সাত্যকি’র কবিতা
অভিযান
১.
আমি তো কখনও চাইনি
শহর হয়ে যাক
মফস্সলের এই একটুকরো জায়গা
দ্রুতগামীতা ভালো, কিন্তু যন্ত্রণাদায়ক
মফস্সলের ঢিকঢিকে চলন
এই বেশ
খানিক ধুলো উড়ে আসা
চুলে বিলি কেটে দেওয়া
কিছু গাছ হাঁসেদের সাঁতারের শব্দ
শালিকের গায়ে বসে থাকা বিকেল
ধান কাটা হয়ে যাওয়ার পর পড়ে
থাকা বার্ধক্যের মাঠ
এই বেশ
আমি কখনও চাই না শহরে হয়ে উঠুক
এই সব সকালের মতো প্রিয় ছবির মফস্সল
২.
ভোর এখন কোনো অমীমাংসিত গল্পের ঠিকানা লিখে যায়
আর সেই ঠিকানায় লেখা নাম খুঁজে খুঁজে কেটে যায়
পড়ে থাকা দৈনিক সময়
তারপর অবসন্নতা হাসি কান্নাগুলো জড়ো হয় টেবিলের
পাশে যেখানে রাত নেমে আসে
এখন জ্বর হলে কেউ নেই কপালে হাত রেখে সেই জ্বরের
উষ্ণতাকে হারিয়ে দেওয়ার
বান্ধবীদের হাত ধরার সময় যে শেষ
মেঘ যেমন প্রত্যেক গাছের উপর থেকে চলে যায় দূরের
সরণিতে
তারাও চলে গেছে তেমনই পড়ে আছে মায়া
সেই মায়া থেকে কিছু কুড়িয়ে রেখেছি
এগুলোই ছড়িয়ে ছড়িয়ে যাবো আগামীর অভিযানে
ভেবেছি সেই অভিযানের একটা নাম দেবো
তোমাদের ফেলে রাখা সেই আলতা রঙের দুপুর থেকে কুড়িয়ে নেবো
তারপর থেকে সে আমার অভিযানের সঙ্গী হবে
সঙ্গী শব্দটা আজ বেশ আটকে ধরতে চায়
চারপাশে একবার তাকিয়ে দেখতে বলে
একবার হাতড়ে দেখতে বলে কাঁধের ব্যাগ
চেয়ে দেখতে বলে কলেজ স্ট্রিট থেকে বারাসাতের পড়ে
থাকা পথ
আমি যশোর রোডের পাশে দাঁড়িয়ে দেখি উড়তে থাকা ধুলো
একবার ঘুরে দেখতে বলে কুয়াশার নিচে পড়ে থাকা
কলেজের মাঠ
মাঠের প্রত্যেক ঘাস আজ হলুদ
আমি যদি জিজ্ঞাসা করি কেন এই রূপ
তার কোনো উত্তর সে দেয় না
মুখ ঘুরিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে থাকে
পর মুহূর্তে তাকিয়ে বলে একবার দেখবে নাকি ওই,ওই যে মাঠের পাশ দিয়ে
রেললাইনের দিকে চলে যাওয়া পথ
দেখে এসো অনেক মায়া পড়ে আছে পারলে কুড়িয়ে নিও
আমি যাব কি যাব না ভাবতে ভাবতে কখন যে পা বাড়িয়ে
ফেলি খেয়াল থাকে না
যখন সেই সব দিন ঘিরে ধরে খেয়াল হয় আমি হেঁটে
যাচ্ছি তাদের গায়ের উপর দিয়ে
সেই পথের ধারের ঘাসেরা তেমনই আছে যেমন ছিল
তবে সেই খালের জলে এখনও অনেক শ্যাওলার বাস তাকিয়ে
থাকলে মুখ দেখা যায় না
আর একটু এগিয়ে যাই পুকুর বিকেলের মাঠ রেলের ধার
প্রত্যেকেই হাঁ করে তাকিয়ে থাকে
আর ফিসফিস করে
আমি ওসব বুঝি না
কয়েক পলক দেখি তারপর এগিয়ে যাই এবার পথ শেষ
ফিরে আসি, দেখি তখনও
মাঠে দাঁড়িয়ে আছে
তাকিয়ে আছে আকাশে রঙ করা মেঘেদের দিকে
আমি আর কথা বলি না এবার এগিয়ে যাই সামনের পথে
আমার পিছনে পিছনে একটা ছায়া এগিয়ে আসছে বেশ বুঝতে
পারি
তবে এই যাত্রা পথের নামটা এখনও ঠিক করতে পারি
নি!
৩.
প্রত্যেক সন্ধ্যার একটা নিজস্ব চেহারা আছে একটা
গন্ধ রেখে যায় কয়েকটা দুমুখো সাপ ছেড়ে দেয় তার কয়েকটা কিছু পিঁপড়ে আর কিছু কুঁচে
মাছের শরীর নেমে আসে নিবিড় অন্ধকারের ভিতর তারপর তারার নীচে কখনও চাঁদের নীচে
নালার মতো অগভীর রাতে বয়ে যায় বসিয়ে দেয় একটা তীব্র ঘ্রাণ কয়েকটা মানুষের শরীরে
কয়েকটা পশুর শরীরে... উদ্ভিদ দু পায়ে হেঁটে নদী পার হয় বালি চকচকে নদী তীরে বসে
থাকা নেশা গ্রস্ত মাঠ কয়েকটা অনুচ্চ পাহাড়ের মতো ঘাস মৌমাছির মতো যারা এই সন্ধ্যায়
গন্ধ নিতে আসে তারাও এই সন্ধ্যার নিমন্ত্রিত অতিথিদের একজন তারা চাঁদ আর মৌরলা
মাছের মতো হাওয়ার নীচে প্রত্যেক সন্ধ্যা আমার তোমার চোখের প্রসারিত দৃষ্টির
সমান্তরালে একটা চেহারা রেখে যায়, একটা গন্ধ রেখে
যায়...
No comments:
Post a Comment