শুভদীপ সেনশর্মা’র কবিতা
ঘূর্ণি
সিঁড়ি উঠে যায়
সিঁড়ি নেমে যায়
বহুদূর স্বপ্নের মতো
চলে যায় রাস্তা
ওপারেই তৃণভূমি
ওপারেই চাঁদ
সিঁড়ির শরীর ঘেঁষে
পূর্ণিমা রাত
শুভদীপ সেনশর্মা’র কবিতা
ঘূর্ণি
সিঁড়ি উঠে যায়
সিঁড়ি নেমে যায়
বহুদূর স্বপ্নের মতো
চলে যায় রাস্তা
ওপারেই তৃণভূমি
ওপারেই চাঁদ
সিঁড়ির শরীর ঘেঁষে
পূর্ণিমা রাত
মৌমিতা পাল-এর কবিতা
সবুজ জলপাড়
এক খেলাঘর চু-কিৎ-কিৎ
এক কিংবা দুই
এক খেলাঘর পুতুল খেলা
তোর সঙ্গে রই...
সৌমাল্য গরাই-এর কবিতা
পত্রকথা
১
একটা চিঠির জন্য আমাকে হারিয়ে যেতে হয়। যে অক্ষর বন্দি থাকে তাকে ঘরে পৌঁছে দিই। অক্ষরগুলো নাম পায়, এমন একটা নাম যে নামে অনেকেই আছে কোথাও না কোথাও। প্রকৃত নামেরা হারায় অথচ তাহাদের সর্বনাম এক। কী করে তাদের দিই নামা-বলি? এর চেয়ে থাক সেসব চিঠিরা নিজের মতন।
চিঠিদেরও
মন থাকে। একলা দুপুরে
তাদের
হারাতে ইচ্ছে করে। স্কুলফেরত চিঠিটির দেখা করতে ইচ্ছে হয়, কোকিলপুরের কিশোরীর সাথে।
কোনও কোনও চিঠির তাঁতিহারের মেঘ হতে ভালো লাগে, আকাশের বৃষ্টিটিকিট ঝেঁপে ভাবে নৌকা
ভাসাবে ঘন দুরযোগে।
শস্যের যৌবন হবে ভাবে যে চিঠি সে প্রকান্ড একটা মাঠের শরীর বুকে ধরে সম্পূর্ণ গ্রামের ঠিকানা হতে চায়। কোনও চিঠি ভাবে বাঁশি হয়ে ভুল সুরে বাজবে, যাতে তার রাধা কখনো দুঃখ না পায়। মধুকূপী ঘাসে ফুল হয়ে ফুটবে, এমন চিঠিরা অপেক্ষা করে কিন্তু কে তাকে পৌঁছে দেবে এমন ঠিকানায়? পিনকোড জানে না কেউ।
কোনও কোনও চিঠি থাকে তারা অর্ডিনারি। তাদের কিছুই হতে ইচ্ছে করে না। হয়তো কিছু না হওয়াটাই তাদের একমাত্র ইচ্ছে। অন্ধকার মর্মরের স্তূপ হয়ে তারা ক্লান্ত ও বিষণ্ণ হবার স্বপ্ন দ্যাখে
যে চিঠি নিরুদ্দেশে যায়— তারা সব কোথায় ওড়ে। বায়ুবাহিত ঝরাপাতা তারাও তো গাছেদের চিঠি, কুড়িয়ে রেখেছ, তাকে কেউ? দিয়েছে ঠিকানা পৌঁছাবার?
৩
মৃতদের ঠিকানায় চিঠি আসে। চন্দ্রাভিমানে বসে থাকে তারা। চাঁদের গন্ধকে গায়ে চন্দনের মতো লেপে। অপেক্ষা করে চিঠির জন্য। জ্যোৎস্না পাঠিয়ে বলে-'এইখানে দাও'। আমাদের কাছে জ্যোৎস্নামূলক কোনও ডাকটিকিট নেই। এই অক্ষমতা নিয়ে চিঠি পাঠাব কীভাবে?
