লেখা পাঠান আমাদের chayarodpatrika@gmail.com

Thursday, February 17, 2022

সৌমিতা চট্টরাজ

সৌমিতা চট্টরাজ-এর দীর্ঘ কবিতা


এবং নন্দিনী    

 

 নন্দিনী, তুই কি ভীষণ ব্যস্ত এখন!

পারবি দিতে সময় আমায় মিনিট দশেক?

পাইনা তোকে আগের মতন যখনতখন,

জানাই আছে প্রায়োরিটি তোর বাড়ছে অনেক! 

 

চুপ কেনো রে! সেই সেদিনের মান অভিমান!

ভাবলি বোধহয় জীইনে চুমুক দিচ্ছি আমি

ফক্কা পকেট; ছক্কা পুটের করছি না ভাণ

অনন্ত দিগন্তে প্রেমিক অস্তগামী।

 

শুনছি তোর হবু হাবি'র খাসা পসার...

সেটেলড পরে করবি তোরা সুদূর জাভায়

শীত পেরোলেও বসন্তটা তাই কি অসাড়?

কাঁটার ডাঁটে বিঁধছে পলাশ পায়ের পাতায়!

 

স্বভাবটা তুই রাখিস বজায় তাও পুরনো,

একলা কেবিন জটলা বিহীন পশলা ধোঁয়া...

নীরব শ্রোতার ঠোঁটের তিলে তেজ গোছানো,

রক্তে ছোটায় টগবগিয়ে শুঁয়োর রোঁয়া।

 

গোত্তা খাওয়া মিডিল ক্লাসের স্ট্যাটাস ঘুড়ি,

গড়েরমাঠে গড়গড়ি খায়, আকাশ খোঁজে;

টেস্টোস্টেরন ইস্ট্রোজেনের চাঁদের বুড়ি

পিটুইটারির কারসাজি কি মগজ বোঝে?

 

শিরায় শিরায় কেমিক্যালের ফিসফিসানি,

জারক জারণ অন্বেষণের অপার আলো

বৃত্ত ব্যসে বিত্ত ভেদের কচকচানি,

শর্তে বাঁধা স্বত্তা গেলে কাজল কালো।

 

নন্দিনী, তুই ভাঙবি কবে নীরবতা?

ট্রেনেরচাকা অপেক্ষাতে তোর স্টেশনে

রূপকথাদের স্টপেজে তোর চুপকথারা

স্পর্শকাতর আতর ছোঁয়ায় সঙ্গপনে!

 

জোটের হাওয়া জোড় খুলেছে জ্যোৎস্না জুড়ে,

পানের পিকে পাঁচিল আঁকে প্রেমের ছবি

মনেরমানুষ নাই বা হলি কলজে খুঁড়ে

দে, কথা দে মন খারাপের বন্ধু হবি।

 

আসতে পারিস ফের ফিরে তুই দরজা খোলা,

তাপ্পি মারা রেশমি কাঁথায় বাজবে ভোকাল...

নিকোটিনের নোনতা খাঁকে নিথর গলা,

অ্যাশট্রেতে তোর গোঁয়ারতুমির বনগাঁ লোকাল।

 

ভালো নাকি মন্দ বাসি প্রশ্ন জটিল,

ধ্রুব নাকি মীরাজ ভ্রমে নিচ্ছি পিছু?

সিলিং ঘিরে ঝুলের হাসি, স্বপ্ন শিথিল,

নিমেষের ভান্ডারে তুই বিশেষ কিছু।

 

ফুটপাতিয়া সস্তা রোলেক্স মেয়াদ শেখায়,

দৃষ্টিটা আজ থমকে দিলো গালের ব্রণ

নিটোল পেশী ঢাকবে যেদিন আয়ুরেখায়

স্পাইশজেটে পাশাপাশি তুমহাম দোনো।

 

স্বীকৃতিতেই নিষ্কৃতি খোঁজ পাগলীরে তুই,

মুহুর্মুহু ট্রাফিক জ্যামে ডবোল ডেকার;

মোটা চালে কাঁকর ডালে, মেঝেতে শুই

বেকারভাতার আদর্শ এক কেয়ারটেকার।

 

নন্দিনী, তোর লিপ ফিনিশের অভিসারে

নেলপলিশের জ্যান্ত ফসিল, আঁশটে কেলাস

আগুন মেশা ফাগুন নেশা মাটির ভাঁড়ে

ফি-বছরের সঙ্গী পাতি বাংলা গেলাস।

আমিনুল ইসলাম

আমিনুল ইসলাম-এর দুটি কবিতা

 

