লেখা পাঠান আমাদের chayarodpatrika@gmail.com

Sunday, September 25, 2022

সন্দীপন দাস, শারদ সংখ্যা

সন্দীপন দাসের তিনটি কবিতা

 

১. সম্রাজ্ঞী

 

সকাল মৃত্যু লেখেনি, লিখেছে বিকেল

সেই বিকেল গাছেদের শরীর থেকে খুলে

নেওয়া পোশাক... ঝুঁকে পড়া সাঁকো

ঘোলা জল ছুঁয়ে রেখে যাওয়া এলোমেলো আলো

আদিদেবতার আদিম রহস্য...

 

প্রতিটি সন্ধেই আহত ঘোড়া; অল্প আলোতে গলিতে

গলিতে গান ফেলে রাখে কারা?

মুখ লুকিয়ে কাঁদে সন্ধেমণি ফুল, মাটির খিদে...

 

একা হয়ে আসছে নিয়ন আলো

একা হয়ে যাচ্ছে উজান-ভাঁটির দেশ

দাঁড়িয়ে থাকা আস্তাবল, ধানখেত, পথের পোস্টার শিশুটিও...

 

তুমি মৃত্যু নিও না, আলোটুকু নাও

কারণ তোমাকে বোঝার মতো

সন্ধে এখনও নামেনি...

 

২. আলো

 

একটা অসুখ তোমায় সেই থেকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে

অপ্রিয় জন্মের মতো, অশান্ত আগুনের মতো...

তবু তুমি খুঁজে চলেছ সন্তাপহীন আলো, নীরব অভিমান, একটা আস্ত বর্ষার ছাদ....

অবেলায় আঁকড়ে ধরতে চাইছ মৌর্য সম্রাটের অহংবোধও...

কিন্তু তবু তোমার মুখোশ খসে যাচ্ছে;

খসে যাচ্ছে ওই অপ্রিয় জন্মের জড়ুলও...

#

একটা অসুখ তোমায় সেই থেকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে

হলুদ নদীর মতো, অস্থির বাংলা ভাষার মতো....

 

৩. মোহ

 

অপেক্ষার ওপারে তোমার জলপাই রঙের বাড়ি।

দূর থেকে দ্যাখা যায়...

কারা যেন চুপিচুপি ভোররাতে তোমার বালিশের

তলায় লুকিয়ে রেখে যায় আলোফুল...

তুমি আয়নায় চুল আঁচড়াও

আর আড়চোখে দ্যাখো কিভাবে বালিশের তলা

থেকে উঠে আসছে প্রতিদ্বন্দ্বী শীতকাল....!

অন্তর চক্রবর্তী, শারদ সংখ্যা

অন্তর চক্রবর্তী'র দুটি কবিতা


হত্যারাত্রি থেকে, দূর


১. 

দুধশাদা বাগানের মাঝামাঝি, রাত

চেয়েছিল আরও শাদা। অথচ হঠাৎ

নিশ্চুপে, কিছুদূর সোজাসুজি গিয়ে

ভেঙেচুরে লাল হয়ে পড়ে আছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে

 

কী রঙে ডেকেছ ওকে, নিরুপায়? শাপান্ত? ভোর?

আমাদের যোগাযোগ, ভিখিরি এ যখের পাঁজর

 

২.

হাড়ে হাড় ঘনিয়েছে, রক্ত উঠে ফের

ভেসেছে দুয়ার। ভাঙা প্রসবাগারের

যেটুকু তোমার ঘুমে উৎসবের মতো

উঁকি দেয় থেকে থেকে, কাছে গেলে উধাও সতত

 

তাকে কি সারাও স্বপ্নে, হন্তারক? খুলে রাখো, খুন?

আলোগুলি নিভে যেতে বাকি আছে সামান্য আগুন

সব্যসাচী মজুমদার, শারদ সংখ্যা

সব্যসাচী মজুমদার-এর দুটি কবিতা


সামনের পুজো

 

সামনের পুজো...

            সামনের পুজো...

