লেখা পাঠান আমাদের chayarodpatrika@gmail.com

Sunday, January 12, 2025

ছায়ারোদ নতুন সংখ্যা

                             ছায়ারোদ নতুন সংখ্যা

সম্পাদকীয়

 

সময়ের ধ্বংসাবশেষ থেকে উত্থিত এক বিচিত্র আলোড়ন আমাদের সমূহ অস্তিত্বে ঢেউ তোলে... আমাদের বোধশূন্য জগতে শুধুই চকমকির বিস্ফোরণ! অনেক না পাওয়ার মধ্যেও অসাড় জ্যোৎস্নার কাছে রাখি সমুদ্রের বিষাদ... শব্দহীন শব্দের মারাত্মক আর্তনাদ পুষে তৈরি করেছি ভীষণ এক একটি নক্ষত্রের হারিয়ে যাওয়া। আমরা তো মানুষের আনন্দচেতনার তীরে দাঁড়িয়ে কেবল অস্তগামী আগুনকে দেখতে চেয়েছি...

 

প্রকাশিত হল ছায়ারোদ নতুন সংখ্যা। আশাকরি সবাই পাশে থাকবেন আগের মতোই।

   বিনীত

বিশ্বজিৎ দাস

সৌমাল্য গরাই-এর কবিতা, ছায়ারোদ নতুন সংখ্যা

 সৌমাল্য গরাই-এর কবিতা

দেবতার জন্ম

 

সাম্রাজ্য অংশত ভগ্ন ছিল আমাদের

দাঁড়ি ও কমার ঘন ঘন আসা যাওয়া 

শৃঙ্খলিত করে দিত পথের দুপিঠ

থাকবোই, নিঃশ্বাসও বলতে পারে না একথা

তবু কিছু ত্রসরেণু ছিল দু'বেলার কড়ি খেলাজুড়ে

 

সমগ্র বাসর ছিদ্রময়, কালনাগিনীও জানে

অল্পই শাশ্বত চিরপ্রোজ্বল্লিত থাকে

যেরকম উনুন বা শ্মশানের দাহ

আর জেনেছিলাম নিশ্চিত

পরবর্তী স্মৃতিপরগণায় আমি আসব

যেমন চাইবে তার ঈপ্সিত জীবন

 

ছিন্নপাতাপোশাকের দেশে

অজান্তে সে দিয়েছিল সন্ধ্যামণি, প্রদীপের আলো

তুলসী তলায় শঙ্খপ্রণামের রীতি

আমি তাই দেবতা হয়েছি

 

সূত্র

 

আমাদের দেখা হয় রোজ দশমিকে, বিন্দুতে বিন্দুতে

 অথচ চিনি না তেমন

ধরি তুমি এক অজ্ঞাত রাশি

আমি তোমার মান জানতে চাই, 

কতপথ, কেমন হবে তার ফলাফল

 

জানি বিয়োগের গায়ে ব্যথা

তবু যদি এসে বসো তার পাশে

দুটিতে সমান হই

গণিত এভাবে  মেলে

 যদি ঠিকঠাক এগোনো যায়

 

অবোধ বালিকা তুমি, অংকে কাঁচা

অচেনাকে ভয় পাও

সূত্র কাছেই ছিল, আমিও ধ্রুবক ছিলাম

শুধু মান  অজ্ঞাত ভেবে

  ঠিকমতো  ধরলে না আমায়...

 

নজরানা

 

নজর ঘুরিয়ে হাওয়া কার এলোচুলে

রেখেছে উদ্বায়ী হাত, বয়সের ভুলে

কবির দেশের মেয়ে, শাদা ঝরোকায়

রিমঝিম দুপুরের চশমায়, দেখেছে রোদেরা

ছায়াজামা পরে পায়চারি করে হাঁটাহাঁটি

পুকুরের পাড়ে বসে লেখে

ঝিলমিল জলের কবিতা, আকাশের নীল পিপাসায়

কলতোলা জল হাই তোলে আর ঘুমের মাসিমা

বেড়াতে আসেন খুকুদের বাড়ি,

খুকু কি ঘুমালো তাই?

 

নরম তোতলানো মন,  জানে না কখন

শব্দের বেড়াল আজ হারিয়েছে  তার

কীভাবে জাগাবে খুকুমণি, সিঁদুরের সিঁথি

নজর ঘুরানো হাওয়ায় কিছুক্ষণ পর

অঝোর বিবাহে ভেসে যাবে বিরহের ঘর

 

নরম ঝলসানো মন, জেনেছে এখন

দু'পাশে বহতা হাওয়ায়

 একটাই প্রচ্ছন্ন চোখ তাকে দু'দিকে কাঁদায়...