প্রেম সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন

 

দুই পা পিছিয়ে গেলে

তিন পা এগিয়ে আসে

 

যাওয়া + আসা = পর্দার আড়ালে

বিক্ষিপ্ত দর্শন

 

জড় বস্তুর ভিতরে স্পন্দন

এখানে তুমি নতুন

অন্যদিকে পোড়া ইঁট

 

আলোর বিপরীত

স্ফটিক প্রেমের কাপে মন

সাদা বরফের কণা

 

আগুন ও প্রেম


কাচের মনে দাগ লেগেছে

চাঁদের গায়ে মায়া~

অন্ধকারে হারিয়ে নিজেই

খুজছি শুধু ছায়া ~

 

গভীর বনাঞ্চল ~ ছায়াঘন

আলো মেখে জোনাকিরা মাতোয়ারা

বিষণ্ণ কাচের ঘরে

পারদের প্রেমে সেজেছে আয়না

সময়ের অন্তরাল~  জানি এ অভিনয়

 

অসংখ্য চোখের আলপিনে ফুটছে গোলাপ

নদীর বুকে ভাসছে প্রেম,  ডুবছে দেবীর কায়া

শীলা বিশ্বাস

শীলা বিশ্বাস-এর সিরিজ কবিতা


গহীন লতাবিতান

 

১.

মৃদু করতালে সকাল বেজে গেল নিরুপম

সমর্পণের ভঙ্গিমায় হেঁটে যাচ্ছি অতীতের দিকে

রস ও রূপের দিকে গলে পড়ছি নাথ

যজ্ঞ দৃশ্যের আগুন ঝরছে পথের ধুলায়

জল হব তৃষ্ণার, অবহেলার কাক

ভিক্ষাপাত্রের তণ্ডুল হব, ঘোর ক্ষুৎকাতর

দেওয়ালে দরজা ফুটে উঠুক চৈতন্যভুক

এইতো মানচিত্রের গহীন লতাবিতান

ঈশ্বরের খাস তালুক

 

২.

জানি এ শ্রীখোল সময়, সমাগত উৎসব

তৃণাদপি সুনীচেন যে আমি খুঁজে নিই তোমার আকাশ

তসবীতে মিষ্টিসিজম খুঁজি নাকন্ঠীতে কোনো ব্যাকুল নেই

ভিতরের পীড় পরাই জানেজানে হরি ওঁ তৎ সৎ

একবার হৃৎকমলে ঘুঙুর বাজিয়ে দে

দেগে দে একটা জোছনার কলরব

পান করি, স্নান করি চৈতন্যের দুধ সরোবর,

ওগো অক্ষরের আশাবরী

ঈশ্বরের বাহানায় তোমাকেই জানি

 

 ৩.

 

বিন্দুবৎ রেখেছি চোখে

গর্ভগৃহে প্রতিষ্ঠা করেছি তোমার বিগ্রহ

ধ্যানযোগে আলোর চলাচল জেনেছি

ছলাৎ লেগে বাতি নিভে গেছে

সলতে পোড়া গন্ধ

জানি না ফুরিয়ে আসা আয়ু কার নাম লেখে

তুমিও গোপনে করতল দেখালে

মোনাজাতে ভারী হয়ে আসে

শীত সন্ধ্যার গান

অর্ঘ্য দীপ ঘোষ

অর্ঘ্য দীপ ঘোষ-এর কবিতা

 

আলো

 

যে  প্রেম হল না, তার চেয়ে বড় মায়া

আর কিছু নেই—

 

এমনই এক অন্তর্লীন বোধ

আমাকে ক্রমশ সহজ করে দ্যায়

 

শেষবারের মতো, আমি দেখতে শিখি আলো।

 

ক্রন্দসী পেরিয়ে যাচ্ছে দৃষ্টিপথ

অন্য অন্য মেয়েরা আজও

ভালোবাসছে

অন্য অন্য ছেলেদের

 

প্রার্থনা করি,

 

এই দৃশ্য যেন স্থায়ী হয়

 

                     আরও কিছুক্ষণ...

জনক

জনক-এর গুচ্ছ কবিতা

মাছরাঙাটি ও আমি

 

রোজ একটি মাছরাঙা'কে সঙ্গে নিয়ে ঘুরি আমি

হাটে-বাজারে, মাঠে-ঘাটে, শ্মশানে-কবরে,

খেত-খামারে...

