লেখা পাঠান আমাদের chayarodpatrika@gmail.com

Sunday, October 11, 2020

বিশ্বজিৎ দাস, নবম সংখ্যা

বিশ্বজিৎ দাস-এর কবিতা


মাঠপুকুরের কাটামুণ্ডুরহস্য

 

১.

স্বীকার করেছে ওরা, চারজন ছিল

            শিকারের পদ্ধতিও ছিল ব্যতিক্রমী

জুয়ার আসরে বসে ঠিক হত প্ল্যান

ঘোরের ভিতরে এইসব করে, হাসত

           হেসেই চোখের কোণে শেয়ালের লোল

 

একদিন এভাবেই আসে ফাঁকা ঘরে

    একা পূর্ণিমার ঘুমের শরীরে হাত

মুখ চেপে ঝাঁপিয়ে পড়েছে একজন

    সে রাতে যোনিতে হায়নার থাবা আর

রক্তের সূত্রেই পড়ে ধরা বাপি ডন!

 

২.

পাড়ার ভিতরে তার ত্রাসের আকাশ

কসাইয়ের মতো পুষেছে পিশাচ খুন

                তিনসঙ্গী আরও ভয়ঙ্কর, ধর্ষণের

পরে, ওরা মাংস কেটে ছড়িয়েছে

                           ভাটার পুকুরে

 

তারপর আবার মদের আসর।

                          হঠাৎ হাওয়া!

যে বস্তায় পুরে কাটামাথা ফেলেছিল

জলে, তার খোঁজ মেলে পচা'কে ধরার পরে

 

৩.

তিনমাস লুকিয়ে বাড়িতে ফেরা হলে

         পাগলের ছদ্মবেশে গোয়েন্দা অমিয়

মাঠপুকুরের আশেপাশে ঘুরে জানে

                 পচা বাড়ি ফিরেছে গভীর রাতে

আর,

শোর্ডের উপরে শুয়ে আছে আশঙ্কায়

এই ধরা পড়ে! পুলিশের জালে সত্যি

                       জড়িয়ে পড়েছে, তার

একঘন্টা ঘুম ভেঙে দিল; হাত ও পা

 

৪.

পচার সূত্রেই রবি।

বাপির দ্বিতীয় অস্তিত্বের চাবিকাঠি

                  হাতকাটা রবির অবশ্য

টাকাপয়সার দিকেই লোভ ছিল বেশি

উপরি মহিলাদের পেলে আর কোনো

            দাবী নেই, বাপির কথামতোই তার

 

পিস্তল চালাতে পারদর্শী। আঘাতের

                  ছুরিটিও যে, সে চালিয়েছে

এমন প্রমাণ মিলেছে হাতের ছাপে

 

৫.

অথচ পচার বাড়ি শোর্ড, রবি ছুরি

           বাপির বাড়িতে কিছু নেই!

আর ভিকি?

 

ভাটার গুদাম থেকে তাকে বের করে

থার্ডডিগ্রি দিলে বাধ্য হয় বলতে, খুন

             তারা চারজনই করেছে। খুনের পর

নিজেদের ওই পোশাক গুদামে রাখে

 

পোশাকে রক্তের দাগ চিনিয়েছে ডন

এবার জেরার পালা, আর খেলা শেষ!

 

৬.

ক্ষমতার কাছে মানুষ ঘুমালে তার

অবশিষ্ট থাকে না। এই যে আকাশের

দিকে চেয়ে চেয়ে এখন স্নায়ুর শোক

     আদতে খুনির ছাপ রাখে চোখেমুখে

 

বাপিসহ তিনজন সেই পথে হাঁটে

মাঠপুকুরের পাড়ায় ওরাও ডাকে

         

         বাঘের গর্জন। মদ মাংস আর জুয়া

সঙ্গে লুটপাট তোলাবাজি চলে

এসব কখন যেন তাদের ভোলায়

         ক্ষমতার কাছাকাছি চাঁদ ডুবে যায়...

