লেখা পাঠান আমাদের chayarodpatrika@gmail.com

Monday, October 26, 2020

রবীন বসু, একাদশ সংখ্যা

রবীন বসু-র কবিতা

 

নিমগ্ন  অস্থিরতা

 

নিমগ্ন অস্থিরতা ঘিরে ধরলে

আমি বড় বেশি চিৎকার দিই,

বিসদৃশ আর বেমানান সেই

কণ্ঠস্বর ভেঙে গিয়ে পূর্বাপর

সজ্জিত বিন্যাস আঁকে বারবার;

সংযোগসেতু দিয়ে তখন যাত্রা

তার ভৌগোলিক সীমারেখা মাপে।

কলম্বাস আর হারানো কম্পাস

দিকভোলা হয়ে ডুবন্ত প্রবাল

দ্বীপের স্বচ্ছতায় দাঁড়িয়ে থাকে;

তখন নিমগ্ন অস্থিরতা, সেই সঙ্গে

নিরুদ্দিষ্ট হাওয়া কানাকানি করে।

অনিকেশ দাশগুপ্ত, একাদশ সংখ্যা

অনিকেশ দাশগুপ্ত-র কবিতা

 

দিক নির্দেশ থাকতে নেই

 

ফুরিয়ে যাচ্ছে রোদ্দুর

আর এই কাছে এসে বসা;

মাথায় জলপটির দুপুরে কাঠঠোকরা

নিবিড় মনোযোগে

একটি ছিদ্রের ভেতর উঁকি মেরে দেখেছিল

কাঠপোকাদের জমাট দুঃখ কীভাবে

                          খুবলে নেয় তার রঙ ওঠা ঠোঁট...

অসুখের পর

একা হেঁটে উঠি সমস্ত দোতলা ঘর,

তার ওপরে ছাদে রৌদ্রের জ্বলন্ত চলাফেরায়

কোনো পুরানো বালিশের তুলো আরও নতুন ফাঁপা

পেঁজা মেঘের ভেতর

                                         এরোপ্লেনের রহস্যের মতন

অনেক কাঁচা ঘুমের

                                         আনকোরা গন্ধ ছড়িয়ে যায়

 

সফ্ট টয়

 

 স্পঞ্জ থাবার পুতুল তুমি

এমব্রয়ডারির স্বাগত ঘর্ষণ তোমার সন্ধিস্থলে

সাবান জলের কাঁচ ফিরে যাচ্ছে

তোমার আইনানুগ চোখে,

কাঁচের গায়ে দায়সারা মণি ঝুলে আছে

বাইরে অথবা ভেতরে

জলে ভেজানো কার্পাস

তোমায় ভারী করে

অযুত নিযুত উদ্দীপনাহীন সুতোর জাল

তোমায় ভারী করে

 

দূত

 

হাতের অচেতনা বোঝাতে

একটা বইয়ের পাতা উল্টে যাচ্ছ ক্রমশ

 

যান্ত্রিক সিঁড়ির উচ্চতা এভাবে বেড়ে চলে

আর কাউকে কখনই দেখা যায় না নামতে

 

ফুলের টব থেকে আকর্ষ

উঠে যাচ্ছে উর্দ্ধমুখে

ওপরে গম্বুজে; বিরল সূর্যের ছকে

 

একঘর পায়রার জন্য বিকল্প কিছু কার্নিশ

যেখানে সমব্যথী প্রাচীন অশ্বত্থ বহুবার

তার বেড়ে ওঠার দাগ কাটে

 

এই মধ্যরাত থেকে শিশুপালনের ঘরগুলো

খুলে দেওয়া হবে

ওখানেই সমস্ত প্রতিবাদী ঘুম জড়ো করো

সঞ্চালিকা আচার্য, একাদশ সংখ্যা

সঞ্চালিকা আচার্য-র কবিতা

 

  শুকপঙ্খী

 

 

ভিত কি আছে তবে অন্য কোথাও? তারই উত্তরাধিকার আমাকে পৃথক রাখছে?

আমার শব্দের পুঁজ আর তোমাদের সনেটগুলির মধ্যে সীমা টানা, একটা প্যারাডক্স,

তার বিদ্রূপ আমায় ভুলতে দিচ্ছে না পরবাস।

তবু আমি আয়ত্ত করছি না আদব,

কেননা আমাদের কোন ভাগাভাগি পরিভাষা নেই।

কূলকিনারা নেই, শুধু জল      বুকের ভেতর,

ময়ূর ময়ূর, তোমাদের মাইক থেকে দূরতমে আমি।

 

 

 

"মেঘবরণ চুল, কুঁচবরণ কন্যা" এইটুকু ণ্ডারলাইনে।

অথচ সহজ করে নিতে পারছি না। শব্দের মধ্যে ঢুকে পড়ছে বিদ্বেষ।

"সুপুত্রা সুভগাসতি" বলে এজন্মে সেই তো শেকলই দিয়েছ

সোনায় বাঁধানো নোয়া ড্রয়ারে রেখেছি।

 