ঘুরতে ঘুরতে ক্ষুধায় ক্লান্ত হয়ে পড়লে

আমরা দু'জনেই নদীর বুকের ওপর এসে উড়তে থাকি!

মাছরাঙাটি তার রঙিন ডানায় উড়তে উড়তে

ঝুপ ক'রে ডুব দিয়ে

তুলে আনে জ্যান্ত মাছ, সঙ্গে আমার হতাশাও!

ওর দ্যাখাদেখি আমিও উড়তে থাকি, ডানা ছাড়াই; ডুব দিই...

তুলে আনি নদীর দুঃখ, কান্না ও গভীরতা!

 

আমি কখনও কখনও লজ্জিত হয়ে পড়ি,

আমার পাশে মাছরাঙাটিকে দেখে।

কখনও তার পরনে বাটি প্রিন্টের উজ্জ্বল শাড়ি,

কখনও-বা রঙিন চুড়িদারের সঙ্গে একটি ম্যাচিং ওড়না,

নানান ধরনের সাজপোশাকে সে আমাকে পাগল করে তোলে!

আমিও এক বোহেমিয়ান ছুটে বেড়াই তার পিছু পিছু...

ভরসা করি, আলাপ জমাই

শুরু হয় আমাদের অসামাজিক আলাপ;

আলোচনায় উঠে আসে ব্যর্থতার কথা, বিচ্ছেদের কথা, অবসাদের কথা।

উঠে আসে নদীর কথা, নদীর ভেতরে থাকা মাছের কথা...

সে জানায় কীভাবে রঙিন পালকের জীবনও তুচ্ছ হতে পারে!

শিখিয়ে দেয় বেঁচে থাকার রসদ।

কীভাবে আকাশ থেকে নীচে পড়ার পরেও ডানার ঝাঁপটায় আবার আকাশে ওঠা যায়!

 

এইভাবে আলোচনা চলতেই থাকে

আমি তাকে মানুষের প্রেম ও বিরহের গল্প শোনাই।

ও‌ হাসতে হাসতে উড়তে থাকে,

আর

বেড়ে যায় আমার পৃথিবী সম্পর্কে নানা অজানা কৌতূহল।

আমি যতবার তাকে মানুষের গল্প শোনাই

ততবার সে একটি করে মাছ তু'লে আনে নদীর ভেতর থেকে...

কখনও কখনও মাছরাঙা'টি

নদীর গর্ভ থেকে মাছের বদলে মুখে ক'রে তুলে আনে তোমাকে ঘিরে থাকা আমার জন্মগত কৌতূহল!

 


কিছুটা লেখা, অনেকটাই প্রেম

 

১. 

আমাকে কখনও পাবে না জেনেও

একটি মেয়ে

রোজ নিয়ম ক'রে আসে

আমার

ঘুমে-ঘোরে, স্বপ্নে-বিভোরে, মোহে-মায়ায়

 

 

মুগ্ধতায়...

 

যার পরাবাস্তব আছে, বাস্তব নেই।

 

২.

গুচ্ছের ভাবনা আসে মাথায়। কিছুই ভাল লাগে না।ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আসি তাদের কখনও নদী-পুকুর-জলা-ডোবায়। তবু তারা ফিরে ফিরে আসে। যেভাবে বৃষ্টি আসে। ছদ্মবেশে। তুলে নিই মাথায় আবার। সঙ্গে তোমাকেও,

 

বৃষ্টিবিন্দুর মতো...

 

৩.

আমি একটি মেয়েকে ভালবাসি।

 

নাম, বা গোত্রকিছুই নেই তাঁর।

এমনকি নেই মা-বাবাও।

থাকার মধ্যে আছে কেবল ডাকনামটুকুই

 

আক্ষরিক।

 

এসব জানার পর

সবাই আজকাল আমাকে প্রেমিক কম, পাগল ভাবে বেশি।

 

৪. 

এই যে আমি এতকিছু লিখি, তোমাকে ভেবে

 

জানি, এসবের ভেতর তেমন কিছুই নেই।

যা আছে,

তা ভুল আর ভুল

ছন্দে

অলঙ্কারে

বানানে

কাব্যরসে...

 

তবু,

এই যে না-থাকা, তারও ভেতর যেটুকু আছে :

 

নির্ভুল ও চিরকালীন অন্তঃসারশূন্যহীনতায়

 

তুমি

তুমি

আর

 

তুমি,

 

প্রথম প্রেমপত্রটিতে ছিলে যেমন...