 

গ্রামোফোন

 

পৃথিবীতে যত বিরহের গান শুনি তোমাকেই মনে পড়ে। কথাগুলো দাঁড়িয়ে থাকে মাঝ রাস্তায়অচেনা অলি-গলি জুড়ে। ভ্রমর কই গিয়ে জানায় না তো সে খবর। বৃষ্টিতে ভরে যায় উঠোন। আশ্বিনের নীলকন্ঠ  পাখি এসে জানায় "নিশীথ স্বপনসম" তুমি স্মৃতি ভুলে গেছ।

 

দূরত্বের অন্তরালে সেতু কখন যেন সেতার হয়ে যায়, কোলে নিয়ে "নিষ্ঠুর করে" মীড় দাওনি তবু। শুধু সরে গেছ স্পর্শহীনতার গন্ধ ছড়িয়ে।

নিভৃতে বসে সেই মনোলগটুকু লিখি। স্থির পুকুরের জলে ঢিল ছুঁড়ে দেয় কেউ কেউ।  তোমার প্রসঙ্গ উঠলে ভরাজল বুকেও কেমন একটা তেষ্টা পায়। মনে মনে অনুভব করি—নৈঃশব্দ্যের অন্তরায়,  নিজের অজান্তেই  খুব পুরনো  দিনের   একটা বন্ধ হয়ে যাওয়া গ্রামোফোনে  সুর হয়ে থেমে আছ অন্য একটা বিরহের গান হয়ে বাজবে বলে...

 

ঋণ

 

কেউ কাছে নেই আর। গতজন্মে ছিল

এখন নতুন জন্ম, নতুন পাঁচিল

বাঁধিয়ে রেখেছি ফ্রেমে। আমিও তো চিনি

পুরনো হাওয়ার দিন একা পুষ্করিণী

হরিণী নিলয় ছোটে, নিজের অতলে

ভেসে যায় জন্মদিন, নক্ষত্র পললে

 

বৃথা এ নতুন জন্ম, কোলাহল, এত ডাকাডাকি

তোমার অজান্তে এই ছেড়ে যাওয়াটুকু লিখে রাখি

কে বোঝে নিজের ব্যথা, ভাষা তার কত টুকু জানি?

এ লেখা তোমার দান, এ লেখা তোমার কাছে ঋণী

প্রণয় গোস্বামীর ছোটোগল্প, ছায়ারোদ নতুন সংখ্যা

 মাংস ভাত

প্রণয় গোস্বামী

 

 

                                টেঁপির মায়ের অভাব অনটনের সংসারটায় আজ বেশ সুসার এসেছে। তিনবছর আগে স্বামী যোগেন দিল্লিতে রাজমিস্ত্রি কাজ করতে গিয়ে তিনতলা থেকে পড়ে যখন মারা গেল। মাথায় যেন বজ্রপাত হয়েছিল সেদিন! চার চারটে ছোট ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে কি যে অসুবিধায় দিন কাটছিল তা একমাত্র ঈশ্বরই জানেন। সেসময় দিল্লির  ঠিকাদারের দেওয়া দুই লাখ টাকা ব্যাঙ্কে রেখে সুদ বাবদ মাসে এগারো'শো টাকা আর পাড়ার সমীর দাদাবাবু বিডিওকে বলে কয়ে বিধবা ভাতা একটা করে দিয়েছিলেন সেখান থেকে মাসে এক হাজার টাকা। এই দুই হাজার একশো টাকায় চারটে ছেলেমেয়ের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে পারে সে। নিজে যে কারও বাড়িতে ঘরমোছা বাসনমাজর কাজ করবে তারও উপায় নেইসেসময় ছোট মেয়েটার সবে দুইমাস বয়স। অতটুকু বাচ্চা কার কাছে রেখে কাজে যাবে! তাই অগত্যায় খেয়ে না খেয়ে বাচ্চাগুলো মানুষ করতেই হবে। এই দুর্মূল্যের বাজারে ভালোমন্দ তেমন কিছু জোটে না কপালে। ছেলে মেয়েগুলো পাশের বাড়িতে মাছ মাংস রান্না হলে মা'কে জ্বালিয়ে মারে এক্কেবারে। তখন টেঁপির মায়ের চোখের জল ফেলা ছাড়া উপায় কিছু নেই। তাদের কে বোঝাবে, এসব ভালোমন্দ খাওয়া তাদের জন্য নয়! এখন অবশ্য টেঁপি'টা একটু বড়ো হয়েছেযখন বাপ'টা মরে তখন তো সাত বছরএই বছরে সে দশে পড়ল। এখন একটু বুঝতে শিখেছে, কিন্তু ছোট দুটো? তারা তো কিছুই বুঝতে চায় না। এই তো গত বছর দুগ্গাপুজোয়ছোট ছেলেটা নতুন জামা নেবে তো নেবেই, কিন্তু দুই'হাজার টাকায় কি আর সংসার চলে বলুন দেখি? তবুও পাড়ার ফেরিওয়ালার থেকে ছয়শো টাকা দিয়ে তিনজনের জন্য তিনটে জামা কিনে দিয়েছিল টেঁপির মা। তার পরনের শাড়ীটারও তো শতচ্ছিন্ন দশাতাকে অবশ্য পাশের বাড়ির সমীর দাদাবাবুর বৌ একটা নতুন শাড়ি দিয়েছিল। যাই হোক, কোনও মতে দিন যে কাটছে না তা নয়তবে ওই যে, প্রাণে বাঁচার জন্য যেটুকু মোটা ভাত কাপড় দরকার সেটুকুই। টেঁপির মা বাচ্চাদের নিয়ে পাড়ায় দুগ্গামেলায় যেতেই ভয় করেছোটছেলেটা যা দস্যি হয়েছে কি বলবো, যা দেখবে সেটাই কেনা চাই তার। তারই বা কি দোষ বলুন! সে তো আর জানে না যে ছোটবেলায় বাবা মারা গেলে ওসব পাওয়া যায় না। তা যাক গে, আজ কিন্তু টেঁপির মায়ের বাড়িটা খাসীর মাংসের গন্ধে এক্কেবারে ম ম করছে। ছেলে মেয়ে গুলোর তো আর তর সইছে না যেন! বারবার করে শুধু মাকে জিজ্ঞেস করেই চলেছেও মা রান্না হলো? টেঁপির মা কপট ধমক দিয়ে বলে, একটুখানি দাঁড়া বাপু, উনুন তেকে কড়াটা নামাতি দেবিনে? খাবি তো! তোদের কে দিয়ে তবেই তো আমার শান্তি। হঠাৎ গলাটা ধরে আসে তার,ধরা গলায় স্বগোতোক্তির মতন করে বলে,আজ তিনবছর পর ছা গুলোর মুকে মাংস তুলি দেচ্ছি! সবার বাড়িতে পরব পার্বনে ভালোমন্দ রান্না হয়! ও ঠাকুর আমারে তুমি এত শাস্তি কেন দিচ্ছ বলো দেকিনি! সবার মুকে অন্ন জোগাও,আর শুদু আমার ছা গুলোই কি তোমার এত্ত ভারি হয়ে গেচিল গো? যে ওদের বাপটাকে তুলি নিলে? ওদের বাপ বেঁচি তাকলে নিচ্চয় ওদের অমন হাভাতের মতন দিন কাটাতে হতোনি! যা হোক কাজকম্ম করেনিজে না খেয়ে ছা গুলোর মুকে দুটি ভালোমন্দ দেচ্চিলো লোকটা। তারেই তুলি নিলে গোএই তোমার বিচার!