গাছে গাছে পাখি

                   পুজো আসলেই

নীচে গোসাপের সোনালী চামড়া

ছায়া পড়ে আছে...

 

আর বহুদূর থেকে

ঘর ভাসানোর ভেতরে কোমল বৃষ্টিরা আসে

 

ছুঁয়ে দিই নদী

শক্ত হয় সে

আসেপাশে জল

জলের বৃদ্ধি

 

আসেপাশে জুনি

                    ছেলে দেহটিতে

যোনিময়টিতে...

 

বৃহস্পতিকে দেখা যাচ্ছিলো

আমাদের ভাঙা জলছাদ থেকে

স্নায়ুবর্ণের চাঁদ ফুটে ওঠে শিশুগাছ ঘেঁষে...

 

কিছুদিন ধরে

 

কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করছি কুয়োতলা নয়

বিস্মৃতপ্রায় পুকুরের জল

মনে পড়ছে...

 

ব‌ই হাতে নিয়ে রাস্তায় নেমে দাঁড়িয়েছে শিশু

নীলকণ্ঠের দু'একটা ফুল তার পেছনেই

রোদের মধ্যে মিশে গিয়েছিল

আমিষের ঘ্রাণ

 

বেড়ালের হাই তোলা হয়ে গেলে ওকে তুলে নিল

তোমাদের মেয়ে

তুলে রেখে দিও এইসব ছবি

তুলে রেখে দিও

কালোজিরে আর নিমপাতা দিয়ে

 

কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করছি,

এক-দুই তারা

তিন-চার তারা

জ্বলে ওঠবার আগে আগে

ফোটে হাইব্রিড জবা

 


বিশ্বজিৎ দাস, শারদ সংখ্যা

বিশ্বজিৎ দাসের দুটি কবিতা

যাপন

শুয়ে থাকতে থাকতে পৃথিবীর মেদ মাংস রক্ত

ফ্যাকাসে হয়েছে আরও।

মুছে গেছে আমাদের অঙ্গীকারের ভঙ্গিমা

খালি ঘরে আলপনা আঁকে সময়ের পলক

যাপনের কথা শেখো!

 

অসাড় নদীর কাছে এই তো দাঁড়িয়ে কতকাল

আবারও দাঁড়াবে তুমি, শোক ভুলে যাবে!

দেখা হোক ভালোবাসা, গুহার ভিতর

এইভাবে একদিন বলো; মৃত কাঠ...

 

খুব করে মিশে গেছি

সহজ পাতায়, আমাদের আলাপের মুখে চুমু

শুধু, প্রলয়ের জমকালো মাঠ!

 

উড়ানীর খেলা

এই নশ্বরতার মানে জানতে চেয়ে তুমি যে মেসেজ করেছ, তার উত্তর দিতে দিতে আমি ফুরিয়ে যাচ্ছি। এই যে কিছুটা শূন্যস্থান রেখে তোমায় বোঝাচ্ছি, আমাদের বিরহের মানে; রক্তমাংসের পার্থক্য...

 

রঙচটা শরীরের থেকে ক্রমশ উবে যাচ্ছে ফাগুন। আয়নায় এখনও একটা পাখি দেখে হাসি পায়! জানি না এসবের অর্থ কী? হাড়ের ভিতরে গুনগুন শুনশান শব্দের ধাক্কা বড় অদ্ভুত। তোমার আবার মেসেজ এল

 

অস্তিত্ব নিয়ে এমন অলীক ইয়ার্কি আর কেউ করেনি। জানো, সে বছর আমাদের জামাগুলো উড়ছিল। দারুণ শান্ত সে উড়ানীর খেলা। সেই জামাকাপড়ের অন্ধকারে ঢুকে খাচ্ছি, শুধু খেয়েই যাচ্ছি এই জীবনের মানে...