 

৭.

কী ভীষণ আর্তনাদ

                স্বামীহারা মহিলার এবং শরীর

কুঁকড়ে যাওয়া ভয়, ছাড়েনি তাকেই ওরা

লালসার দাঁতে তখন পরম গন্ধ

 

গন্তব্য হারিয়ে তাকে প্রথমে শোয়ায়

সেও চিৎকার করে, নখের চেষ্টায়

         পারেনি আটকাতে; শুধু ব্যর্থ প্রতিরোধ

 

তখনই শোর্ডের কোপ। এক কোপে ধড়

মাথা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। তারপর

     মাথাহীন শরীরে ধর্ষণ নারকীয়...

 

৮.

জল্লাদের মতো শরীরের অংশগুলি

পিস পিস করে কেটে বস্তায় ভরেই

            ভাটার পুকুরে ফেলে। মাথাটি আলাদা

বিলের জমিতে পুঁতে রেখে উধাও যে!

 

ভাটার অফিসে থাকা ছোট্ট গুদামের

ভিতরে রেখেছে রক্তমাখা সব জামা

            এবং পরিকল্পনা মতো সব হাওয়া

 

বাপি ডন খোঁজ রাখে, পাড়ার ছেলেরা

ভেঙেছে তাদের ঠেক। উন্মত্ত জনতা

 দেখে পুলিশের কোনো উপস্থিতি নেই

 

৯.

জেরার এসেছে উঠে এইসব তথ্য

পূর্ণিমা, বিধবা পুত্রহারা সদ্যশোক

            আধমরা করে রেখেছিল তাঁকে, ওই

তাঁর পাঁচকাটা জমির দিকেই ঝোঁক

বাপির লোভের মুখে ওরা তিনজন

আগুনে ঘিয়ের মতো উস্কানি দিয়েছে

 

সেইমতো বাপি

ছক কষে মদ-জুয়া হয়ে আসে

পূর্ণিমার বাড়ি। গোপনে ঘরের মধ্যে

ঢুকে তাক করে ধরার, মাছের গায়ে

যেমন বর্শার কোপ তেমনই জাপটেই

 

        শরীরের শাড়িসহ ছিঁড়ে ফেলে তাঁর

       কোঁকানো কান্নার শব্দ হারায় উল্লাসে...

 

১০.

বাড়ি হাতানোর লোভ ছিল বলে ওরা

প্রথম থেকেই ভাবে খুন করা হবে

মস্তিষ্কের কাছে জেনেছে উপায় এর

জুয়ার আসরে ওরা মতলব আঁটে

 

গোয়েন্দা অমিয় জানে কী করে এসব

বার করতে হয়, পোশাকের রক্ত দিয়ে

নমুনা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছে

 

কী হবে এবার?

স্বীকারোক্তির ভিতরে কেঁদে ওঠে

পুলিশভ্যান ওদের তুলে নিয়ে যায়

 

কাটামুণ্ডু স্বপ্নে হাসে, ঘামের কপালে...

সায়ক দাস, নবম সংখ্যা

    সায়ক দাস-এর কবিতা

 

ছেঁড়া কাঁথার শব্দগুচ্ছ


অথচ আমি লাল গোলাপ কে খুন করিনি কোনোদিন। আমার স্বপ্নে ঢুকে যায়নি একটা মনখারাপী সামুদ্রিক আটলান্টিস। আমার ঘুম ভাঙায়নি কোনো সনাতনী ভোর কিংবা আমার কাঁধে হাত রাখেনি পারিবারিক শৃঙ্খলা...

 

প্রতিটা উচ্ছৃঙ্খল দুঃখ থেকেই জন্ম নেয় একেকটা বটগাছের মতো কবিতা

 

"I have heard the mermaid singing, each to each

I do not think that they will sing to me..."