 

 

               পঞ্চায়েত নির্বাচন সামনেই,পাড়ার হোদল থেকে শুরু করে কালু মন্টু সান্টু হাবলু, কাবলু পর্যন্ত সকলেই এখন ভীষণ ব্যস্ত। আরে এরাই তো এখন নেতা! এরা সবাই বছরভর একসঙ্গে কাজকর্ম করলেও এখন কিন্তু বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে একে অপরের প্রতিপক্ষ।পাঁচবছর তেমন কেউ এদের পোছে নাবাজারে যেমন হঠাৎ করে আদার দাম বাড়ে, ঠিক তেমন এদের দামটাও হঠাৎ বেড়ে যায়। যখন দাম বাড়ে তখন কদরও বাড়েদাম কমলে আবার আগের জায়গায় ফিরে যাবে। কিন্তু ভোটের সময় এলেই হোদল কাবুল হাবুলদের দায়িত্বের অভাব নেই। প্রায় প্রতিদিনই কারও না কারও বাড়ির উঠোনে দলীয় সভা বসে।মাঝে মাঝে কোলকাতা থেকে বড়ো নেতারা সভা করতে এলে সেই সভায় লোক নিয়ে যাওয়ার সব দায়িত্ব এদের কাঁধেই। এখন বিভিন্ন জন বিভিন্ন দলের নেতা। সকলের কাঁধেই দায়িত্বের পাহাড়। কিভাবে ভোট যোগাড় করতে হবেকিভাবে পতাকা লাগাতে হবেকার পাড়ায় বাতি লাগবেকার ঘরেতে রান্নার চাল নেই! শুধু বলতে দেরি, সঙ্গে সঙ্গে টাকা বের করে দিচ্ছেন নির্বাচনে দাঁড়ানো বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা। তাদের থেকে সাহায্য সামগ্রী নিয়ে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতে দেরি করছে না হোদল মন্টু কালু সান্টুর হাবলু কাবলুর দল। টেঁপির মায়ের বাড়িতে খাসীর মাংস তো হোদলই দিয়ে এসেছে আজ সকালে। টেঁপির মা অবশ্য জিজ্ঞেস করেছিল, কে দিল? কেন দিল? কিন্তু হোদলের সাফ কথা, আরে দিয়েচে যখন খেয়ে নাও। বছরভর তো আর খাসীর মাংস কিনে খেতি পারবে নি! এসময় বাবুরা দেচ্চেন, খেয়ে নাও। শুধু ভোটটা ঠিক জায়গা মতো দিতি হবে। টেঁপির মা আপত্তি করতে যাচ্ছিলইএমন সময় কোথা থেকে টেঁপি এসে হোদলের হাত থেকে মাংসের প্যাকেটটা ছোঁ মেরে নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলকি আর করা, টেঁপির মাও আর কিছু না বলে রান্নাঘরে চলে গেল।