Monday, April 11, 2022

মধুমিতা রায়

মধুমিতা রায়-এর কবিতা


নিমখুন

গ্রীষ্মের প্রখর তাপে প্রিয় ছাতা প্রশ্ন করে ফেরে

কিছুটা ভিতর থেকে রংচটা মন আবছা আলো

ঠাণ্ডা জলস্রোতে ভাসে দেহের শীতল স্পর্শটুকু

ভিজে রুমালের গ্লানিপ নিংড়িয়ে ফেলেছি বেদনায়

 

জং ধরা শিক দেখে প্রাণ আনচান করতে থাকে

ভাঙনের আগে তাই পুনরায় গুছিয়েছে মন

কাপড়ের নীচে জমা বৃত্তকার সরলরেখায়

সময় এখন স্থির, লক্ষ‍্যে যতক্ষণ যায় থাকা!

 

ঘাড় ঘুরে থাকা জেনে আকাশে তাকিয়ে মনে হয়

তেলহীন মাথা জুড়ে ঘিরে আছে দীর্ঘ শামিয়ানা

 

                    ..........

 

দাবানল

 

বিবাদের মাঝে দেখো এখনো উজ্জ্বল টানাপড়া

ফুলের ঘ্রাণের মতো আমাদের প্রতিটি ফাটল

সহজে পুষিয়ে নিতে না পারা যাঁতার চলাচল

 

পিষতে পিষতে সব হারিয়েছি না বলা চাওয়াকে

জমা ছিল সাময়িক বসন্তের পাতাঝরা নিয়ে

এখন লুকানো থাক পরিচিত সব ভালোবাসা

 

বিষদাঁত ভেঙে গেলে ছুটে আসে বিষবাহকেরা

চুপচাপ ঝুলে থাকি পাখির ঠিকানা মনে করে

 

একা থেমে যেতে দেখি, ছায়াবাড়ি এগিয়ে এসেছে

                ............

 

 

গাফিলতি


ডানা গজানোর আগে হাওয়াতে ভাসিয়ে চলা ছিল

অলৌকিক খবরের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়ানো খুঁটিতে

কলম কামড়িয়ে ধরি, কাগজ হারিয়ে দেউলিয়া

মাথার ভিতরে জমা দিনের ঘুমিয়ে থাকা বালি

বৃষ্টির ফোঁটা পেয়ে দলা পাকিয়েছে মণ্ড কাদা

 

ঘুমের অভাব থেকে কপালের একপাশে ব‍্যথা

পেইনকিলার নেই, হাতদুটো এখন অবশ

দোয়াতের রেখাগুলি কখনো আমাকে ধরে চেপে

আর টেনে নিয়ে যায় নামহীন এক সীমানায়

 

এইসব লেখাকে তবু কাঠামো দেওয়ার আগে থেকে

খোলস মোচন করে এক একটি ছাঁচের বিষাদ

 

                    ..........

 

ক্ষণমাত্র

মশারির চারটি দিক বসে থাকে রাতের আলোয়

ভয়হীন চাহনিতে ভাঁজ খুলে ঝুলিয়ে দিয়েছি

ঘুমের চৌকাঠ-পার ভগ্নাংশ অঙ্কের কাছাকাছি

ছেড়ে দেব ভেবে নিয়ে ক্রমশ ডুবিয়ে গভীরতা

 

মাপকাঠি দৃষ্টি জানে কতোটা সত‍্যের অন্ধকার

বালিশের তুলোটুকু পিটিয়ে পিটিয়ে ভরে দেব

তোয়ালের জানা থাকে আশ্রয়ের শেষ প্রয়োজন

কতোটা নিংড়ে নিলে গড়ে উঠবে সোনার গয়না

 

আমাদের চারটি হাত শেষ ভুল নিয়ে জড়োসড়ো

আলোরা বেরিয়ে এলে জায়গা করে নেবে শতফাঁক

                 ..........



