লেখা পাঠান আমাদের chayarodpatrika@gmail.com

Wednesday, January 20, 2021

সন্দীপন দাস, ১৪

সন্দীপন দাসে’র কবিতা

 

১. দোয়াব


আর এভাবেই তুমি কেড়ে নিচ্ছ একে একে সব...

বশীভূত আগুন, শেষ তুরুপের তাস, ঐশ্বরিক সব ক্ষমতাও

আমাদের বন্ধুদের সবার অলক্ষ্যে সন্ধে নামছে

আলোর বমি থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাচ্ছে মাটির খিদে, প্রজাপতির দল

মায়াবী তূণ লুকিয়ে অদূরে অপেক্ষা করছে জাদুজানলা

যে জানলার সামনে একদিন ঘরে ফেরার পথ হারিয়ে ফেলেছি আমি

আজ সেই জানলার সামনে দাঁড়িয়ে স্বপ্ন হারিয়ে কাঁদছে অভি,

আত্মহত্যা ভুলে পাখির আকাশরক্ত মুছে আয়না

তবু সন্ধে নামছে হেমলক বন জুড়ে

ডানাপোড়া গন্ধের মতো...

গোপন মন্ত্রের মতো...

হারানো পথের মতোই...

আমি দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছি অভিঐ পাখির আকাশ, আয়না― সবার শরীর ফুঁড়ে

ঝাঁকে ঝাঁকে আবারও উড়ে যাচ্ছে প্রজাপতির দল...

জাদুজানলা থেকে ভেসে আসছে বিষণ্ণ এসরাজের সুরধুলোর ব্যথা,

তোমার বিজয়ের কাহিনী, লেখা এ কবিতা...

 

#

সন্ধে নামছে...

আর এভাবেই তুমি কেড়ে নিচ্ছ একে একে সব...

সব...


২. ভলক্যানো


আকাশ মেঘলা, মনখারাপ করে শুয়ে আছে নদী

একটা সারস উড়ে এসে বসে ঠোঁটে এক অদ্ভুত আলো নিয়ে

অন্ধকার তা দ্যাখে, দ্যাখে সন্ধেমণি ফুল, মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবও...

কিন্তু কেউ সেই আলো ছুঁতে পারে না

শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দ্যাখে তুমি কী নিপুণতায়

ওই আলো নিয়ে মেখে নাও তোমার সারা শরীরে

আর তারপর...

তারপর ঠোঁটে করে সমস্ত মনকেমনমেঘরঙা ইচ্ছে

আর সম্রাটের জন্মান্তর নিয়ে উড়ে যাও কোনো এক

ভলক্যানোর দেশে...

আমার সমস্ত ফেরা মিথ্যে হয়ে যায়

দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখি আকাশ মেঘলা,

মনখারাপ করে শুয়ে আছে চোখ হারানো একটা সারস...

 

৩. সম্মোহন


মাঝেমাঝে খুব অভিমান হয় তোমার যখন একটা রোদেলা সকাল তোমায় বারবার লুকোচুরি খেলায় হারিয়ে দ্যায় আর প্রথাগতভাবে তোমার পৃথিবীকে দু'-তিনটে পলাশ বানিয়ে পিছন ফিরে মুচকি হেসে চলে যায় উদ্ধত সম্রাট আওরঙ্গজেবের মতো... তুমি কাফের! কাফের! বলতে বলতে ছুটে যাও প্রাচীন জলাশয়ের কাছে যেখানে তোমার জন্য অপেক্ষা করে থাকে একটা অসমাপ্ত যুদ্ধএকটা মনখারাপের বিকেল... তুমি জলাশয়ে ঝুঁকে পড়ো নিজের মুখ দেখার জন্য, দেখতে পাও না...তার বদলে দেখতে পাও সাম্যবাদের সবুজ রঙমুখ থুবড়ে পড়া একটা অন্ধ পাখির সঙ্গম...তাই দেখে পথ ভুল করে ফ্যালে সমস্ত শিকার, সমস্ত আততায়ী... তোমার আরও মনখারাপ হয়ে যায়... তোমাকে টার্গেটে রেখে কাঁধে ন্যাপস্যাক ঝুলিয়ে অদূরে অপেক্ষা করেন মানুষবেশী ঈশ্বর। পথের সাথে মিশে থাকা লাল, নীল, সবুজ-সব রঙেরও অভিমান হয়ওরা জলাশয়ের দিকে এগিয়ে যেতে চায় শব্দ ছুঁড়ে দিতে... ছুঁড়ে দিতে সঙ্গমলোভী সব যুদ্ধদেরও... তোমার সব গুলিয়ে যায়... তুমি আবার শুন্য থেকে শুরু করতে চাও... শুরু করতে চাও পানিপথের প্রথম যুদ্ধ থেকে...আর ঠিক তখনই কাফের! কাফের! বলতে বলতে ছুটে আসেন অদূরে অপেক্ষা করা মানুষবেশী ঈশ্বর... আবারও তোমার সবকিছু গুলিয়ে যায়... চোখের দৃষ্টি ব্লার হয়ে যায়। মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে ইসকাবনের গোলামবিবি, সাহেবের কর্পোল অস্থিরতা... তুমি ভয়ে চোখ বুঁজে ফেলো... মনে মনে ভাবো এবারও যুদ্ধ জেতা হল না তোমার... আবারও অভিমান হল তোমার... নিয়ন আলোর রাত তোমায় আরো একবার লুকোচুরি খেলায় হারিয়ে দিল আর তোমার গোলামবিবি, সাহেবদের অভিমানের বাংলা ভাষা বানিয়ে পিছন ফিরে মুচকি হেসে চলে গ্যালো উদ্ধত মোঘল সম্রাট বাবরের মতো... তোমার বুঝি এখন কান্না পাচ্ছে খুব?...

