অয়ন মণ্ডলে'র কবিতা
মৃত্যু
১.
ভিতর থেকে
আবার ধ্বংস হচ্ছি আমি
মাথার কাছে
রজনীগন্ধার শীতল অভিশাপ
মায়ের
ঠাণ্ডা চোখ, বাবার কাঁঠাল কাঠের মতো
ভঙ্গুর শরীর
আর তোমার ওল্টানো ঠোঁট
অসীম ধৈর্যে
আমার দিকে নুয়ে পড়েছে
নিন্দুকেরা
বলছে আগুন ভালবাসতাম আমি
মাটির
নমনীয়তা কোনো কালেই আমার সহ্যের
মধ্যে ছিল
না, নতুন কেবল আমদানি করেছি
ফুলহাতা
জামা—নিমকাঠের তক্তোপোষ
আরাম তো
ধনুক থেকে ছিঁড়ে আসা তীরের মতো
বাম বুকে
বিঁধে আছে। বলো হরি হরি বোল
বলতে বলতে
পার করে যাচ্ছি কত আলরাস্তা
মায়ের ছায়া
দৌড়ে দৌড়ে আসছে আমার পিছু পিছু
প্রেমিকা! তুমি আমার কপালে চোখের জল ফেলো না!
১২:২১ এ:এম/১৯:০৬:২০
২.
ভেবেছিলাম
একটা উপন্যাস লিখব
তুমি-আমি আর
তোমার প্রেমিক
ত্রিকোণ
প্রেম। ছোটগল্পের মতো স্পেস
নেব
আমরা...তিস্তার পারে একটা তাবু ফেলব
লাঠির মাথায়
লোহার শিক পুঁতে হত্যা করব মাছ
তুমি তোমার
প্রেমিক নিয়ে ম্যাপ খুলে বসবে
দাগিয়ে
রাখবে ঠিক কোথা থেকে কোথায়
টেনে নিয়ে
যাওয়া হবে আমার- আমার লাশ
কীভাবে রক্ত
ধুয়ে ফেলার পর তোমার লাল
প্যান্টি
শুঁকে দেখবে তোমার জান
এমনই জীবন
দিয়ে একটা উপন্যাস
লিখব
ভেবেছিলাম...কিন্তু সীমান্তে গোলাগুলি
বন্ধুর
আত্মহত্যা আর তোমার কামুক প্রেমিকের
তৃতীয় কবিতা
আমাকে হত্যা
করে দিল
তিস্তার জলে
ভেসে গেল তোমার সিঁদুরের কৌটো
আমার রক্ত
তোমার গর্ভকে দায়ী করবে না
১২:৩৪ এ:এম/১৯:০৬:২০
৩.
ঈশ্বরের
কাছে একটা জন্ম চেয়েছিলাম
ঠেলাগাড়ির
মতো জীবন
দু-চারটে
গাছের মাঝে
ছোট্ট
বাড়ি। সামনে ফাঁকা
ঘাসের
জমি। দুটো ময়ুর তিনটে
হরিণ শাবক।
শহর থেকে অনেক দূরে
যেমন
তোমার-আমার সম্পর্কের মাঝে
দাঁড়িয়ে
থাকে হাইরোডে থাকা ট্রাকের বিষণ্ণতা
ঠিক তেমন
একটা ঠোঁট চেয়েছিলাম
কবিতা পাঠের
হাত
চেয়েছিলাম
তোমাকে
জড়িয়ে ধরব বলে...
কিন্তু
ঈশ্বর
বিশ্বাসী মন
ভেঙে
কাঁকর
রাস্তা উপহার দিলো
একটা সবুজ
কলম আমায় ছায়ায় বসে
লিখে ফেলল, যে ঋণ শোধ হবার নয়
তাকে
মৃত্যুর পর কবিতা বলে চালিয়ে দিয়ো
১২:৪৫ এ:এম/১৯:০৬:২০
৪.
আর ঠিক কতটা
নত হলে
প্রিয়
লেখিকা ও বাচিক শিল্পী
মৃত্যুর পর
আমার মাথা কোলে তুলে নেবেন?