খিলান

রামধনু রঙ নিয়ে কনকনে দক্ষিণা বাতাস

আবডালে চুরি করে পাতা ঝরানোর মরশুম

এইসব গতিপথে নেই কোনো থেকে-থাকা, ভুল

 

সুতো গুটিয়েছে যত নিজেকে গোটাই ততটাই

পেঁয়াজের খোলা কেটে হাতের তালুকে ধুয়ে, ভাবি

কতগুলি খোলসের পর থেকে জাগিয়ে তুলবে

চোখের জলের টোপে কপালে জমানো শেষ রেখা

 

ঘরের দেয়ালে চুন এখনো কি অন্ধকারে জেগে?

ঘুমঘোর নিশানায় কত কিমি দূরে আমাদের?

 

পালটানোর ইচ্ছা থেকে জড়োসড়ো আমাদের বাঁচা

দিন বদলের টানে খসে পড়া রঙে সাথী হয়ে

                ..........

শঙ্খজিৎ দে

শঙ্খজিৎ দের সিরিজ কবিতা

ধ্যানচোখে অসংখ্য অবয়ব

১.

সন্ধ্যের দিকে ফিরে আসা যায়

        গেট বন্ধ হয়ে আছে আশ্চর্য শিকলে

 

মনোরম, সবুজস্নাত বারান্দা

নদীরাজ্য ভেসেছে প্রাগৈতিহাসিক আঁধিঘুম

 

এখনও যুবতী শাখাটি এসে জল ছিটিয়ে দোষী সাব্যস্ত করল না!

 

২.

 

মা তোমার চোখ এখনও

ভুল হয়ে আছে পরিত্যক্ত আগুনে।

 

এখনও দেওয়ালময় প্রশ্নচিহ্ন

ঘুরপাক খাচ্ছে নক্ষত্রগুলো

 

দূরে হাতে তালি মেরে সাইরেন বাজাচ্ছে নির্জনতা।

স্তন্যঋণ শোধ করব বলে, জিহ্বারাজ্যে মৃদু অন্ধকার!

 

৩.

 

যে ভুলপথে বয়ে চলে গেছে

তার জন্য ভেবে ভেবে ডুবসাঁতারে বেঁচে আছি।

যে ভুলপথে চলে যাচ্ছে একা,

 

তার নিশ্চয়ই সন্ধ্যাতারা জমানো আছে বুকে।

 

৪.

 

ফাল্গুন কৃষ্ণা একাদশীর দিন

 

মধ্যরাতে সফেদ হয়ে যাচ্ছে বারান্দার রঙ।

 

আমি চোখ খুলতেই পারলাম না।

রজনীগন্ধার শাদারঙ ছেয়ে ফেলেছে দেহ।

 

মাতুমি দুগগা-দুগগা উচ্চারণ করে

আমাকে চলে যেতে দাও....

 

'যাই নয়, আসি...'

 

৫.

 

পরিক্রমা করতে করতে কর্তাল বাজিয়ে ঘরে ফিরি ভোরে।

কুয়াশার ভিতর জন্মান্ধ পাখিগুলো মেঘ ঝাপ্টাচ্ছে।

 

দূরপাল্লার ট্রেনগুলো এত আওয়াজ করে কেন?

নিঃসঙ্গতার ব্রত ভেঙে যায়!

 

৬.

 

বাড়িতে পিলসুজগুলো

একখণ্ড দুঃখ কাঁধে দাঁড়িয়ে আছে।

 

কালিপুজোর বাজনা ফুরিয়ে গেছে বাবার চিতায়...

পুকুরে কাঠামের গা বরাবর ফেলে এসেছি পিতৃপিণ্ড।

 

৭.

সন্ন্যাসবস্ত্র পরতে পারিনি বলে

গোধূলিলগ্নে দাঁড়িয়ে ছিলাম একা।

মহাকাল ঠেলে ফেলে দিচ্ছে,

ঐ দ্যাখো স্রোতস্বিনী জীবন...

 

৮.

পায়রাগুলো স্নান করতে করতে

হয়ে উঠল নারীটির বৈধব্য।

 

শূন্যে চোখ চলে যাচ্ছে

 

অন্ধকার-পাখিরা টহল দেয় আকাশ।

 

৯.

