লেখা পাঠান আমাদের chayarodpatrika@gmail.com

Monday, October 26, 2020

নীপবীথি ‌ভৌমিক, একাদশ সংখ্যা

নীপবীথি ‌ভৌমিক-এর কবিতা

 

প্রিয় বিষাদ

 

প্রতিবার ভালবাসা খুঁড়ে জন্ম নেয়

   আমাদের স্থায়ী সম্পর্ক

 

   এই যে, নেই হয়ে যাওয়া মুহূর্তটা,

     যাকে ছুঁয়ে নেমে এসেছিল আমার শব্দ-যাপন-কাল

 ভালবাসায় বাঁধা পড়েছিলাম তার সাথে

 

     প্রতিটি প্রাচীন সময় ছুঁয়ে নামে

       অক্ষরের ঘর-সংসার,

 আর সেই সংসারের সাংসারিক দরজার 

চৌকাঠের ওপারে লুকিয়ে থাকে ‌হারিয়ে যাওয়া 

শ্রী-রাগ...

 

 

 

একটি খুনের আগে

 

খুব ঘুম পায়। শরীর ছুঁয়ে নেমে আসে অবসন্নতার আসর

 

   সেখানে সকাল হয়। অপরাহ্ন বয়ে যায়

   ছায়া আর রোদের সেতারে বেজে চলা ভীমপলশ্রীর তানে...

 

    প্রতিটি সন্ধ্যা এভাবেই যাপনে আসে,

       হাড় মজ্জা জুড়ে নামে গোধূলি মাখা পূরবী

 

  খুন হতে থাকি এভাবে আমি

  প্রতিটি দৃশ্যের হাতে। অপলক চাউনি নিভে

  যায় আবার জীবন আর জন্মের মাঝখানে।

 

 

কবিজন্ম

 

      লেখারা থেমে গেলেই জন্ম হয়

   আবার কবিজন্ম।

 এই যে, এই মুহূর্তে প্রতিটি শব্দ প্রত্যেকটি অক্ষর

  হেঁটে যাচ্ছে ক্রমশ ঘুমের দেশে

    আর আমি হাত ধরে জোর করে তাদের নামিয়ে

  আনতে চাইছি আমার কাব্য ঘরের অন্ধ রঙের ভিতরে

 

   বৃহঙ্গকেও ঠিক এভাবেই বাঁধতে চাই আমরা।

   উড়ে যেতে চায় সে, দূরে আরও দূরে।

  হয়তো যেখানে সন্ধ্যা নামে না এমন এক ঠিকানায় !

 

    আমরা শিকল দিয়ে ওর পায়ে বেড়ি পরিয়ে পুরে

   দিই লোহার খাঁচায় নিঃশব্দে।

  আমার কবিতারাও ঠিক তেমনই। উড়ে যেতে চায়

   স্তব্ধতাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে নিস্তব্ধ গ্যালাক্সিতে।

 

     ‌আর আমি, কবি জন্মের আশায় আশায়

   গর্ভে বিলীন হই কবিতার।

অদিতি চক্রবর্তী, একাদশ সংখ্যা

অদিতি চক্রবর্তী-র কবিতা

 

নারী নেই এই শহরে

 

আমরা মৃত্যু লিখতে পারি! অজস্র ঘাসের অভ্যন্তরে সাজানো গোজানো কয়েকটা পুরুষ বসে আছে, তাদের কোনো নারী নেই! না আছে কোনো অভ্যাস, ওরা চেয়ে দেখে, আর ওরা বসে থাকে ঘাসের মাঝখানে, সেজে ওঠে বিষণ্ণতার প্রথম পাতায়, ওদের পায়ের গোড়ালির লাগোয়ায় গোটা একটা বছর কেটে গেছে টের পায়নি! আকাশে উনত্রিশে গোধূলি নামতে নামতে, বাস্তবের মাটিতে আমি চারা গাছ লাগাতে শুরু করেছি, কারচুপি মেঘ তখন গিলে নিচ্ছে ঘূর্ণিঝড় 