সম্পাদকীয়
সময় ও যাপনের দুঃসাহসিক ঘোড়াকে আদর করছে নারী! পুরুষেরা বইছে বৃদ্ধ অক্ষমতাকে। পাথরে পাথরে আদল ভেঙে আসক্তি ছেড়ে বেরিয়ে আসছে মাথাসমগ্র বিশ্বাস! আমরা দৃষ্টি খুলে ধরিয়ে দিচ্ছি অন্যের হাতে। এ কি আমাদের ক্ষত ভরাবার পাত্র? এ কি আমাদের নির্লজ্জতা? নাকি ভেসে উঠছে ছায়াঘুমের এক একটি দালান কাতরতা...সিদ্ধার্থ দাস-এর কবিতা
মহামারী দুঃখ আর বিন্যাস
১
দুঃখ আর বিন্যাস সমান বিনয়ী কেউ ছেড়ে কথা বলেনি।
ক্ষমা চাইব না
কিছুতে ভেঙে পড়ি না অরন্যসপ্তাহ। বড়োলাটকে বলে
দিয়েছি নীল চাষ করব না।
দাদন চাই না শুধু খেয়ে পরে বাঁচি।
২
মেঘ বালকসুলভ বিচিত্র দোঁয়াশ। প্রয়োগ ভেদে
জলকাটা।
আয়নার সামনে ভ্রম কাটেনি। ডান হাতে লিখি। পদহস্তাসনে
তলপেটে চাপ পড়ে। মেঘ ভূমিষ্ট আদরের দেশে।
৩
কথার ধোঁয়াশারা ভবিষ্যৎ। ধর্ম নিয়ে যত সিনেমা
সবটা মহাভারতে আছে।
হাত ঘসে করতল উষ্ণায়নের শিকার। হাত ধুয়ে
মধ্যবিত্ত
প্রায় সর্বশান্ত। চোখের কাজলে গান্ধারী রুমাল
ভিজিয়ে ফেলে।
ছায়া সঙ্গী
অদ্ভুত উদ্দেশ্য সব ছায়া আর মায়া হাতের রেখা
কাটাকুটি খেলে।
ক্ষয় খতির হিসেব হয় না। খুব কম সময়ে বাসস্হান
মেরামতি,
সাজানো সংসার
পানীয় জল বিদ্যুৎ নূন্যতম পরিষেবা-মানুষের পরিচয়।
পায়রা বর্ণ পরিচয় জানে। মোঘল প্রাসাদে জনান্তিক
উপনগরী। দলবদ্ধ
রেশনে মুসুর ডালের লম্বা লাইন, ধান গম জীবন ধারণ।
ফাটা বাঁশে টিন গুল পেরেক, আন্দোলনের সাথী কাছেই থাকত
একসময় চাতক বাড়ির অমতে বিয়ে তারপর ছাড়াছাড়ি ইন্দ্রিয়
আদ্যন্ত সজাগ।
ঘাসের মধ্যে সহজ অনুমেয় কিছু শাকপাতাড়ও আছে
অগম বিস্তারে প্রাচীন শান্তিপ্রিয় পুরোহিত।
মনস্কামনা জানালে
হাতেনাতে ফল পাওয়া যায়। ঘাসে নিহিত খনিজ
পাকস্থলীর
পাচকরস নিঃসরণে নগরকীর্তি। কেউ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে
ছোঁয়াচ বাতিগ্রস্ত
ফুল বাগানে লালিত্যশোভা ঘাসের উপর হেঁটে, আরক্ত পাপড়ি প্রেম
নিবেদনে নির্ভরশীল। আতাগাছে বিনিদ্র তোতার, মার্গ দর্শন।
মধ্যবিত্ত মনের কোণে
পাহাড় মানে ক্রমশ নীচ থেকে উপরে উঠি আর উপর থেকে
নীচে নামি।
দুটো ঘটনা ঘটে প্রায়শ একসঙ্গে।
কারো উপর বেশি নির্ভরশীল হলে সময়ের ব্যবধান বাড়ে মাত্র।
হাঁড়ির ভাত কতক্ষণে ফুটবে ঠিক হয় চাপের তারতম্য।
চাপটা স্বাভাবিক। কাঁচা হলুদ রোদ শুকনো চপল।
গৃহহীন উন্মত্ত অসুখ পাহাড়ের চ্যুতি―
ক'জন হাত তুলে
দাড়িয়ে সানু তলে, ক'জন গাছের দড়িতে গাছ বাঁধতে চায়,
দূর দূর সীমানা বেড়া ঘেরা জঙ্গলে ক'জন গৃহহীন।
কোলাহল বিহীন সম্পর্ক নীচ তলায় বাড়ি ভাড়া থাকে।
গাছগুলো এগিয়ে আসে প্রানবন্ত শহরের দিকে ঝড়ে
নানান বাহানা।
গাছ ও পাহাড়ে পর্যটন সমন্বয়।
ছাব্বির আহমেদ-এর কবিতা
১.
