লেখা পাঠান আমাদের chayarodpatrika@gmail.com

Monday, September 7, 2020

তিয়াসা জানা

তিয়াসা জানার কবিতা

ভাবতে গিয়ে

 

ভালোলাগে তোমাকে নিয়ে ভাবতে

কুমোরটুলির কারিগরদের মতো রং তুলিতে টানতে;

চলোতোমায় ফুটিয়ে তুলি,


প্রতিবন্ধকতা ভুলে

বৃষ্টির জল যখন এল চুল চু'য়ে

নীল শাড়ি ভেজাতে পারবে পিঠের মধ্যে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা খেলে

তখন অবলীলায় মুখ খুলবে

তোমাকে আমাকে ঘিরে থাকা অপরিমেয় ইচ্ছেগুলো...


কে প্রথম কাছে এসেছিল বুক পেরোলেই জানা যাবে!

তোমাকে ভাবতে গিয়ে একটার পর একটা ভাঁজ খুলতে থাকি;

লুকোনো রহস্যের ডুব খেলায়

তোমার ওষ্ঠ-যুগল চুম্বন বুকের পাড় ভাঙে

শক্তিশালী ঢেউও পাড় ভাঙতে ভাঙতে ক্লান্ত হয়

যেমন করে ক্লান্ত দেহ রঙিন স্বপ্নে মধ্য রজনীতে

স্পর্শে ছুঁয়ে যাবে তোমার উষ্ণ অনুভুতি


জন্ম নেবে ভালোবাসার হাজার হাজার আকুতি;

স্বপ্ন-ছুট হয়ে চলে এসো না যেন!

আমার নিঃশ্বাস দ্রুত পড়ে

নিঃশ্বাস আর একটু তপ্ত হলেই― আগ্নেয়গিরির লাভা!

ভালোবাসতে গিয়ে ভালোবাসা হয়ে ওঠে সংজ্ঞাহীন

গঙ্গোত্রী গোমুখই জানে প্রকৃত প্রেমের মানে?

তুমি আর আমি আর একটু ভালোবাসার মতো হলে বদ্ধ পুকুরই আছড়ে পড়বে উপকূলের বুকে!

Sunday, September 6, 2020

অরবিন্দ লাহড়ী

অরবিন্দ লাহড়ীর কবিতা 

দু-দন্ড ভালোবেসো


ভুল হলে হবে
কিঞ্চিত ভুলের সমীহ করতে হয়,
অলস বিকেল
বইয়ের ভাঁজে রাখা গোলাপের পাঁপড়ি,
গোলাপের কাঁটা কাটে হাত
তবুও তার'ই সংগ্রহে ভুলের আস্ফালন!
শাড়ি ও শরীরের গন্ধ
কিশোরীর চিবুকে হাত;
কেউ কেউ বলে
প্রেমের সর্নিপণে কাম
জীবনের অভিশাপ

সাম্প্রতিতে নগ্নতা ছাড়া
প্রেম নাকি অপূর্ণতা'ই রয়ে যায়।
কিন্তু আমি এসব চাই না,
পূর্ণতার নিরীক্ষে পবিত্রতাকে বিক্রি করতে
কিংবা কাঁটায় কেটে যাওয়া শরীরের রক্ত ঝরাতে;

আমি শুধু চাই হাতের মুঠোয় লুকিয়ে রাখা রোদ্দুর
তোমার কপালে আঁকা টিঁপের নীল রঙ,
আমি চাই তোমার স্বরূপে
আবিষ্কার হোক গোটা কয়েক শব্দ
বৃষ্টির ফোঁটা ফোঁটা জলের মতন
নেমে আসুক উপমা,
জন্ম হোক নতুন একটি কবিতার।
ভুল হলে হবে
দু-দন্ড ভালোবেসো;
কিঞ্চিত ভুলের সমীহ করতে হয়।

গৌতম নায়েক

গৌতম নায়েকের কবিতা

                      বান্ধবী গো

 

বান্ধবী গো 
তুমি আজ বহু যোজন দূরে।
এমন অমানিশা ঘেরা স্বপ্ন তো আমাদের ছিল না। 
আমাদের সোনালী স্বপ্নের কথা জানত ময়ূরাক্ষী,  
তোমার পা ধুয়ে দেওয়ার সময় সে সবটা আড়িপেতে শুনেছিল,
যে কাশ ফুলটা তুমি খোপায় গুঁজে ছিলে
সেও জানত আমাদের স্বপ্নের কথা,
 দিঘির ধারে তালগাছের বাসা হতে 
সবটুকু শুনে নিয়েছিল বাবুইয়ের দল, 
আর জানত পথের ধারের কৃষ্ণচূড়া, 
আর তোমার কানের দুল চাঁপা।
 