     প্রতিটা পায়ের নখে যেন পরিযায়ী পাখি গম ভাঙাচ্ছে, শহরের শরীরটা ছিন্ন বিচ্ছিন্ন, নারী নেই এই শহরে, আছে শুধু পুরুষের পোষ্য গিলে খাওয়া আগুন পাখি।

 

অন্য গ্রহ

 

উলকার মতোন ভেসে আসা যে কোনও ডাক ভয় দেখাতে পারে অথবা এক নিমেষে নরককে স্বর্গ করেও তুলতে পারে একটা পাখি গাছে এসে বসে দেখতে পারে দুর্যোগ, চার আনা'র মতোন ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে সব থমকে যেতে পারে আবার, এক নিমেষে শেষ করে দিতে পারে ভূমি।

সব সম্ভব সব...

 

পুরুষত্বের শিকার ফেমিনিসম

 

অনেক সাবকনসাস, নার্ভ ধরে এগিয়ে চলেছি

পুরুষত্ব নামক পবিত্র অগ্রাধিকারকে লিখিয়ে

চলেছি, মেল ডমিনেটেড এর পেপারে...

রাস্তার নোংরা, ড্রেনে এ পড়া কুকুরদেরও

শ্লীলতাহানির শিকার হতে দেখেছি...

পুরুষত্বকে ভিজে বেড়ালের মতোন

ফেমিনিস্টদের সামনে উদ্ভ্রান্তের মতোন

ভিক্ষা করতে দেখেছি, এখনো ঠিক সমানে

সমানে, রেজাল্ট বেরোয়নি, পুরুষত্ব এখন

নিজেকে সর্বের সর্বাভাবে, ফেমিনিসম আজ

ও পরিচারিকার কাজ করে দুমুঠো খায়

আর শিকার হয় পুরুষত্বের!

 

গরল

 

একটা বিষাক্ত বর্ণহীন উপক্ষার ভেতরে আজকাল সুখীই থাকা যায়, বদমেজাজি আকাশে নিদারুণ হাত পা ছড়িয়ে নেশা করার ভেতরে কোনো পিছুটান নেই, ঘন ঘন প্রবাহে ঘরময় নিকোটিনের সাথে অবাধ্য অপেক্ষা নেই আর শুধুই উপেক্ষা আছে শুধুই উপেক্ষা।

 

অলৌকিক

 

রহস্য তখনও গাড়ো, সন্ধ্যার পর রাত অবশিষ্ট পড়ে আছে, শিমুল গাছের তলায় বিভিন্ন সূক্ষ্মদেহ ভেদাভেদ করছে, আলোচনা করছে হাজারটা প্রশ্ন, আগের জন্মের ইতিকথা, পঁচিশ লক্ষটা স্থান কাল সময় তখনও বয়ে যাচ্ছে আগন্তুকের মতোন, হাজারটা অর্ব শেপ নিচ্ছে গাছের পাতায়, তখন মাঝরাত, নার্ভ সেলগুলো জড়ো হয়ে আছে গাছের শিকড়ের কাছে, আমার সামনে কামনা বাসনার অভিব্যক্তি ঘটাচ্ছে, অশরীরী তখনও পবিত্র চুল্লি গরম হচ্ছে শশ্মানের রাস্তা দেখাবে বলে!

ছাব্বির আহমেদ, একাদশ সংখ্যা

ছাব্বির আহমেদ-এর কবিতা

 

চলো একটা সেলফি তুলি

 

                         ...চলো একটা সেলফি তুলি

পেয়ারা গাছে কাঠবেড়ালির লেজে একটা DSLR ঝুলছিল

                 আর তুমি চুলের ফিতেই রং মাখছিলে

একটা কবিতা লিখবো বলে যখন ভাবতে বসেছি, 

তখনই উত্তরের জানালা দিয়ে বক নেমে এলো

কাশফুল তুলতে গিয়ে দেখি বিয়াল্লিশ মাইলের মাঠে

যে চিত্রটা ফুটে উঠেছিল, সেখানে হোমিওপ্যাথির শিশি ভর্তি

যেন ঘরের কার্নিশে চড়ুই পাখি বেসুরে গান ধরেছে


                 চাঁদের আসে পাশে সংযত রাখতে হয়

তবেই অভিসারে যেতে গেলে পায়ের কাটা তুচ্ছ মনে হবে

তরকারি কাটতে গিয়ে কাটারিটাও হারিয়ে ফেলেছি

               তাই মুদিখানায় আজ যেতে হয়নি

            তুমি লন্ডনের রাস্তাটা চেনো?