দেহে গরম ছাই, বিস্ময় বিচ্ছিন্নতাকে ছাড়িয়ে

পাথর এবং কাগজ জুড়ে জুড়ে নৌকো,

বাঁদী, আমার ঘুঁটেকুড়ানী

আয় লো, সঙ্কেতগুলো বুঝে এইসব অসার দিন শেষ রি।       

 

      

 

তারপর সব হঠাৎ উধাও হলে মুঠোর ভেতর মন্ত্রের জাইগোট, 

আলো দেয় পঙ্‌ক্তির সারি।

 

সেইসব অনুচ্চার্য শিখা জানে আমাদের আকস্মিক উড়ান সম্ভব।

 

বাতাসেই ভেসে থাকতে পারতাম, অস্বীকৃত 

কিংবা বীভৎস ক্র্যাশে ভেঙে পড়তাম ভুল জায়গায়।

কিন্তু না, সমুদ্রের দিকে চলে গ্যাছে ফুটস্টেপস। 

ঠোঁট শাদা, শাদা জিভ, সনেটের বাঁকে বিলাপ ড়ছে।

উড়ছে "এখন তুমি কার?"

কলাবতী রাজকন্যাকে ছুঁয়ে আজও এই নদী বইছে নিঃশর্ত

দয়ালু কৌতুকে বদলায় সময়, এখন আমি শুধুই আমার।

শুধু আমার।

Sunday, October 18, 2020

অনিরুদ্ধ সাঁপুই, দশম সংখ্যা

অনিরুদ্ধ সাঁপুই-এর কবিতা


নির্জীব আখ্যান

পাখি ডাকে, দরজি-দেহে তাই ছুঁচ। স্বোপার্জিত পাখির ডাকদিদিমণির ছাত্র পড়ানো এবং রক্ত জড়ানো ত্বকে আকাশ নামে সন্ধ্যের দিকে। রমণীর বাহু প্রসারণ ও পাত্র এবং জল সচকিত, থমকে। অযথা চিত্রপট অথবা আলোক-চিত্রের মায়া। তুমি কাকে দোষ দেবে কে কবে তোমার হাত এসে ধরল, তাদের ছেড়ে যাওয়া বল! কাঁথাফোঁড়ে দু'চোখ খোলাবুকের কাপড় সরে যায়। এ-ওকে ডাকে তবু কাঁটা থামে দেওয়াল ঘড়ির, ব্যাটারি শেষ। লিখবে ব'লে হাত তোমার পাখির লেজ যেন বা  অথচ তুমি ছায়া-বন্ধনে, বিন্দু বিন্দু, এ-পাড়ায় সকাল-সন্ধ্যে আলো ঝরে পড়ে অযথা কানাকানি, চাকা ঘষটানির ধুম। গোধূলি পা সব একত্রিত অযাচিত কাছাকাছি, আবেগ সঙ্কুল পথে চৌম্বক বারিধারা, ছড়ানো কুন্দফুল, সে আজ শহরে যাবে নয়তো ফিরবে। হাত দুটো কী জাদু দেখাবে, পোড়া তেল-হলুদের দাগ, তার মাছ কাটা দেখতে ভালো লাগে তাই মিথ্যে রক্ত মেখেছ সখি! আঁশ-বঁটিতে কি গলা নেবে? কী অলক্ষুণে সমাচার হেতু নয়নে কাজলরেখা, খোঁপায় দোলনচাঁপার থোক। মিষ্টি হাওয়ায় খুনে চোখ নিয়ে সে আগুয়ান তাই পায়ে মুড়োচ্ছ লজ্জাবতীর বন।

 

হাভাতে আকাশ-রেখা ছিল, নিষিদ্ধ ডিম থেকে গোপন উৎরাই ও তোমার মৎস-পাখনানিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লে সেচে, পুকুরে, বিস্মিত চৌবাচ্চায়। আমাদের উপশিরা বেয়ে স্রোত ছিল তাই তুমি দ্বিধাহীন উঠে এসেছ সাঁতারে ও শিশ্নে, যেহেতু খালাস বক্রচোখে তীর ও উপাখ্যান এবং পোকামাকড়ের ইতিহাস ধুন্দুল ফুল,— ধোঁয়া নিয়ে কাঠের পাটাতনে শোয়া তোমার মৎস-গন্ধা দেহে কাঁটা ও কাঁটাতারসীমাহীন গমন। কর্পূর নিয়ে আগুনে-আগুনে গান বেঁধেছিল গীতাদি, চুলের ফিতে মাছ নিয়ে গেছে, ব্যাঙের মতো লাফ গুনগুন দু'কলি আখতারি বাঈ। তালু চেটে চলে গেছে নভোনীল হত্যা, নিতম্বে উচ্ছাস ও ঢেউ। এখন ফুল-নকশার জাজিমে কলকাকলি, সমাবেশ, ভাঙামুখআমাদের পুন্যিপুকুর ও যমপুকুর আর অনাবিল চোখ ও তোমার গতি মৎস-রমণী, শোকাহত খাবি শুধু, আয়না-মহল খাবি, পলায়নপর খাবি খাওয়া। শুনসান বুদবুদ বাঁশি বাজে বনে এবং আঁধারে ও অনুর্বর ঘাসেবাদামি রৌদ্রে।