 

ছিল না কোনো বান্ধবী। স্বপ্নে চিরকাল তবু এসেছে একটা বন্ধ্যা মারমেড, লেজে করে একটা হেমন্তকাল নিয়ে। আমার যৌবনকে সে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে শেষ দিন অবধি। ও কাছে এসেছে যতদিন একটা আঁশটে গন্ধ ঘুলিয়ে নিয়েছি আমার শরীরের মধ্যে...

 

একটা আঁশটে গন্ধ না চাইতেই মিশে গেছে আমার পুরুষত্বে, ধীরে ধীরে

 

 

অথচ আমি মৃত্যুকে ছুয়ে দেখিনি কোনোদিন। কোনোদিন ভাবাইনি আমায় প্যারালাল ট্র্যাক। আমাকে হাঁটার জন্য যে রেললাইন দেওয়া হয়েছিল, তাতে কোনোদিন ছিলনা সাদা কবুতর। কিন্তু আমারও খাঁচা ছিল, সেখানে খেলে বেড়াত একটা টিয়া, যাকে কথা বলতে শেখাতে হয়েছিল আমায় ছোটোবেলায়। তখনও মাকে জড়িয়ে ধরতে পারতাম, বাবা নিয়ে যেত রেলগাড়ির কাছে।

 

আজ আমি দুটো রেললাইনের মাঝখানে হাঁটি। একটা আমার বাবা , অপরটা মা

 

আমার একটা প্রেমিকা ছিল, ঘাসফুলের মতো। সারাদিন হাসত নবজাতকের মতো। আমার ঘরে প্রদীপ দিত সন্ধ্যাবেলায়। আমার সাথে একাকার হতো মিশে। আমার কাঁথায় বসে গান গাইত। মুক্তো ছিল গলায় একটা, আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকতাম এক মনে। সেও কোনোদিন প্রতিবাদী হয়নি।

 

নদীর ধারে তার পাওয়া শরীরে মুক্তোর হারটা আর ছিল না , যেমন ছিল না আমার দেওয়া ছেঁড়া কাপড়

 

 

কবিতার মতো দেখতে একটা রচনা

 

 ...সাধারণ জীবন

একটু একটু করে বিষের মতো গড়িয়ে পড়াই আমার ভাগ্য। একটা ছোট্ট টেবিল, দু'বেলার চা, আর এই রুগ্ন জীবন। অথচ তোমার স্বর্গ থেকে নেমে আসবে অপ্সরা। তারা অর্ধনগ্ন হয়ে মনরঞ্জন করবে। নালা, পুকুর দিয়ে গড়িয়ে যাবে রূপ, গন্ধ আর বীর্য। আর ঠিক তখনই আমি পাউরুটি নিয়ে বসব খাবার টেবিলে...

 

প্রতিবাদ, এবং...

 

এরপর একটু একটু করে বেগুনি হয়ে উঠবে সূর্য। যেটুকু রাস্তার উপর রক্ত আর মাংস পড়ে থাকবে সেটা মাড়িয়ে যাবে সবে মায়ের কোল থেকে নামা সভ্যতা। স্তন্যপানে পাপ জেনেও সভ্যতার মায়ের কাছে এসে পড়বে রাজকীয় পোকারা এবং একইভাবে দিনের দিন চলতে থাকবে ঐক্যবদ্ধ ধর্ষণ...

 

সবে সবে বেড়ে ওঠা সবার মতো আমি তারপর সভ্যতা বাঁচাতে রাস্তায় নামব

বিশ্বজিৎ, নবম সংখ্যা

বিশ্বজিৎ-এর কবিতা


বোকা মানুষের গল্প

 

পোশাক ও জীবনের কথা,

ভাবতে ভাবতে

মুহূর্ত তৈরি হয়ে গেল।

মুহূর্ত ভাবতে ভাবতে

ইতিহাস। তুমি

মাথা খারাপ বলতে পার

আমি তোমাকে সর্বনাশ।

সময় ঘুরছেঢেউয়ের ভেতর

অসংখ্য বালি চিকচিক করছে

দূরত্ব বেঁচেযে নীরবতা কিনছ

 

খরচ ও পাওয়ার হিসেব

এখন দিগন্ত ছাড়িয়ে... 