 

 

                            এদিকে সুখ একেবারে উথলে উঠেছে চা দোকানদার মঙলুর। তার চায়ের দোকান একেবারে উপচে পড়ছে খদ্দেরে। সকাল থেকে শুরু করে একেবারে রাত্তির বারোটাহাত বন্ধ নেই তার।মন্টু সান্টুরা আগে সকাল সন্ধ্যে এককাপ করে চা খেয়ে কাজে চলে যেতআর এখন? আর বলবেন নাসারা দিনে তো মোটামুটি দশ কাপ হচ্ছেই! অন্যসময় অধিকাংশ খদ্দেরই ধারে চা খায়, অনেক সময় মঙলুর সঙ্গে তো বকেয়া টাকা আদায় নিয়ে কত বাকবিতণ্ডা হয় তার ঠিক নেই। আর এখন? ধার বলতে নেইনগদ কড়কড়ে টাকা। টাকা তো সব নির্বাচনে দাঁড়ানো প্রার্থীরাই দিচ্ছেন। তাদের এখন একটাই কাজ, সকালবেলায় চায়ের দোকানে এসে কে কে চা খেয়েছে, কে কে খায়নি,সেটা জিজ্ঞেস করা। আর দোকানি মঙলুকে বলা যেচা দে সবাইকেমঙলু যদি জিজ্ঞেস করে সঙ্গে বিস্কুট দেবো কি? সঙ্গে সঙ্গে ধমকের সুরে তাকে বলা যেএটা আবার জিজ্ঞেস করার কি আছে? দে সবাইকে চা বিস্কুট। যে যে পান খাবে তাকে পানও দে। প্রার্থীরা সকলেই এখন গৌরি সেন। মঙলুর ঘরে যেন লক্ষী এসে পড়েছে গো! মন্টুসান্টুহোদল ভোদল, কালু ভোদাইসকলেই চা বিস্কুট খেয়ে তারপর একটা করে একশো জর্দা দিয়ে পান খেয়ে ঠোঁট দুটো লাল করে বসে রয়েছে দোকানে। সেখানে আলোচনার শেষ নেইরাজ্য সরকার থেকে শুরু করে কেন্দ্র সরকার পর্যন্ত সকলের বাপ ঠাকুর্দার মুণ্ডুপাত চলছে সমানে।

 

          এইতো আজই সক্কালবেলা মঙলুর দোকানে বসে হোদল বলে, পচা দা এবারও  সিওর জিতছে।তাকে কেউ হারাতে পারবে নে। পাশেই বসে ছিল কাবলুসে আবার নীল রঙের প্রার্থীসে হরি বাবুর টাকায় চা বিস্কুট খেয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করে বলে  উঠলকি বললি? পচা জিতছে? পচা যদি জেতেতাহলে আমি একলক্ষ টাকা বাজি রাখলেম। কাবলু দিনমজুরী করেসে কোথা থেকে একলক্ষ টাকা পাবে! সে দিকে তার  হুঁস নেই, কিন্তু বলেই বসলো। দুজনের ভীষণ বাকবিতণ্ডা শুরু হয়ে গেল, বাকবিতণ্ডা থেকে হাতাহাতি। একেবারে যুদ্ধের পরিবেশ। মঙলুর দোকানের চায়ের কাঁচের গ্লাস ভেঙে চুরমার। অনেক কষ্টে দুজনকে আলাদা করা হলো। সবুজ প্রার্থী পচা, আর নীল প্রার্থী হরি মিলে ক্ষয়ক্ষতির সাময়িক হিসেব নিকেষ কষে ক্ষতিপূরণের টাকা মিটিয়ে দিল মঙলুর। আপাতত এলাকা শান্ততবে আবার কখন যে মঙলুর চায়ের গ্লাস ভাঙবে তার ঠিক নেই। সে যখন ভাঙে ভাঙুক গেটাকা তো প্রার্থীরা দিচ্ছেনই, ক্ষতি কি!

 

 