স্পোক
জং ধরেছে স্পোকে, ফেলে দিয়েছি
খারাপ স্মৃতিগুলো...
ভাগ্যের চাকায় গোধুলি।
ঘূর্ণন বেগে ত্বরণ সরলরেখা বরাবর
থেমে গেছে, ক্ষেত্রফল শূন্য রেখে
পরিধিতে সুখ লিখে রেখেছি।
মন্দনের খাতায় ঋণাত্মক চিহ্ন
আঁকতে ভুলে গেছি,
তুলিগুলো হারিয়ে গেছে,
স্পোকে রঙ করা হয়নি!
২.
ব্ল্যাকবোর্ড
ব্ল্যাকবোর্ডে লিখতেই বেরিয়ে এল
বুনো টিয়া, সবুজ অবয়বে।
আমি গাছের ডালে তাকে দেখতে পাইনি,
লাল শাক ঝুলছিল।
সাদা চকে লিখেছি রাষ্ট্রবিজ্ঞান,
শিলা ভেঙে পড়েছে বোর্ডের উপর
এক টুকরো পকেটে কুড়িয়ে রেখেছিলাম,
কাঁচের বয়ামে দিতেই অদৃশ্য।
সাহারা মরুভূমিতে ইতিহাস খুঁজতে খুঁজতে
কেঁপে উঠল যৌবন,
ফেটে বেরোল কালপুরুষ।
বিড়ালের গোঁফে দুধের আস্তরণ,
আঙুলে ডলা দিতেই
ব্ল্যাকবোর্ডে ফুটে উঠলো শান্তি!
৩.
ছাইগুলো বুকে বিঁধছে
টিকটিকির আওয়াজেও সত্যতা থাকে,
গোরস্থানে গিয়েছিলাম হাড় খুঁজতে..!
শব্দহীন ভাবে পড়েছিল কর্ম।
কানের লতায় বিড়ির ছেকা খেয়েছি,
ঝিঁঝিপোকা তির ছুড়েছিল
ছাইগুলো বুকে বিঁধেছে।
ব্যাঙের কর্কসে আনন্দিত প্রাণ
প্রজাপতির রঙ ছড়িয়েছি
হোটেলের সাদা চাদরে, দাগ পড়েনি।
ঘড়ির কাঁটার ক্যালসিয়াম খেয়ে
পেন্ডুলাম খুঁজতে গেছিলাম টর্চলাইট হাতে
ট্রেনের চাকা গড়লেও, হুইসেল বাজেনি।
কালের সমুদ্রে নৌকার পালে ছিদ্র দেখে
সাইরেন বাজিয়েছে মৃত্যু, সাবমেরিন
চোখে পড়েনি...