একটা শিশু

        ঢিল মেরে ভেঙে ফেলল কবির জানালা

 

ঢিল কি কখনও

মানুষের ভীষ্মতিরের ফলা হয়ে উঠতে পারে?

 

একটা শিশু কবিটির জন্য সভ্যতার কাছে

আসন পাতল...

 

১০.

 

যোগেশগঞ্জের প্রৌঢ়া প্রতিমার কাদামাটি দেহে

একটা বিষণ্ণ অঙ্কুরের সবুজ।

 

নৈহাটির গঙ্গা দিয়ে ভেসে যাচ্ছে পুরোনো আলাপ।

 

ভ্যালেন্টাইন, তোমার জন্য আরো একবার মরব...

 

১১.

 

প্রেমিকার বাবার পাঞ্জাবিটায়

হাত বুলিয়ে চোখ মুছেছি আরামে।

 

বাবাতুমি কি বোধিগাছ,

 

এই জন্মে চিনলাম না!

 

১২.

মা, তোমার কপালে

লেগে আছে বিগত জন্মকালের ক্ষত।

 

বুকে মাথা রাখো

 

তোমাদের বাড়ির ভিতর আমারই অসংখ্য অবয়ব স্তম্ভইট হয়ে আছে।

 

১৩.

 

শান্তিনিকেতনতোমার পলাশ গাছের নীচে

পাতা ছেয়ে আদর পেতে রাখো।

 

ধ্যানচোখ চলে যায়

 

আমাদের দাম্পত্যের গাঢ়,

তোমার শুক্লপক্ষের চাঁদ…

পারমিতা চক্রবর্ত্তী

পারমিতা চক্রবর্ত্তীর কবিতা

একা

১)

আমাদের কোনো লিগাল অ্যাসোসিয়েশন আর নেই৷ যে ভাবে রাস্তায় বেওয়ারিস লাস পড়ে থাকে ৷ কুকুর গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে চলে যায়৷ আমাদের সম্পর্কটা ঠিক তেমনই৷ কখন যে একটা যতিচিহ্ন বসে গেল বুঝলাম না। গলা ফেটে রক্ত বেরোয়৷ রক্তাক্ত হয়েছে আমাদের ভূমিকাটা৷ এখন বেঁচে থাকাটা খুব দুরারগ্য ব্যধির মতো৷ তার থেকে মৃত্যুই শ্রেয় ৷

 

২)

জানি বহুদিন তুমি আলাদা হয়ে গেছো৷ মিথ্যে বলতে বেশ শিখে গেছ৷ কিন্তু আমি কেন এত ভাবি। তোমার গলা ব্যথা হলে তুমি চা খেতে ঘন ঘন৷ ঘুম থেকে উঠে গাছে জল দিতে দিতে এক কাপ আমার হাতের লিকার চা ছাড়া তোমার দিন শুরু হত না। কে করে দেয় এখন এসব তোমায়৷ জানি সবই অভ্যাস৷ তুমি এখন একা থাকতে শিখে গেছো৷ একা থাকার মধ্যে একটা শৌখিনতা আছে৷ তা বেশ বুঝতে পারি৷ তবে আমি কেন এত ভাবি... কে তোমায় ভাত বেড়ে দেয়, মাথার কাছে জল গড়িয়ে দেয়, চশমাটা ঠিক জায়গায় রেখে দেয়৷ জামা ইস্ত্রি করে দেয়৷ আসলে আমি এখনও সত্যিটা বুঝতে বড় দেরি করে ফেলি৷

 

৩)

আলমারি খুললেই চোখে পড়ে লাল কালো চাদরের কথা। আমরা জয়পুর থেকে কিনেছিলাম৷ গোটা চাদরটাতেই উটের কারুকাজ। আমাদের তখন একটা ইতিহাস কিংবা ভূগোল ছিল৷ দূর থেকে দেখা যেত৷ স্বচ্ছ ছিল সবটাই৷ একটা সময়  মনে হত তারাদের দেশে পৌছতে এক আলোকবর্ষ পথ আমরা হেঁটে যেতে পারব৷ আজ ৬/৬ পথটাকে অচেনা মনে হয়। কিছু ভাবতে গেলে গলার কাছে কী যেন একটা আটকে থাকে৷ খুব অস্বস্তি হয়৷ নিজেকে রাস্তার ধারে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের আবর্জনা মনে হয়৷ কেমন যেন শেষ হয়ে যাচ্ছি। প্রদীপের তেল ফুরিয়ে এল৷