               টেঁপির মায়ের শোবার ঘরটি বাঁশের বাতা দিয়ে তৈরি করা তার উপরে কাদামাটি দিয়ে লেপাই করে কোনমতে বসবাস করছে। তাদের পাড়ার প্রায় সকলেরই পাকা ঘর। প্লাস্টার করা দেয়ালতাতে খুব সুন্দর করে রঙ করা। প্রায় সকলেই নিজ নিজ বাড়ির দেয়ালে লিখে রেখেছেন, বিজ্ঞাপন লাগাবেন না। অতএব দলীয় প্রার্থীদের দেয়াল লিখন লেখার একমাত্র জায়গা হলো, টেঁপির মায়ের দেয়ালটা। সেই কাঁদামাটি লেপা দেয়াটারও জরাজীর্ণ দশা। তাতেই জ্বলজ্বল করছে তিনটি দলের তিনটে দেয়াল লিখন।সকলেই  উন্নততর পঞ্চায়েত গড়তে নিজ নিজ দলের প্রার্থীকে ভোট দেবার আবেদন করেছেন। সমীর বিকেলে কর্মস্থল থেকে ফিরে টেঁপির মায়ের দেয়ালের লেখাগুলো পড়ছে আর ভাবছেএই দেয়ালেই গতবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে উন্নয়নের কথা লেখা ছিল। আবারও এই দেয়ালেই উন্নয়নের আবেদন! গত পাঁচ বছরে উন্নয়ন যে একেবারে হয় নি তা কিন্তু নয়। পঞ্চায়েতের গত বছরের জয়ী প্রার্থী‌ পচার উন্নয়ণ অবশ্যই হয়েছে। তার ঝাঁ চকচকে বাড়ি হয়েছেগাড়ি হয়েছেতাইতো তার বাড়ির দেয়ালে আর উন্নয়নের দেয়াল লিখন লেখা যায় না। সেখানে লেখা রয়েছে, "বিজ্ঞাপন লাগাবেন না।" টেঁপির মায়ের দেয়ালটাই উন্নয়নের একমাত্র প্রতীক। তবে যাই হোকতাই হোক টেঁপির মায়ের ছাঁ'গুলো কিন্তু আজ তিনবছর পর খাসীর  মাংস দিয়ে ভাত খেয়ে খুব হাসছিল। বিকেলে রাস্তায় সমীরকে দেখতে পেয়ে ছোট মেয়েটা আধো আধো গলায় বলেও জেটু আজকে আমার মা কি নান্না করেচে বলো তোসমীর কৌতুহলী হয়ে জানতে চায়, কি রেঁধেছে? ছোট্ট মেয়েটি আধো আধো গলায় বলে......., মাংক ভাত।

 

           দুইদিন ধরে আকাশটা কেমন যেন মেঘে ঢেকে রয়েছেআজ পূর্ণিমা। চাঁদের আলো'কে পৃথিবীতে আসতে দিতেই চায়না মেঘের দল, আচমকাই হয়তো একটু ফাঁক পেয়ে আকাশটা কেমন রূপোলি আলোয় ঝলমলিয়ে উঠলো যেন! ঝলমলে চাঁদের আলোয় পরিস্কার পড়া যাচ্ছে টেঁপির মায়ের মাটি লেপা বেড়ার  দেয়ালে উন্নয়নের লেখাগুলো, "উন্নততর পঞ্চায়েত গড়তে এই চিহ্নে ভোট দিন।"

অরিত্র দ্বিবেদীর কবিতা, ছায়ারোদ নতুন সংখ্যা

 অরিত্র দ্বিবেদীর কবিতা

উৎসর্গ: তোমায়

 

তোমায় দেখি অরন্ধন দিনে

কেমন পথে একলা চিনে চিনে

এগিয়ে গিয়ে চলো!

 

তোমায় দেখি নীলচে রঙে নেয়ে

বেড়াও ঘুরে, ঘুরে বেড়াও মেয়ে

আস্তে কথা বলো!

 

তোমায় দেখি বিষণ্ণতা গাঁয়

পৃথিবী ঘুরে অবোধ জোছনায়

জ্বেলেছ দুটি কুপি

 

তোমায় দেখে লিখতে গিয়ে থামি

অপদেবীর মানত করে আমি

চাঁড়াল হাতে সঁপি

 

লাইটহাউসের দিনগুলি ১

 

যেটুকু ভূপতিত মন, দূরের ভেলায় চেপে

ধ্রুপদী লঘুপক্ষে লম্বিত করেছে যাতায়াত

তাকে বহনের জ্বালা তুলে দিয়েছি দু'হাত

একী অসম্ভব সামান্যে ভালবেসেছি প্রতিদিন

মান্যে-অমান্যে আর একবার ডাক দিয়েছি,

'হে দুখ, হে স্মৃতিভার, কিশোরবেলার যত মাঠ'

রন্ধ্রহীন বাসরে, অখণ্ড, অনন্ত

পাথরে পাথরে, চোখগুলি রাঙা, অচিন্ত্য

জলের করুণে দেখেছি তাদেরই কথা, 'চুপ'

শুনেছি, যেসব মায়েরা ছেলেদের কথা ভেবে

এখনও বসে আছে চৌকাঠে! রাতভর—

গুটোনো ল্যাজে একলা কুকুর, শুনিয়েছে

যিশুর জন্মকথা, নিবিষ্টে তাদের কানে কানে

 

তারা, হেসেছে বা কেঁদেছে লম্বিত যাতায়াতে

 

লাইট হাউসের দিনগুলি ২

 

স্পর্ধিত বিশ্রামে চেতনাহত পৃথিবী

মৃত্যুর কথা বলে।

বলে সেইসব যুবতীর কথা যাদের বাড়ির

চৌকাঠে রক্ত,

লক্ষ্যভ্রষ্ট পৃথিবী প্রেমের কথা বলে

যবুতীরা শোনে,

তাদের স্তনে ফোটে পদ্ম ডাঁটির নিবিড়,

তাদের ঘুমে ঘুমে

জেগে ওঠে রাত! আর শীৎকারে শোনা যায়

কবন্ধ সুরের হাতছানি রব!