মধুমিতা রায়, নবম সংখ্যা

মধুমিতা রায়-এর কবিতা


ক্ষোভ


নদীর থাকে না পিন কোড

হতচ্ছাড়া!

আপনি লালন করে সমুদ্রের ঢেউ,

সাবানের ফেনা

একনিমেষে,ঝেড়ে দেয়

লেখার মাত্রাকে মুছে

চিত্রভানুকে চিরবিদায়

কীসের ছটফটানি?

কে দেয় চাকায় তেল?

সপ্তাহে একটি দিন থামতে পারতো!

সহজে আলাপ যাতে জমে যায়

 

কামারশালা

 

জানালার শিক, তুলো, হাতের আঙুল, লোহা

কামারশালায়

পানপাত্র দ‍্যুতিমান, মাথায় টোপর

ক্ষণজন্মা সহ‍্য করে হাতুড়ির পদাঘাত

 

ঘুমন্ত কমলা হাসে হাপরের নীচে-

কোথাও সেতার

লাঠি দিয়ে জোরে মারো, বালিশ হবে তো!

 

গাছ                  

 

একটা দেওয়াল বার্তা, এক ঘর পুরো খাঁচা

জানালার পর্দা চাঁপাগাছ

ট্রামগাড়ি শহরের ডাল

সবই জীবিত

 

প্রিয় ধূপকাঠি আজ ফুলের বিজয়ী

 

গাছই শেখায় রোজ

আকাশের কাছে যায় কচি পাতা

মূল

   তবু

      নক্সা

         কাটে

              মাটির

                  লালায়

                   

 

স্নেহ

 

সন্ধ্যার উজ্জ্বল তারা গ্রাস করে

মায়ের আঁচল,স্নেহ

শুকতারার নেই আলো

আমাদের খিদে করো দূর

মেঘের গর্জন

সহ‍্য করা

বৃষ্টির ফোটাকে তুলে রাখো

ভাতের কলসি আজ ভর্তি হয় যেন...

ভোরের শাসন যেন চাবুক মেরেছে

গ্রহণের সূর্য ছাড়া হারানোর কিছু নেই আমাদের!

Tuesday, September 29, 2020

সেলিম মণ্ডল অষ্টম সংখ্যা

সেলিম মণ্ডল-এর কবিতা

 

কবিতাকল্পদ্রুম

 

আমার বই আমার প্রেমিকারা কেনে না

প্রেমিকার মতো কেউ কেউ কেনে

এতে সুবিধা ও অসুবিধা দুই-ই আছে

সুবিধা হল

     প্রেমিকারা কবিতাগুলো পড়ে কষ্ট পায় না

অসুবিধা হল

      প্রেমিকার মতো যারা তারা আনন্দ পায়

                   ভাবে তাদের নিয়ে লেখা হয়েছে এই সমস্ত কবিতা

 

বাবা, আমার সমস্ত বই পড়ে

পড়ে বলেএত ছোটো লিখিস কেন?

                আর এত অশ্লীল শব্দ!

 

আমি এড়িয়ে যায়। বলিএসব আধুনিক কবিতা!

 

মা, আমার কোনো বই পড়ে না

তবে প্রতিবেশীরা যখন কেউ জিজ্ঞাসা করে

                                  ছেলে কী করে?

বলেবই লেখে, বই

 

আমার দিদিদের আমার বই নিয়ে

                               কোনো আগ্রহ বা উৎসাহ নেই

ওরা শুধু বলেবই লিখে কী হয়?

 

আমার ভাগনে বলেমামা, তুমি সেলিব্রিটি

আমি বলিকেন?