তুমি বলতে, আমাদের ছোট্ট একটা ঘর হবে ময়ূরাক্ষীর ধারে,
বাবুই বাসার মতো পরিপাটি, 
রং করব কৃষ্ণচূড়ার রঙে, 
আর নিকানো আঙিনার চার পাশে থাকবে চাঁপা।
আর শুধু তুমি-আমি, 
আর আমাদের একান্ত আপন।
 
বয়ে গেছে ময়ূরাক্ষীতে বহু জল, 
কৃষ্ণচূড়া, কাশ, চাঁপা শুকিয়ে গেছে কবেই,
বাবুদের দল উড়ে গেছে অজানার উদ্দেশ্যে
ঠিক তোমারই মতো,
আমাদের স্বপ্নটাকে ভঙ্গুর করে দিয়ে

আমিনুল ইসলাম

আমিনুল ইসলামের কবিতা

পটচিত্র-২

 

অপেক্ষা ভেঙে যায় সচরাচর

চরাচরে পাখিদের ডানায় লেগেছিল

কিছু স্বল্প দৈর্ঘ্যের স্বাধীনতা

বুকের ভেতর খঞ্জরের নিপুণ কারিগর

 

খুঁটে খাওয়া গমের দানায় জমানো

চাঁদের কলঙ্কবিহীন আলোর নমুনা

অনেক কষ্টে যখন দৃশ্য মুছেছে যমুনা

সারারাত গড়িয়ে আসে সেসব কথা এখনো

 

প্রতীক্ষার মতো কিছু নিস্তব্ধতা জড়ানো

রাস্তার পাশের শূন্যতায়

দশমিক বিন্দুই লেগে থাকা আদরের মলম

ক্ষতস্থান পরিপূর্ণ করবে জেনেই

ঘসছে হাত গালে চিকন কামানো

 

ঘাসের বুকে ১ নরম সবুজ চেয়ে থাকা

প্রতিটি সকাল শোনে এবং উপলব্ধ

জ্যোৎস্নার কানে সাজিয়ে দেয়

১টি করে পালক...

অভিজিৎ পালচৌধুরী

অভিজিৎ পালচৌধুরীর কবিতা

ময়না তদন্ত

 

আসুন স্যার আসুন। হ্যাঁ, ঠিক এইখানটায় পোঁতা আছে আমার লাশ। হ্যাঁ, ঠিক এই কংক্রিটের নীচে। বাইরে থেকে দেখুন কিচ্ছুটি বোঝার জো নেই! প্লাস্টিক ইমালসন দেওয়াল। একদিক মোড়া আছে ওয়াল পেপারে। সেখানে ফুলের বাগান। প্রজাপতি উড়ছে। হ্যাঁ স্যার, ঠিক এই জায়গাতেই আমাকে খুন করা হয়। প্রথমে পাউন্ড কেক স্লাইস করার মতো আমার হাত-পা অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো সাইজ মতো কেটে ফেলা। নইলে এই দশ ইঞ্চি গাঁথনিতে আমার ছফুটি লাশ কুলোয় কি করে বলুন দেখি।

কাটাকুটি হয়ে গেলে খুনি আমার মাথাটাকে নিয়ে সমস্যায় পড়ে। অনেক ভেবে চিন্তে সে সেটিকে ধড় থেকে আলাদা করার কথা ভাবে। আবার ভাবে এতটা নিষ্ঠুর কি হওয়া উচিত। শেষ কালে কার মাথা কার ধড় এই নিয়ে বিস্তর বিড়ম্বনা, জলঘোলা। খুনিকে বিব্রত হতে দেখে আমি বলি তুমি হলালে বিশ্বাসী না ঝটকায়। যাই করো না বাপু এখানে অযোধ্যা-বাবরি টেনো না। খুন করতে এসেছ, অত ভাবলে চলে! তুমি বরং ধড় থেকে আলাদাই করে দাও মাথাটাকে। আমি আমার অস্তিত্বের বিচ্ছিন্ন টুকরোগুলোকে নিয়ে একটা এলিজি ছকে ফেলি এই হাত ছুঁয়েছিল তোমাকে, এই হাতে কোনো পাপ-স্পর্শ নেই, এই পা-এ বালক দৌড়েছিল আল বেয়ে আদিগন্ত ধানক্ষেত রামধনু ধরবে বলে, এই বুকে কৈশোরের সেই ব্যথা নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গের মতো...ইত্যাদি... ইত্যাদি।

