবন কাটাই, ভরসা শুধু কতকগুলি স্লিপিংপিল,
ঘুম আসে না! সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে, শুনতে পাই রাস্তায় কুকুরের দলের মারামারি, বাচ্চাকুকুরের আর্তনাদ আমাকে বিদ্ধ করে আমাকে রক্তাক্ত করে।
আমাদের বাড়ির পাশে যে বারটা আছে! মধ্যরাতে শুনতে পাই অনেক গুলি মহিলা, পুরুষ কণ্ঠ। মনে হয় যেন তাদের মধ্যে চলছে হাতাহাতি, ধস্তাধস্তি আর তারপরেই মহিলার হেরে যাওয়া কান্না। শব্দ পাই
পুলিশের গাড়ির, ছ-তলার ঘরে আমি চুপ থাকি
৫
আমি
সন্তানটিকে জড়িয়ে শুয়ে থাকি, সেও মাঝেমাঝেই
ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই বলে মা আমাকে ধরো, আমি আরো চেপে ধরি।
অন্ধকার রাত্রি কখন যে আলোকিত হয়? মা চুল বেঁধে
দিচ্ছে,
মায়ের সাথে কত গল্প হাসাহাসি, মায়ের গোছানো সংসার, দরজা জানালা মুছতে ব্যস্ত। আমি ঘুমোচ্ছি, মায়ের শাঁখের আওয়াজ ঘুম ভেঙে যায় কিন্তু ঘুম ছাড়ে না। আমি ঘুমোই, মা পাশে বসে সেলাই করছে। এ ঘর ও ঘর ছোটাছুটি পুরনো গল্পের
খাতা খুলে যায়। মায়ের রান্নার গন্ধ, আমার মেয়ে আমার মায়ের দখলে। রাত্রিটা ক্রমশ ছোট হয়ে যায়। আকাশে আলো ফুটেছে, স্বপ্ন! শুধু কান্না পায়
৬
দুই ছেলে
থাকা সত্তেও ঈশ্বরের কাছে মা চেয়ে ছিল পুত্রসন্তান আর বাবা কন্যা। এই সব গল্প
মায়ের কাছেই শোনা। কারণ মেয়েদের শ্বশুরবাড়ি পাঠাতে হয়, তা বড় কষ্টের। অনেকটা পথ চলার পর আজ আমি এই মুহূর্তে এক
পথশিশু! ভীষণ কষ্ট হচ্ছে কান্না পাচ্ছে, আবার ছোট্টটি হতে ইচ্ছে করছে, তোমার মুখ খুব মনে
পড়ছে,
একবার ডাকবে আমায়?
৭
তুমি এখন বহু দূরে
প্রতিটি সুন্দর দিন দুষ্কৃতিরা কেড়ে নিয়েছে
যে নির্জন সন্ধেবেলায় তুমি প্রকৃতির বাতাস উপভোগ
করতে প্রকৃতপক্ষে তা বিষাক্ত
ভোরের বেলা তোমরা হেঁটে ফিরে
ফুল তুলতে সেই গাছেদের গায়ে ঘৃণা
মাঝেমাঝে ভাবি তোমরা নেই, বেঁচে গেছ
এই পৃথিবীতে
আকর্ষণ ছাড়া আর কিছুই নেই
৮
এমন একটা সময়ের মধ্যে আমরা হাঁটছি
হত্যা হচ্ছে প্রতিটি মুহূর্ত প্রতিটি দিন, রাত্রি
পথেঘাটে মানুষ নেই
হাওয়ায় উড়ছে ছেঁড়া পলিথিন
পলিথিনে পলিথিনে দেশটা শেষ করে দিচ্ছে
ছিটকে যাচ্ছে মানুষের রান্নাঘর
অসহায়
কুকুরগুলো দাঁড়িয়ে ভিজছে
বুঝতে পারছি না
কীভাবে শুরু করব
৯
মস্তিষ্কের ভিতরে ঢুকে দেখি শূন্যতা
আমার সমস্ত ইচ্ছা তোমার বাম অলিন্দে বাঁধা
বাঁকা কথার মেয়েটা এখন আকাশ
পাখিরা আকাশ মেখে গান গায়
তোমার গ্রিন টিতে এনে দেব এক টুকরো উষ্ণতা
যে কথাগুলোয় তুমি ব্যথা পাও
তা হচ্ছে
ভালবাসা
১০
স্পষ্ট হচ্ছে অশ্বের কাতর হ্রেষা
পবিত্র ওমে রাত পাখিটা এখনো ডাকছে
যে দীঘিতে আকাশ দেখো
তুমি নাড়া দাও আমি ঝরি
এ শ্রাবণ যেন আমারই ব্যথা
'বাদল-জল পড়িছে ঝরি ঝরি'
লেখাগুলি বেশ ভালো লাগলো
ReplyDeleteভাই ভালোবাসা নিও❤
Deleteভাই ভালোবাসা নিও❤
Deleteসবচেয়ে ভাল কবিতা পড়লাম এখানে এসে দিদি
ReplyDeleteভাই ভালোবাসা নিস❤
Deleteখুব ভালো লাগল লেখাগুলি।
ReplyDeleteভালোবাসা ❤
DeleteKabitaguli porlam. Khub je ekta pariksha niriksha achhe ta noy kintu Jayashree r lekhar modhye aschorjo ek sahaj madakata achhe. Amar mone hoy o je kono bisoyke kabita kore tulte pare, ja asole moteo sahaj noy. Amar khub valo legechhe. Jayashree r aaro kabita porte chai.
ReplyDelete.
দাদা প্রনাম ও ভালোবাসা নিও
Deleteদাদা প্রনাম আর ভালোবাসা নিও
Delete