      পূর্বরাগে আজও আমি যেতে রাজি যদি, 

সেমিকোলন পার করে ফুলস্টপটা তুমি তুলে দিতে পারো।

 

 

সাইবেরিয়ার উঁচু ঘড়িটা

 

বুক উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছি

অনুতাপে পোড়ে না আগ্নেয়গিরির লাভা

              মুখের নীচে চোরা গন্ধ

বাতাসে ভাসে মৃতদেহের ধুপকাঠি

গাঢ় অন্ধকারের মতো বিপদ ধেয়ে আসে

 

তোমার ঠোঁট থেকে 

একে 

একে 

খসে পড়ে নির্লিপ্ত মেঘের ছায়া

পশ্চিমী ঝঞ্ঝা

বজ্রঘাতের চোয়াল ভিজিয়ে দেয়

 

তোমার সিক্তবসন

আমার যৌবনের জানালায় উঁকি মারে

চাঁদের নিচ দিয়ে যে কুয়াশা আসার কথা ছিল

তার আজ নাকি বিবাহবার্ষিকী

 

                 মত্যুকে আমি ভয় পাই না

         নীরবতা আমার সাথে ঘর বেঁধেছে

আর তুমি নদীর স্রোতে ভাসিয়ে দিয়েছ নৈঃশব্দের পাহাড়

 

সাইবেরিয়ার সেই উঁচু ঘড়িটায় কান্নার সুর বাজে

আকাশের মাথায় একটি শব্দ

ভাঙা কলসিতে মাটির তৃষ্ণা মেটায়

পৃথিবী থেকে বেরিয়ে আসছে রক্তের নদী

 

চোখ ভিজে যায়

বুকের তলায় শুয়ে থাকে কালশিটে ছায়া

 

 

বেকার জীবন

 

বেকারত্ব আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ দিয়ে বেরিয়ে

উঁচু পর্বত তৈরি করেছে

 

ভবিষ্যতের স্বপ্নগুলো পাললিক শিলার ভাঁজ বরাবর

আড়াআড়ি ভাবে দাঁড়িয়ে

 

মার্বেলের ভরে ৯০ ডিগ্রি ঘুরে দাঁড়িয়েছে সংসারের চাপ

অনুভূমিক তলে চোখের লাভা গলতে শুরু করেছে

 

জলপ্রপাতের গা বেয়ে নামছে উচ্চাকাঙ্ক্ষা

দিনে দিনে বেড়ে উঠছে ডিপ্রেশন

ভঙ্গিল পর্বতের ভাঁজের মতো

 

কপালের খাঁজের মেরুজ্যোতি আজ

আমৃত্যু নিভৃতবাসে গেছে

যেন মার্কার পেন দিয়ে কেউ

বেকার লিখে দিয়েছে তার মাথায়

 

 

চ্যালেঞ্জ

 

প্রতিপক্ষকে সরল অঙ্ক ভেবে

(a+b) হোলস্কয়ার সূত্রের ফিতেয়

গভীরতা মাপতে যাইনি

 

শক্ত প্রতিযোগিতার সরলরেখায়

              মৃত্যুবান মেরেছি

কৌণিক বিন্দুর বিপরীতে দাঁড়িয়েছিলাম

         নাক বরাবর তীর ছুঁয়ে গেছে

 

দক্ষতার রশ্মিগুচ্ছ দিয়ে সমতলের উপর

                 চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছি

 

 

ছোবল

 