খুনিমশাই এইসব গূঢ়কথা কি বুঝেছিলেন জানি না । তিনি আমার কথামতো আমার মাথা ও ধড় আলাদা করে দেন সেটা হলালে না ঝটকায় নাই বা শুনলেন। শুধু এটুকু জেনে রাখুন তিনি যখন আমার গলদেশে ছুরি চালাতে চালাতে অদ্ভুত মায়াময় চোখে তাকিয়েছিলেন আমার দিকে, আমি বলেছিলুম কিস্যু দুঃখ পাবার নেই মশাই, আপনি চালিয়ে যান, বেশ একটা জম্পেশ যন্ত্রণা আর একটু জমিয়ে কষ্ট দিন তো ভাই। জীবনটা একেবারেই জোলো । শুধুই অম্বল, হাই তোলা আর ভোট দেওয়া। তো মিথ্যে বলব না, মৃত্যুটা আমার ষোল আনার ওপর আঠারো আনা উশুল !

তবে আরেকটা রিকয়েস্টও করেছিলাম, ফাঁসির আসামীর শেষ ইচ্ছে গোছের আর কি! বলেছিলাম ভাই চোখ দুটো আমার যেন অক্ষত থাকে। কেননা ওখানেই তো সব, এই চোখেই তো সেই নীলিমা ও নৈরাজ্য, এই চোখেই তো সেই খোলা চুলের আঁধার, চকিতে হারিয়ে যাওয়া ঝোড়ো হাওয়ায় দিশাহীন পাখির ডানা,  চুঁইয়ে পড়া বৃষ্টির ফোঁটা। এই চোখেই তো সব সত্যি হয়ে যাওয়া। অথবা মিথ্যে।

আততায়ী প্রতারণা করেনি।

কি ভাবছেন? কুকুর আনবেন? পাগল না সি-, না থাক, পাজামা !

কে চায় মশাই খুনিকে ধরাতে! আপনাদের লাকি, রেখা, মিতা পুরো ডগ্ স্কোয়াডকেই আনুন না! তারা এই ওয়ালপেপারে মোড়া গেরস্থালীর আনাচ্ কানাচ্ ঘুরে তুলে আনবে ছেঁড়া চপ্পল, রক্তমাখা জামা, ব্রা, ভাঙা চশমা, স্যানিটারি ন্যাপকিন কিংবা কনডম্ সিংগল ইউজ, মাল্টিপল্ ডিজায়ার!

বরং আপনাদের সারমেয়কূলকে ছেড়ে দিন। তারা দৌড়ুক ।

দৌড়, দৌড়, দৌড়... ধানক্ষেত।

দৌড়, দৌড়, দৌড়... একা নদী।

দৌড়দৌড়, দৌড়... একা কৃষ্ণচূড়া।

দৌড়, দৌড়, দৌড়... একা আমি।

 

 

পথিক ও লাবণ্যপ্রভা

 

চওড়া অ্যাসফল্টের রাস্তার পাশে ঢালু জমিতে এক টুকরো সবুজ ঘাসের গালচে। সেই গালচের ওপর চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে সে। একা। নাম জানি না। আমিও একা হাঁটছিলাম। কাছে যেতেই ঝলমলিয়ে হাসল। যেন অনেক কালের চেনা। দেখলাম হাসির শিহরণে তার পাতায় পাতায় এক নরম সবুজ আলোর দ্যূতি চারপাশটাকে আরো বর্ণময় করে তুলল। তার একাকিত্ব তার বিষাদ ভুলে এক অপরিচিত পথিক কে দেখে সে কেমন হেসে উঠল যার অপার লাবণ্য বিভায় দাঁড়িয়ে পড়লাম আমি।

শুরু হল আমাদের নিঃশব্দ আলাপচারিতা। ফেল্টহ্যামের সকাল এক মুগ্ধ স্তব্ধতার ছবি এঁকে দিল। কাছেই হিথরোর আকাশে তখন নেমে আসছে একের পর এক রুপোলি পাখি খড়কুটো মুখে। খড়কুটো নামিয়ে আবার উড়ে যাচ্ছে কোথায়। আর সেই লাবণ্যপ্রভার কাছে আমার বিনত অবস্থান।