 

 

৫. 

ব্যথা হয় তোমার।

যন্ত্রণা হয়

আমাকে ধারণ করতে, শরীরে।

 

প্রসব ব্যথা নয়, তবু জানি

 

তুমিও একদিন

ব্যথায়

যন্ত্রণায়

মায়ের মতোই

ছটফট করতে করতে বের করে দেবে আমাকে ঠিকই,

 

হৃৎপিণ্ড থেকে...

পল্লব গোস্বামী

পল্লব গোস্বামী-র মুক্তগদ্য

লালপাহাড়

       

লালপাহাড় বলে কোনো পাহাড় নেই পৃথিবীতে। তবু লাল আছেমুমূর্ষু এক পাহাড়ও আছে। আর আছে কাজললতা নামের এক পাহাড়ের মেয়ে।

গায়ে তার ধানী রঙের শাড়ি। পাকড়া পাপিয়াদের সাথে সারাদিন ওড়াউড়ি। উড়েউড়ে ঘুরে বেড়ানো কালো কালো সব মেয়ে-পুরুষ;  গাই-ছাগল-মোষেদের সাথে। হাওয়ার ঝোঁকে আমি কাছে যেতেই,

সে বলে ওঠে, "বোলোপে"।

 

আমি তাকে বন্ধু হতে বলি। কন্টিকারির পাতা স্মারক এনে, সে বন্ধু পাতায়। পাতায় পাতায় রটে যাই আমরা। এক ছুটে তাকে নিয়ে যাই আমাদেরও গ্রাম। তালাই পেতে বসাই কাজল মাখানো ঘরে। ঘর থেকে অদূরেই বহাল। সেখানে আমরা একসাথে চাষ করি। ঘুগিতে মাছ ধরি। পেটে ঘাটো খাই। খেতে খেলতেই ছলকে যায় বিকেল।

তারপর আবার সেই তড়ার পথ বেয়ে পাহাড়।

 

ফেরার পথে চোখ রাঙিয়ে ওঠে হাজার সিঁদুরে মেঘের চোখ। মুথাঘাসের মাঠ পেরোতেই, ভয়ে কাঁপন ধরে যায় কাজললতার।

সে বলে, ' বোলোপে '...

রক্তে আমার আদিম জাগরণ। 

 

জাগ্রত চোখে চেয়ে উঠে দেখি,

সারা আকাশের লাল নিয়ে,

যেন এক অন্ধ কবি লিখে চলেছেন

এক অনন্তহিম বর্ণের কবিতা...

সুবর্ণকান্তি উত্থাসনী

সুবর্ণকান্তি উত্থাসনী’র সিরিজ কবিতা


প্রেম পিপাসা পিণ্ড

 

(১)

একটি নারী ঘর বাঁধে অগণিত পুরুষের

আত্মহুতি লিপ্সিত সুরম্য প্রাসাদে

 

তার বিসর্গীয় নগ্নতা ঢাকতে

যত সুতো লীন হয় অক্লেশে

 

যা কিছু নির্বেদ তা প্রাসঙ্গিকতা

 

ওহে রাধেয়

এসো

ফিরে এসো

সর্বরিপু বুকে করে

 

প্রাগজ্যোতিষ্ শিখী এখনো পেখম মেলেনি

 

(২)

পৃথিবীতে প্রেম শুধু নিশি লাগা ধুতুরার ক্ষেত

একটি প্রেমিকের কাজ সমগ্র স্বত্ত্বা জুড়ে

বহুশ্রমে প্রাপ্ত দ্রাক্ষার কৃত্রিম শৃগাল হয়ে ওঠা

তবুও যে সেই রমণীর পুরুষ বন্ধুরা বঞ্চিত রয়ে যায়

এর কারণ কিছু এই ক্লাইতেমেনেস্ট্রার বুকে হেডিসের

আঁধারের মত যৌবন নেমে এলে রমণী খোঁজে

তার আবাল্যকাল জুড়ে গড়ে তোলা রূপকথা

এর ফলশ্রুতি এই যে সভ্যতা অগ্রগামী হলে

উদ্ভিদ ধারণে অক্ষম মৃত্তিকার মত অম্লপ্লুত সম্পর্ক

যাপন ধারণ করতে পারে না আর

 

(৩)

আমার বাবা এক গোঁড়া ব্রাহ্মণ তাঁর সমগ্র আধ্যাত্মিক

চেতনা আমায় সমর্পণ করে উচ্ছন্নে পাঠিয়েছিলেন

 