আগুনের ছোবলে ঘুমিয়ে আছে শীতকাল

                   গায়ের রঙ ফ্যাকাশে

বিবর্ণ মুখে ভাষণ দিতে গিয়ে

       দুলাইন পূবদিকে ঘুরিয়ে দিয়েছি

      সূর্যের তাপ যত হালকা হয়েছে

গাছের ছায়ার বর্ধিতাংশ জেগে উঠেছে

কম্পাসে কেটে নিয়ে

বক্রতলে দুটি বিন্দু এঁকেছি

রবীন বসু, একাদশ সংখ্যা

রবীন বসু-র কবিতা

 

নিমগ্ন  অস্থিরতা

 

নিমগ্ন অস্থিরতা ঘিরে ধরলে

আমি বড় বেশি চিৎকার দিই,

বিসদৃশ আর বেমানান সেই

কণ্ঠস্বর ভেঙে গিয়ে পূর্বাপর

সজ্জিত বিন্যাস আঁকে বারবার;

সংযোগসেতু দিয়ে তখন যাত্রা

তার ভৌগোলিক সীমারেখা মাপে।

কলম্বাস আর হারানো কম্পাস

দিকভোলা হয়ে ডুবন্ত প্রবাল

দ্বীপের স্বচ্ছতায় দাঁড়িয়ে থাকে;

তখন নিমগ্ন অস্থিরতা, সেই সঙ্গে

নিরুদ্দিষ্ট হাওয়া কানাকানি করে।

অনিকেশ দাশগুপ্ত, একাদশ সংখ্যা

অনিকেশ দাশগুপ্ত-র কবিতা

 

দিক নির্দেশ থাকতে নেই

 

ফুরিয়ে যাচ্ছে রোদ্দুর

আর এই কাছে এসে বসা;

মাথায় জলপটির দুপুরে কাঠঠোকরা

নিবিড় মনোযোগে

একটি ছিদ্রের ভেতর উঁকি মেরে দেখেছিল

কাঠপোকাদের জমাট দুঃখ কীভাবে

                          খুবলে নেয় তার রঙ ওঠা ঠোঁট...

অসুখের পর

একা হেঁটে উঠি সমস্ত দোতলা ঘর,

তার ওপরে ছাদে রৌদ্রের জ্বলন্ত চলাফেরায়

কোনো পুরানো বালিশের তুলো আরও নতুন ফাঁপা

পেঁজা মেঘের ভেতর

                                         এরোপ্লেনের রহস্যের মতন

অনেক কাঁচা ঘুমের

                                         আনকোরা গন্ধ ছড়িয়ে যায়

 

সফ্ট টয়

 

 স্পঞ্জ থাবার পুতুল তুমি

এমব্রয়ডারির স্বাগত ঘর্ষণ তোমার সন্ধিস্থলে

সাবান জলের কাঁচ ফিরে যাচ্ছে

তোমার আইনানুগ চোখে,

কাঁচের গায়ে দায়সারা মণি ঝুলে আছে

বাইরে অথবা ভেতরে

জলে ভেজানো কার্পাস

তোমায় ভারী করে

অযুত নিযুত উদ্দীপনাহীন সুতোর জাল

তোমায় ভারী করে

 

দূত

 

হাতের অচেতনা বোঝাতে

একটা বইয়ের পাতা উল্টে যাচ্ছ ক্রমশ

 

যান্ত্রিক সিঁড়ির উচ্চতা এভাবে বেড়ে চলে

আর কাউকে কখনই দেখা যায় না নামতে

 

ফুলের টব থেকে আকর্ষ

উঠে যাচ্ছে উর্দ্ধমুখে

ওপরে গম্বুজে; বিরল সূর্যের ছকে

 

একঘর পায়রার জন্য বিকল্প কিছু কার্নিশ

যেখানে সমব্যথী প্রাচীন অশ্বত্থ বহুবার

তার বেড়ে ওঠার দাগ কাটে

 

এই মধ্যরাত থেকে শিশুপালনের ঘরগুলো

খুলে দেওয়া হবে

ওখানেই সমস্ত প্রতিবাদী ঘুম জড়ো করো