আর ঠিক
কতবার
ধানখেত
যেভাবে মাঠের নগ্নতা ঢেকে রাখে
সৌন্দর্যের
স্বপ্ন দেখলে নিজেকে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে
ঠিক সেভাবেই
কালো কালিতে কবিতা লিখলে
আমার চশমাকে
দায়ী করা হবে
আর ঠিক
কতবার?
অন্ধ
যুবতীরা আমার কবিতা পড়তে পারে না
প্রিয়
লেখিকা ও বাচিক শিল্পী
মৃত্যুর পর
উপড়ে ফেলো আমার চোখ
যাদের
কান্না তোমার তরমুজরঙের হৃদয়ে
বেজে ওঠে না, তাদের জন্য একটা সাংবাদিক সম্মেলন করো
দুটো কবিতা
শুনিয়ো...
আর ঠিক কবির
অকাল প্রয়াণে
এক মিনিট
বাঁচিয়ে রেখো, চুপচাপ
১:০৭ এ:এম/১৯:০৬:২০
৫.
মশারির উপর
উড়ে এসে পড়ল
প্রজাপতিটি
শান্ত
মৃদু নড়ছে
ডানা
মাঝ বরাবর
ছিঁড়ে গেছে সুন্দর
সৌন্দর্যের
একটি পাখা
হয়ত
যন্ত্রণা
মৃত্যুর
হাতছানি
দেখছি
একটু একটু
করে সে, কেমন
এলোমেলো করে
দিচ্ছে পা'গুলো
আঙুল ছুইয়ে
জাগাতে চাইলাম
নীলরং উঠে
এল
মৃত্যু
কেবলই কালো নয় যে!
১:৩৭ এ:এম/১৯/০৬/২০
৬.
ঘৃণা থেকে
একটা কবিতা লেখা উচিত ছিল
অব্যর্থ
গতিতে একটু একটু করে অস্তের দিকে এগোচ্ছি
আগের আমিকে
আর ঘোরাফেরা করতে
দেখি না
নিজের মধ্যে
লাল তিল
অসুস্থ মন
ফুলে ওঠা
বিড়ালের লেজের মতো যোনি
আমাকে আর
প্রেমিকার কাছে নিয়ে যায় না
বেশ টের পাই
এ শরীর আমি
বেশিদিন টিকিয়ে রাখতে পারব না
আজকাল, মৃতমানুষের স্বপ্ন দেখি
পেট ফুলে
ওঠে
বমি পায়
ব্যালকনিতে
একা দাঁড়িয়ে রাত
তুমি কী
শুনতে পাচ্ছ?
আমার পায়ের
নিচের মাটি কেমন
সশব্দে কাঁপছে...
২:০৮ এ:এম/১০/০৬/২০
৭.
কেন লেখা
থেমে যায়?
আমার শেষ
কবিতার ভাবনা
আকাশে
উড়ছে...দেদার মায়ের কান্নার মতো
বৃষ্টির
মরশুম এখন। কাল সূর্যগ্রহণ,কালো
বেড়ালের
ছায়ায় ঢেকে গেছে প্রিয় শহর
গোল পিরিত
স্বচ্ছন্দে গড়িয়ে যাচ্ছে
এ কোল থেকে
সে কোলে। সরে যাও
প্রিয়
মুখ: ওই অস্থির ডানাকাটা মনুষ্যরূপ
তুমি যাকে
কাছে ডাকো সেই কী আমার
নুনের পুতুল! এই তো ব্যাপার! জনহীন অরণ্যে
পাখিমাংসের
মতো তোমায় পেতে চেয়েছিলাম
শ্রদ্ধা: প্রিয়
রমণী: আড়বাঁশির রাধা...কেন সরে
গেলে? কেন আমি মরে যেতে চাই? এক ঢোক
জলে পিপাসা
মেটে না। স্মৃতিহীন ফুলের মতো
ঘুরি, হাত থেকে হাত বৃশ্চিক রাশির কৌতূহল
ভাবি কবিতা
লেখা আমার কাজ নয়, সে হয় না
মৃত্যু!
