সায়ক দাসে'র কবিতা
ডিসেম্বর
১
কিছু দূর, পথ নেই। কীভাবে যেন
ভগবান সাজিয়ে রেখেছে কুয়াশার সাঁজোয়া গাড়ি। ঠিক এইভাবে আমার বাবা আমার
ভবিষ্যতের জন্য ঝুলিয়ে রাখে ক্যালেন্ডার। আমি কবিতা লিখলে শীত হয়ে উড়িয়ে
নিয়ে যায় ছেঁড়াখোঁড়া কাগজ-রোদ।
আমার বাবা জানে পরের ডিসেম্বরে আমি থাকব না। তাই ইদানিং
ক্যালেন্ডারে ঝুল বাড়ে বেশি...
২
আমায় তুমি নিয়ে যেতে পারতে। ঝড়া পাতার উল্লাস দেখতে
দেখতে আমি আর তুমি যেতাম। কিন্তু তুমি এলে না। আমার মাথার ভিতর কে শুধু বরফ ভরে
দিল। ধীরে ধীরে আমি পচে যেতে দেখলাম আমার চারপাশ। হতশ্রী শীত! চারপাশ শুধু বদ্ধ
এখন।
রোদে ইদানিং গা ভেজে না আর...
৩
ডিসেম্বর চারিদিকে সুতো দিয়ে বেঁধে রাখে মৃত্যুকালিন শব্দ।
কুকুরের মৃতদেহের পেটে জল চড়ে, ঠান্ডা হয়।
মধ্যবিত্ত গলিতে নদীর জল ঢুকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় স্বপ্নের
স্লেজ। হরিণের চামড়া পড়ে থাকে দরজায়। রাতের উল্লাসে ভেসে যায় স্বপ্নমদির
সান্তা।
৪
ডিসেম্বর এলেই মনে পড়ে
আমার প্রেমিকার জন্মদিন
মনে পড়ে কীভাবে আমি কুয়াশা আটকে রেখেছি নিজের চারিপাশে।
কীভাবে একটু একটু করে সত্যি করে ফেলছি নতুন আসবাবের স্বপ্ন।
ডিসেম্বর এলেই মনে পড়ে, কীভাবে চিরসত্য লুকিয়ে প্রেমিকার হাতে দিয়ে যাচ্ছি টাটকা, দগদগে গোলাপ...
৫
ঠিক আগের ডিসেম্বরের আগে আমার মা ছিল। আমি শ্যাওলায় পিছলে
গেলে আমার পায়ে পড়ত আদরের চুন-হলুদ, নরম শীতল মালিশ। আমায় জড়িয়ে থাকতো সহিষ্ণু কাঁথা...
এখন দেয়াল থেকে খসে পড়ে চুন। মা ডাকলে আরও চেপে ধরে
দস্যু নৈঃশব্দ্যতা।
৬
এই শীতে আমি বাইরে বেরিয়ে দেখি
কীভাবে তুমি ঘর থেকে সরিয়ে ফেলছো শান্ত, শীতল বরফ। কীভাবে আমি জড়িয়ে নিচ্ছি সাংসারিক চাদর!
No comments:
Post a Comment