 

প্রবেশ, তোমাদের ছাড়িয়ে সেসব উড়ে যাবে

গোপন কোনো গুহায়,

যে গুহার আঁধারে জেগে উঠবে ভালবাসা;

সে আশায়, বসে থাক্

বসে থাক্ যত 'আমি' আমার, মূর্তমণ্ডিত

এ খণ্ডচিত্রে

জেগে থাকুক অভিশাপ আমার, জেগে থাকুক—

এ পৃথিবী! স্পর্ধিত বিশ্রামে হোক শুশ্রুষা!

যুবতীদের কমলাঙ্গে জন্ম নিল' নতুন সৌরভ

 

প্রার্থনা লেগে শান্ত হল' প্রতিপদ

নৈরাশে মিহি হয়ে এল রৌদ্র, আজীবনের!

 

লাইটহাউসের দিনগুলি ৩

 

মায়ের সমান ভূপতিত মাটি

বাবার সমান হলুদ নদীর ধারে

গাছ বসাবো যেমন তেমন

 

সকাল খোঁজ নিতে আসবে জানি

তুমি এলে, কথা হবে, বুঝি...

অথচ সময়? সে যে ফুরিয়ে এলো বলে

 

বসতে বলবে না পীড়িতে?

অসংখ্য ফাঁকা চালাঘরে

ডেকে তুলবে না একদিন আমায়?

 

তোমার সমান মেঘের দরবারি

প্রেমের সমান ঘৃণার উপরোধে

কাল অনেকক্ষণ কথা বলেছি তোমায় নিয়ে

দাঁতের জটিলে কাটোনি তো জিভ!

 

এদিকে এলে তুমি জানিয়ো ছাইপাঁশ

রাতের বৃষ্টি, ভুল করেছি আমি,

শুধরে নেব ফুলে, সময় পেলে।

কিঞ্জল রায়চৌধুরীর ছোটোগল্প, ছায়ারোদ নতুন সংখ্যা

টিকটকার্‌স

কিঞ্জল রায়চৌধুরী

 

শট ওয়ান। লোকেশন মোহরকুঞ্জ। ‘কুঞ্জে কুঞ্জে গুঞ্জে অলি...’ ওইখানে। ভিডিয়ো হবে। টিকটক। শেয়ার করলে দেখবে সবাই। লাইকের পর লাইক কমেন্টস অউসাম! লাভলি! বিউটিফুল! মোহরকুঞ্জে বিউটিফুল সব ফুলগাছের ঝাড়ি। ন্যান্সি তার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। পাবলোর হাতে ফোনের ক্যামেরা। ব্যাকগ্রাউন্ডে নানারকম মিউজিক-থিম। তোলা ভিডিয়ো ওগুলোর সাথে জুড়ে দিলেই শট 'ওকে'।

ন্যান্সি আঠেরো, পাবলো উনিশ। পারফেক্ট কাপল্। ন্যান্সি পোজ দেয়, পাবলো ছবি তোলে। টিকটকে ভিডিয়ো করে  দেয়।

আঙুলে লিপস্টিক লাগিয়ে গালে  আর  নাকে অল্প  করে  ঘষে নিয়েছে ন্যান্সি, খানিকটা চোখের পাতায় আর একটুখানি গ্লিসারিন। জল কাটছে। ঘন ঘন নাক টানছে ফুটফুটে মিষ্টি মেয়েটা। কান্না কান্না মুখ। শট রেডি। পাবলো ক্যামেরা তাক করেছে। ব্যাকগ্রাউন্ডে কে যেন প্রশ্ন করল ‘আরে তুনে উসকো কেয়া দিয়া?’

ন্যান্সি  মুখের কাছে দু-হাতের সবকটা আঙুল জুড়ে হার্ট সাইন তৈরি করে। মানে দিল। ‘অউর ফির উসনে কেয়া কিয়া?’ এবার হার্ট সাইনের ভেতর দিয়ে ন্যান্সি চুমুর ভঙ্গিতে ঠোঁট বাড়িয়ে দেয়। আলতো  একটু হাসি চোখের কোল  বেয়ে দু-এক বিন্দু জল গড়িয়ে যায় টপাক টপাক সাথে সাথে ব্যাকগ্রাউন্ডে মিউজিক বেজে ওঠে, আর অনেকগুলো প্রজাপতি উড়ে যায় মুখের সামনে দিয়ে ওটা বাই ডিফল্ট।

মোহরকুঞ্জে বসা গোটা পাঁচেক কাপল থমকে গিয়েছে ওদের কাণ্ড দেখে। চুমু খেতে ভুলে গিয়েছে দু-একজন। পাবলোর ভুরুতে ভাঁজ। একবার ভিডিয়ো দেখছে, আর-একবার ন্যান্সিকে। ও কি সত্যিই কাঁদছিল! এখনও যে মুখ থমথমে, চোখে জল! না না যাঃ! ওই তো হাসছে... কাট!

