লেখা পাঠান আমাদের chayarodpatrika@gmail.com

Wednesday, January 20, 2021

সিদ্ধার্থ দাস, ১৪

সিদ্ধার্থ দাসে কবিতা

 

বাল্য বিবাহ

 

আগুন বিধবা সেজে পুড়ছে মাটির দেয়াল।

অহংকার ছুঁই ছুঁই মৃত্যুবাণ

মাংসল সংস্পর্শে গুরুধ্বনি রচিত।

তিরের আগুন সরগরম, কুমায়ূন চুপ।

 

ঠিকই দেখছে সাক্ষীগোপাল

প্রণয়ী অঙ্গ শতজ্বালা

চুলপড়া শব্দে বিকশিত কাঞ্চনযোগ।

তেজস্বী হিংস্র হও।

ফুল ও আতরে গন্ধবিন্যাস যুগপৎ।

কৃষ্ণসঞ্চালনে তটিনী সমূহ নিভৃত, জল পার হয়।

স্বর্গরসে পরকীয়া শতায়ু কাম।

 

পরীক্ষা

 

খাতায় পাতায় যুদ্ধ শেষে বাড়ি যাই নম্বর।

দিন দুপুর আলো লেখে ফিরলে জওয়ান বাড়ির নম্বর।

বুকে আলো অভিসন্ধি, মুখে হাসি থাক,

মুখোশ ঢুকে যাক জঙ্গলে। ভুলভাল তদানিন্তন -

দায়বদ্ধ দ্রিদিম জলে...

 

চোখের নীচে আবেদন জাগ্রত কালি।

সবচেয়ে সহজ সত্য দধীচ, গাঙে ডুব দিয়েছে পলি।

 

দর্পন

 

তুমি আমায় দেখো, আমি তোমায় দেখি ধনু,

তুমি পরাশ্রয়ী সবুজ পাতার মর্ম লিখন, সকালে চাঁদভানু।

 

ছন্দ বহির্ভূত অক্ষর সাবলীল।

গাছের ছায়া মাত্রায় আমার বাড়ি মিথিল।

 

ভালোবাসে দূরহি যখন যেমন কাঁদি,

আলো অন্ধকারে সজীব চকিত আহ্লাদী।

 

দ্বিপ্রহর

 

লুকিয়ে পড়া কবিতার বই, বেআব্রু আলোক; সত্য সংহতি।

গানে গানে ভরিয়ে দেওয়া যায় দেহজ দুঃখ দোষ।

গানে গানে উচ্ছ্বাসিত মেঘ

বৈরি মেঘের স্তুতি।

 

বিদ্যার্থী মাঠ পাকা শিষ পালং

উপজীব্য কাগজ

বলপেন এইচ বি পেন্সিল জলঢং।

 

জ্বলে আগুন মনখারাপ, ভ্রমসংশোধন।

বিবসনা দেখতে চাই তফাতে।

বুকের চাপে ফুটেছে কুঁড়ি এন্ট্যাসিড

মুখের অরুচি নুন করলা ভাতে।

সায়ক দাস, ১৪

সায়ক দাসে'র কবিতা


ডিসেম্বর

 

কিছু দূরপথ নেই। কীভাবে যেন ভগবান সাজিয়ে রেখেছে কুয়াশার সাঁজোয়া গাড়ি। ঠিক এইভাবে আমার বাবা আমার ভবিষ্যতের জন্য ঝুলিয়ে রাখে ক্যালেন্ডার‌। আমি কবিতা লিখলে শীত হয়ে উড়িয়ে নিয়ে যায় ছেঁড়াখোঁড়া কাগজ-রোদ।

আমার বাবা জানে পরের ডিসেম্বরে আমি থাকব না‌। তাই ইদানিং ক্যালেন্ডারে ঝুল বাড়ে বেশি...

 

আমায় তুমি নিয়ে যেতে পারতে। ঝড়া পাতার উল্লাস দেখতে দেখতে আমি আর তুমি যেতাম। কিন্তু তুমি এলে না। আমার মাথার ভিতর কে শুধু বরফ ভরে দিল। ধীরে ধীরে আমি পচে যেতে দেখলাম আমার চারপাশ। হতশ্রী শীত! চারপাশ শুধু বদ্ধ এখন।

রোদে ইদানিং গা ভেজে না আর...