 

৪. জেরোফাইট


আর এভাবেই অবহেলায় কাটছে বিকেলগুলো

একটা কাঁটাগাছ ভিজে যাচ্ছে...

শুধু কিছু চেরা  জিভ লকলক করা সাপ শুধু দেখছে

কিভাবে তাদের মুখের শিকার আলো হয়ে ফুটে থাকছে রাজপথের শিরা-উপশিরা জুড়ে

অদূরে গাছের ডালে বসা পাখিটিও রঙ ভুল করে

মুখ থুবড়ে পড়ছে ওই তীব্র আলোর সামনে

আর এভাবেই এসব দৃশ্য ঢুকে পড়ছে কবির

কার্নিশ,দেওয়ালঅটোবায়োগ্ৰাফি জুড়ে

যেখানে অবহেলায় কাটছে বিকেলগুলো...

আর একটা কাঁটাগাছ ভিজে যাচ্ছে অনবরত...

 

 

৫. ডুয়ার্স

 

এখানে এখন আকাশের রং হলুদ

ঝালং-এর বিন্দু নদীর তীরে সেই কোন সকাল থেকে বসে

তুমি বুঝে নিচ্ছ জলের ওঠা-পড়ার শব্দ

জলস্রোতের সাথে পাথরের গোপন সন্ধি...

#

এখানে এখন গাছেদের রং লাল

রকস্ আইল্যান্ডের এই লাল পাইন, রডোডেনড্রন-এর

মধ্যে বসে লাঞ্চ করতে করতে তুমি একবারমাত্র

মুখ তুললে... দেখলে আশ্চর্য ভাবেই একটা পাহাড়ী পথ এসে মিশল

তোমার আঁচলে, আর তুমি মুচকি হেসে আঁচলটা গুটিয়ে নিলে...

#

হোটেলে ফেরার পথে গরুমারা অভয়ারণ্য যেখানে

আমাদের গাড়ির আওয়াজে ভয় পেয়ে ছুটে যাওয়া

বাইসন, হাতি, হরিণের পেছন পেছন তুমিও ঢুকে গেলে জঙ্গলে

তোমার পেছন পেছন পুরো দার্জিলিং শহর, টি-গার্ডেন, মেসোজোয়িক এরা, রিচার্ড অ্যাভেডন...

আর আমি দাঁড়িয়ে দেখলাম তখন

অভিমানের রঙ কালো

ঠিক গতরাতের ট্রাইবাল ডান্স আর বোনফায়ারের

আগুনের ডগার মতো...

হোটেলের পাশের মূর্তি নদীর চাঁদভাঙা শান্ত জলের মতো...

#

দূরে... অনেকটা দূরে নীচুস্বর এ হুঁইশেল দিয়ে

নিউ মাল স্টেশন ছেড়ে যায় কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস...

#

আর টুপি হাতে ডিরেক্টর সামসিং-এর কুয়াশাবৃত পথে

তখনও একা দাঁড়িয়ে... একা...

1 comment:

  1. জেরোফাইট // ডুয়ার্স ~ ভালো লাগলো

    ReplyDelete