 

শট টু। আজ লোকেশন বিধাননগর রোডের স্টেশন-প্ল্যাটফর্ম। আজকের থিম ‘জান তেরে নাম’। ব্যাকগ্রাউন্ডে বুক ঢিবঢিব হার্টবিট। একেবারে শেষপ্রান্তে শিয়ালদাগামী ট্রেন ঢুকতেই লাফ দিয়ে প্ল্যাটফর্মের কিনারায় চলে গেল ন্যান্সি। কেউ কিছু বোঝার আগে, অতর্কিতেই। পাবলো ফোন তুলে রেডি। ন্যান্সি দু-হাত মেলে দিয়েছে যেন পাখির ডানা, ওর পোকেমন আঁকা হলুদ গেঞ্জি ছুটে-আসা গোটা ট্রেনটাকে আড়াল করে ফেলেছে। হাওয়ায় উড়ছে চুল।

ট্রেনের হুইসিল আর হার্টবিট মিশে একাকার। মাত্র কয়েক সেকেন্ড। হঠাৎ পা ফসকায়... পাবলোর হাতের ফোন ক্যামেরা  তখন  শূন্যে। খুঁজে  পাচ্ছে না ন্যান্সিকে!  ওর পোকেমন গেঞ্জিও উধাও! তার বদলে হুড়মুড়িয়ে ছুটে আসছে শুধুই একটা চলন্ত ট্রেন...

একটু দূরেই ধাক্কাধাক্কি। লোকের ভিড়। লাইনের ধার থেকে সেখানে ঝুঁকে পড়েছে একগাদা মেয়ে-পুরুষ। কেউ বুঝতে পারছে না কেন এমন হল! পাবলোও বুঝতে পারছে না। ভিডিয়োটা টিকটকে চট করে আপলোড হয়ে গেছে। শেয়ারও হয়ে গেছে ফেসবুকে। ফোন হাতে দাঁড়িয়ে সে কেমন যেন হতভম্ব। অসহায়! শট ওকে হয়নি। থিমের মধ্যে সত্যি এমন কিছু তো ছিল না! বার বার ভিডিয়োর রিপ্লে ঘেঁটে ঘেঁটে সে ন্যান্সিকে খুঁজে চলেছে সমানে...

ঠিক তখনই  চারপাশের ভিড়ের ভেতর থেকে আলাদা হয়ে দাঁড়ায় কিছু মানুষ, অদ্ভুত তাদের চোখের ঠান্ডা চাহনি, ঠোঁটে অনুভূতিহীন হাসি...  যেন  গ্রহান্তর  থেকে  নেমে  এসেছে। সবাই ফোন তাক করে পাবলোর দিকে গোটা ঘটনাটা ওরা সব লাইভ ভিডিয়ো করে টিকটক-এ ছেড়ে দিতে চাইছে এক্ষুনি, তারপর শেয়ার হবে, লাইক পড়বে, কমেন্টস

 

ন্যান্সির মা দুশ্চিন্তায়। সন্ধে হতে চলল, মেয়ের ফেরার নাম নেই। আজ তো কোচিং অফ! ফিরে আসবে বলেছিল বিকেলের আগে। এখন ফোন করলে ফোনটাও ধরবে না। ধরলেই “আসছি তো মা! —কেন ফোন করছ বারবার?— আচ্ছা রাখছিএসব বলেই কুটুস করে কেটে দেবে ভালো করেই এটা জানে ন্যান্সির মা। বিরক্তি আসে। এই হয়েছে এক টিকটকার জেনারেশন! দিনারাত্তির আদাড়বাদাড়ে, জলের ধারে নেচে-গেয়ে-হেসে-কেঁদে ভিডিয়ো কী জানি বলে? রিল, রিলের পর রিল বানিয়ে চলেছে! আপনমনে হাসে আয়নাকে হাসায় সেলফি! সময় অসময় নেই, বিড়বিড়িয়ে চলেছে কানে তার গুঁজে। কে যে কার সেই ফিশফিশ শোনে, বোঝা দায়! আজও নির্ঘাত সেই ছেলেটাকে নিয়ে ছবি তুলতে মেতে উঠেছে!

সদ্য অভ্যস্ত হাতে স্মার্টফোন তুলে নেয় স্মার্ট ন্যান্সির উদ্‌বিগ্ন মা। আঙুল চলে যায় ফেসবুকে বোঝা যাবে অন্তত মেয়ের এই মুহূর্তের স্ট্যাটাসটা কী!

এই তো, পোস্ট দিয়েছিল পাবলো, ওই ছেলেটা, কী একটা ভিডিয়ো শেয়ার করেছে ঘণ্টা দুই আগে। মেয়ের ক্যাটকেটে লাল ঠোঁটের ওপর ভিজে চোখের নোনাজল চিকচিক, আর কত কত উড়ে যাওয়া প্রজাপতি! ‘দিল দিয়া, দিল লিয়া চলছে... আসুক আজ বাড়িতে!  অঙ্ক খাতায় মাঙ্কি এঁকে ক্লাসে জমা দেওয়া বার করে ছাড়বে... এই যে, এই তো আরেকটা ভিডিয়ো এটা আবার কোথায়? কে জানে কোন স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম! নাম দেখা যাচ্ছে না দেখে তো উলটোডাঙাই মনে হচ্ছে। দুঃসাহী মেয়ে তার ছুটে-আসা দুরন্ত ট্রেনের হাওয়ায় উড়ন্ত চুল ঝাঁকিয়ে, দু-হাত ছড়িয়ে যেন ট্রেনটাকেই জড়িয়ে ধরতে চাইছে!