বলেতুমি তো কবিতা লেখো

 

মুনাই, প্রথম বই পড়ার পর দ্বিতীয়বার

                                আমার প্রেমে পড়েছিল

 

এরপর, লিখে ফেলি আরও দুটো বই।

এখন ও বলেআমার কবিতা ভালো লাগে না

 

আমার হাফ প্রেমিকা বই পাওয়ার জন্য

                                      হা-হুতাশ করে

পায় না।

তারপর তার ট্যাবে জমিয়ে রাখা আমার কবিতাগুলো

                                            স্বামীকে পড়িয়ে শোনায়।

ওর স্বামী ভালোমন্দ কিছুই জানায় না।

শুধু জিজ্ঞাসা করেকার কবিতা?

 

আমার সব বন্ধুরা আমার বই কেনে।

মনে মনে পড়ে।

তারপর চুপিচুপি লুকিয়ে রাখে

                             মোটা বইয়ের পিছনের তাকে।

 

আমাদের পাড়ায় কেউ জানে না আমি কবিতা লিখি

আমার ডাক নাম খোকন।

বাড়িতে আমার বইগুলো সবার আড়ালে

                                  যত্নেই থাকে।

 

১০

সিনিয়র কবিদের কাছে বই না পাঠালে

জানতেই পারেন না তরুণ কবির কোনো বই বেরিয়েছে

অথচ, তরুণ কবির প্রোফাইল পিকচারে সবার প্রথমে লাভ বাটনটি ছুঁয়ে দেন

                                                                          একজন প্রবীণ কবি!

অশোক অধিকারী অষ্টম সংখ্যা

অশোক অধিকারী’র কবিতা

 

টিপ

 

সোজা এগোলেই বস্তুপিণ্ডের মতো বালক কাল

একা অমেরুদণ্ডী হয়ে আনুগত্য লিখছে

তাকে নিশানা করে আরো কিছু মানুষ বিক্রম

উপহার দেবে বলে মদ্যপান করেছে

প্রতিটি নিঃশ্বাসের ভেতর সন্দেহ জন্মকাল থেকে

অবসাদ তবু তার লক্ষ্য স্থির হলো না আজও

 

 

পার্টি চিঠি

    

বহিষ্কারের আগে শেষ একবার হাই উঠেছিল

না ঠিক লেনিন-ফেনিনকে নিয়ে নয়

রেশনের চালে পোকা আর দু'টাকা কেজি

চাল নিতে যারা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল তাদেরকে

বাঞ্চোত বলে কাঁচা লঙ্কায় একটা কামড় বসিয়েছিলাম

এখন সব ধরনের লঙ্কাতেই ঝাল কমে গেছে    

আবার কবে বন্যায় পাড় ভেঙে আল আটন

ছাপাবে সেদিন কতদূরে-ঠিক কত

 

বড়ো গাছ ছোটো গাছ

 

হাত বাড়ালেই তাকে ছোঁয়া যেত এককালে

হাতের আঙুলগুলো যখন কচি ছিল যখন

আয় আয় বলে চাঁদকে ডাকত নদীর তাতা

বালিতে রাজা সেজে নকল যুদ্ধ করত তখন

কে জানত সে একদিন কেশবনাগ হবে

সহজ উদাহরণ দিয়ে শিখিয়ে দেবে দুধ আর

জলের মিশ্র অঙ্ক গাছ বড়ো হয়ে গেলে তার আর

ছোট গাছের জন্যে কোনো মায়া থাকে না

হাত বড়ো হয়ে গেলে সে আর হাত থাকে না

 

আত্মজীবনী

 

জলে ঠেলে দিলে উঠতেও লাগে এক দশক

ঠিক ঠেলা পেলে সমুদ্রও তাকে নেয় না

পাশাপাশি দুটো ঢেউ নাচের ছন্দে পৌরাণিক

নেশা ছুটে গেলে এ জীবন বড়ো প্লেটোনিক

 

 

রবীন্দ্রনাথের জুতো

 