হঠাৎ আমার ভেতরের একাকিত্বটা দরজা খুলে বেড়িয়ে এল। বসল তার পায়ের কাছে। অমনি সহস্র ঘাসের পালক দুলে উঠতেই অজস্র ছোট ছোট নাম না জানা সাদা ফুল ফুটে উঠল নক্ষত্রের মতো আমার একাকিত্বের চারপাশে। দেখলাম আমার একাকিত্ব, লাবণ্যপ্রভা, ঘাসের পালক আর সাদা ফুলের আধফোটা নক্ষত্রদের নিয়ে ফেল্টহ্যামের সবুজ গালচে উড়ে যাচ্ছে হিথরোর আকাশ ছাড়িয়ে কোথায়, রুপোলি পাখীদের পিছু পিছু...।

 

আচ্ছন্ন পথিক ঘরে ফিরে আসে।

Tuesday, September 1, 2020

অরিত্র চ্যাটার্জি

অরিত্র চ্যাটার্জির কবিতা

 

কয়েকটি অহেতুক কবিতা

আমি যখন কাঁদি, আমি শুধু চাই

আমার প্রত্যেক প্রেমিকারা আমায় দেখুক

আর অজান্তেই আবিষ্কার করুক সেইসব লুকনো স্খলন

চাই তারা হাতড়ে দেখুক আমার প্রতিটি গোপন সুড়ঙ্গপথ

যেইখানে আর কোনো গুপ্তধন অবশিষ্ট নেই

যেইখানে আমার অবচেতনের দুর্বল প্রতিরক্ষা ছাড়া

আর কোনো শেষ গোলাবারুদ মজুদ নেই

তবুও স্মৃতি, ইতস্তত গুঁড়ো গুঁড়ো চিত্রকল্প

তোমাদের না বলা প্রিয় শব্দসমূহের তোরণনির্মাণ

এইটুকু সম্বল করে ইলেকট্রনের মতো নিস্তব্ধ বলয়িত পথে

কাঁহাতক ক্রমান্বয়ে তোমাদের সম্মুখীন হতে পারি ?

ওহে নব্য অষ্টাদশী, ওহে দূরতর প্রিয়তমা প্রাক্তনী

আমি শুধু চাই আর একটি বার হলেও

আমি যখন কাঁদি, তোমরা সকলে আমায় দেখ।

 

 

ঢের পথ হেঁটে এসে পৃথিবীর এই মধ্যবর্তী শুন্যতা

আমায় গ্রাস করে নিয়েছে

এখন আমার নিজস্ব কোনো নাম ছিল না

এখন আমাদের নিজস্ব ভাবে কোনো নাম রইল না

পৃথিবীর পেটের ভেতর মানুষ-মানুষীর কৃত্রিম

খেলাঘরে, ক্যাম্পে ও গবেষণাগারে

সর্বনামের মতো পঙ্‌ক্তির শেষাংশে উপস্থিত হয়ে

তাদের ক্রিয়াকলাপ নিরীক্ষণ করেছি আমি, 

প্রতিটি মিছিলের পর পড়ে থাকা জীর্ণ ফেস্টুন

ট্রাম থেকে ফিরে যাওয়া মানুষের ভিড়ের মাঝে

সামগ্রিক অস্তিত্ব সঙ্কট বারবার চেপে ধরেছে আমায়,

যে শুন্যতার কথা বহু বৎসর পূর্বে একটা ফাঁপা পেয়ালার

উদাহরণ সহযোগে দিওজেনিস আমাদের বলেছিলেন

 

 

আমি ভাবি নিছক কবিতা লিখব

আর সম্পাদক ক্রমাগত চিৎকার করে বলেন,

বারো লাইন, বারো লাইন

বস্তুত বারোখানি লাইন অনেক

পৃথিবীর জন্ম থেকে এমত বৃদ্ধাবস্থা অবধি লিখতে

হয়তো বারো লাইনের কিছু কম প্রয়োজন

এইসবের মাঝখানে নিজের ক্ষুদ্র অবস্থান খুঁজতে

সচকিত হয়ে দেখি আট লাইন ইতিমধ্যে অতিক্রান্ত

আর বাকি যেটুকু তা অনায়াসে কেটে যাবে অবরে সবরে

পুরাতন প্রেম, দুঃখবিলাস এই সব চর্বিতচর্বণ নয়

শেষ কটা লাইন বরং থাক সেইসব অসমাপ্ত চিঠির জন্য

যা আমি তোমাদের লিখব বলেছিলাম আরেকটা মনখারাপের দিনে