ন্যান্সির মা টাইম মিলিয়ে বোঝার চেষ্টা করে, ভিডিয়োটা শেয়ার হয়েছে পঁয়তাল্লিশ  মিনিট আগে। তার মানে তখন উলটোডাঙাতেই ছিল, এখনও কি ওখানেই... “কৃপয়া সুরক্সিট দূরি বর্‌কারার রাখিয়ে...তিন নাম্বার প্ল্যাটফর্ম সে থ্রু ট্রেন...” বলতে বলতেই হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ল ট্রেনটা!... এরপর... ভিডিয়োটা কেমন যেন হিজিবিজি ঝাপসা...

ভিডিয়োটা ভাইরাল হয়েছে, প্রাণের খুশিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে এর ওর টাইমলাইনে। ন্যান্সির মা সব ভিডওয়োগুলোই ফরোয়ার্ড করে খুঁজতে থাকে মেয়েকে, পাচ্ছে না... হঠাৎ ফোন! রিংটোন ঘনঘন বাজছে। এমন প্রতিদিনই উড়োফোন আসে, প্র্যাংক কল! ধরা যায় না, অচেনা নাম্বার। টিরিক করে মেসেজ ঢুকল মেসেঞ্জারে ‘মনীশ কলিং! আর্জেন্ট। প্লিজ্ রিসিভ!’ ন্যান্সির বাবা! এইসময় হঠাৎ অন্যের ফোন থেকে? ঘুরিয়ে কল করার আগেই প্লপ্ করে একটা ভিডিয়োর লিঙ্ক ঢুকল হোয়্যাটসঅ্যাপে... দ্রুত ক্লিক! সার্ভার ডাউন, ঘুরছে, খুলল অবশেষে

কাঁদোকাঁদো গলায় প্রলাপের মতো লাইভ বকে চলেছে ওই ছেলেটা, পাবলো। “আমি কান্না রুখতে পারসি না বন্ধুরা... আমি এইখানে এই প্লাটফরমে আমার বান্ধবীকে নিয়ে ভিডিয়ো করসিলাম! এই রেলওয়ে ট্র্যাকে ভীষণ বড়ো একটা ট্রেন... তারপর থেকেই ন্যান্সিকে আর খুঁজে পাস্‌সি না! আমি যে কী করি! তোমরা কমেন্টে সাজেশন দাও বন্ধুরা! ভিডিয়োখানা প্রচুর প্রচুর শেয়ার করো!... এইখানে অনেক লোক, আমি কী করি, আমায় কমেন্টে জানাও...”

ন্যান্সির মা চারবার ভিডিয়োটা দেখল। বুঝতে পারছে না এটা কি রিল? না আসল? মনীশকে হোয়্যাটসঅ্যাপে ধরে ‘মনটা বড়ো আনচান করছে গো?’

ইতিমধ্যেই মনীশের অফিস কলিগ সুব্রত একটা হোয়্যাটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে ফেলেছে, টকাটক অ্যাড করে ফেলল অনেক চেনা অচেনা নাম্বারকে। গ্রুপ চ্যাটিংয়ে আলোচনা চলছে ‘ন্যান্সি মিসিং ফ্রম হার ভিডিয়ো টুডে! বাট হাউ অ্যান্ড হোয়াই?’ সবাই কিছু না কিছু বলছে, সবাই চিন্তিত! ভাবনা ভাইরাল হচ্ছে! নোটিফিকেশনের বন্যা... কেউ একজন মুসৌরি ভ্রমণের এস্টিমেট পাঠিয়ে দিল, সব গ্রুপেই হয়তো এমনই পাঠায়!   আরেকজন কেউ আরও একটা গ্রুপ ক্রিয়েট করেছে, তাতে ন্যান্সিকেও অ্যাড করে দিল! আর সবচেয়ে আশ্চর্যের, ন্যান্সি নিজেও ওখানে রিপ্লাই করছে! — “আয়াম ফাইন নাউ, এনজয়িং মাই টিকটকার্‌স ডে!..”

এটা কী করে হল মনীশ? ন্যান্সির ফোন কি তাহলে চুরি গেল?’ গ্রুপ ডিসকাশন শুরুর আগেই কে যেন ততক্ষণে  আরও একটা গ্রুপ বানিয়ে ফেলল ‘ন্যান্সিসেলফোন মিসিং গ্রুপ

কলিং বেল বাজল। ন্যান্সির মা দৌড়ে যায় দরজা খুলতে। হয়তো দরজা খুললেই রোজকার মতো মেয়েটা বলবে “মা খেতে দাও, ভীষণ খিদে পেয়েছে!’