জুতো স্পর্শ করে পায়ের ধুলো নিয়েছে যারা

তাদের কেউ কেউ এখন আবীর মাখতে

ভয় পায় যদি আশ্রয় ভাঙার চাঁদা দিতে হয়

অন্ধকারে রঙ ফেরিঅলা পুরিয়া বানায়

মাখার পর সবাই সংস্কৃতে বক্তৃতা করে

রবীন্দ্রনাথের জুতো অনেকগুলো লাগবে

টেণ্ডার দিয়ে দ্রুত বানানো চাই

অনিন্দ্য রায় অষ্টম সংখ্যা

অনিন্দ্য রায়-এর কবিতা

 পুরাণভূম

 

জল আর বসন্তের গ্রহ

শৃগাল সম্রাট আর ধোপাদের নীলের গামলাকে রাষ্ট্র বলা হয়

 

পতাকার জন্য যিনি নিজের চামড়া উৎসর্গ করেছেন

তিনি সন্ত নেউল


প্যাঁচার চোখ না-জ্বেলে বিবাহের মন্ত্র পড়তে কাছিম পারে না


জল আর বসন্তের গ্রহ

এখানে বেড়াতে এসে আমরা হাড়াম-বুড়ি  

                        দু-লক্ষ বছর রয়ে গেছি 

 

কুয়াশার এগারোটি নদী, ওপাশে আগুন, মধ্যে শূন্যের গর্ত

আদিপ্রাণ আর একটি গাই ক্রমাগত বরফ চাটছে

 

জমাট শৈত্য থেকে ক্রমে চুল, মাথা; ক্রমে সম্পূর্ণ শরীর 

বিবাহ, সন্তান

 

শুধু হত্যা নিয়ে পরিকল্পনা সফল করা যায়   

এবং হত্যাও হয়

 

ঠাকুর্দার মাংস ছাড়া ব্রহ্মাণ্ডের মাটি তবে বানানো যেত না  

দাঁত আর হাড়ের পাহাড়, ঘাম-রক্তের সিন্ধু

 

আমরা যে আকাশ দেখি— করোটির ভেতরের দিক    

আর ছেঁড়া-ছেঁড়া মেঘ— ঘিলুর টুকরো

                         চিন্তায় ঘুরপাক খায়   

 

প্রথম হাসির থেকে তৈরি হল আলো

দ্বিতীয় হাসির থেকে জল

পৃথিবী পরের হাসিতে

তারপর ভাগ্য

বিচার

সময়

 

শেষবার হাসলেন তিনি

কেমন করে যে কান্না হয়ে গেল

আর তা থেকে জন্ম নিল

আত্মা

 

মাটি অশক্ত আর ভঙ্গুর

বৃষ্টিতে গলে যায়

 

কাঠের বুদ্ধি নেই

মুখে সুখ-দুঃখের কোনও ভাঁজও পড়ে না   

 

নতুন কিছু খুঁজতে চারদিকের দরজা খুলে গেল 

 

বনবেড়াল, নেকড়ে, টিয়া আর কাক 

      এসে সন্ধান দিল আশ্চর্য ফসলের 

 যব

তার গুঁড়ো দিয়ে শরীর

তার গুঁড়ো দিয়ে খাবার

 

তার গুঁড়ো দিয়ে

শুরু হল দানাশস্যের সভ্যতা

 

আদিস্তম্ভ। ঘিরে উলটোমুখে ঘুরতে ঘুরতে     

দেখা হল

 

: “কী সুন্দর তুমি, হে পুরুষ

 তোমাকে দেখে বুঝি অসম্পূর্ণ আমার শরীর!”   

 

: “নারী, তুমি কী সুন্দর

 আমার শরীরে আছে অতিরিক্ত কিছু!” 

 

:: “এসো, ঘাটতি ও বেশি মিলিয়ে আমরা সমান হই”

 

অথচ সন্তান হাড়গোড়হীন, সমুদ্রে ভেসে যায়

কোথাও জাগে না দ্বীপ

 

ভুল কোথায় তাহলে? 

 

কথা-বলার অধিকারও প্রথমে পুরুষের!