অন্তর চক্রবর্তীর কবিতা
(বৃক্ষপ্রেরণা)
১
আত্মনিভ ছায়ালোক। অস্তাচলে শিরা।
পদচিহ্ন চিনে নেয় শাক্যহরিণীরা।
যতদূর রণখণ্ড। চন্দ্রাহত আশ।
বজ্র ঠেলে খুঁজে ফেরে শিখরী সন্ন্যাস।
ভগ্নপ্রায় পারাপার। বিম্বদেশে স্থাণু।
মার্গসুখে বয়ে যায় অক্ষপরমাণু।
ক্ষতজন্মা মহাকাল। শতছিদ্র ওম।
মগ্নশর তূণে জাগে শৈত্যরথ হোম।
দ্বিজ এই যজ্ঞপট। রুধিরাহ্নে যুব।
অভিষিক্তা চরাচরে অন্তপ্রাণ ধ্রুব।
ভেঙে যায় ব্যূহকল্প। চূর্ণ বায়ুশাপ।
অয়ন্তিক ফিরে পান গূঢ় পত্রালাপ।
শাক্তরব ইঁট, হল ব্রাহ্ম অবসর,
প্রেত নয়, প্রেত নয়। শূন্যে পাওয়া ঘর...
২
শান্ত এই তরুক্ষীর। হিংস্র তরুশব।
অস্ত্রশাখে লেগে আছে ভ্রান্ত পরাভব।
মূলদেশ অশ্রুগামী। অগ্নিশলা স্বরে -
বল্কলেরা কেঁপে ওঠে ঝঞ্ঝাপরিসরে।
দ্বন্দ্বচেতা শ্যামশোক। শব্দে বাড়ে ক্রোধ।
হিমপর্বে গাঢ় হয় উষ্মাপ্রতিরোধ।
রাশি রাশি তনূদ্ভব। তপ্ত শ্রমচারী -
বিটপাগ্রে মিশে যায় ছদ্ম দ্রোহসারি।
মায়াময় সমরাঙ্গ। সুচারু প্রান্তিক।
জাতবীর্যে মাথা তোলে দৃপ্ত শতানীক।
পরাক্রমে আবাহনী। যুগন্ধর, যার -
তৃণতীক্ষ্ণে পিছু হটে পাদপসংহার।
দ্যাখো, এই বনস্পতি। কুঠারপূর্বক,
বাঘ চেয়ে হয়ে উঠল, আস্ত বাঘনখ...
————————————————————————
(প্রত্যুষ)
১
সন্তদের খিদে থেকে, উঁকি দিচ্ছে রক্তবর্ণ টিলা
ঢালের অতন্দ্রে লেগে একজোড়া দিকশূন্যপুর
স্তব্ধলয় মহাকাল, তরঙ্গের সমস্ত অছিলা,
ভূ-ভাঁড়ার বেঁধে নিল অন্তহীন সলিলমুকুর
এ কেমন ইন্দ্রজাল? সহোদর ধরাস্বপ্ন তবে?
মধ্যভাগে স্মৃতি আর লাখো লাখো অশথহরিৎ
মুখোমুখি মরুপর্ব ফিরে যাচ্ছে পাতালনীরবে
নিরঙ্কুশ অর্কোপলে লিপি নিল রোপণচরিত
মুহুর্মুহু ঘুণাক্ষর দিয়ে গড়া এষণাকাঠামো
প্রবুদ্ধ ঝুরির খাঁজে গুচ্ছময়ী রোশনাই-শাঁস
নামো হে পাঁজরসখা, এইবেলা অশ্রুপাতে নামো
ভবিতব্যে দ্যাখো চেয়ে পারঙ্গম অরণি-আভাস
নবীন অতন্দ্র জাগে দশবাঁও আবির্ভাব-জলে
সন্তদের গ্রাসটুকু, উঁকি দিচ্ছে তুষের অনলে...
২
ইতিবৃত্তে মনষ্কাম, সাহচর্যে সিক্ত বাহুমূল
বিন্দু বিন্দু করোদ্গমে অবিরল দিকনির্দেশিকা
অভিষেকে মেধারাজ্য। নিরুদ্দেশে গেল অনুকূল
সন্নিকট শিলাযুগ, কেন্দ্রভূমে চান্দ্রমাস-টীকা
সূচ্যগ্র আতপদল, রশ্মিমন্ত্রে স্বীয় যজ্ঞাগার
আত্মাধিক অর্ঘ্যকুণ্ডে ঋজুচেতা অশ্বমেধ-লহু
উদাত্ত কণিকাবাহে ভেসে যাচ্ছে শ্রমণকুঠার
আশ্চর্য আঘাতশিরা, তর্পণের নিখুঁত হুবহু
ছলোচ্ছল পাকদণ্ডী ঘিরে ওঠা স্নায়ুশৈল-ত্বক
রন্ধ্রে রন্ধ্রে শ্রমাঙ্কুর, বল্গাহীন অবয়বশ্রেণী
আনাগোনা ছুঁয়ে আছে দেবগ্রস্ত মনীষারূপক
নির্নিমেষ চতুরঙ্গ, অভিষবে সৌরকায় ছেনি
ইতিবৃত্তে যতিদাগ? পদার্পণ তুরীয় নিস্পৃহ?
ঊষার অদৃষ্ট ফেটে স্পষ্ট হল ভাস্করসমীহ...