জয়ীতা ব্যানার্জী’র কবিতা
ঘুড়ি ও রাত্রির কবিতা
১
সন্ধের আজানে আরও কিছুটা সময় বাকি
পানাপুকুরের হাঁস মনিবের ডাক শুনে
মেঠো পথ ধরেছে এখন
তোমার আসার কথা আজও সত্যি জেনে
মেঘের অনতিদূরে দ্রুতবেগ ঘুড়িগুলি দেখি
দেখি জোড় গাছটির পায়ে সকালের বাতাসা ছড়ানো
আর অপরাজিতার কুঁড়ি। মনে হয়
পৃথিবীর সব মায়া, ব্যর্থতা যেন এই এক গাঢ় নীলে
সফলতা ভ্রমে কেউ নৈবেদ্য সাজিয়ে দিয়ে গেছে
সারিবদ্ধ কীট আসে, তাকে ঘিরে অবেলায়
মাছি ওড়ে বিষাদের মতো
২
যেমন সকাল আর সরোদের মধ্যবর্তী এই
একফালি মোহ,
সুখ বৃষ্টিকে অনিবার্য করেছে
তেমনই হাওয়ার রোখ, পাঁপড়ির কেঁপে ওঠা, আলো
আমাকে সে অদৃষ্টের কাছাকাছি আনে
যাকে দেখবার সাধ দূরতর পাখিটির স্বর
অথবা সফল সেই ঘুড়িটির মতো, যার
অনন্ত উড়ান দেখে নিচেই কোথাও তার মনিবের
গরিমা-ও আঁচ করা যায়
৩
রাত্রি-কে 'নির্মোহ' নাম দিয়ে কারা চলে যায়
ওদের প্রেমিকা আছে। দিনের অন্তিম-এ আছে থালা ভরা ভাত
পথের কুকুরগুলি পরস্পরের থেকে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে
এই মোহহীন রাতে চাঁদ দেখে
নক্ষত্রের মতো দানা শুকনো ভাতের। অতঃপর
তারা-ও ঘোলাটে চোখে মানুষের দলটির পিছু নেয়
এ যাত্রা এবং স্বর্গারোহণ যে এক-ই
ধর্ম সে কথাটুকু প্রকাশ্যে বলে না, শুধু
লেজ নেড়ে সম্মতি জানায়
রঞ্জন মৈত্র’র কবিতা
আঙুল ১
যে ঝলক খানিক পুড়িয়ে যায়
খানিক আলো অন্ধজনে
ব্রেইল অক্ষরে সূর্য চাঁদের যাওয়া আসা
দু'একটা হিউমার আর একটা দুটো শব্দমিথুন
তাকে প্রেমিক বললে ধাঁধায় পড়ি
কাকে ভালবাসে আমার আঙুল
ছুঁয়ে বোঝা দশ টাকার কয়েন
সে সূর্য নাকি চাঁদ
আমি তোমার পাশটুকু খুব মন দিয়ে চিনি
তুমি উত্তর তুমি নিরুত্তর কাছে বসে থাকি
চার জোড়া লাইন ও তাদের প্ল্যাটফর্ম
যত যাওয়া সবুজ ঝলকে
আসার অপেক্ষাও যতটা সবুজ
তোমার চশমাকাল ঢুকে পড়ে ডাউন লাইনে
আমার পাওয়ার নেই
প্লাস মাইনাস নেই
বসে আছি হে, ছুঁলেই তরঙ্গ হয়ে যাব
ছাদ
থাকার কথা ভাবলে বাড়িটি সাহায্য হয়ে ওঠে
একটি ভোরের মধ্যে স্থির হয়ে বসা
মানেময় পঙ্ক্তির সামনে আধো আলোর দেয়াল
হাত নাড়ো ছাদ নাড়ো
অন্ধকার দোমোহানীতে টেকনিক নয়
জলধ্বনি গড়ে তোলে নদীনাম
পথ পালটে ধুলোয় এসেছি
দূর আবাসন থেকে চলকে পড়ে আলো
ঝলসে ওঠে প্যানডেমিশিয়া
ইয়ে হাত মুঝে দে দে
নিরক্ষর রেখাগুলি ভালবেসে পড়ি
তাদের রক্তমাংস সমবেত আঙুল
মেঘলা বাড়িটি ডাকে
তার পরমাণুগুলি সোঁদা চব্বিশ পরগণা হয়ে যায়
এডিটেড চোখ
শরীরে থকথক করছে নীল কাদা
তুমি কি নদী
পাতায় উপচে পড়ছে অ্যাক্রিলিক গ্রিন
তুমি কি বনানী
হাতে এত আগুন ও রামদা
তুমি কি পাড়ার লোক
বুক করে বসে আছি
অ্যামাজনের জুতো
জোম্যাটোর বিরিয়ানি
কখন জল বন্ধ আলো অফ
আগুন জ্বলে উঠবে আর
রক্ত যার টুপ এখনও শুনিনি
ভাললাগার ঠিকঠাক অ্যাংগেল আছে
ধ্বসন্ত মকান বা সুচিত্রার মাটি
কাগজ দেখে মেঘ কালো বলা বাচিক পাখিটি
খুঁজেছিলাম চোখ
ভাবতাম বলব ওগো চোখ
ক্যামেরার পিছনে এত প্যাস্টেলের খালি বাক্স
এত দাঙ্গা ও কল্যাণ মণ্ডপম
পাড়াটি হারিয়ে যায়।