 

ডিসেম্বর চারিদিকে সুতো দিয়ে বেঁধে রাখে মৃত্যুকালিন শব্দ। কুকুরের মৃতদেহের পেটে জল চড়ে, ঠান্ডা হয়।

মধ্যবিত্ত গলিতে নদীর জল ঢুকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় স্বপ্নের স্লেজ। হরিণের চামড়া পড়ে থাকে দরজায়। রাতের উল্লাসে ভেসে যায় স্বপ্নমদির সান্তা।

 

ডিসেম্বর এলেই মনে পড়ে

আমার প্রেমিকার জন্মদিন

মনে পড়ে কীভাবে আমি কুয়াশা আটকে রেখেছি নিজের চারিপাশে। কীভাবে একটু একটু করে সত্যি করে ফেলছি নতুন আসবাবের স্বপ্ন।

ডিসেম্বর এলেই মনে পড়ে, কীভাবে চিরসত্য লুকিয়ে প্রেমিকার হাতে দিয়ে যাচ্ছি টাটকা, দগদগে গোলাপ...

 

ঠিক আগের ডিসেম্বরের আগে আমার মা ছিল। আমি শ্যাওলায় পিছলে গেলে আমার পায়ে পড়ত আদরের চুন-হলুদ, নরম শীতল মালিশ। আমায় জড়িয়ে থাকতো সহিষ্ণু কাঁথা...

এখন দেয়াল থেকে খসে পড়ে চুন। মা ডাকলে আরও চেপে ধরে দস্যু নৈঃশব্দ্যতা।

 

এই শীতে আমি বাইরে বেরিয়ে দেখি

কীভাবে তুমি ঘর থেকে সরিয়ে ফেলছো শান্ত, শীতল বরফ। কীভাবে আমি জড়িয়ে নিচ্ছি সাংসারিক চাদর!

অমিত পাটোয়ারী, ১৪

অমিত পাটোয়ারীর কবিতা


স্থানীয় সংবাদ

 

আকাশবাণী কলকাতা

উড়ে বেড়াচ্ছিকুসুমকুমারী দাশ।

 

খুঁড়ে নেওয়া বেআইনী বালির ওপর ভালোবাসা

স্থাপন করছে দুটো নেড়ি,

প্রোমোটারের বর্ষাতি থেকে টুপটুপ করে ঝরে পড়ছে

মারীচ সংবাদ,

তুলসীতলায় হিসু করে গ্যাছে

ছায়াছবির পেলব ডাইনি।

মগরাহাটের গোষ্ঠী-সংঘর্ষে দুইজন দাঁড়া-কবির

অপমৃত্যু। একজন গুরুতর জখম

রাজ্যের সংস্কৃতি মন্ত্রী রাতারাতি কুমির হয়ে গ্যাছেন।

 

গত দশ বছরে দেশে তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি

অনুমান, আগামী দশ বছরও

জয়সলমীর পদ্মশ্রী পাবে।

মাঝ-সমুদ্রের মাঝিদের গান গাওয়ার ব্যাপারে

সাবধান করা হচ্ছে

 

নকল ডানার পরিষেবা এখন এ পর্যন্তই

পরবর্তী ট্রাম চলবে একটু পরেই

 

দুস্মন্ত আসলে

 

দুস্মন্ত আসলে একজন পার্ভার্ট

 

তুমি ভেড়ির পাশে এসে বসলে

অঙ্ক কষে প্রমাণ করে দিলাম

সরস্বতী

হাত তুলেছিলেন কবির মাথা থেকে

 

সামান্য পুঁটিমাছ নিয়ে চলে যাচ্ছো।

যে তোমাকে বিয়ে করলো না,

বছর পাঁচেক পরেও স্ত্রী-সন্তানসহ এসে

সে বলবে একই কথা

 

সরস্বতী

হাত তুলেছিলেন কবির মাথা থেকে

কারণ

দুস্মন্ত আসলে একজন পার্ভার্ট

 

৮ই মে-এর লেখা

 

রাত্রিবেলা কবিতা লিখি বলে নাহিদের কথা

আমি কিছুই লিখি না

ভোরবেলা ব্রাশ করি না

লিখব!

ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠলে, সবকিছু ধুয়েটুয়ে

আমি লিখতাম,

চোখ বুজিস না নাহিদ, চোখ খুলে গা

কান থেকে সরিয়ে নে হাত

নাগাসাকির পর ভগবান মরে গিয়েছেন

আর নন্দীগ্রামের পর রবীন্দ্রনাথ।

 

নাহিদের গেঁড়ে বাচ্চাটাকে

একটা চব্বিশ-কালার অয়েল প্যাস্টেল কিনে দিয়েছি

ওর জন্মদিন আটই মে

কখনো পঁচিশে বৈশাখ পড়ে, কখনো পড়ে না।

সোনালী শর্মা, ১৪

সোনালী শর্মার কবিতা

 

কবিতা তোমাকে

 

()

এই দিনলিপির ভেতর হাঁটতে-হাঁটতে,

নিজেকে বড্ড ক্লান্ত লাগে, নাগকেশরের কাছে।

 

উঠোনে এখন রোদ পড়ছে ত্রিকোণ ভাবে।

তুমি এখন যতদূরেই যাও

 

তোমার গলার স্বর,

ক্রমশ ঘনিষ্ঠ হতে থাকে...