কার্পাস তুলোর মতো তুমি জ্বলে থাকো
এ শহরে
ভালবাসা বিক্রি হয়।যার আঙুলে
যত বেশি
আংটি, সেই তুলে নেয়, সেরা দামে!
১০:৩২ পি:এম/২০:০৬:২০
৮.
কিন্তু কত
না সহজে
যেন
গাছকাটার ভঙ্গিমায় করাত
চালিয়ে
দিচ্ছ, আমার হৃদয়ে
আমি মা মরা
সুশান্ত নই
হাতে গিটার
নেই
এমনকি অন্য
রাজ্যে বাড়ি
তবে কী
আমিও...কেন নয়?
এক টুকরো
পাখিডানা। এক টুকরো নীল আকাশ
নীল তিমির
দুঃখ। কচুরিপানার বিশ্বাস
এটুকুই তো
সম্বল। সঙ্গে রয়েছে ভাঙচুর জীবন
যদি ঝুলে
পড়ি গাছে—একাকী রাত
ভয়ের কোনো
কারণ নেই, এ-অঞ্চলে
বাঘভালুকের
উপদ্রব নেই...একটা
কুকুর
ফুটন্ত জলের শব্দের মতো কাঁদছে
১০:৫৪ পি:এম/২০:০৬:২০
৯.
মৃত্যুর
জন্য কবিতা লিখতে হয় আমায়। সত্যিকারের দৌড় নেই আর জীবনের।
মেয়েটাকে দেখি মধ্যমায়
আংটি গলিয়ে কেমন আনমনে বসে থাকতে।
ঝিঁ ঝিঁ ডেকে চলেছে রাতের অন্ধকারকে কোলে
নিয়ে। শুধু বাইরে থেকে
অনুভব করছি এক বিশাল গাছের ছায়ায় ঢেকে গেছে আমার শরীর। বুক
জ্বলা
ডুয়ার্সের স্মৃতি নিয়ে মাথার কাছে জ্যোৎস্না দোল খায়। চৌধুরী বাড়িতে বিয়ে
হবে মেয়েটার।
ঘরের লক্ষ্মী হয়ে বৃষ্টি ছড়িয়ে দেবে সকলের আবহে...ভাগ্যরেখার কাছে
নত স্বীকার করে
মনোরঞ্জনের সিগারেট জ্বলে উঠবে নিমেষে। জোনাকি নিভিয়ে দেবে তার আলো,
শিথিল হয়ে যাবে সমস্ত প্রেমিকদের ভগ। ভগ্ন শুশ্রূষায় গজিয়ে
উঠবে এক লেবুচারা।
লাল রঙের
সৌন্দর্য নির্ভর করবে অনেকগুলো অসিতবর্ণ রাতের। আমাকে আরও
আরও মৃত্যুর কবিতা লিখতে
হবে। ওহে সুভদ্র প্রেমিকগণ ছেড়ে যাওয়ার পর
প্রেমিকাদের চোখে কেন নীরদ আলো নেমে আসে?
১১:৩৫ এ:এম/২৪:০৬:২০
১০.
কালো
নক্ষত্রে ঢেকে গেছে আমাদের শহর
যেটুকু
সামান্য পরিচয় জালনার পর্দায় ফ্যাকাসে
আর্তনাদে দুলছে...নতুন সাইকেল আরোহীর
ম্লান
প্রস্তাবে, রক্তের আকারে গড়িয়ে চলেছে
রাস্তা। কলম
থেকে জন্ম নেওয়া অন্ধ অক্ষর
দাঁড়িয়ে
আছে একা। অভুক্ত লাশের উপর
ফুটে উঠেছে
আমার চামড়া, কিন্তু এইযে
মাথা নিয়ে
এত মাথা যন্ত্রণা, একে তুমি
কী করে
ক্ষমা করবে প্রভু?
কথা বলার
ভয়ে জিভে ফুটিয়ে রেখেছি
বোলতার
হুল। শ্রদ্ধাকে ডাকো : ফুল আর
সোহাগের
মিলনস্থানে আমার লাশ ঈশ্বরের
ঠিকানায়
কবুতর হতে চাইছে...
৯:১৩ পি:এম/২৫:০৬:২০