আমার মা রোজ পড়শির ঘর থেকে শাক চুরি করে এনে

পেট জ্বললে ফ্যানভাত আর শাকভাজা খাইয়ে তাঁর সমস্ত

বিষয়জ্ঞতা আমাকে সমর্পণ করে উচ্ছন্নে পাঠিয়েছিলেন

 

আমি রোজ বিকেলে গোধূলিকরোজ্জ্বল ধানক্ষেতের পাশে বসে

রোপিত চারার বেড়ে ওঠার বুকে একটি নৈসর্গিক সংসার খুঁজে পাই

 

যখন আমি মফস্বলের রাস্তায় কিংবা নগরীর বস্তিতে

প্রস্তাবিত আদল ধরে শুয়ে থাকি অধোগামী স্রোত হয়ে

 

সালোয়ারটিকে হাঁটু অবধি তুলে সন্তর্পণে যত যত্নে

আঘাত না দিয়ে বৃত্তের অন্তর্বর্তী শূন্যতা ছোঁয়া যায়

 

তার সেই নগ্ন পা দুটিতে আমার দ্বিতীয় কৈশোরের ঘ্রাণ লেগে আছে

 

তার চলে যাওয়ার দৃশ্যে সেজে ওঠে আমার প্রথম পৌঢ়ত্বের শয়নযান

 

(৪)

শোনো এভাবে না

এভাবে না

যেভাবে এতদিন ক্ষয়ে সয়ে জীবাশ্ম হয়েছ

তোমার বুকের ভেতর যে বরাঙ্গ

ক্রন্দসী চিত্রণ করে গ্যাছে

ইষ্টজপে যে অমরত্ব লেপেছে বাকল

নরকের গুহ্যদ্বারে পিঁপড়ের আনাগোনা

মিছেই ভুলেছ জাতিস্মরের ব্যথা

ভিক্ষায় জোটা ভালোবাসার চেয়ে

বঞ্চিত বোধের থেকে বড় মানসিক তৃপ্তি নাই আর

 

(৫)

দ্যাখো প্রথম সূর্য উঠেছে কলুষ সভ্যতার  ললাটে

প্রমা আদিম অনঘ ঘাস মাটি পাথরে সৃষ্ট  তুমি

 

আমি কীটদগ্ধ ত্রিকালদর্শী বক পালকের খাঁজে খাঁজে স্থাপত্য

আমার নাভিমূল থেকে যে স্রোত পারাংয়ের উপত্যকা দিয়ে

সাক্ষী হয়েও সাক্ষ্য মুছে বয়ে যায় চিরকাল

 

এ্যান্টনির বীরদর্পে ধুয়ে গ্যাছে আত্মহুতির কলঙ্ক তেভেরে

কর্ণের ক্লেদাক্ত গৃধ্রভুক দেহ তলিয়েছে অক্লেশে জাহ্নবীতে

 

বজ্রকঠিন হিমশিলাপাতে নিমগ্ন তূণীর

আত্মাভিমানে অবিচল স্ফটিক পদ্মদীঘি

তোমার প্রেতচ্ছায়া কালো মেঘেদের ভিড়

গোধূম আলোয় গৃহে না ফেরার অত্যুক্তি

 

বৃষ্টি বুজেনা মৃগতৃষ্ণিকা হেথা হৃদয়ে আবিল কুরুনারীদের শোক

ভূমি আগ্রাসী সন্ত্রাসীদের থাবা কালো মৃত্যুর যাচিত উপদ্রব

 

তুমি তো বাঁধোনি আমার ফেরার পথ

তবু এঁকে ফিরি ম্লান স্ক্যান্ডেনেভিয়া

অতনুর কোষে কোষে সার্ত্র পর্ণমোচী

দক্ষিণা চুক্তিতে তনু বদলায় ঠিকানা

 

তবু যদি ফিরে আসো ক্যাথারসিস্ হয়ে

যেভাবে গেঁয়ো যোগী ভোগী হয়ে ওঠে

 

কুয়াশাধিকৃত সাঁকোর দুধারে সময়ের স্থবিরতা

নিচে চংক্রমণবৈজয়ন্তী প্লবতা জুডাসের অনুচর

 

স্রোতপ্রাসপাশে যান্ত্রিক সভ্যতা ছুঁয়ে ফ্যালে কৃষ্ণ যবনিকা

মধ্যিখানে প্রতি জন্মান্তরে তোমার সঙ্গে আমার হয় দ্যাখা