 

ক্রমশ ঘনিষ্ঠ হতে থাকে বর্ষার গান।

 

()

দিনগুলি ক্রমশ ডুবে গেলে এভাবেই

সূর্যের অনিয়মে রাত বেঁচে ওঠে

 

সমুদ্রস্নানে, তোমার পায়ের দাগে ছেয়ে গেছে

 

বালিস্তর...

তোমার আমার দূরত্ব পর্যন্ত!

 

অতএব,

অন্ধকারও গুটিয়ে নেয় নিজেকে, শুরু হয়

শামুকের দীর্ঘ চলাচল!

 

()

ভাঙছে কত দিন, পুড়ছে অজস্র কবিতা

তোমাকে দিতে পারিনি কিছুই!

 

এই অভ্যাসে জল মুছতে গিয়ে,

কখন বেলফুলও হয়ে যাচ্ছে মালা।

 

এখন কিছু শব্দ দিয়ে বিনম্র ফুল ফুটিয়ে ফুটিয়ে রাখলাম।

দেবো কোনো একদিন

 

                    কবিতা তোমাকে!

                  

 

()

একই ভাবে শুয়ে আছে ঘাসজমি

আর রাস্তাময় পাথরে ক্রমশ...

 

বাতিস্তম্ভ হয়ে যাচ্ছো তুমি!

 

কোনো এক দুপুরে,

মোম গলিয়ে বাতির সফল কায়দায়।

 

 

সাধারণ মানচিত্র বিন্যাসে মাথা রেখে,

পথে-পথে রাস্তা ভেসে যায়।

 

তারাময় তোমার চোখে শ্লোকগাথা হয়ে,

এখন ভিজে যাচ্ছি প্রায়;

 

আর দূরের কোনো গল্পে মিলিয়ে যাচ্ছে জলদক্ষয়...

 

 

()

তুমি খুব গোপনে লুকোনো

একটি বাক্স বন্দী নদী।

 

আর নদী বন্দি কয়েকটি শব্দে!

 

তবুও কয়েকটি ব্যবধানে আমরা সমুদ্রের

খুব কাছাকাছি ছিলাম।

 

()

সূক্ষ্ম নম্রতায় এই বাষ্প ভরা মেঘ পাঠালাম

তোমার নামে।

 

কিঞ্চিৎ, ফুটোফাটা হলুদ রঙের খামে।

সেই মেঘের জল কি বৃষ্টি হয়ে ঝরেছিল কোনোদিন?

 

সিক্ত হয়েছিল কি ওই হৃদয়ের ডালপালা?

 

-কাব্যিক সেতু ঘুরে,

দীর্ঘ স্তব্ধতার পরেও পেলাম না কোনো মন্তব্য...

 

()

তোমাকে যতই ছুঁতে যাচ্ছি

ততই দূরত্ব বাড়ছে!

 

ভুলে যাচ্ছি,

আমার সামনে তোমার প্রতিবিম্ব।

 

স্বচ্ছ অথচ বিপরীতধর্মী অক্ষাংশের মতো।

 

()

সরলরৈখিক আবর্তনে ভেসে যাচ্ছে কয়েক টুকরো রাত।

তুমি দাঁড়িয়ে আছো এলোমেলো চুলে,

 

ফেলে গেছ শেষ প্রহরে অবাঞ্ছিত

যোগাযোগ।

 

এখন ফাটলে শ্যাওলা হয়ে বেঁচে, ভেসে থাকায় ভালো।

 

 ভেসে থাকায় ভালো, অজস্র জলের ভেতরে

 বাষ্পীভূত জল হয়ে...

 

()

আমি বলছি না তুমি প্রেমের প্রতীক!

এমনই মূর্খতা আসে

 

 ঋতুর সমাহারে, বারে বারে

 ভেঙ্গে পড়ে দুরন্ত স্ফটিক।

 

(১০)

বার্ষিক গতির কোনো অপূর্ণতার দিনে বারবার রাতের এই বালিশ জুড়ে,

 

একবার তোমাকে ভাবতে গিয়ে দেখি,

কালপুরুষের দিকে তাকিয়ে আছি আমি।

 

আলুথালু স্বভাবে স্বভাবসিদ্ধ তোমাকে

জেনেছি,

 

তুমি দ্বিতীয় পুরুষ!

 

(১১)

সময়ের পতন ঘটে না কিছুতেই!

যা ঘটার ঘটে পতনের সময়...