 

8)

খোলা আকাশ দেখলেই তাতে তোমার নাম লিখতে ইচ্ছে করে। মনে হয় উড়ে চলে যাবো হাওযার মতো শক্তিশালী হয়ে৷ ঘরের পিছনে লাউ ডগা গাছটা বেশ বড় হয়েছে৷ ও বাড়ির খুকি গর্ভবতী৷ সে লাউ শাকের ঘন্ট খায়৷ পিছনের তেঁতুল গাছটাও বেশ বড় হয়েছে। মা তেঁতুল দিয়ে বাসন মাজার সময় তোমার কথা খুব বলেন৷ মা' হাতের তেঁতুল মাখা তোমার খুব পছন্দের৷ ভুলে যাওয়াটা খুব সহজ৷ তাই না...

ছাপোষা জীবনে তোমার মতো ভুল করতে আর পারলাম না ৷

অরিত্র চ্যাটার্জি

                                                               অরিত্র চ্যাটার্জি’র কবিতা

রিবন

 

দিয়ে বেঁধে ফেলেছো চুল

খোলা হাওয়ায় তার

গতিপ্রকৃতি

বেপথু হয়ে ভাসছে

এমন ক্যানভাসে শরীর

যেতে পারে যতটুক

তা থেকে

দূরত্ব রেখে এখন

মেয়েটির রাতপোশাক

তুমি কতখানি নাব্য

খুব নিচু স্বরে তা জানতে চাইছে 

 

স্বপ্নের ভিতরে লেখা 

আশ্চর্য এই এক দরজা

ক্রমে খুলে যাচ্ছে আমার সম্মুখে

অথচ তার প্রেক্ষিতে আমার ছায়াখানি নেই

ফোঁপরা পাথরের গায়ে ছিন্ন পাপড়ির দল

পুনরায় জুড়ে দিলে ভেঙ্গে যায়

ফোর্থ ওয়াল! আশ্চর্য এই দরজার

ওপার থেকে অনবরত হাতছানি দেয়

  আমাকে জেরা করে, দণ্ডাদেশ জানায়  

সৃষ্ট চরিত্রের দল আমাকে ঘিরে ফেলেছে

আর এই খেলাটা খেলতে খেলতে

ক্রীড়ক আমি কখন যে স্রেফ আরেকটা ঘুঁটি

হয়ে গেছি তা নিজেই জানি না!

 

আধিদৈবিক এক আঘাতে আচমকা মারা যাব আমি

আর আমার লাশ বইবে ঘোড়ামানবেরা

কোনো সুপ্রাচীন সামুদ্রিক মন্দিরে, শতাব্দী পেরিয়ে

যে বুলেট ছুটে আসে, এ নিয়তি তার দেহে লেখা আছে

আর আমি যে আগুনের ভেতরে চিঠিগুলি পেয়েছিলাম

এত বেশি তুফান, তাতে লাইট হাউসের কথা বলা ছিল

আর আমি যে রাস্তা হারিয়েছিলাম, এত বেশি অপরাধ

করেছিলাম যে আমাকেই যাজকের দণ্ড দেওয়া হল

আর আমি যে ভেবেছিলাম সময় অতিক্রম করে ফিরে যাব

শতাব্দী পেরিয়ে এই আশ্চর্য বুলেট আমার শরীরে বিঁধেছে

আর আমি যে শুধু চেয়েছিলাম নিজস্ব স্বপ্নের ভিতর থাকতে

আধিদৈবিক কোনো আঘাতে আচমকা একদিন মারা যাব জানি...